মহিমাগঞ্জ
আসো আসো ট্রেন অপেক্ষা করিকতদূর বেঁকে সোজা হবে তুমি
ভোরের মালতি খোঁপা হতে ঝরে
রোদে ছায়া নেই হাওয়া মৌসুমী।
চক্রবৃদ্ধি হারে এখানে শরৎ বাড়ে
আকাশে থাকে মেঘ, প্রজাপতি
পালিয়ে যাচ্ছি চুরি করে তাকে
সঙ্গে নেবার দিলে না তো সঙ্গতি!
রাশি রাশি লোক কোথায় যে যায়?
বৃষ্টি ঠেলে কেউবা পড়ে ঝড়ে
ছাতা আর মাথা ভিজে একাকার
পুরোনো পুরুষ কেঁদে মরে অন্তরে।
কায়া ঘন হয় সন্ধ্যা নেমে আসে
খাঁ খাঁ করছে শূন্য টিকিট ঘর
সচেতনভাবে সোনার বালাটা দেখি
রুপোর আলো ঝলসাল তারপর।
এলে তুমি ট্রেন লোহার কারবারি
এখানে সেখানে ফুটো-ফাটা স্পঞ্জ
ফুলের মধ্যে পদ্ম আমার প্রিয়
তাকে দেখতেই যাচ্ছি মহিমাগঞ্জ।
গুরুচণ্ডালী
উঠোনসমেত একচালা ঘর, দুটো বাতাবি লেবু আর ডুমুরের গাছ।শীতের দুপুরে কুয়োতলায় আয়েশ করে ঘুমুচ্ছে প্রিয় বিড়াল।
গোটাকয় মেছোবক সূর্যকে সাক্ষী রেখে মাথার ওপরে উড়ছে।
এক হাতে ছিপ অন্য হাতে মাছ, বাবা ফিরছে বাড়িতে।
জয়নালের ছেলে আয়নাল ছবি আঁকতে ভালোবাসে।
খুব যত্ন করে, সময় নিয়ে উপরের দৃশ্যকাব্য
মায়ায় মুড়িয়ে স্থান দিয়েছে তার একান্ত ক্যানভাসে।
মা ফিরতেই দৌড়ে গিয়ে দেখাল,
বাবা বলল_ আমাদের মতো আধুনিক হয়েছে।
মা বলল_ বিড়াল, মাছ, বক একসাথে থাকায়
গুরুচণ্ডালী দোষে দুষিত এ চিত্র।
বাবা অশিক্ষিত, গানপাগল মানুষ, বোকাকান্ত।
মা মিতব্যয়ী, দূরের স্কুলে গণিতের দিদিমণি।
যৌতুক বৃক্ষ
শায়িত শস্যের গলদ ঠেলেনির্দিষ্ট এক গ্রামের কোলে ছুটে যাচ্ছে সবাই
বর যাচ্ছে কনেকে, কনে যাচ্ছে বরকে দেখতে।
সৌজন্যর ছুতোয় শিশুরাও যাচ্ছে_
বৃদ্ধবৃদ্ধার কড়ে আঙুল ধ’রে
ব্যতিক্রম একজন।
চক দিয়ে বিষণ্নতার দৈর্ঘ্যপ্রস্থ আঁকছে
আর মিশিয়ে দিচ্ছে বাতাস দিয়ে।
রাহুরক্তে ক্ষেপে উঠছে বারবার
তিনি প্রাক্তন বৈমানিক।
আকাশে তার হাজারো বিনিয়োগ হাজারো ভরতুকি
বিবাহ শব্দটিকে ধাতুর বাক্সে বন্দি ক’রে
স্রোত টপকে তিনি যাচ্ছেন উল্টো দিকে
হাতিতে সওয়ার হয়ে।
আজ হাওয়া বইছে প্রথমা বসন্তের।
কোনো আপস নয়_ সেই সূত্রে,
প্রতিটি পামগাছের ছায়ায়
পুঁতে দিচ্ছেন একটি ক’রে যৌতুক বৃক্ষের চারা।
আড়ালহাতে অনেকেই দেখছে এইসব
গৌরবের তালিকা দিনে দিনে যতই বাড়ছে
এই গ্রামে পৃথিবীর পাখিরা বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই
প্রাণপণে পরিযায়ী হয়ে আসছে!
