রৌশান সৃজন এর কবিতা

Poems of Roshan creation


পল্লবী দে

ব্যারগন্ডিকেশী নিরুপমা যুবতীর এ্যলবাম ঘেঁটে ঘেঁটে
অস্তিবাদী চোখ পরমানন্দে দ্যাখে আপনার অবয়ব।
বয়সী বটের শিকড়ে পুঁতে ফ্যালা কামাতুর বেহায়া দৃষ্টিকে
পূণর্বার তুলে এনে অক্ষিপটে অবমুক্ত কোরে
পূনরায় দ্যাখে আপনাকে___ বিভিন্ন এ্যাঙ্গেলে
                                 ক্লিকে ক্লিকে।
 
হঠাৎ হারিয়ে যায় দরকারি অভিধান থেকে,
চর্চিত কাব্য থেকে, প্রিয়পাঠ গদ্য থেকে,
যাপিত জীবন থেকে, আপ্তবাক্য থেকে
বেদ-মেধ-ক্লেদ-স্বেদ-জেদ, এবং
ইত্যকার বংশসকল।
 
আমি আলাদিনের চেরাগ ঘষে ঘষে
জিনিকে বলে দিই
আপনার প্রিয়, পরিপাটি, পবিত্র ঘরে
বারান্দায়, বাথরুমে স্পাইক্যাম ফিট কোরে দিতে
তারপর চোখ রাখি গোপন মনিটরে
আপনার সমস্ত গোপন নির্ণিমেষ দ্যাখার
ব্রাত্য বাসনায়...
 
কোনো এক বিপরীতা হেমন্তের দিনে
সুখী নগরীর দূর্লক্ষ্য বৈরীতা দেখে
আপনি ফিরছেন ঘরে___ অবসন্ন অতিধীর পা ফেলে ফেলে
স্বেদাপ্লুত শরীরে বৃষ্টিহীনা, ছাতাহীনা, ছায়াহীনা___
অশুর আরোপিত অমায়িক অবিমিশ্র
অনিবার্য কালচার মায়া কোরে কোরে।
 
যন্ত্রের কৌশলে, আপনার ঘরে
আপনার পদধ্বণি শুনতেই
সম্বিত ফিরে পেয়ে অশ্লীল কামনাকে
ত্রিগুন প্রশ্রয় দিয়ে মনিটরে চোখ রাখি।
আচানক দেবগুনে পলকেই হয়ে যাই দৃষ্টিহীন
বেঘোরে অন্ধ হোয়ে আমি বিস্মিত, বিজুলিহত
 
অকাল অন্ধত্বের অভিষাপ মেনে নিতে নিতে
খেয়ালী বিধীর বন্ধ্যা, করুন করুনা পেতে পেতে
ক্রমশই কাল কলবে, অস্থির মননে, অসুস্থ্য মগজে,
অবরুদ্ধ স্মৃতিপটে পূণরাবিষ্কার কোরি আপনার স্টিল ছবি;
হঠাৎ রুদ্রাবেগে নিজেকে টাইরেসিয়াস ভেবে বোসে
দেখে ফেলি অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত।
 
আপনার পদবীর সাথে অমূলক অর্থহীন
অলীক একটি ''বী'' যোগ কোরে
জানতে চেষ্টা কোরি কলিকালে কতটা অমায়িক অর্চক হোলাম !
বুঝতে চেষ্টা কোরি কৃপন কাতরতায় কতটা প্রমত্ত প্রেমিক হোলাম !
 
সমস্ত বোধের মর্ম মন্থন কোরে, পল্লবী দে___
পাতাঝরা পথে হাঁটি বিড়ালের মতো
কাল পিপড়ার মতো দূর হোতে পেয়ে যাই
আপনার ঘামাক্রান্ত বাহুমূলে আতপের ঘ্রান
দেখি__ অই অনিন্দিত চোখে অনিকেত আশ্রয়
অই নিশ্চিন্ত কপোলে বিষন্ন ভাবনার ভীঁড়ে দেখি অদৃশ্য বলিরেখা;
বাড়ন্ত ক্লান্তির বিপরীতে, আপনার স্নান আঁচ কোরে
উৎকর্ণ হোয়ে শুনি অই সুন্দর, সুললিত, সুগঠিত শরীরের
বাঁকে বাঁকে, ভাঁজে ভাঁজে, খাঁজে খাঁজে শাওয়ারের শীর্ণ শীৎকার
আর নিষ্কলুষ, নিরাবেগ, নির্মোহ, নিস্পন্দ চোখে
সদ্য স্নানোত্তর ভেজাচুল ভেদ কোরে দেখে চলি
আকর্ষিত গ্রীবাদেশে ভিনচির প্রেম, ভেনাসের প্রতিভাস
 
