আবু রাইহান এর গদ্য “ওষ্ঠের বদলে গোষ্ঠের দিকে এখন আমার যাত্রা”

Abu Raihan's Prose "Now My Journey Towards Group Instead of Lips"


মজিদ মাহমুদ বাংলা ভাষার অত্যন্ত শক্তিশালী এবং উত্তরাধুনিক কবি! ভূখণ্ডগত তিনি ঢাকার বাসিন্দা! তাঁর ‘মাহফুজামঙ্গল’, ‘বল উপাখ্যান’, ‘আপেল কাহিনী’, ‘দিওয়ান-ই-মজিদ’ এবং ‘ষটক গুচ্ছ’ এই কাব্যগ্রন্থগুলির কবিতা বারে বারে পাঠ করার পর আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি মজিদ মাহমুদ আল মাহমুদ এবং শামসুর রাহমানের পর বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উত্তরাধুনিক কবি! আধুনিক কবিদের মধ্যে আমার প্রিয় দুজন কবি জীবনানন্দ দাশ এবং আল মাহমুদ কবিতায় আমি সারাক্ষণ জারিত থাকি! তারপরে যে কবির কবিতা আমাকে সবচেয়ে বেশি ভিতর থেকে আলোড়িত করে, তিনি হলেন কবি মজিদ মাহমুদ। আশির দশকের বাংলা ভাষার শক্তিশালী কবি মজিদ মাহমুদ বহুমুখী সাহিত্য প্রতিভা! মাত্র বাইশ- তেইশ বছর বয়সে তাঁর লেখা ‘মাহফুজামঙ্গল’ কাব্যগ্রন্থ গত তিরিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে জনপ্রিয়তার নিরিখে বাংলা কাব্যগ্রন্থের জগতে প্রায় মিথে পরিণত হয়েছে! কবির এই একটি কাব্যগ্রন্থের আঠারোটি সংস্করণ প্রকাশিত, সেই সঙ্গে ইংরেজি এবং হিন্দি ভাষায়ও অনূদিত হয়েছে! তার ফলে বহুমাত্রিক লেখক মজিদ মাহমুদকে তাঁর পাঠক চিহ্নিতকরণ করেন ‘মাহফুজামঙ্গল’র কবি হিসেবে! একজন কবিকে তাঁর কাব্যগ্রন্থ দিয়ে চিহ্নিত করণ এটি লেখকের জন্যে নিশ্চিতভাবে গৌরবের! কিন্তু কবি মজিদ মাহমুদদের জন্য এটি যথেষ্ট বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন! কবি নিজেই স্বীকার করেন ‘মাহফুজামঙ্গল’ কাব্যগ্রন্থটি তাঁর কবি জীবনের শুরুর দিকে লেখা! ফলে এই কাব্যগ্রন্থের বেশকিছু কবিতায় কাব্যিক দুর্বলতা রয়েছে! কিন্তু পাঠকের কাছে ‘মাহফুজামঙ্গল’ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো এতটাই আকর্ষণের কেন্দবিন্দু এবং প্রাসঙ্গিক যে, তাঁর উত্তর-আধুনিক কবি হয়ে ওঠার স্বাক্ষর বহনকারী ‘বল উপাখ্যান’ এবং ‘আপেল কাহিনী’র মত অত্যন্ত গুরুত্বর্পূর্ণ কাব্যগ্রন্থগুলি সাহিত্য সমালোচকদের প্রশংসা পেলেও বৃহত্তর কবিতাপ্রিয় পাঠকের আকর্ষণের কেন্দবিন্দুর অনেকটা বাইরেই থেকে গিয়েছে! যদিও কবি মজিদ মাহমুদ মনে করেন তাঁর এই দুটি কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো অনেক বেশি পরিণত! ১৯৮৯ সালে কবি মজিদ মাহমুদের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘মাহফুজামঙ্গল’ প্রকাশিত হয়েছিল! এই কাব্যগ্রন্থে কবি মাহফুজা নামের এক মহিলার সঙ্গে ভালোবাসা ও আধ্যাত্মিকতার অসাধারণ মিশেলে মিথের এক নতুন বিনির্মাণ ঘটিয়েছিলেন, যা পাঠককে চমৎকৃত