রাত ও বিষন্ন কিশোর
সারাটা আকাশে একটাই চাঁদ আর কোন কিছু নেই,
নিঝঝুম রাত চরাচর ঘুমে মৃদু আলো ঝরছেই।
হালকা কুয়াশা হিম ছুড়ে দেয় মাঠ আর প্রান্তরে
সব মানুষেরা ওম শুষে নিয়ে শুয়ে আছে ঘরে ঘরে।
অনিন্দ্য এই রূপ পৃথিবীর কজন মানুষ জানে?
গভীর রাতে ঘোর লাগা চোখে তাকায় আকাশ পানে।
বয়ে চলে নদী রূপোলী জলের ঢেউ ভেঙে ভেঙে পড়ে
জমানো শিশির গাছ হতে নীচে কালচে ঘাসেতে ঝরে।
শিউলী ছড়ায় রাতের বাতাসে মোহময় প্রিয় ঘ্রাণ
একটি কিশোর জানালায় বসে, ঘ্রাণে ভরে তার প্রাণ।
ঘুম নেই এই কিশোরের চোখে মন ছুটে যায় দূরে
জানেনা কোথায় নিজেকে হারায় কোন সে অচিনপুরে।
বিষন্নতা বুকের ভেতর ডালপালা মেলে শুধু
চাঁদের আলোয় গাছ-নদী-মাঠ হয় মরুভূমি ধু ধূ।
রাত কেটে যায় জানে না সে হায়, কিশোর বসেই থাকে
অজানা রঙ আর স্বপ্ন তুলিতে সে শুধুই ছবি আঁকে।
শিশির বিন্দু ঘাসের ডগায় করে যদি টলোমল
কিশোরের দুই দীঘল চোখেতে জমে উঠে লোনা জল।
তিনি
১
ভোট এলে কার
কপাল থেকে
হাত নামেনা,
সকাল দুপুর
সন্ধ্যে বিকেল
পা থামেনা।
২
মুখটা কেবল
হাসতে থাকে
ইচ্ছে মতো,
চাচা-মামা
গ্রামের লোক
আছেন যতো।
৩
ভোট এলে কার
পিছু ছোটে
ছেলে পেলে,
সাদা কালো
টাকা ছড়ান
দুহাত মেলে।
৪
ভালো মানুষ
সাজেন সাদা
পাঞ্জাবীতে,
মুখে তুলেন
ফেনা, ভাষণ
দিতে দিতে।
আমি এবং তুই
কেমন আছিস তুই
জুঁই।
বুকের ভেতর হাওয়া কাঁপে
শীতের বিকেল জুড়ে
বিষন্নতায় ঘুম কাটেনা
ভেসে আসা সুরে।
কে যেন আজ হারিয়ে গেছে
মনের দুয়ার খুলে
কার যে আসার কথা ছিলো
সেও কি গেছে ভুলে?
হারিয়ে ফেলি ছন্দ আমি
হারিয়ে ফেলি সুর,
বাউল বাঁশী মনটা ছেড়ে
আজকে অনেক দূর।
জুঁই,
কেমন আছিস তুই?
ভূত
আজ কাল ভুত গুলো
নানা রূপ ধরে
মাঠে থাকে ঘাটে থাকে
যাকে ওরা ঘরে।
কখন কোথায় থাকে
বুঝা নাহি যায়
ভূত গুলো ঘুরে ফিরে
চলে পায় পায়।
কখনও বা গরু হয়
কখনও ছাগল
কুকুর বেড়ালও হয়
কখনও পাগল।
বুড়ো হয় বুড়ি হয়
কখনও যুবক
গান গায় ভাটিয়ালী
ভাঙরা ও রক।
আজকাল ভূতগুলি
খুবই আধুনিক
পান খেয়ে পিচ করে
ফেলেনাতো পিক।
স্যুট টাই পরে ওরা
পরে ম্যাক্সী
চিড়িয়াখানায় যায়
চড়ে ট্যাক্সি।
চাইনীজ থাইফুড
ওসব ও খায়
ভালো কোন ছবি এলে
সিনেপ্লেক্স যায়।
খেলে ওরা ফুটবল
ক্রিকেট ও খেলে
কি জানি কি হয়ে যায়
ম্যারাডোনা পেলে।
আজকাল ভুতরাও
রাজনীতি করে
মন্ত্রী এমপি হয়
এই ওই ঘরে।
আজকাল কিছুতেই
নেই কারো হুশ,
দেশটা চালাচ্ছে কে
ভুত না মানুষ?