অকস্মাত দ্রুতবেগে ধেয়ে আসে কতিপয় ঘোড়ার কঙ্কাল
একদল পাইরেট সওয়ার য্যানো বলিষ্ঠ বখতিয়ার !
এই আমি যুবক লক্ষন, বিচলিত__পালানোর পথ নেই
পালাতে পারিনা বলেই ওইসব অশ্বারোহী থমকে যায়
খুব দ্রুত অমোঘ অপমানে ফিরে যায় অবনত শীরে,
অভাবিত অলৌকিকতায় কেঁদে ওঠে প্রয়াত প্রেমিকার পোর্ট্রেট ।
 
আযৌবন লালিত আমার প্রিয় বিবমিষা
বিসুভিয়াসের মতো বুক পেট পাঁজর থেকে
মদ-মাংশ, কালো কালো কর্কশ, কামুক, কবন্ধ কথামালা
উগড়ে দিতে থাকে; পুড়িয়ে দিতে থাকে
বালিশ-বেডশিড-কাগজ-কলম-কবিতা
ধীরে ধীরে বেড়ে চলে সারা ঘরে আতপের ঘ্রান___
উঠোনের মসজিদ থেকে ক্ষীন কন্ঠে ভেঁসে আসে
''আসসালাতু খয়রুম মিনান নাওম''
আমি মনে করতে পারিনা
শৈশবে শেখানো পিতার প্রত্যুত্তর ।
 
পল্লবী দে___
তুমিও এখন আরষ্ট___ম্রিয়মান___অপসৃয়মান___
আমার প্লাবিত চোখের পাললিক পল্লবে প্রযুক্ত হচ্ছে
কবরে লাশের মতো হীম, নীরব, নিস্তব্ধ, নিরেট নগ্ন পাহাড়...


বসন্ত-বিলাপ

এই যে এখানে নেই ছায়াছায়া আলো
নিরেট আঁধারে শুধু আলেয়াকুসুম
ফুটে আছে দৃশ্যত ছায়ার আড়ালে
ছায়াছায়া টিমটিমে রুগ্ম কায়ায়
ড্যাবডেবে চেয়ে আছে খেয়ালে মায়ায়

খেয়ালঅগ্নিকনা যতটা না লাল 
তারো বেশি উত্তাপে অস্থির মায়া
স্থির যদি হয়ে যায় সুস্থির হীমে
__চাইলেই হয়ে যাবে এমনও কি হয়?
জাদুতে কামাল যত লিপ্সানিচয়!

কেউ যদি পেতে চেয়ে দুর্মর গাছ
পুরানে ঈমান এনে সিজোফ্রেনিয়া
যাপন করতে থাকে গিলগামেশের
করুন নিয়তি মেনে দুষ্কর আশা
পুষুক সে উন্মাদ পুষুক পিপাসা

তৃষ্ণা না মেটে তার অলক্ত অলি
হলাহলে অমৃতে তামাকে গাঁজায়
পিপাসায় পিপাসায় ঘাঁই পিপাসিনী
খোঁজের গহীনে খোঁজে হরাঅভিরাম
সিসিফাস জানেনা রে, কোথায় বিরাম
বিরামে বিতৃষ্ণা বাড়ে জিওমেট্রিক
নির্মোক বেগানা সে যে প্রেমেরো অতীত
কামে-ঘামে-স্বেদে-ক্লেদে রুদ্ধজলজ
শ্যামের বাঁশরি চোঁয়া মোহন তারানা__
তুমি ;
       ক্ষমা কি করছো রাঁধা নীল প্রতারণা!

