আমিনুল ইসলাম এর প্রবন্ধ

  

Aminul Islam's essay.  Poetry that comes to my mind



যৌথ পারবিারিক দায়দায়িত্ব বিষয়ক টানাপোড়েন, চাকরি, বিয়ে, সন্তান, নদীভাঙ্গনজনিত পারিবারিক বিপর্যয়, পারিবারিক সূত্রে ঘাড়ে পড়া দায়-দায়িত্ব পালনে পর্যাপ্ত সামর্থ্যের অভাব, বহুবিধ ব্যস্ততা এবং মানসিক চাপ। এই হচ্ছে আমার বহুবছরের জীবন-সংসার। তারপরও কেন কবিতার সাথে প্যারালাল ঘর-গেরস্তালি আমার?

প্রথম সত্যটি হচ্ছে, কাবপ্রেম আমার মজ্জাগত বিষয়। ক্ষুধা-তৃষ্ণার মতো যে-দুটি বিষয় আমার প্রতিদিনের সঙ্গী, তা হচ্ছে সংগীত এবং কবিতা। সংগীতহীন-কবিতাবিহীন কোনো দিন নেই, রাত নেই আমার । এটা ঠিক যে আমি একজন স্বল্পচাহিদাসম্পন্ন সাধারণ মানুষ; বহু বহু জিনিস ছাড়াই আমার জীবন চলে সচ্ছন্দে। বহুকথিত আধুনিক মানুষের বহু জিনিস- বহু অভ্যাস ছাড়াই চলতে পারি আমি। কিন্তু সংগীতহীন-কবিতাবিহীন জীবন আমি কল্পনাও করতে পারি না। শিশুকালে পিতা যে-কাব্যপ্রেম সঞ্চারিত করে দিয়েছিলেন আমার মধ্যে, আমি তাই বয়ে চলেছি আজীবন আমার সমগ্র সত্তায়। দিন যায়- বয়স বাড়ে, তার সঙ্গে ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ে আমার কাব্যানুরাগ। একটু ঘুরিয়ে আমি গাইতে পারি-‘যে তোমায় ছাড়ে ছাড়ুক, আমি তোমায় ছাড়বো না কবিতা!’ আমার মনে হয়, এই মজ্জাগত কবিতাপ্রীতি যা আমি লাভ করেছি জন্মসূত্রে পিতার কাছ থেকে, দিনে দিনে তা আমার অভ্যাসের অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। আমি জানি, এবং দেখে আসছি, কবিতা সাংসারিক কোনো কাজে লাগে না; বরং মাঝেমধ্যে তা সংসারে অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবু কবিতাকে ছাড়তে পারি না। দুরন্ত ধূমপায়ীর কাছে সিগারেট যেমন, আমার কাছে তেমনি কবিতা।

বিজ্ঞানের যুগে জন্ম আমার, বিজ্ঞানের উপকরণ ও উপাচারে মধ্যে বসবাস । আমার জীবনে ব্যবহৃত মানবসৃষ্ট সবকিছুই বিজ্ঞানের এবং প্রযুক্তির দান। আমার গান শোনার ইউটিউব, কবিতা লেখার কম্পিউটার, যাতাযাতের গাড়ি, কবিতা পোস্টানোর ফেসবুক-- এসবই বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির অবদান অথচ অদ্ভূত ব্যাপার হচ্ছে, বিজ্ঞানমুখী না হয়ে আমি কবিতাগ্রস্ত। কবিতা আমার জীবনদৃষ্টি। জগৎ আমার কাছে কবিতাময়। প্রকৃতির মাঝে, বিশ্বলোকে আমি দেখি কবিতার ছন্দ এবং বহুরৈখিক সৌন্দর্যের প্রতিভাস। ‘লোক থেকে লোকান্তরে আমি যেন স্তব্ধ হয়ে শুনি / আহত কবির গান। কবিতার আসন্ন বিজয়।’---আল মাহমুদের এমনতর অনুভূতির মাঝে আমি আমার নিজের কাব্যানুভূতির কথা ব্যক্ত হতে দেখি। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন যে তিনি যখন গানের ভিতর দিয়ে জগৎটাকে দেখেন, তখন তাকে তাঁর সত্যিকারভাবে জানা হয়। আর জগৎকে আমি দেখি কবিতার ভিতর দিয়ে। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি পৃথিবীর এবং জীবনের প্রতিটি বিষয়কে কবিতায় উপস্থাপন করতে পারি। যা আমি গদ্যে ব্যক্ত করতে পারি না, যা আমি মুখের কথায় বলতে পারি না, যা আমি সাংকেতিক ভাষায় প্রকাশে অপরাগ, সেসবের সবকিছুই আমি কবিতায় তুলে ধরতে পারি অর্ধ-প্রকাশ আর অর্ধ-আড়ালের শব্দচিত্রে। যে ভালোবাসা সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয় না মুখের কথায় বা প্রেমপত্রে অথবা ইনবক্স মেসেজে তা পূর্ণ-প্রকাশ লাভ করে কবিতায়- ভাষা ও ব্যঞ্জনার সম্মিলিত সহযোগিতায়। প্রকৃতিতে যা দৃশ্যমান তা চর্মচোখে দেখেন সবাই। সবাই যা দেখেন যতখানি দেখেন, কবি দেখেন তারও বেশি কিছু, তারও বেশি অনেকখানি। সাধারণ মানুষ আকাশ দেখেন, পাহাড় দেখে আর কবি দেখেন, ‘আকাশে হেলান দিয়ে আলসে পাহাড় ঘুমায়’ (কাজী নজরুল ইসলাম) পাহাড়ের এই ‘আলসেমি’-টুকু কবি দেখেন, সাধারণ মানুষের তা নাগালের বাইরে। সবাই দেখেন শীত, দেখেন রোদ কিন্তু শুধু কবি দেখেন, ‘হেমন্ত-গায় হেলান দিয়ে গো রৌদ্র পোহায় শীত’ (কাজী নজরুল ইসলাম)। শীতের কি ঠান্ডা লাগে যে তাকে রোদ পোহাতে হয়, তাও আবার হেমন্তকালে! হেমন্তের পাকা ক্ষেতে- যারা কবি নন, তারা দেখেন পাকা ধান, ধানক্ষেতের ওপর পড়া ভোরের সোনালি রোদ; আর কবি দেখেন,‘শুয়েছে ভোরের রোদ ধানের উপরে মাথা পেতে/ অলস গেঁয়োর মতো এইখানে কার্তিকের ক্ষেতে;’ (জীবনানন্দ দাশ) রোদের অলস গেঁয়োর মতো শুয়ে পড়ার ছবি শুধুমাত্র কবির মানসপটেই ফুটে ওঠে, অন্য কারো কল্পনায় ধরা দেয় না। মহাকালের উঠোনে অতিরিক্ত চোখ মেলে কবি দেখেন, ‘আকাশে উবুড় হয়ে ভেসে যেতে থাকে এক আলোর কলস/ অথচ দেখে না কেউ, ভাবে না কনককুম্ভ পান করে কালের জঠর’। (আল মাহমুদ) এই অদৃশ্য ‘কালের কলস’ কবি ছাড়া আর কেউ দেখে না । কবির কাজ এই অতিরিক্ত অবলোকন এবং সেই অবলোকনকে শব্দে-ছন্দে মূর্তিমূর্ত করে তোলা।

