একদিন বাতাস হয়ে যাব
একদিন বাতাস হয়ে যাবো আমরা
বাতাসে ভেসে যাবে চোখ
সানফ্রান্সিসকোর আকাশে উড়বে ধুলো
ধুলোয় উড়ে যাবে মলাটবদ্ধ হৃদয়
তোমার-আমার
একরঙা ফানুসের মত পুড়ে যাবো
বোমারু বিমান ভেবে নাবালক শিশু
তাকিয়ে দেখবে, পুড়ছি আমরা
পুড়ছে আমাদের চোখ
মেহগনি চিতায় হচ্ছে
অপ্রাপ্তবয়ষ্ক স্বপ্নের
নিদারুণ সমাধি।
পরিশিষ্ট
অবশেষে জানা হলো
সবকিছুর শেষে অবশিষ্ট থাকে একটি শব্দ
ভা-লো-বা-সা।
ততটুকু ভালোবাসা রেখো
যতটুকু ভালোবাসলে মেঘ হয়ে যায় জল
অঝোরে ঝরে যায় মৃত্তিকার বুকে।
যেটুকু ভালোবাসলে মায়ের কোলে
হেসে ওঠে শিশু
বুকের ভেতর জ্বলতে থাকা লাল আগুন
হয়ে যায় উড়ন্ত ছাই।
ঠিক এতটুকু ভালোবাসা নিয়ে
তোমার দরজায় কড়া নেড়েছি
ভিখারির মত পেতেছি হাত।
হারিয়ে ফেলেছি বাড়ি ফেরার পথ
দিকভ্রান্ত পথিকের মতো।
এবার আমায় শান্ত করো
যেভাবে শান্ত ঘুঘুরা
নীরবে ডেকে যায় শরতের দিনে
আর সব সন্ধ্যার শেষে নীড়ে ফেরে
শুভ্র বলাকার দল।
নোনাজল
সমুদ্র জানে কতখানি নোনাজল
বুকে নিয়ে বেঁচে থাকে মাঝি
হৃদয় জানে কতটা ক্ষত পুষে রেখে
ওপারে হারায় মানুষ
যতখানি অথৈ জলে ডুব দিয়েছি
করেছি স্নান
অপাঙ্গে জমা নোনাজলে ডুবেছে ক্রোধ
হয়েছি ম্লান।
বসন্ত এবং বুনোফুলেরা
নাম না জানা সে সব বুনোফুলেরা
ঝরে যায় অনাদরে
আমি সেই ফুল
তুলে নাও তোমার খোঁপার ভাজে
যে সুনেহরা কেশের সৌরভে মাতাল হয়ে
প্রতি রাতে গলধঃকরণ করি
শরাবের তেতো বিষ
আর প্রতিদিন একটু করে
মরে যাই, ডুবে যাই
আত্মসমর্পণ করি আজরাইলের বাহুডোরে
আমায় দেয়া তোমার অবহেলা
তার চেয়েও সহস্র গুণ বিষাক্ত
এমন বসন্তের রাতে বর্ষার আগমনী সঙ্গীত
বিদায়ী শীতের বার্তা জানিয়ে
যেভাবে চলে যায় ঋতুবদলের হাওয়ায়
আমার অনাগত সময় সেভাবেই
চলে যাবে গতিহীন পথে।
বলেছিলাম নাম না জানা
বুনোফুলের কথা
নীরবে নিভৃতে যার সুবাস ছড়ায় বাতাসে
কখনো সে বুনোফুল হতে চাইনি
হতে চেয়েছিলাম প্রেমিকার খোঁপায়
অতি যত্নে রাখা রক্তজবা
তবু অসময়ে ভুল বসন্তে
ফুল হয়ে ফুটেছি
বিলিয়েছি সুবাস
পিষ্ট হয়েছি প্রেমিকার পায়ে
বারংবার হয়েছি হতাশ।
নির্জন প্রান্তরে
নির্জন এ রাত সাক্ষ্য দেয়
কতটা নিঃসঙ্গতা কড়া নাড়ে
বুকের দরোজায়।
শহরের অলিগলি বিদ্যুৎ বিভ্রাটে
কতটা অন্ধকার নামায়
কতটা আঁধারে আমি একাকী ঘুরে
পথে প্রান্তরে তোমায় হারিয়ে ফেলি,
ক্রমে দূরে সরে যায় আমাদের
আগত সমস্ত প্রেম!
সব ই জানে সূদুরে ফেলে আসা
বিস্তীর্ণ সময়।
বৃষ্টিস্নাত রাতের আকাশ আর
তার বুকে নিভু নিভু জ্বলতে থাকা শুকতারা
তাদের ও কি দুঃখ হয় তোমায় দেখে?
তাদের কান্না ও কি অঝোর বৃষ্টি হয়ে ঝরে?
সমস্ত দায় ফুরিয়ে গেলেও
যেটুকু ভালোবাসা বেঁচে থাকে বুকের
ছোট্ট দরোজার অন্দরমহলে
তার কসম খেয়ে বলি, আমি কখনোই
রাতের নির্জনে দুঃখ দিতে চাইনি,
হারাতে চাইনি তোমায়।
.............................................
আহমাদ গালিব
শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ,
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার, ঢাকা।
0 Comments