করেছিল এবং তাঁর এই নতুন স্টাইলে লেখা কবিতার দিকে কবিতাপ্রিয় পাঠককে মোহগ্রস্তের মতো টেনে আনতে বাধ্য করেছিল! ‘মাহফুজামঙ্গল’র কবিতাগুলি পাঠ করার পর পাঠকের মধ্যে এক ধরনের ঘোরলাগা অবস্থা তৈরি হয়, যা তাঁকে বারে বারে এই কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলির কাছে টেনে নিয়ে আসে! এটি কবি মজিদ মাহমুদের বেশিরভাগ কাব্যগ্রন্থের কবিতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য! তাঁর কবিতার মধ্যে যে মায়াময় পরাবাস্তবতা এবং নতুন নতুন মিথের বিনির্মাণ আছে, তা পাঠককে মোহগ্রস্থ করে এবং পাঠকের মধ্যে একটা ঘোরলাগা অবস্থা তৈরি করে! ফলে কবি মজিদ মাহমুদের কবিতা কেউ একবার পাঠ করার পর তিনি তাঁর গুণগ্রাহী হয়ে ওঠেন ! তাঁর কবিতার মধ্যে অপার্থিব এক টান আছে, যা পাঠক এক পরাবাস্তব জগৎ এর দিকে টেনে নিয়ে যায়!
কবি মজিদ মাহমুদের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘গোষ্ঠের দিকে’ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯৬ সালে! কিন্তু ‘মাহফুজামঙ্গল’র প্রবল জনপ্রিয়তার কারণে কবির এই গুরুত্বপূর্ণ কাব্যগ্রন্থটির কবিতাগুলি সেভাবে সাহিত্য সমালোচকদের আলোচনায় আসেনি! যদিও এই কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলিতে কবি মজিদ মাহমুদ ভবিষ্যতে শক্তিশালী কবি হয়ে ওঠার যথেষ্ট স্বাক্ষর রেখেছেন! ‘গোষ্ঠের দিকে’ নামক কবিতায় কবি পৌরাণিক মিথকে বিনির্মাণ করেছেন এভাবে- 
‘সন্তরণ জানি না বলে এত কাল যারা অপবাদ দিয়েছে 
তাদের নঙ্গার্থক ইঙ্গিত উপেক্ষা করে 
আমি এক বিশাল ভূমির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি 
ওরা জানে সন্তরণ একটি খেলা আর আমি 
একটি ধেনুর পুচ্ছের গুচ্ছ ধরে বিশাল জাহ্নবী পেরিয়ে যাচ্ছি 
ভাগীরথীর কন্যা ঢেউয়ের মতো কালো কুন্তল 
বিছিয়ে দিয়ে একটি বলের মতো লুফে নিচ্ছে আমার শরীর...’
নদীর স্বভাব চরিত্রের সঙ্গে প্রেমিক পুরুষেরা নদীর সঙ্গে অদ্ভুত সাযুজ্য খুঁজে বেড়ান! নদীতে অবগাহন করে মানুষ যেমন গভীর প্রশান্তি খুঁজে পায়! এরকম পুরুষ তার প্রিয় নারীর সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিলিত হওয়ার মধ্য দিয়ে জীবনের শান্তি ও সাফল্যকে খুঁজে বেড়ায়! নদীর যেমন সমুদ্রের সঙ্গে মিলিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় বয়ে চলে! সেরকম একজন নারী পুরুষের আলিঙ্গনে ধরা দিয়েই জীবনকে প্রবহমান রাখেন! নদী ও যুবক কবিতায় সেই কাহিনি চিত্রকল্পের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন- 
‘নদীও নারীর মতো সমর্পিত হয় পুরুষের পায়ে 
পুরুষও তার তৃপ্তি খুজে পায় নদীর জোয়ারে 
আবারো তারা ঘর বাঁধে আবেগে আলিঙ্গনে 
 হরিপুর পলাশবাড়ি চরগড়গড়ি... 