প্রকৃতি শুধু রূপের আধারই নয়, একইসাথে তা সুরের লীলাভূমিও বটে। মানুষের মুখে কথা ফোটে, তার কণ্ঠে ফোটে গান। কিন্তু তার হৃদয়েও কথা ফোটে, সুর বাজে অন্তরেও। যারা কবি নয়, তারা সেই সুর সেই কথা শুনতে পান না। তারা শোনেন শুধুমাত্র সেই কথা, সেই শব্দ, সেই সুর,- যা শবণে শ্রবণযোগ্য হয়ে কানে বাজে বা লাগে যথা- বাঁশির সুর, কণ্ঠশিল্পীর গান, বাতাসের ফিসফাস, সমুদের গর্জন ইত্যাদি। কবিও এসব েেশোনন। কিন্তু তিনি অতিরিক্ত হিসেবে তাও শোনেন যা প্রকৃতির অদৃশ্য তারে বাজে, যা মানুষের হৃদয়ের গহীনে উচ্চারিত হয় চর্মনির্মিত শ্রবণেন্দ্রিয়ের নাগালের বাইরে। কবি তার সেই প্রাতিস্বিক অভিজ্ঞতাকে কবিতা করে তোলেন। ‘সন্ধ্যামালতী যবে ফুলবনে ঝুরে / কে আসি’ বাজালে বাঁশি ভৈরবী সুরে’(নজরুলসংগীত) কিংবা ‘হৃদয়ের গভীর গোপনে বুঝি কেউ/ বাজায় হলুদ লাউ/ শুধু তার আঙুলের টানে/ গুমরে গুমরে ফেটে যায় বোশেখের ঘূর্ণিতোলা বেগ।’ (আল মাহমুদ)। সন্ধ্যার প্রকৃতিতে পূরবীর বদলে ভৈরবী সুর শোনার ক্ষমতা শুধুমাত্র কবির, সেই অভিজ্ঞতাকে কবিতা করে পাঠকের নিকট পরিবেশন করাটাও কেবল তারই দায়িত্ব। হৃদয়ের গভীরে বেদনার ডুগডুগি বেজে ওঠার ধ্বনি কেবল কবিই শুনতে পারেন এবং পাঠকের বোঝার সুবিধার্থে তাকে মূর্ত উপমা-চিত্রকল্পে ফুটিয়ে তোলার কাজটি তিনিই করে থাকেন। এরই নাম কবিতা।
অনেক বিষয় আছে, যাদের একথায় বলা যায় অনির্বচনীয় অর্থাৎ সাধারণ ভাষায় অপ্রকাশযোগ্য। সেসবের প্রকাশের মাধ্যমও কবিতা। ‘তুমি আমার সকালবেলার সুর / হৃদয় অলস-উদাস-করা অশ্রু ভারাতুর’ (নজরুলসংগীত)- এই কাব্যিক চরণদুটি যে বেদনার-মাধুরীকেন্দ্রিক অনুভব-অনুভূতি-উপলব্ধিকে প্রকাশ করেছে, তার ব্যাখ্যাও গদ্যের ভাষায় সম্ভব নয়। একে চিত্ররূপ দান করাও অসম্ভব। এর কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারবে না বিজ্ঞানও। কবির কাজ হচ্ছে অনির্বচনীয়ের মুখে ভাষা দান, অশ্রুতির অস্তিত্বে শব্দ জুড়ে দেয়া এবং অদৃশ্যের শরীরে রূপের প্রলেপ লাগিয়ে উপস্থাপন। কবিদের ইনটুইশান বা স্বজ্ঞা অত্যন্ত প্রবল, ঘ্রাণশক্তি খুবই প্রখর, অনুভব-ক্ষমতা সুগভীর এবং দৃষ্টিশক্তি নিবিড়ভাবে অন্তর্ভেদী। সেজন্য তাদের উপলব্ধি-দর্শন-শ্রবণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে আর দশজন মানুষের থেকে অনেকখানি স্বতন্ত্র হয়। তারা তাদের সেই স্বতন্ত্র অভিজ্ঞতা-অভিজ্ঞানকে শিল্পে রূপ দেন অর্থাৎ কবিতা করে তোলেন। সেই সৃষ্টি হয়ে ওঠে প্রাতিস্বিক। তাদের ব্যক্তিগত বেদনাও অনেক সময় অদ্ভুত ধরনের হয়ে থাকে। সেই অদ্ভুত বেদনা মূর্তি লাভ করে কবিতায়। তবে তার প্রকাশ সংবেদনশীল মনকে স্পর্শ করতে পারলে,- পাঠকের সৌন্দর্য-পিপাসার জল হলে, তবেই তা সার্থক সৃষ্টিতে উন্নীত হয়।

সুখের শরীরে বারোয়ারী এঁটো ঘ্রাণ 
আমি চুমে যাই বেদনার গোল নাভি
তুমি দেখাওনি ব্যালান্স শীটের ভাঁজ
আমিও চাইনি ব্যাংক-রিজার্ভের চাবি।

