এম এ রহমান এর কবিতা

 

MA Rahman's poetry


ভাবনার জানালায়

যুবতী রাতের চোখে ফুটে উঠে বিষাদের ভাষা
হেঁটে যাই নাগরিক ল্যাম্পপোষ্টের আলো বিছানো পথে
সোডিয়ামের আলোয় নিজেকে অচেনা মনে হয়
বোধের জোনাক পোকা- মিটমিট জ্বলে রাস্তার পাশেই
হেঁটে যাচ্ছি আরো দূরে- রাতের নির্জন শহরের দিকে
রাস্তার দুপাশে উজ্জল বিপণী বিতানের নেমপ্লেট পড়ে পড়ে
দীর্ঘশ্বাসে জমা হয় অপ্রাপ্তির স্বপ্ন পোড়া কালো ধোঁয়া 
ফোঁটা ফোঁটা হতাশার ঘামে ভিজে- হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত
চৈতালি উত্তাপে আজ মেঘাচ্ছন্ন  আকাশ থেকে
অঝোরে নামলো বৃষ্টি, যুবতী রাতের দেহে ভাসে
সোঁদা মাটির ভেজানো ঘ্রান- মনে পড়ে শৈশবের দিন।
মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু- সে নিজেই
মানুষের সবচেয়ে বড় বন্ধু- সে নিজেই
সময়ের শুন্য থলি ভরে ভরে যদি হয় শুন্য
তবে কেন- হৃদয়ের মাটি পুড়ে পুড়ে অট্টালিকা গড়া!
সবুজের বন কেটে কেটে অট্টালিকার ঠোঁটে রাখি
বনসাই হাসি- মাঝে মাঝে বসে বসে ভাবি!




আজ মন খারাপের মেঘেরা নেই

হৃদয়ের নাচঘরে আচানক তরুন বাতাস
চৈত্রের দূপুরে বসন্তের ভাঁটফুলে দোল খায়
মেঠোপথে বুনো জলে যেন সোনালী সকাল
আকাশগঙ্গায় উড়ে যায় এক ঝাক বলাকা
জীবনের শস্যক্ষেত, ফুল, ভ্রমরের গুঞ্জরন
পারিজাত প্রকৃতির ঠোটে যেন সবুজতা সুখ
কোলাহল ভেঙ্গে ভেঙ্গে নেমে এল নৈঃশব্দ্য 
শান্তি; শেষ কবে নুন মাখা পাহাড়ের বুক চিরে
শীতল ঝর্ণার স্রোত বয়ে গেছে মনে নেই।
এখন শরতের আকাশ আর শুভ্র কাশফুল
আজ মন খারাপের মেঘেরা নেই- কোথাও
আজ মন খারাপের মেঘেরা নেই- কোথাও।





প্রিয় চারুলতা

সময়ের ফ্রেমে তুমি  আবদ্ধ  হৃদয়ের ভিতর
দেহঘড়ির স্পন্দনে-চলো তুমি যেন নিরন্তর
অথচ মনে আমার তোমাকে হারানোর শ্লোগান 
শুকনো পাতারা ঝরে, মর্মরে বাজে বিরহী গান।
আমি চাতকের মতো মেঘেদের পিছে পিছে ছুটি
যাযাবর দেশান্তরি, পাই অবহেলা অনাবৃষ্টি
আহত রাতেরা জানে কতটা দীর্ঘশ্বাস চাবুকে
হৃদয়ে বেদনা জমে, ঝর্ণা ঝরে পাহাড়ের বুকে
কতটা উপেক্ষা পেলে বিবেকের প্রতিচ্ছবি ভাসে
হৃদয়ের আয়নায়,ক্ষত লুকে রাখে অনায়াসে!
তবু হৃদয় জমিনে তুমিময় ভালোবাসা বুনি
আর ব্যথিত বাতাসে- তোমার বসন্ত গান শুনি
হয়তবা তুমি আর জানবে না প্রিয় চারুলতা
বুকের জমিনে তুমি- শুধু তুমি- বাকিটা শুন্যতা।




বসন্তের শেষ পদচিহ্ন 

আমি স্রোতের সিঁড়ি বেয়ে বুনো ভাঁটফুল চোখে
বসন্তের শেষ পদচিহ্নে চেয়ে থাকি
সময় এখনও রাস্তা পার হয়নি
অথচ একখন্ড দলছুট মেঘে বিচ্ছেদ বিষন্নতা।

চৈতালি উত্তাপে আম্র মুকুল ঝরার শ্লোগানে 
কচি পাতায় বাতাসের নূপুর পষ্ট- কর্ণকুহরে বাজে
বোশেখ টর্নেডো চোখে যদি ঝরে শিল বৃষ্টি
সুন্দরের বনে হরিনের হৃদ হয় ধ্বংসস্তুপের ভাগাড় 
তবে কতগুলো বসন্ত পরে- প্রকৃতির শরীরে
আবার ফুটবে-বুনো ভাঁটফুলের দল?
নাকি, ঋতুচক্রের গহ্বরে হারাবে বসন্ত!
হৃদয়ের মর্মরে অশ্রু ঝরাবে শুধু- শীত আর বর্ষা।



অভিমানের ভাষা 

অভিমানের ভাষারা জানে তুমি কতটা আপন
কত হৃদয়ের কাছে, ছিলে লুকিয়ে আত্মগোপন
কত বিরহের ফুল পড়ে আছে হৃদয় উঠোনে
তুমি যদি তা জানতে- কত তুমিময় গান মনে।
তৃষ্ণিত চাতক এক, অপেক্ষায় থাকে শুধু চেয়ে
চৈতালি উত্তাপে তার বিরহের আগুন হৃদয়ে
জানি একদিন তুমি অভিমানের ভাষা বুঝবে
বসন্তের শেষ ফুল ঝরে গেলে আমায় খুঁজবে।
সেদিন দেখবে তুমি অপেক্ষার চোখের আকুতি
হৃদয়ের কোনে জমা না বলা কথার অনুভূতি
বুঝবে তুমি বুঝবে অভিমানের ভাষা বুঝবে
শুকনো পাতার কাছে হৃদয়ে গভীরতা পুচবে।
যদি অভিমান বাড়ে সুঘন প্রগাঢ় হয় রাত
দূর নক্ষত্রকে চেয়ে- দুফোটা অশ্রু দিও খয়রাত।

Post a Comment

0 Comments