নদীর বুক স্ফীত হয় 
যুবতীর মতো দুলে ওঠে সবুজ
পুরুষের হাত মুষ্টিবদ্ধ হয় কর্ষণে কর্তনে 
যুবক আবারো হয়ে ওঠে যুবক 
নদী শুধু অবিনশ্বর জন্মদাত্রী...’
মানুষের বৈরাগ্যের আভরণ আসলে প্রেমেরই সাধনার লোকায়ত রূপ! প্রিয় সাধনসঙ্গিনীকে খুঁজে না পেয়ে বিরহের করুন সুর জাগিয়ে তোলে একতারায়! সুরের যাতনা কবিতায় কবি ফুটিয়ে তুলেছেন মনের সেই যন্ত্রনাময় আত্মকথন- 
‘এক বোষ্টমী আসবে ভেবে 
একজন পুরুষ হয়ে গেল লালন 
লাউয়ের একতারায় লেঙ্গুট নেড়ে 
তুললো সুর আর সুরের উপমা 
দিন হয়ে গেল শতাব্দী 
তবু এলো না সে 
আসে না কোনদিন পুরুষের মনের মানুষ...’
জাগতিক উপাদান দিয়ে কবি যখন কবিতায় মহাজাগতিক অনুভবকে জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হন, তখন সেই কবিতা মহৎ কবিতার রূপরেখাকে স্পষ্ট করে! ‘অনুপ্রভা’ কবিতায় কবির যে মহাজাগতিক উত্তরণ ঘটেছে তা কবিতাটিতে মহৎ কবিতায় পরিণত করেছে! 
‘আমি এখন একটি মোমের দুইদিক জ্বালিয়েছি 
আমার কাছে উপর আর নিচ 
নিচ আর উপর সমান অর্থবোধক 
আমার চোখের সামনে রাত খুলে যাচ্ছে 
তুলে ধরতে তার কলাপিনী পেখম 
পালাও রাতের শয়তান 
আলোর প্রভু আসছে... 
আমি আলোর শরীর থেকে অন্ধকার খুলে নিয়েছি 
জ্যোতির্মাণ তুমি কোথায় চলেছ 
এখন তোমার শরীরের মধ্যে আমার 
  আগমন টের পায় লোকে...’
‘জানালা কে বাতায়ন’ নামক কবিতাতেও শুনি কবির মননে অলৌকিক অনুভব আর অনুভূতির রহস্যময় উচ্চারণ- 
‘জানালাকে বাতায়ন বললেই 
এক ধরনের অনুভব হৃদয় ভরে যায়... 
কার যেন অশরীর স্পর্শে হৃদয়ে শিহরণ খেলে যায়... 
আমারও আত্মা উন্মন হয়ে ওঠে অজানা বাতাসে... 
অথবা নিপুণ হাতে নকশা খেলা করে 
  জায়নামাজের নকসী জমিন...’
জীবনানন্দ দাশের প্রতি নিজের অনুরাগকে লুকিয়ে না রেখে কবি মজিদ মাহমুদ ‘ভুসুকুপার মূষিক’ নামক কবিতায় জীবনানন্দ দাশের কবিতার জাদুবাস্তবতাকে তাঁর কবিতার লাইনকে দিয়ে তুলে ধরেছেন নিজস্ব চিত্রকল্পে উত্তরাধুনিক ফরম্যাটে- 
‘চমৎকার 
ধরা যাক দু একটা ইঁদুর’ 
“এবার কৃষ্ণরাত্রে খেয়ে গেছে আমাদের জন্মানো ফসল 
মাটি খুঁড়লেই ফালের নিরিখ ধরে 
   হেঁটে আসে মূষিক
তুলে খায় ভ্রƒণের নরম 
তাই নির্ঘাত পড়ে আছে অনাবাদি 
   পতিত জমিন...”
রবীন্দ্রনাথের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসার উচ্চারণ শুনতে পাই ‘বসন্তগত জীবনে’ নামক কবিতায়! কবির জীবনে রবীন্দ্রনাথের কবিতা দক্ষিণের খোলা জানালা! যা কবিকে সজীব করে, উজ্জীবিত করে এবং জীবনের গোপন রহস্যের সব দ্বার খুলে দেয়- 
‘যখন মনে পড়ে রবীন্দ্রনাথ 
এক অজানা বাতাসে দক্ষিণের জানালা খুলে যায় 
হয়তো জোছনার মোহন শরীর ছুঁয়ে যাবে দেহ... 