ঊদ্ধৃত কবিতাংশে প্রকাশিত সুখের শরীরের ‘বারোয়ারী এঁটো ঘ্রাণ’- কি বোতলজাত করতে পারে কোনো কসমেটিক-কোম্পানি? কিংবা ‘বেদনার গোল নাভি’ এর ছবি কি আঁকতে পারে কোনো চিত্রশিল্পী? তাতে চুমু দেয়ার উপায়ইবা কোথায়! আবার একজন গভীর-নিবিড় সংবেদনশীল মানুষ হিসেবে প্রেমিকের সুখ এবং আর দশজন ভোগবিলাসী মানুষের সুখের মধ্যে যে-ফারাক, ফলে বিভিন্ন রকমের সুখের সাথে অর্থবিত্তের প্রাচুর্যের সম্পর্কের যে টানাপোড়েন-তাকেও শাণিত ব্যঞ্জনায় ও সাম্প্রতিকতম অনুষঙ্গে ভরে তুলতে চেয়েছে শেষের দুটি লাইন। এভাবেই কবি সুখ এবং বেদনাকে আর দশজনের থেকে আলাদাভাবে দেখেন ও অনুভব করেন বলেই তার এ সংক্রন্ত প্রকাশ বা উপস্থাপনাও গড়পড়তাকে ছাড়িয়ে অ-সাধারণ হয়ে ওঠে। এজন্যই কবিতা! এ প্রসঙ্গে আরেকটি কথা উল্লেখ্য, একবারেই ব্যক্তিগত অনুভূতি-উপলব্ধির বিষয়টিও উৎকৃষ্ট কবিতা হয়ে উঠতে পারে, সেটা নির্ভর করে কবির সৃষ্টিক্ষমতার গভীরতা ও সৃষ্টিশৈলীর ওপর অর্জিত অধিকারের মাত্রার ওপর। একান্ত ব্যক্তিগত অনুভবকে পাঠকের আস্বাদনযোগ্য রসঘন সৌন্দর্যনিবিড় সৃষ্টিতে রূপায়িত করার কাজটি অনেক বেশি কঠিন। জীবনানন্দ দাশ যখন বলেন, ‘আলো-অন্ধকারে যাই-মাথার ভিতরে/ স্বপ্ন নয়-শান্তি নয়-ভালোবাসা নয়/হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়!/ আমি তারে পারি না এড়াতে/ সে আমার হাত রাখে হাতে/ সব কাজ তুচ্ছ মনে হয়,-পন্ড মনে হয়/ প্রার্থনার সকল সময়/ শূন্য মনে হয়/ শূন্য মনে হয়!’,- তখন আমরা এ কবিতাপাঠে কবি-উল্লেখিত বোধের স্বরূপ বা সংজ্ঞা খুঁজে পাই না, কিন্তু এটি পড়ে আমাদের মন ভরে যায়, আমাদের ভাবনা নানাসূত্র সন্ধানে তৎপর হয়ে উঠতে চায়; এটা না ওটা, ওটা না এটা--ইত্যকার চিন্তা ঠোকরায় আমাদের মগজ। এভাবেই জীবনানন্দের একান্ত-অনুভবের বিষয়টি সর্বজনীন ভালো লাগার সৃষ্টি হয়ে উঠেছে। এক্ষত্রে মনে রাখা দরকার-একান্ত বিমূর্ত ব্যক্তি-অনুভবের প্রকাশ শেষপর্যন্ত যেন কোনোকিছু কম্যুনিকেট করে,-স্পষ্ট অর্থ না হোক, অন্তত একটুখানি নান্দনিক রস কিংবা সৌন্দর্যের আভাস অথবা ভালোলাগার মতো অন্য কোনো ব্যঞ্জনা। এটি যেন সর্বোতভাবে রসহীন-নিরানন্দ-অর্থহীন-অদ্ভুত-শব্দসমষ্টিতে পর্যবসিত না হয়ে যায়। সবাই তো জীবনানন্দ দাশ হতে পারবেন না; তবু একান্ত ব্যক্তি-উপলব্ধির বিমূর্ত বিষয় নিয়ে কবিদের কবিতা লিখতেই হয়-অন্তত সে চেষ্টা করে যেতে হয়।

শরতের আকাশ হয়ে বসে থাকি
আমাকে ছুঁয়ে চলে যায়
ভোরের হাওয়া- রাতের ক্লান্ত ঘ্রাণ;
শরতের আকাশ হয়ে বসে থাকি
আমাকে ছুঁয়ে চলে যায়
পেট্রলের ঝাঁঝ-উজাড়গাঙের আঁষ্টেগন্ধ;
শরতের আকাশ হয়ে বসে থাকি
আমাকে ছুঁয়ে চলে যায়
কাঁচাবাজারের ব্যাগ-
শুক্রবারের সাহিত্য সাময়িকীর পাতা;
শরতের আকাশ হয়ে বসে থাকি
আমাকে ছুঁয়ে চলে যায়
মিলনের রিংটোন-বিচ্ছেদের এসএমএস;

 শরতের আকাশ হয়ে বসে থাকি
সকলই যায়-সকলেই যায়
আমাকে ঘিরে থাকে-
শ্রাবণের ট্রেন-ফেল-করা একগুচ্ছ কেয়াপাতার চিঠি।

কখনো কখনো এমন হয়,-কোনো বিমূর্ত বিষয় নিবিড় ও সূক্ষ্ণ অনুভব-অনুভূতি হয়ে ধরা পড়ে মনে। সেটা কখনো আনন্দের, কখনো বেদনার, কখনো সুখানুভূতির, কখনো বেদনার স্পর্শমাখা। কখনো আলো হয়ে, কখনো অন্ধকার হয়ে- মনের মধ্যে বাসা বেঁধে থাকে এসব বিমূর্ত বিষয়। এসব কারও সাথে শেয়ার করার মতো স্পষ্ট হয়ে ওঠে না। সেসব নিয়ে গদ্য লেখাও যায় না। আবার এদের কোনোভাবে প্রকাশ না করা পর্যন্ত মনের ভেতর এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করে। এদের প্রকাশের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম কবিতা। কারণ কবিতা মানেই আলো-আঁধারি; কবিতা মানেই খানিকটা প্রকাশ, বাকিটা আড়াল। প্রকৃতি ও জীবন থেকে মূর্ত বিষয় নিয়ে উপমিত করে, চিত্রকল্প-কল্পচিত্র রচে এদের দৃষ্টিগ্রাহ্যরূপে প্রতিভাসিত করে তুলতে হয়। মাঝে মাঝে এধরনের বিমূর্ত চেতনা দখল করে বসে আমার মন। মনটা ছটফট করে। একধরনের আনন্দের আগুনে পুড়ি, একধরনের বেদনার বৃষ্টিতে ভিজি। কখনোবা ঝড়ো হাওয়ার বেতসবন হয়ে ওঠে মন। মনের সেই অবস্থাকে কবিতা করে তুলতে হয়। তা না হলে অস্থিরতা থেকে মুক্তি মেলে না। এ ধরনের কবিতার সুপরিসীমায়িত অর্থ ঠাহর নাও হতে পারে। এখানে অনুভূতি-অনুভবটাই মুখ্য বিষয়। তার সাথে চিত্রকল্প বা কল্পচিত্র উদ্ভাসিত করে তুলতে পারে কিছু নান্দনিক সৌন্দর্য। সব মিলিয়ে ভালো লাগার মতো কিছু একটা দাঁড়ালেই হয়।

দীনেশচন্দ্রের হাতে কুড়িয়ে নিচ্ছি-
পউষের রোদমাখা দিন,
হাস্নাহেনাশাসিত সাঁঝ,
আর চুম্বনখচিত বটতলার জোছনা;
শুকনোফুলের গন্ধমাখা একটি চৈত্রদুপুরের কংকাল
এবং তার পায়ের কাছে
প্রস্তরীভূত শ্রাবণরাতের একগুচ্ছ মেঘ
পড়ে আছে যেন কারও করস্পর্শের প্রত্যাশায়!
আর হাওয়ায় ওড়ে
শিমুলতুলার মতো একজোড়া গ্রন্থিচ্যুত মন।

