মাশরুরা লাকী’র কবিতা

 
Poems by Marura Lucky




পাখি ও পথশিশুদের মিছিল

কফির মগে চুমুক দিতে দিতে 
ঝুলবারান্দায় চোখ রাখি
পথশিশুদের দেখছিলাম-
ছোট্ট ছোট্ট রাঙা রেশমমুখ
অপুষ্টির ভাস্কর্য সারা দেহ জুড়ে 
দাঁড়িয়ে থাকে ফাস্টফুড দোকানের  সামনে
চিকেন ফ্রাইয়ের ঘ্রাণ
চোখদিয়ে দেখে দেখে রসনার স্বাদ
কৃত্রিম ঢেকুরে
পাখিদের মতো পথশিশুদেরও
নক্ষত্রের তরঙ্গে লুকিয়ে থাকে  মায়ার ঘাতক 
এ সমাজে ওরা লাঞ্চিত, খণ্ডিত, বিভাজিত। 
অথচ-
মানুষের অভাবে কতো  খাঁ খাঁ পরিত্যক্ত বাড়ি 
নিজের ভেতর শব্দ করে উচ্চস্বরে  হাঁসে, কাঁদে
এই ইহলোকে পথশিশুর পিপাসিত চোখে
সাদাভাত মহলের ছবি আঁকে
কোন কোনদিন ধোঁয়া ওঠা গরমভাত 
পুড়ে যায় আগুনের লোলুপ শিখায়।
হে নগরপিতা -
ওরা রাজপথে খুঁটে খাওয়া পাখি
মুখগুঁজে পড়ে থাকে নীলবেদনায় 
ভাতের কারাগারে বন্দী। 
একদিন পাখি ও পথশিশুদের মিছিলে আসবেন।



ঈশ্বরের স্যান্ডেল পায়ে হেঁটে যাব 

শরীর যেন এক বিভীষিকাময় মন্দির 
অবাধে ঘন্টাধ্বনি বাজে
তুলির আঁচড়ে যে পুরুষ অধুনা গীত চারুবাক
দৃষ্টির স্তব্ধতায় ঘড়ির কাঁটা টিকটিকটিক
অস্থিতে-মজ্জায় সহস্র জোনাকি 
মধ্যরাতে নিজের ভেতর ঢেউ চঞ্চল 
শ্রাবণের বৃষ্টিতে লজ্জার পাহাড় ধ্বসে পড়ে 
সমুদ্র মাতৃকার গহ্বরে 
মগজের চুল্লিতে মাংশের উৎসব    
ওই ধাঁধাময়স্বর্গে কেবল সুবাস উদাস
দূর হিমালয়ে বিজলির হাসিতে  ছুটে আসে মোমের দুধ 
ভূ-পৃষ্ঠে অগ্নি প্রপাত
ত্রিলোকে ভীষণ একা সম্রাজ্ঞীর অসংখ্য ছায়াছবি 
নক্ষত্রের আয়নায় চিরকাল বেদনা। 
একদিন -
ঈশ্বরের স্যান্ডেল পায়ে হেঁটে যাব বহুদূর 
চতুর্থ আসমানের উচ্চতায় নিজেকে মেলে ধরবো
জিব্রাইলের মতো।