জোছনায় ভিজে ভিজে আমার আর বাড়ি ফেরা হয় না... 
আজান কিংবা পাখির কূজন ছেড়ে 
তখন মনে পড়ে ঠাকুর 
এবারের মতো বসন্তগত জীবনে!’
এই কাব্যগ্রন্থের ‘পরমা’, ‘দেবদাস’ এবং ‘আবার গৌতম’ এই তিনটি কবিতায় ইতিহাসের বিনির্মাণ আমাদের চমৎকৃত এবং নস্টালজিক করে! ‘পরমা’ কবিতায় কুষ্ঠ রোগের সঙ্গে প্রেমের তুলনার নতুনত্ব বেশ অদ্ভুত লাগে- 
‘আমার মধ্যে প্রেম বাসা বাঁধে কুষ্ঠ রোগীর মতো 
কবন্ধ রাত শেষে তুলে নেয় আমার শরীর রোজ 
নরম মাংস রোদের সালুন স্বপ্নের ঢেউ যত 
আহত কথার সেই সমাচার নারী রক্তের ভোজ 
আকণ্ঠ পান করেন মাতাল ঋত্বিক, আমি কেন 
গৌতম নিমাই নানকের ভুল আপন রক্তে রাখি...’
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত ‘দেবদাস’ উপন্যাসের পার্বতী, চন্দ্রমুখিএবং দেবদাস চরিত্রগুলিকে ‘দেবদাস’ কবিতায় কবি উত্তরাধুনিক চিন্তাভাবনায় নতুন চিত্রকল্পে উপস্থাপিত করেছেন যা পাঠককে ভাবায়- 
‘গভীর নিশীথে একাকী রোজ উঠে আসে পার্বতী 
বৈধব্যের সজ্জাতে বিরহিনী ধরে আছে চরণ 
কিছু একটা উপায় বল দেবদাস, ... 
নারীর মাংসে মেদে একী শূন্যতা ভাবিনী ঈশ্বর... 
আজীবন নিহত আমি অতৃপ্ত বাসনার ঘায়ে 
দুর্গন্ধ লাশ নিয়ে শুয়ে চন্দমুখি ডানে ও বায়ে!’ 
‘আবার গৌতম’ কবিতায় কবি দেখিয়েছেন আধুনিক নাগরিক সভ্যতায় মানুষের উৎশৃঙ্খল জীবনযাত্রা কেমন করে বয়ে এনেছে থম্বোসাইট, ক্যান্সার এবং এইডসের মতো ভয়াবহ মারণব্যাধি! বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপ্রধানদের আগ্রাসী হুঙ্কারে আণবিক বোমার আতঙ্কে বিপন্ন পৃথিবীও মানুষের অস্তিত্ব! কবি বৃক্ষের কাছে সু-বোধের আশায় নতজানু হয়েছেন- 
‘হে বোধি! হে বৃক্ষ সুমতি দাও 
আমার মাথার পরে উড্ডিন হাইড্রো-শকুন... 
শব পচা দূর্গন্ধে ডুবে আছে ভদ্রাসন..... 
আদরে রেখে যাচ্ছি এইডস এর ভয়াবহ জীবাণু
বৃক্ষের তলে আবার জানু পেতে বসেছি গৌতম 
হৃদয়ে উৎক্ষেপণ হোক তোমার বাণী...’
এই কাব্যগ্রন্থের তিনটি উল্লেখযোগ্য কবিতা ‘ময়ূর’, ‘কুকুর’ এবং ‘পাগল’! কবি অপরূপ সুন্দর ময়ূরের সঙ্গে অধরা প্রেয়সীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঙ্গে তুলনা করেছেন! 
‘তোমার নরম পালক মখমলে ঘোমটা... 
টুকটুকে ওষ্ঠ মায়াবী চাহনি তোমার... 
হীরামন পাখি আমার 
সওদাগরের স্বপ্নের কুমারী... 