কবিতা হচ্ছে বুঝা আর না বুঝার মাঝামাঝি শিল্প। কবি কিছুটা বলেন, বাকিটা পাঠক তার মতো করে বুঝে নেন, কিংবা আবিস্কার করেন। কবিতা রহস্যময় সৃষ্টি। দুর্বোধ্যতা নয়, রহস্যময়তা হচ্ছে কবিতার প্রাণ। চেনা চেনা অথচ অচেনা। জানা জানা অথচ অনেকখানি আজানা। উৎকৃষ্ট কবিতা হয় সমুদ্রের মতো গভীর অথচ স্বচ্ছ, ড্রেনের পানির মতো অগভীর ও ঘোলাটে নয়। ভালো কবিতা আকর্ষণ সৃষ্টি করে; পাঠকমন ডুবুরী হয়ে ডুব দেয় অথবা হাওয়ার পাল তুলে নৌভ্রমণে পাড়ি দেয় অথবা সমুদ্রের সৈকতে দাঁড়িয়ে মুক্ত হাওয়ায় ভরে নেয় তপ্তপ্রাণ। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই তার আবেদন নিঃশেষে ফুরিয়ে যায় না। তাছাড়া পাঠকবিশেষে তার আবেদন ভিন্ন হয়ে ওঠে। কারণ উৎকৃষ্ট কবিতা আবেদনে-অর্থময়তায়-সৌন্দর্যে বহুমাত্রিক ও বহুরৈখিক আকর্ষণ ধারণ করে রাখে। আবার ভালো কবিতাকে আকাশের সঙ্গেও তুলনা করা যায়। আকাশের শেষ নেই। আকাশের কোনো সুনির্দিষ্ট ও চৌহদ্দিঘেরা সংজ্ঞা নির্ধারণ করাও সম্ভব নয়। বিজ্ঞানের আবিস্কার মানুষকে নিয়ে গেছে চাঁদে। মানুষ ঘুরছে অন্যান্য গ্রহের আশেপাশে। নানাবিধ ছবি তুলে পাঠাচ্ছে ভূ-উপগ্রহ। কিন্তু তাতে করে আকাশের কতটুকুইবা জানা হচ্ছে। অথচ আকাশের রহস্যময়তা দুর্বোধ্যতার কালো মোড়কে আবৃত নয়। যতদূর চোখ যায়, যতদর যেতে পারে মহাকাশযান কিংবা দূরবীনের চোখ, ততোদূরই আকাশ পরিস্কারভাবে দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়ে ওঠে। চাঁদ-সূর্য-নক্ষত্র-গ্রহ-উপগ্রহ-ছায়াপথ সবকিছুই চোখের সীমানায় তার অস্তিত্ব মেলে ধরে। আকাশের নীলিমায়, রঙধুনুর রঙে, ছায়পথের আলো-আঁধারিতে, জোছনার যাদুবাস্তবতায়-আমাদের মন ভরে যায়। তারপরও আকাশ তার আবেদন ও আকর্ষণ ধরে রাখে। আমার প্রতিদিন আকাশ দেখি, প্রতিদিনই তাকে দেখে ভালো লাগে। আর কবিতা একধরনের আালো-আঁধারিও। কবিতা দুপুরের মতো শতভাগ উন্মোচিত নয়; সে অন্ধকার রাত্রির মতো সবটুকু দুর্বোধ্যতায় আচ্ছাদিতও নয়। সে জোছনারাতের বনভূমি। দূর থেকে বেশিরভাগই অচেনা, অজানা; যত কাছে যাওয়া যায়, ততোই চেনাজানা হয়ে ওঠে। কাছ থেকে দূরে সরে এলে আবারও সে অচেনা হয়ে যায়। উৎকৃষ্ট কবিতার প্রতিটি শব্দের শব্দার্থ জানা, অথচ অনেক শব্দ মিলে ধারণ করে ভিন্ন অর্থ, পরিহাস, ব্যঞ্জনা, তীর্যকতা, বহুমাত্রিকতা। পঙক্তির ভাঁজে ভাঁজে জড়িয়ে থাকে মেঘে-ঢাকা আলোর উদ্ভাস, ডিজিটাল ক্যামেরায় ধারণের অতীত সৌন্দর্যের ছটা। চিত্র হয় পরিচিতি ভূগোল কিন্তু অর্থ ছুঁতে চায় অদেখা গন্তব্য। সবকিছু মিলিয়ে জানা-অজানার, চেনা-অচেনার, বুঝা-না-বুঝার এবং ভালোলাগা-খটকালাগার মতো রহস্যময়তা সৃষ্টি হয়ে থাকে। কিন্তু সবচেয়ে বড়কথা হচ্ছে প্রকৃত কবিতা একধরনের আনন্দ দেয়, পাঠে উদ্বুদ্ধ করে এবং পাঠকের জন্য অনির্বচনীয় আকর্ষণ ধরে রাখে। ব্যাখ্যা করতে গেলে ভাষায় কুলায় না; বুঝা যায় কিন্তু সবটুকু বলা যায় না। মনের মধ্যে একধরনের আনন্দ-বেদনার অনুভূতি সৃষ্টি করে; অনুভবের আঙিনায় একধরনের আলো ফুটে ওঠে। সে অনুভূতি, সে-আলোর উদ্ভাস গদ্যের ভাষায় সবটুকু তুলে ধরা সম্ভব হয় না। উৎকৃষ্ট কবিতা পাঠককে অতীতে নিয়ে যায় অথচ সে-অতীত ইতিহাসের পাতায় খুঁজতে গেলে অকূলে ভাসতে হয়। মানসম্মত কবিতা পাঠককে কিংবদন্তীর রাজ্যে নিয়ে যায় অথচ সে-রাজ্য বর্তমান সময়ের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়ে ওঠে। উৎকৃষ্ট দীর্ঘাকৃতির কবিতায় এধরনের আলো-আঁধারি ও অনিঃশেষ আকর্ষণ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেশি। তবে ক্ষুদ্রায়তন কবিতাতেও রহস্যের আলো-আঁধারি সৃষ্টি করা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ তেমনি একটি কবিতা। ‘বনলতা সেন ’ তো একজন জীবনানন্দ দাশ ছাড়া অন্য কেউ সৃষ্টি করতে পারবেন না ; অন্যেরা তাদের সাধ্যমতো অতীতকে বর্তমান করে আর বর্তমানকে অতীতে নিয়ে আলো-আঁধারির ভাষায় উৎকৃষ্ট কবিতা রচনার চেষ্টা করবেন, সেটাই প্রত্যাশিত।

উজাড় হৃদয়ের ঝুড়ি পড়ে আছে মাংসের স্তুপে;
প্রতিদান মেলেনি কিছুই-খোসাটাও নয়। সেই
তখন থেকে একটি ব্যক্তিগত ভূগোলে অন্ধগলি
হয়ে থেমে আছে সকল গন্তব্য। আহা ভালোবাসা-
আসহাবে কাহ্ফের কুকুর! তিনশ’ বছর গেল-
হাজার বছর গেল; খঞ্জরহাতে ঘুরলো রাজার
সিপাহি; হৃদয়ের ধন তুমি-তুমিই তার আমৃত্যু
পাহারা; না এর খাতায় হাঁ হয়ে সঙ্গী আজো
বন্দিবাসনার। আর পাষাণচূড়ায় বসে স্বপ্নমূর্তি-
চোখদুটো আকাশের গায়; স্বেচ্ছাচারী দীর্ঘকেশ
পাহাড়ি শেওলার মতো ঢেকে আছে গুহার মুখ।