রজ্জুতে সর্পভ্রম
এনেছি লবণ_ লাবণ্য ফিরিয়ে দিতেস্নানের সূত্রে জাগতিক গন্ধ রূপ নেয় হাহাকারে
বলে_ আমাকে মুদ্রিত করো।
অবৈধ ভিক্ষাপাত্রে কী করে দান করি
এই মালা উপহার-সংক্রান্ত?
আমার গম্ভীরতা মৌন মাটির পাত্রে
ফুটতে ফুটতে ক্রমশ ক্লান্ত।
জানি, প্রতিটি বীজের মধ্যে জমে আছে
তোমার মাথাকোটা আর্তনাদ। তাকে সামাল দিতে,
লুকিয়ে আছো সাইবেরিয়ার অদৃশ্য আঙুর বাগানে।
ঘোর বৃষ্টির রাত কার না আপন বলো?
পৌরাণিক গ্রন্থের উৎসর্গপত্রের নিচে গ্রাম্যগল্পের ছলে
ইটালিক টাইপে লিখেছ_
রজ্জুতে সর্পভ্রম হলে যৎসামান্য
কিন্তু সর্পতে রজ্জুভ্রম যুক্তিকে করে বিপন্ন!
গ্রামগঞ্জের হাটে
এ পথ দিয়েই যেতে হয় রোজ, একা, এই লোকটিকেকারণ যা কিছু আছে ধীরে ধীরে হয়ে আসে ফিকে।
রোজ দেখি মাথায় নিয়েছে কিছু। সামলিয়ে এক হাতে
অন্য হাত এ-কাঁধ-ও-কাঁধ করে। কোমর বাঁকে না তাতে।
করুণা হয়, করা তো উচিত কিছু। ফের ভাবি যদি মারে?
এই ভয়ে হয়নি যাওয়া গৃহে। নিকটে কিংবা তার দ্বারে।
দূরে বসে হাট সন্ধ্যা সমাপ্ত হলে। এত ক্রেতা, লাগে অদ্ভুত
সে ছিল বিক্রেতা। তবে মানুষ নয়, তুলোয় জড়ানো ভূত!
...........................................................
পরিচিতি :
শিবলী মোকতাদির
কবি, প্রাবন্ধিক
জন্ম : ১১ জুন ১৯৬৯ বগুড়া, বাংলাদেশ
প্রকাশিত গ্রন্থ :
ধানের রচনা দিলে পত্রে (কাব্যগ্রন্থ)
ছন্দের নান্দনিক পাঠ (প্রবন্ধগ্রন্থ)
নিষিদ্ধ পুষ্টির কোলাহল (কাব্যগ্রন্থ )
সোনার কার্তুজ (কাব্যগ্রন্থ )
রৌদ্রবঞ্চিত লোক (মুক্তগদ্য)
ব্যবহারিক বিস্ময় (কাব্যগ্রন্থ)
দুর্ভিক্ষের রাতে (কাব্যগ্রন্থ)
কায়া ও কৌতুকী (কাব্যগ্রন্থ)
ছন্দকথা (প্রবন্ধগ্রন্থ)
লুপ্ত সভ্যতার দিকে (কাব্যগ্রন্থ)
অন্ধের ওস্তাদি (কাব্যগ্রন্থ)
পুরস্কার :
কবি আব্দুর রউফ স্মৃতি সাহিত্যপদক ২০১১ (কবিতায়)
কবি কাজী রব স্মৃতি পুরস্কার ২০১২ (কবিতায়)
বগুড়া লেখক চক্র স্বীকৃতি পুরস্কার ২০১২ (কবিতায়)
সাপ্তাহিক চলনবিলের আলো গুণীজন সম্মাননা ২০১২ (প্রবন্ধে)
মহিয়সী সাহিত্য ও পাঠচক্র সম্মাননা ২০১৩ (সংগঠক)
শেরপুর সংস্কৃতি পরিষদ সম্মাননা ২০১৭ (গদ্যসাহিত্যে)
‘কবিকুঞ্জ’ পদক (কবিতায়) ২০১৯
‘লোক’ লেখক সম্মাননা (কবিতায়) ২০২০
‘বামিহাল’ সাহিত্য পুরস্কার (কবিতায়) ২০২২
0 Comments