ডিমের ভেতর ভূত
ফ্রাইপ্যান থেকে ডিম
জোরে মারে লাফ
বুয়াদের চিৎকার
এটা কিরে বাপ।
এমন কান্ড আর
দেখেনিতো কেউ
বুয়ার ছেলেটা ভয়ে
কাঁদে ভেউ ভেউ।
আমি বলি, হ্যালো ডিম
হচ্ছে কি এটা,
ডিমটা জবাব দেয়
তুই কেরে বেটা?
আমিতো এখানে থাকি
নাম চন্দন,
ডিমের ভিতরে আছো
তুমি কোন জন।
আমিতো ভূতের রাজা
নাম টুব্বুস,
বের যদি হই তবে
জোরে দেবো ঢুশ।
রিটন ভাইয়ের সেই
টুব্বুস নাকি?
ভূতের রাজা বলে
দিচ্ছিস ফাঁকি।
ধরা পড়ে টুব্বুস
ফিক করে হাসে,
লাফ দিয়ে চলে আসে
একদম পাশে।
চট করে পুরে নেই
পকেটের মাঝে,
এরপর থেকে সে
সাথী সব কাজে।
এখানে ওখানে যাই
দুইজনে ঘুরি,
এটা খাই ওটা খাই
খাই ডালপুরি।
টুব্বুস সহ যাই
ওয়ান্ডার ল্যান্ড,
এখনতো দুইজন
ভেরী গুড ফ্রেন্ড।
................................
চন্দনকৃষ্ণ পাল
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার উত্তরসুর গ্রামে ১৯৬৫ সালের ১লা মে তারিখে জন্ম গ্রহন করেন। পিতা নীরোদ রঞ্জন পাল,মাতা শেফালী পাল শেলী। ১৯৮২ সাল থেকে লেখালেখি শুরু। কিছুদিন সাংবাদিকতা করেন। ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে উপ-পরিচালক (অর্থ) হিসাবে কর্মরত আছেন।১৯৯২-৯৩ সালে লিটলম্যাগ ‘দ্রষ্টব্য’র সাথে জড়িয়ে পড়েন। সম্পাদনা করেছেন ছড়াপত্র প্রবাহ, চান্দ্রেয়ী, একফর্মা ছড়াপত্র, কবিতাপত্র নৈ। বর্তমানে সম্পাদনা করছেন ছড়া বিষয়ক লিটলম্যাগ ‘ছড়াপত্র’ ও ‘একফর্মা ছড়াপত্র’ । প্রকাশিত গ্রন্থঃ ‘ভূতের নাম তিড়িং বিড়িং’‘আকাশ নীলে হলুদ পাখি’‘ঘাসফড়িঙের নয়টি পা’‘গিট্টুমামার সাধু দর্শন’‘গিট্টুভূত ও তিড়িংবিড়িং’‘উপমার বাঘমামা’‘কালো দানবের পাতাল যাত্রা’‘ছোট্ট হাতের লম্বা কান্ড’এবং ‘অবশেষে চৈত্র অন্তিমে’‘প্রিয় ৫০’‘ছন্দে ছড়ায় আড্ডাঘর’‘এই সেই করো না ঐ হাসে করোনা’। সম্পাদিত গ্রন্থ ‘শ্রীহট্টের সূর্য সন্তান’।আশির দশকে ছড়া পরিষদ, সিলেট পুরস্কার লাভ করেন।
0 Comments