অভিনবরূপে শব্দের ব্যবহার ও উপমা-উৎপ্রেক্ষা-চিত্রকল্প নির্মাণ একজন কবিকে তার স্বাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠায় কার্যকর সহায়তা দিয়ে থাকে। বাক্যগঠন প্রণালীতেও প্রাতিস্বিকতা অর্জন করতে হয়। তাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে কবিতায় সৃষ্ট অর্থময় সাংকেতিকতার ব্যঞ্জনা ও অনিঃশেষ রূপরসময় সৌন্দর্যের দিগন্ত। নিজ সৃষ্টিতে কবিতার পরম্পরা অক্ষুণ্ন রেখেও একজন শক্তিমান কবি গতানুগতিকতার অনুসারী হওয়া থেকে দূরে থাকেন, তিনি ঝাঁকের কই হওয়াকে প্রতিভাবলে এবং সচেতন প্রয়াসে এড়িয়ে চলেন। ‘পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন’, (জীবনানন্দ দাশ) ‘উটের গ্রীবার মতো কোনো এক নিস্তব্ধতা এসে’, (জীবনানন্দ দাশ) ‘কাল যে আসিবে মুখখানি তার নতুন চরের মতো’, (জসীমউদদীন) ‘অদ্ভুত ঊটের পিঠে চলেছে স্বদেশ!’(শামসুর রাহমান) ‘গাঙের ঢেউয়ের মতো বলো কন্যা কবুল কবুল’, (আল মাহমুদ), ‘লোভের চুমকি হয়ে জ্বলে ওঠে মহাকাশে সহস্র দিনার’, (আল মাহমুদ), ‘ যে বাড়িতে থাকো তুমি /ইচ্ছে করে একদিন খুব বিকেলবেলায় এসে/ ভীষণ আদর করে বাড়িটাকে কোলে তুলে নিই ’,(আবিদ আজাদ), ‘তোমার ধমকে আজ সারাবাড়ি অফিস অফিস’,(আবু হাসান শাহরিয়ার), ‘বাজেটের ঘরে ক্যালকুলেটর মন/গণিতের গাছে হিসাবে হলুদ পাতা’, (আমিনুল ইসলাম) ‘আমি গাঁজাখোর হাটভাঙা হাটুরিয়া/ঘরে ফিরি চুমে বয়েসী চাঁদের গাল’, (আমিনুল ইসলাম) --কবিরা যুগে যুগে এমন অভিনব ভঙ্গিতে অনুভূতি-অভিজ্ঞানকে অনন্য ও উৎকৃষ্ট সৃষ্টি করে তোলেন।
কবিরা হচ্ছেন শুভবাদী ভাবনার মানুষ। তারা চিরদিনই অন্যায় যুদ্ধের বিপক্ষে, সহিংস সাম্প্রদায়িকতার বিপক্ষে, গোষ্ঠীগত হানাহানির বিপক্ষে, অপ্রেমের-অমানবিকতার বিপক্ষে। তারা সকল প্রকার নিষ্ঠুরতা ও দূষণের বিপক্ষে। সব কবি কাজী নজরুল ইসলামের মতো বিদ্রোহী হবেন না, সব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো হৃদয়ের জয়গান গাবেন না, কিন্তু একজন প্রকৃত কবি কোনো অন্যায়ের সমর্থক হতে পারেন না। তিনি সত্যিকারের কবি হলে- এমনকি তার নিজ দেশ বা স্বজাতি, কিংবা স্বধর্মের মানুষ কর্তৃক অন্যদেশ কিংবা অন্যজাতির অথবা অন্যধর্মের মানুষের অন্যায় ক্ষতিসাধনের বিপক্ষেই অবস্থান নেবেন। আবার তিনি ইচ্ছা-অন্ধ থাকতেও পারেন না। রোম পুড়তে থাকলে তিনি নীরো হয়ে বাঁশি বাজিয়ে যেতে পারেন না। অন্যথায় তার পক্ষে মহৎ কবি হওয়া সম্ভব হবে না। আর সেজন্যই ইসরাইলী বর্বরতার আর ইউরোপীয় ডাবল স্টান্ডার্ড নীতির বিরুদ্ধে একজন মহাপ্রাণ গুন্টার গ্রাস চুপ থাকতে পারেনি। তিনি লিখে ফেলেছিলেন ‘যে-কথা আমাকে বলতেই হবে’-এর মতো নিষ্ঠুর সত্যনির্ভর কবিতা। কবি শিল্পের দায় মিটিয়েও তার মানবিক দায়িত্ব পালন করে থাকেন। দুটোর কোনোটিকেই অবজ্ঞা করে নয়, বরং দুটোর মধ্যে সুসমন্বয় সাধন করতে পারার মধ্যেই শিল্পের মহৎ সম্ভাবনা বিরাজমান। প্রকৃতপক্ষে শিল্প-সাহিত্যে জীবনের দাবি এবং শিল্পের দায়-এ দুটোর মধ্যে তালেবানী-বজরঙ্গী বিরোধ নেই; আছে বিভিন্নতাকে নান্দনিক ঐক্যে বাঁধার তাগিদ। কবিতা নগ্ন মানবশরীর নয়; আবার সে শপিং মলে চোখ ধাঁধানো পোশাকে সাজিয়ে রাখা সুন্দর ডামি (পুতুল) নয়। কবিতা হচ্ছে আতিশয্যবর্জিত মানানসই পোশাকে-অলংকারে সজ্জিত জীবন্ত সৃষ্টি--- যার চোখে আলো-আঁধারির খেলা, অধরে অনুবাদ-অযোগ্য রহস্যময় হাসি, খোলাচুলে খেয়ালী হাওয়ার নান্দনিক মাতলামি।
আমি বিশ্বাস করি-একজন প্রকৃত কবি বিশ্ববাসিন্দা, মহাকালের সন্তান। তিনি একটি নির্দিষ্ট ভূখন্ডে এবং নির্দিষ্ট কালে জন্মলাভ করেন বটে, কিন্তু তিনি সকল কালের সকল সমাজের। তিনি হৃদয়ে ধারণ করেন মহাবিশ্ব ও মহাকাল। প্রকৃত কবিকে ভূগোলের ক্ষুদ্র চৌহদ্দিতে অথবা কোনো একটি বিশেষ ধর্মের বৃত্তে কিংবা বিশেষ কালের সংকীর্ণ গন্ডিতে আটকে রাখা যায় না। সূর্যের আলো. চাঁদের জোছনা এবং বাতাসে প্রবাহিত প্রাণ যেমন সকলের, মহৎ কবির কবিতাও তেমনি সবার। মহৎ কবিতা মোনালিসার হাসির মতো। ছবির চেহারাটির সাথে যে-দেশেরই নর বা নারী কিংবা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরই বেশি সাদৃশ্য থাক্, তার হাসিটা সর্ম্পূর্ণরূপেই সর্বজনীন। অনুরূপভাবে যে ভাষাতেই রচিত হোক, উৎকৃষ্ট কবিতা দেশকালনির্বিশেষে সকল পাঠকের। কবির সৃষ্টিতে রচিত হয় কালের সেতুবন্ধন, নির্মিত হয় আন্তঃভূগোল গ্রান্ড ট্রাংক রোড অথবা আন্তঃমহাদেশীয় সিল্ক রুট।