যুদ্ধের উৎসব

পরাধীনতার স্তব্ধতায়  
চোখের ত্বকে ভেতরগামী অনিদ্রা 
স্বপ্নে প্রায়ই দেখি-
ভৌতিক শহরে মুণ্ডুহীন মানুষের মিছিল
খুনের নেশা ধরে যায় জটিল ব্যধিতে 
স্বপ্নে এবার কি দেখছি জানো?
লেখার জন্য চাউ কলম পেয়ে যাই 
বইয়ের পাতার মত তুলতুলে বালিশের ওপর বিশালাকৃতির নারকীয় শিং 
আরও দেখতে পাচ্ছি
প্রাসাদের মতো   
গণকবর 
তীক্ষ্ণ নখের আঁচড়ে ছিন্নভিন্ন আত্মা, ক্রন্দনরত 
দামাল তরুণীরা ভয়ের সীমানা পেরিয়ে ছুঁয়ে দেয় আমাজন
নিজের কঙ্কালের সাথে মৃত্যু নিয়ে আলোচনা শেষ 
দৃষ্টিতে এখন শুধু জ্বলছে আগুনের দামামা
নরক বৃক্ষে ঝুলে থাকা পাখি তাদের পরিচয় 
তারপর-
বৃদ্ধের সমান অনাচারী দৈত্যের ছায়া তুমি
দৃষ্টিকোপে পুড়ছে
নিখিলবিশ্ব দূর আকাশে মধ্যবিত্তের পেটের চুল্লিতে হতাশ
পুঁজিপতির লেজে বাঁধা গরীবের রোদেলা দুপুর
শরীরে বসবাস করে ক্ষুধার্ত পাকস্থলী 
চোখ খায়, হৃদপিণ্ড খায়, খায় আত্মাকে 
বিক্ষোভ আর দুর্ভিক্ষে তলিয়ে যাচ্ছে স্বায়ত্তশাসিত  অন্ধকার গুহা
ভৌগোলিক হৃদপিণ্ড রক্তে ভেসে যাচ্ছে 
ক্ষমতা পিয়াসী তুমি, পায়ের নিচে লাশের পর্বত  
ইনভাইট করেছো
যুদ্ধের উৎসবে আত্মঘাতী মৃত্যুতে।



বিচিত্র কঙকালের ভাস্কর্য ছুঁয়ে 

মানুষের মেদবহুল শরীর দেখলে 
ঝুলবারান্দার মতো মনে হয়
সেখানে দাঁড়িয়ে পুরাণ ঢাকার কতো বিচিত্র রূপ দেখি
নোংরা পোশাক পরিহিত কিশোর 
ছেলেটা ঠ্যালা গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে 
সামনের দ্রুতগতির মোটা টায়ারের
দুটো চাকা'কে বলছে-
আহ সেক্সিটা
হঠাৎ -
মোটরসাইকেলের শোভাযাত্রা
নরকের বিকট আওয়াজে হৃদপিণ্ড কাঁপছিল
পাশেই কবরস্থান থেকে বিচিত্র কঙকালের ভাস্কর্য ছুঁয়ে
ঘোড়ার পিঠে চড়ে এলেন মহাবীর আওরঙ্গজেব 
শিংওয়ালা স্বৈর'র ক্রমাগত আদেশের ধারাপাতে
উত্তেজিত জনতা 
আসন্ন পার্টির ছেলেরা রাস্তায় 
গলা হাঁকিয়ে স্লোগান দেয়
আর অন্নহীন বস্ত্রহীন মানুষেরা জড়ো হয়ে
ক্ষুধার্ত কুকুরের মতো জিব বের করে বড় বড় নিঃশ্বাস নেয় 
বাঁচার শ্রমে রুগ্নের পায়ের বল 
বেড়ে যায়
নেতাদের গুড়-মুড়ির কথায় ঘুম ভাঙে ওদের
প্যাকেট খাবারের লোভে গরীবের 
পেটে দৌড়ায় মহা-অজগর।




কবি শামসুর রাহমান 

গতকাল স্বপ্নে দেখলাম, 
নক্ষত্রের দেয়াল থেকে নেমে আসছে
শাদা ধবধবে ডানাবিহীন এক দেবতা
অক্ষরের রেণুতে জ্বলছে অসংখ্য বর্ণমালা 
গড়িয়ে পড়ছে শূণ্যতা থেকে ভূ-মণ্ডলে।
আমার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো যে ছবি 
সূর্যের আলোকের চেতনায়, বললেন-
আমি, কবি শামসুর রাহমান। 
তোমার চুলের ঢেউয়ে যে যন্ত্রণা 
মাতৃভূমির বিস্তৃত কুয়াশার হাত
চাঁদের আলোর নিচে দাঁড়িয়ে একা আদম
আমাকে আরেকবার জন্ম দাও বাংলাভাষার কবিতায়।
হাত বাড়াও, ডানা মেলো বিশ্বসভায় 
তোমার কলমের প্রণোদনা দেব 
তারার সমান, স্বপ্ন নয়।

Post a Comment

1 Comments

  1. অনেক লাইনে বেশ ভালোলাগা আছে। 👌

    ReplyDelete