এইযে এতটা শ্লীল অশ্লীলতায়
তোমাকে বানিয়ে ফেলি থিরনগ্নিকা
চোখের সকেটে রাখা ইনফ্রারেডে
এরে, কি নাম দেবে গো ওলো চিরমায়াবতী
দুর্মদ দহনে দহে দ্যাখো দুঃখাধিপতি

দুঃখাধিপতি তোর ক্লান্তিহীন  শঠ
যতটা ছিলেন গুরু অটোলাইকাস
তার চেয়ে দেড় কাঠি উপরে সে রয়
কি ভাবে ঠ্যাকাবি তারে বলবি ললিতা?
বিপ্রক্ষয়ি চামড়ার বিপ্রকর্ষনে!
সম্ভব নয় রে প্রিয়ে এ নহে সম্ভবে
মায়ার আতরে ব্যাটা আগুরু মিশিয়ে
এবং তাহাতে ঢেলে রক্ত-জাফরান
সিঁথিতে প্রলেপ যদি দিতে পারে তোর
খুলবি কী হুড়কা মারা মানভাড়ি দোর?

তোমার শরীর খুঁড়ে মাসমজ্জালোহু
বিলোড়নে ধ্বস্ত করে স্থাপন যদি করি
এই শাপে-তাপে জর্জর  কৃশকায় দেহ
তোর দেহে রুহে আত্নায় হবে নাকি লীন? 
প্রেমের নিগমে পাপ 
ক্ষয়ে ক্ষয়ে হবে কি বিলীন?

খেয়ালঅগ্নিজাত  রক্তাভ মায়া
আলেয়াকুসুমবাগে ছায়াছায়া কায়া


কালো কালো অক্ষরে আঁকি আপনার পোর্ট্রেট

(কবি আবদুল মান্নান সৈয়দ কে প্রেমাঞ্জলি )



বর্ষিয়ান বৃক্ষের গাম্ভীর্য আমাদের অলক্ষ্যে থাকেনা
বহুদেশদর্শী দৃষ্টির আড়ে থাকেনা কিছুই
আমাদের আরাধনা শুধু সতত সরল পথে
দেখে চলা জঙ্গমতা জীবনের আর__
সমস্ত সকাল জুড়ে দৃশ্যের ধূপছায়া ভেদ কোরে
শিখে নেয়া বাঁচার নিয়ম।
 
__ইচ্ছে ছিল শতায়ু তরুপল্লবে, প্রশাখায়, ছায়ায়,
কান্ডে, শিকড়ে; দেখে নেব শিশুনিভ সরল অধ্যাস...
 
দৃশ্যের পরিণতি দর্শনেই ! নাকি দৃষ্টিতেই তার যত বৈভব !
__এইসব আকাঙ্খা আহ্লাদ ফিকে হতে হতে আজ নিরালাক্রান্ত
নৈঃশব্দ্যের নিগরে আটকে যায় নিঃসীম চিত্র কতিপয়
কল্প নয়, ভ্রম বা ভ্রান্তির দোলাচলে কোনো দ্বিচারিতা নয়;
কেবল কষ্টের কোরাস সঙ্গত হতে থাকে কালের এসরাজে
স্মৃতিপটে মূর্ত হয় একমুঠো বিমল সময়।
 
কথা ছিল, কথা থেকে গেল উর্বর মাটির আঁচলে ঢাকা__লীন;
কথা থেকে যায়, বয়ে চলে দিনমান কানে কানে,
গানে গানে ফিরে আসে, সহস্র নদীর সাথে মিশে
একদিকে হাহাকার, আরদিকে লিপ্ত-সৃজনের সুর তুলে
শেষাবধি ফিরে যায় দূরগামী প্রতীতির সবুজ জগতে একা পান্ডুর চোখে
 
এদিকে আত্নারা কাঁদে। তাহাদের সমবেত ব্যাথার কোরাসে
বিব্রত ঈশ্বর লাজে অবনত। চালসে প্রৌঢ়ের মত ঝাপসা তাকিয়ে খোঁজে
ধূলোমাখা অভিধান, ফিরে দ্যাখে সৌম্য সোনালী ধান,
মনোযোগি হয়ে করে উপপ্রমেয়'র সঠিক সন্ধান
 
আর শোকার্ত প্রেমিকেরা কালো কালো অক্ষর স্রোতে ভেসে
সন্তপ্ত আত্নজ সংগীতে মেশায় পুরবীর অরূপ দ্যোতনা
অনিঃশেষ নিশ্বাসে লিখে চ'লে আপনার জলরঙ ছবি...

Post a Comment

0 Comments