মহাকালের গ্রান্ডট্রাংক রোড ধরে
যে মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছি,
সেখানে শোভিত একুশ শতকের বিলবোর্ড ।
সে বিলবোর্ডের নিচে দাঁড়িয়ে তুমি,
তোমার অধরে শেরশাহী জলসত্র।
তাই বলে এক আঁজলা জল নিয়ে

বিদায় হবো-তা হবে না।
আমি কবি-উটের থলিতে
আমার তৃষ্ণার সেভিংস অ্যাকাউন্ট;
ঘন্টা বাজার পাট চুকিয়ে দিলে
আমিও লিখাবো নাম...
অথবা ঠান্ডা জলে ভরে দাও-
সেই সঞ্চয় নিয়ে পাড়ি দিবো
           রৌদ্রদগ্ধ শতক...

একটি উৎকৃষ্ট কবিতার আবেদন এমন হয় যে-তা কালকে ধারণ করে কালকে অতিক্রম করে যায়; একটি নির্দিষ্ট ভূগোলে জন্মলাভ করেও আন্তঃভৌগোলিক সত্তা হয়ে ওঠে। তার ভেতরে থাকে খাপ খাওয়ে নেয়ার ক্ষমতা, আত্ম-নবায়নের ঐশ্বর্য। সেটাই প্রকৃত সৃষ্টি যা নিজেকে নবায়ন করে নিতে পারে। নবায়নযোগ্যতা না থাকলে একটি সুন্দর জিনিস বা সৃষ্টি কিছুদিন পর তার আকর্ষণ-ক্ষমতা হারিয়ে নিরানন্দ অস্তিত্ব হয়ে ওঠে। মানুষ পুরাতন হতে চায় না, বুড়িয়ে যেতে চায় না। সৌন্দর্যসচেতন মানুষ পোশাক-পরিচ্ছদ আর অলংকারে নিজেকে নতুন সৌন্দর্যে সাজিয়ে নিয়ে চলেন আজীবন। বয়স হয়, শরীরে বয়সের ছাপ পড়ে, কিন্তু সেসবকে অতিক্রম করতে চলে নানাবিধ ও নিত্য নতুন কৌশল এবং নেয়া হয় সাজসজ্জার সচেতন সহায়তা। কবিতা-নাটক-উপন্যাস-চিত্রশিল্প-ভাস্কর্য এসবই পুরাতন জিনিস। কিন্তু যুগে যুগে শক্তিমান নতুন কবি-নাট্যকার-উপন্যাসিক-শিল্পী-ভাস্কর নতুন আইডিয়া এবং সৌন্দর্য সহযোগে নতুন সৃষ্টি উপহার দেন। আকাশে যেমন নতুন চাঁদ ওঠে, নদীতে যেমন নতুন জোয়ার আসে, বসন্ত যেমন নতুন ফুল ফোটে, তেমনিভাবে আমরা পাই নতুন কবিতা-উপন্যাস-নাটক-চিত্রকর্ম-ভাস্কর্য-সিনেমা-সংগীত। বিষয় তো প্রায় অপরিবর্তিত-প্রেম, ভালোবাসা, প্রকৃতি, বন্ধুত্ব, ঘৃণা, বিশ্বাসঘাতকতা, বিশ্বস্ততা, যুদ্ধ, সন্ধি, আনন্দ, বেদনা, বিরহ আর মিলন। সেইসব পুরাতন জিনিস বা বিষয়কে তারা নতুন আঙ্গিকে , নতুন রূপে, নতুন রসে ও প্রাণে উপহার দেন। শব্দের ব্যবহার, উপমা-চিত্রকল্প-কল্পচিত্র-উৎপ্রেক্ষার অভিনবত্ব এবং বলার ভঙ্গি পুরাতনকে নতুন করে তোলার কাজ করে থাকে। আকাশের মতো, নদীর মতো, সমুদ্র-সৈকতের মতো, চাঁদনীরাতের মতো, বনভূমির মতো সেসব শিল্পকর্ম নতুন সৌন্দর্য ও আকর্ষণ নিয়ে পাঠকের মনের দ্বারে কড়া নাড়ে। বিদগ্ধ পাঠকের মনে ‘তুমি কেমন কনে গান করো হে গুণী/আমি অবাক হয়ে শুনি কেবল শুনি!’ কিংবা ‘এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লীজননী!’- জাতীয় আনন্দিত প্রতিক্রিয়া জাগে। এক ব্যক্তি সৃষ্টি করেন, পাঠ করেন বহুজন, তারা মনে করেন- এ তাদেরই মনের কথা, তাদেরই বেদনার বহিঃপ্রকাশ, তাদেরই আনন্দের উদ্বোধন, তাদেরই ভাবনার রূপায়ন, তাদেরই ভালো লাগার রঙ, ভালো-না-লাগার ছায়া। কখনো বিষয়ের সর্বজননীয়তা, কখনোবা শৈল্পিক সৌন্দর্যের সর্বজননীয়তা-একটি সৃষ্টিকে কালোত্তর মহিমা দান করে। উৎকৃষ্ট কবিতা যেন বনভূমি-কখনো তার গহনতা, কখনো রঙের প্রগাঢ়তা, কখনো বৃক্ষের বৈচিত্র্য, কখনো বৃক্ষের শাখায় বেজে ওঠা বাতাসের কোরাস, কখনো গভীর ছায়ার বিস্তারিত প্রশান্তি, কখনোবা একটি হরিণীর একজোড়া চোখের উঁকিঝুকি-ভালো লাগার প্রধান কারণ হয়ে ওঠে। কবিতাতে কখনো প্রেম, দেশপ্রেম, রাজনীতি, আঞ্চলিকতা, ক্ষোভ, দুঃখ, সুখ, কখনোবা শব্দ, কখনো উপমা, কখনো চিত্রকল্প, কখনো উৎপ্রেক্ষা, কখনোবা ছন্দের অনুরণন, কখনো ভাষার গতি, কখনো প্রকাশ ও আড়ালের আলো-আঁধারি, কখনোবা পুরাতন বিষয়কে নতুন রূপে-রসে-গন্ধে উপস্থাপনের অভিনবত্ব- পাঠকের ভালো লাগার কারণ হয়। পুরাতন শব্দকে নতুন ব্যঞ্জনায় ব্যবহারকরণ, প্রচলিত শব্দের সঙ্গে অপ্রচলিত বা নতুন শব্দের বিবাহদান, অতীতের মিথ-কাহিনীকে প্রচলিত বিশ্বাসের বিপরীতে নতুন ধারণা নির্মাণে ব্যবহার, কবিতায় শব্দের নতুন চাবিকাঠি নির্মাণ প্রভৃতি সৃষ্টিশৈলী বা টেকনিক একটি কবিতাকে অভিনব মহিমায় উত্তীর্ণ ও সুপ্রতিষ্ঠিত হতে সফল সহায়তা দেয়।