ওগো ময়ূর অভিমানী কন্যা... 
তুমি কি কোনদিন আসবে না 
তবে কি আমরা কয় যুবক প্রতারিত ক্ষয়ে যাব...’
কুকুর নিয়েও যে অসাধারণ কবিতা লেখা যায়, তা কবি মজিদ মাহমুদ ‘কুকুর’ নামক কবিতায় দেখিয়েছেন! নিজের অপ্রাপ্তির যন্ত্রণার আর্তনাদকে বিরহী কুকুরের করুণ কান্নার সঙ্গে সংযুক্ত করে মানুষ ও কুকুরের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্য এক মানবিক বোধের চিত্রকল্প গড়ে তুলেছেন! 
‘বুকের মধ্যে বিরহী কুকুর কাঁদে 
আকাশ রন্ধ্রে দুঃখের বীজ ছড়ালো সে 
একাকী প্রার্থনা কুকুর আমার 
মানুষের এঁটো বিষ নিঃশ্বাস উচ্ছিষ্টের ভাগ 
বিশ্বস্তের খাদ্য খেয়ে 
শুন্যের বদন রেখে সারারাত কাঁদো...
বোষ্টমী চাঁদ, কুঁইকুঁই করে সিনার ভেতর 
পৃথিবীর সব ব্যথিতের গান দুঃখ মলিন
নিখিলনাস্তি অনাচার বৈষম্য নিয়ে 
ফরিয়াদ কার মাথা তোলে- কবি না কুকুর...’
সৃষ্টিশীল মানুষদের অভ্যন্তরে অন্য এক মানুষ বাস করে! বস্তুজগৎ সর্বস্ব মানুষজন সৃষ্টিশীল মানুষদের কাজকর্মকে পাগলের কাণ্ডকারখানা বলে অভিহিত করেন! কিন্তু এই সমস্ত সৃষ্টিশীল মানুষ থাকেন বলেই পৃথিবীতে বেঁচে থাকা এত আনন্দময় হয়ে ওঠে! কবি মজিদ মাহমুদ পাগল নামক কবিতায় সেই কথা কাব্যিক ইশারায় বলতে চেয়েছেন- 
‘আমার অন্তর্গত পাগল এক লুকোচুরি খেলে 
এপার-ওপার প্রশান্ত ডানা মেলে 
কিছু নেই কিছু আছে 
সোনালী শহর ধসে যায় পাছে 
সুরম্য প্রাসাদ স্কাইস্ক্র্যাপার 
এমন স্বাভাবিক ব্যাপার 
নিত্য-নৈমিত্তিক আমার 
দিন আর রাতের শরীর পার্থক্য কোথায় 
বাতাসের ভেতর হেঁটে যাওয়া 
মাটি আর পানির বিস্ময়... 
ছল করে বেঁচে থাকি আমার বিপন্ন পাগল!’
‘গোষ্ঠের দিকে’ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলিতে কবি মজিদ মাহমুদ ঐতিহ্যের পুনঃনির্মাণ করেছেন উত্তর আধুনিক কাব্য ভাষায়!
নিজের কবিতা সম্পর্কে কবি মজিদ মাহমুদ ভূমিকা করেছেন এভাবে- ‘এই কবিতাগুলো লেখা হচ্ছিল মাতৃগর্ভ থেকে,পিতার ঔরস থেকে, যখন একজন পুরুষ ও নারী ভাগাভাগি করে আমাকে বহন করছিল!... এই কবিতাগুলো বর্ণ ও শব্দ প্রতীকে লেখা হয়েছে!... পৃথিবীর সকল মানুষের দুঃখ এই কবিতা গুলোর মধ্যে নীরবে কাঁদতে থাকে! লুকিয়ে থাকে মরণশীল মানুষের অমরতার মন্ত্র!’ 
একথা এখন জোর দিয়ে বলা যায়, আধুনিক কবি জীবনানন্দ দাশ এবং আল মাহমুদ এর পরে বাংলা কবিতার যে উত্তরাধুনিক বাঁক বদল, তাঁর অন্যতম প্রধান স্থপতি কবি মজিদ মাহমুদ!

Post a Comment

0 Comments