সুশান্ত হালদার এর কবিতা

Poems by Sushant Halder



স্বইচ্ছায় মৃত্যুবরণ 


নিতান্তই যদি ভালোবাসো 
চুমু নয়,সঙ্গমও নয় 
বাঁকা চোখের কটাক্ষে 
আমার মৃত্যু হয়ত আরও একটু তরান্বিত করতে পারো
ভালো যদি বাসো 
গোপন গোপনীয়তায় ঘাতক ছুরি হইও 
বিদীর্ণ আপেলের মত চিৎ হয়ে শুয়ে থাকব সুসজ্জিত টেবিলের ওপর
হয়ত প্রেম কাতুরে সঙ্গমের প'র মনের ভুলে 
জল পান না করেই
খেয়ে ফেললে সেই চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা আপেলের অর্ধাংশ 
আর আসন্ন দুবাই বিশ্ব কাপের প্রেকটিস ম্যাচের মত 
অবশিষ্ট আপেল টুকরোটি
খেলার ছলেই ছুঁড়ে দিলে গোলকিপারের হাতে, 
এহেন দৃশ্যে হয়ত অনেকেই মনঃপীড়ায় ভুগছেন
কিন্তু আমার মৃত্যুতে আমি বরাবরের মতই গৌরবান্বিত 
কারণ 
যে কোন মৃত্যুরই একটা কারণ থাকে আর সেটা না হয় তুমি হলে! 



পতাকার বিশ্বাস

উলুধ্বনি সন্ধ্যায় তুমিও নেচেছিলে 
ভয়ানক বিশ্বাসের মৃদু কম্পনে আমিও সায় দিলাম হাত তুলে 
মিনার ছুঁয়ে ছুঁয়ে এসেছিল যারা অত্যুজ্জ্বল আলোর সন্ধানে 
বিশ্বাসের থলে থেকে বের করে আনলেন পুরনো সেই হলুদ আমলকী সন্ধ্যা 
যারা কৃষক,দিনমজুর,হাত কাটা পা কাটা মানুষ 
শ্রমিকের ছুটি শেষে যারা অপেক্ষা করে বেশ্যার দালালের 
যাদের অঙ্কুরিত ভ্রূণে ট্যাটু আঁকা বাটা দোকানের 
তারাও অতি উৎসাহে ছুটে চললেন উর্ধ্বমুখী পথ পরিভ্রমণে 

শুধু আমি-ই লেলিন স্টাইলে হাত তুলে দাঁড়িয়ে রইলাম 
ভূপাতিত ড্রোনে নিজের পতাকা সমুন্নত রাখবো বলে! 


 

অধিকার বঞ্ছিত সন্ন্যাসিনী 

সবাই তো রাজা হতে চায় 
আমি না হয় ভিখিরি হলাম 
নড়বড়ে চেয়ারে গদিআঁটা থাকবে না,মানলাম 
তাই বলে পদ্মক্রোড়ে সুখাসনও থাকবে না(!)
এহেন পরিস্থিতিতে 'বিদ্রোহ' শব্দটা কি খুব বেমানান হবে?
উপস্থিত সভাসদ এবং তোষামুদে কবিগণ 
আপনারাই বলুন
শূন্য করতল,বসুধা অঞ্চলে জটাধারী সন্ন্যাসী কি পারে 
ঈগল চোখে সীতা ছিনতাইয়ে রাবণ হতে?
বড়জোর নিজের অধিকার বুঝে নিতে 
গাণ্ডিবের কড়কড় শব্দে আরেকবার অর্জুন হতে পারি 
শতপুত্র আর রাজ্যলোভী ধৃতরাষ্ট্রের মনোপলি বর্বরতায় 
দ্রৌপদী নয় 
এবার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ অধিকার বঞ্ছিত এক সন্ন্যাসিনী!




আশ্রম

বাঘ হরিণ খেলায় কখনো কখনো হরিণও জিতে যায়
তুমি বলেছিলে
মানুষকে আটকায় এমন সাধ্য কার?
প্রতিদিন নিজেকে দেখি
বুকে লোম নাই বলে সিমার ভাবী 
অথচ মাথা কাটার ভয়ে নিজেই নিজের মূণ্ডুপাত করি

বুকের বসনে প্রজাপতি উড়িয়ে প্রথম যেদিন বলেছিলে
আমাকে খুন করার আগে খুনি হতে হবে 
হৃদপিণ্ড খুলে দেখি সমস্ত অন্তরাত্মা ভয়ে অস্থির ব্যাঘ্র চিৎকারে, 
মধুকূপি যোনি দেখে সেই যে পালিয়েছি,তারপর
বহু বছর কেটে গেছে আবাদহীন জমি চাষাবাদে 

এতদিন পরে প্রথম যেদিন বলেছিলে 'ভালোবাসি'
ঈগল নখে আমিও জলে ডুব দিলাম মৎস্য শিকারে 
অথচ তুমি 
গৌতমের কথা বলে চলে গেলে সিদ্ধার্থ আশ্রমে!



ফানুস 

সব পেয়ে গেলে ভিখিরিও হাত গোটায়
আমিতো সেই ভিখিরি 
করতলে চাঁদ রেখে শূন্যে উড়ে বেড়াই 
যা কিছু 
নিজের মনে করে গচ্ছিত করেছি 
লুট হয়ে যাওয়া চূর্ণ বিচূর্ণ হৃদয়ের স্বপ্নিল ফানুস 
তা-ও আজ প্রতারক প্ররোচনায় আমারই কুশপুত্তলিকা পোড়ায়

বেবাক ভুলে আমি যখন দাঁড়িয়েছি নিজেরই জানাজায়
দেখি
হাহাকারে ঘুরে বেড়ায় এক অতৃপ্ত আত্মা ওই মহা শূন্যতায়!

Post a Comment

0 Comments