‘যে ঘুড়ির সুতো নিজহাতে কেটেছো, তাকে খাদে পড়ার ভয় দেখিয়ে কি লাভ?
বঞ্চনার বর্তমান কতদিনইবা দুর্ভাবনার ভবিষ্যৎ ! যেখানে আদালত নেই, সেখানে
অকাট্য সাক্ষ্যপ্রমাণও ছেড়ে-যাওয়া ট্রেনের টিকেট। শুকিয়েছে সম্পর্কের মধু;
আমরা চুষছি কৈফিয়তের কড়ে আঙুল। অতএব রাতজাগা আবেগের দামেও
যা অধরা আকাশ, বিধাতার সাপ্লাই রেজিস্টারে তার বরাদ্দ নেই-এটা মেনে
নেয়াই ভাল। তাহলে কেন আর ভাবনার সিলেবাসে দুশ্চিন্তার অধ্যায় যোগ
করতে যাওয়া? তোমার বাদাম-চিবানো বিকেলে আমি কখনোই বেয়াড়া প্রশ্ন
হয়ে বেজে উঠবো না; তোমার বদনামের লিফলেট হয়ে কোনোদিনও ছড়িয়ে
পড়বো না রাস্তায়। তোমার চলার পথে বৈরীসাঁঝেও রচতে যাবো না আরব-
বুড়ির প্রকল্প। বাধ্যতামূলক অবসরের মতো যে ‘মুক্তি’- আজ তুলে দিলে
হাতে, স্বর্ণকারের শ্রমে ও সূত্রে আমি তাকে ‘সোনার বন্ধন’-এ সাজাবো।
এবং তার জন্য তোমার কাছে কোনো পোস্টপেইড বিলও পাঠাতে যাবো না।’

বিষয় তো তেমন নতুন হয় না। সেই প্রকৃতি, সেই প্রেম, সেই রহস্য। তাই প্রকাশভঙ্গিতে নতুনত্ব বা নিজস্বতা প্রতিষ্ঠা করা একজন কবির মূল দায় ও চ্যালেঞ্জ। আবার প্রকাশভঙ্গি সকল কবির একেবারেই আলাদা আলাদা হবে-এমন দাবিও অবাস্তব। একটি ভাষায় একই সময়ে শতকবি, কোথাওবা শতাধিক কবি কাব্যরচনায় ব্যাপৃত থাকেন। শতরকমের বা শতাধিক রকমের তো প্রকরণ হবে না। তথাপি শব্দ-উপমা-চিত্রকল্প-উৎপ্রেক্ষার ব্যবহারে এবং উপস্থাপনা ভঙ্গিতে যতটা অভিনবত্ব বা প্রাতিস্বিকতা আনয়ন করা যায়, ততোখানিই কৃতিত্ব প্রাপ্য কবির। কবিতায় প্রাণসঞ্চার এবং কিছুটা রহস্যময়তা বা ঘোর সৃষ্টি করতে পারাটা সবচেয়ে বেশি মূল্যবান। কবিতায় প্রাণ না থাকলে তা হবে বুদ্ধির নীরস অনুশীলন মাত্র আর প্রকাশ-আড়ালের আলো-ছায়া সৃষ্টি না হলে সে-কবিতা সৃষ্টি হিসেবে তৃতীয় শ্রেণীতে নেমে যেতে বাধ্য। মনে রাখা দরকার-প্রাণহীন শব্দধাঁধা কোনো কবিতা নয়; তারল্যের ঢলঢলানিও কবিতা নয়। উৎকৃষ্ট কবিতায় আলো ও আঁধারি, কাল ও মহাকাল, জীবন ও শিল্প, রস ও রূপ, কাব্যশৈলী ও কাব্যবিষয় কমবেশি একইসাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে গ্রোথিত হয়ে থাকে। তবে এসব পরিমাপের কোনো বাটখারা বা গজফিতা নেই। কবিতার প্রয়োজনেই এসবের পরিমাণের ও প্রকৃতির রকমফের হয়ে থাকে। একজন দক্ষ চিত্রশিল্পী যেমন সুনিপুণতায় ঠিক করে নিতে পারেন রঙ-রেখার অনুপাত, দক্ষ কবিও একইভাবে ঠিক করে নেন তার কবিতার অলংকারের প্রকৃতি ও পরিমাপ। শেষপর্যন্ত কবিতায় যদি প্রাণ সৃষ্টি হয়, যদি জড়িয়ে-থাকা-ব্যঞ্জনায় প্রকাশের আলো ও আড়ালের ছায়া রচিত হয়, তবে সৃষ্টি হিসেবে তা উৎরে যায়। কবিতার ভাষা অন্ধকারের নয়, রোদেরও নয়, কবিতার ভাষা হচ্ছে জোছনার। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে প্রাণ সৃষ্টি। যে-সৃষ্টি নিজেই প্রাণহীন, সে তো পাঠকের প্রাণকে স্পর্শ করতে পারবে না কখনোই। একারণে কবিতায় কল্পনা, বুদ্ধি, জ্ঞান, প্রকরণ-সচেতনতার সঙ্গে প্রয়োজন হৃদয়ের দান। যে-কবিতায় কবির হৃদয়ের বিনিয়োগ নেই, তা উৎকৃষ্ট কবিতায় উন্নীত হতে অসমর্থ। তাই উৎকৃষ্ট কবিতায় কম বা বেশি রোমান্টিক মনের ছোঁয়া ও ছায়া থাকে, তা সেই কবিতা ইজমের বিচারে রোমান্টিক হউক, আধুনিক হউক, অথবা হউক উত্তরাধুনিক। খান আতাউর রহমান লিখিত ও সুরারোপিত এবং বশীর আহমদ গীত একটি গানের বাণী হচ্ছে:

সুরের বাঁধনে তুমি যতই কণ্ঠ সাধ
তাকে আমি বলবো না গান
সে তো শুধু নিস্প্রাণ সানিধাপামাগারেসা
নেই তাতে হৃদয়ের দান।।

মরমের ছোয়া যদি শিল্পীর কণ্ঠে না থাকে
গানের কবিতা যদি জীবনের ছবিটি না আঁকে
তাকে আমি বলব না গান।।

গান আহা গান যাকে বলে
লক্ষ মনের মধু স্বপ্ন
লক্ষ হারিয়ে যাওয়া লগ্ন
তার বুকে ধিকিধিকি জ্বলে।

সে-জ্বালার অনুভুতি যদি ওই অন্তরে থাকে
হৃদয় উজাড় করে সুরে সুরে ঢেলে দিও তাকে
তাহলেই গান হবে গান
না হলে তা নিস্প্রাণ সানিধাপামাগারেসা
নেই তাতে হৃদয়ের দান।।

