গিরীশ গৈরিক এর কাব্যবোধ

 

Girish Gairik's poetic sense

আমি কাগজ কলমে কবিতা লিখি। যখন কবিতা লিখি তখন কাগজকে মনে করি আমার হৃৎপিণ্ড আর কলমকে মনে করি ছুরি। তাই আমি হৃৎপিণ্ডকে রক্তাত করে কবিতা লিখি। সেই কারণ বশত আমার প্রতিটি কবিতা-আমার জীবনেরই অংশ। অথচ আমার জীবন থেকে কবিতা অনেক বড়। সে জন্য কবিতা আমার থেকে অনেক দূরে-দূরে বসবাস করে। যদিও আমি তাকে প্রাণপণে কাছে পেতে চাই।

মাটির অনেক গভীরের জল যেমন সুপেয়। তেমনি করে জীবনের অনেক গভীরতম বোধই-আমার কাছে কবিতা। তাই আমি কবিতার মাধ্যমে নিজেকে খনন করি। গর্ভবতী নারীর মতো পুলক অনুভব করি, দুঃখ অনুভব করি।

আমার কৃষক পিতা যেমন লাঙলের মুঠোটা শক্ত করে ধরে শস্যক্ষেত্র তেরি করে ফসল ফলায়। আমিও তেমনি করে কলম হাতে কবিতার শস্যক্ষেত্র চাষ করি। তবুও মনে হয়-আমার কলমের কালির কী এমন সাধ্য আছে, যা-পিতার গায়ের ঘামের তুল্য হয়। তাই আমার কবিতা প্রতিতুলনাহীন আজন্ম ক্ষুধার্ত।

আমার গৃহিণী মা যেমন ধানের মলম শেষে ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে পড়ে এবং সেই ঘুমলি অবস্থায় পিতাকে একান্ত কাছে আসার সুযোগ করে দেয়। আমার কাছে কবিতা আনেকটা তাই, যা-ঘুমন্ত অথচ কামহীন নয়।

কোনো কোনো শিশুর জন্মের পূর্বে তার নাম রাখ হয়। আমার কাব্যবোধ তাই নয় কী? হয়তোবা তাই! অথচ আমার কোনো কবিতার মা বাপ নাই এবং নাই কোনো মৌলিক জন্মবীজ। কারণ আমি জীবনের নামতা পাঠে জেনেছি-শিল্পসাহিত্যে মৌলিক বলতে কিছু নাই, এমনকি নাই কোনো মৌলিক কবি কিংবা জ্ঞান। বস্তুত সকল জ্ঞান কিংবা কবিতা আমরা বস্তুজগৎ ও প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করি মাত্র। সেই অর্থে আমি একজন কবিতা সংগ্রহকারী। প্রকৃত প্রস্তাবে নই কোনো কবি। 


Post a Comment

0 Comments