অনুরূপভাবে শব্দের বাঁধনে আর প্রকরণ-কৌশলে যা-ই রচিত হউক, তা প্রকৃত কবিতা হবে না যদি তাতে না থাকে হৃদয়ের দান। মানুষ তার বুদ্ধিকে সন্তোষ্ট করার জন্য বিতর্ক প্রতিযোগিতা শোনে আর হৃদয়-মনের পিপাসা মেটাতে গান শোনে, কবিতা পড়ে। মনে রাখতে হবে, কবিতা আর ধাঁধা এক জিনিস নয়। ধাঁধায় থাকে শব্দের চালাকি; ক্ষণিকের জন্য চমকে দেওয়ার মতো একধরনের কথার মারপ্যাঁচ থাকে কিন্তু কোনো প্রাণ থাকে না। কবিতার মূল শক্তি প্রাণ।

আমি আমার কাব্যভাবনা নিয়ে কিছু কথা বললাম। তবে সবচেয়ে প্রণিধানযোগ্য কথাটি এই যে, কবির কবিতাভাবনার প্রকাশ ঘটে মূলত তার কবিতায়। তাই কোনো কবির কাব্যবোধ সম্পর্কে গভীরভাবে জানার প্রকৃষ্ট পথ হচ্ছে তার কবিতার নিবিড় ও ব্যাপক পাঠ, সেক্ষেত্রে তার নিজের কথা সহায়ক হতে পারে মাত্র।

আমিনুল ইসলাম

জন্ম : ২৯ ডিসেম্বর ১৯৬৩ চাঁপাইনবাবগঞ্জ ।
নব্বইদশকের কবি-প্রবন্ধিক-নজরুল গবেষক।


প্রকাশিত গ্রন্থ


কবিতা

তন্ত্র থেকে দূরে-(২০০২); 
মহানন্দা এক সোনালি নদীর নাম-(২০০৪);
শেষ হেমন্তের জোছনা(২০০৮); 
কুয়াশার বর্ণমালা (২০০৯); 
পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি-(২০১০); 
স্বপ্নের হালখাতা(২০১১); 
প্রেমসমগ্র-(২০১১); . 
জলচিঠি নীলস্বপ্নের দুয়ার-(২০১২); 
শরতের ট্রেন শ্রাবণের লাগেজ-(২০১৩); 
কবিতাসমগ্র-(২০১৩); 
জোছনার রাত বেদনার বেহালা : (২০১৪) ;
তোমার ভালোবাসা আমার সেভিংস অ্যাকউন্ট ( ২০১৫) 
প্রণয়ী নদীর কাছে (২০১৬), 
ভালোবাসার ভূগোলে(২০১৭); 
নির্বাচিত কবিতা ( ২০১৭); 
অভিবাসী ভালোবাসা ( ২০১৮) , 
জলের অক্ষরে লেখা প্রেমপত্র (২০১৯) 
বাছাই কবিতা ( ২০১৯), 
প্রেমিকার জন্য সার-সংক্ষেপ ( ২০২০),
হিজলের সার্কিট হাউস(২০২১)।

ছড়া

১.দাদুর বাড়ি-(২০০৮);
২. ফাগুন এলো শহরে-(২০১২)
৩. রেলের গাড়ি লিচুর দেশ (২০১৫)।

প্রবন্ধ

বিশ্বায়ন বাংলা কবিতা ও অন্যান্য প্রবন্ধ-(২০১০)।

গবেষণা

নজরুল সংগীত : বাণীর বৈভব ( বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত)


পুরস্কার/সম্মাননা

(১) রাজশাহী সাহিত্য পরিষদ সাংগঠনিক সম্মাননা ২০০৪;
(২) বগুড়া লেখক চক্র স্বীকৃতি পুরস্কার ২০১০ ;
(৩) শিশুকবি রকি সাহিত্য পুরস্কার ২০১১ ;
(৪) নজরুল সংগীত শিল্পী পরিষদ সম্মাননা ২০১৩
(৫) এবং মানুষ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭ ;
(৬) দাগ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৮
(৭) কবিকুঞ্জ পদক ২০২১;
(৮) পূর্বপশ্চিম সাহিত্য পুরস্কার ২০২১।

Post a Comment

4 Comments

  1. লেখাটি পড়লাম। খুব ভালো লাগলো।

    ReplyDelete
    Replies
    1. জেনে খুশি হলাম। অনেক অনেক ধন্যবাদ।

      Delete
  2. কাব্যপ্রীতির খোঁচা যে খেয়েছে সে কখনো কবিতা থেকে দূরে সরে আসতে পারে না, সে নেশাগ্রস্ত হবেই। "ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়" হলেও ভাব প্রকাশে কবি কিন্তু কবিতারই আশ্রয় নিয়ে থাকেন। "কবিতা বন্দী চার দেয়ালে" বললেও কবিই কিন্তু দেয়াল ভেদ করে কবিতাকে ছুড়ে দেন মহাকালের অসীম লোকে।
    বিজ্ঞানের ধাক্কায় মানুষের অন্তর যখন মরে যাবার উপক্রম হয় তখন মানুষের মাঝে নিহিত আত্মশক্তিকে জাগাতে তাই কবিকেই বলতে হয়:
    ".. .. .. .. .. .. এই-
    সব মূঢ় ম্লান মূক মুখে
    দিতে হবে ভাষা —"

    প্রবন্ধকারের ভাষায় "এখানে অনুভূতি-অনুভবটাই মুখ্য বিষয়। তার সাথে চিত্রকল্প বা কল্পচিত্র উদ্ভাসিত করে তুলতে পারে কিছু নান্দনিক সৌন্দর্য। সব মিলিয়ে ভালো লাগার মতো কিছু একটা দাঁড়ালেই হয়।" -- কবিতা রচনার ক্ষেত্রে এটাই আসল কথা।

    .
    .
    চমৎকার বিশ্লেষণধর্মী ও চিন্তাপ্রসূত লেখা; নতুন কবিদের সুকাব্য রচনায় উদ্বুদ্ধ করার অসাধারণ প্রয়াস। এ তো সাবলীল ভাষায় উপস্থাপিত শক্তিমান এক কবির 'কবিতার ক্লাস'। যে ক্লাসে এটেন্ড করার জন্য মনোযোগী শিক্ষার্থী অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষায় থাকে। নতুন কবিরা এ প্রবন্ধ পাঠে উপকৃত হবেন আশা রাখি। কাব্যপ্রীতির খোঁচা খাওয়া মানুষগুলো এগিয়ে আসুন। যান্ত্রিকতার এ যুগে আমরা নতুন নতুন কবিতা উপহার পেয়ে একটু হাঁপ ছেড়ে বাঁচি।

    ReplyDelete
    Replies
    1. নিবন্ধটি সম্পর্কে গভীর নিবিড় অবজারভেশন উৎসারিত অভিমত। নিবন্ধটির লেখক হিসেবে আমি আনন্দিত। অনুপ্রাণিত। অনেক অনেক ধন্যবাদ। এবং নতুন বছরের শুভকামনা--শুভ নববর্ষ ১৪২৯

      Delete