কুশল ভৌমিক এর গুচ্ছ কবিতা

Kushal Bhowmik's poems





বাড়িটি দাঁড়িয়ে আছে 


বাড়িটি দাঁড়িয়ে আছে দ্বীপের গাম্ভীর্য নিয়ে 
গুহায় ঘুমিয়ে পড়া অলস সময় 
তবু স্থির কোন চিত্রকল্প এঁকে 
কড়া নাড়ে বহুদিন না খোলা কাঠের কপাটে 
ঝিঁঝিঁর ডাক,উত্তাপহীন জোনাকির আলো
আছড়ে পড়ে শ্যাওলা জমা প্রাচীন সিঁড়িতে।

মেহগনি পাতার ফাঁকে কেঁপে ওঠে চাঁদ 
বৃষ্টিফোঁটার মতো জোছনার ছাই 
টুপটাপ ঝরে পড়ে 
পৌরাণিক পুকুরের জলে-
খলবল হেসে ওঠে খলিসা পুঁটি
দানকিনার ঝাঁক 
বিষণ্ণ কানিবক পাহারা দেয় মায়ের শ্মশান 
বাঁশঝারে কেঁদে ওঠে কানাকুহা
টিনের চালে আছড়ে পড়ে হুতুমপেঁচার দল। 

টিনচালা দুটো ঘর হাত ধরে সারারাত হাঁটে 
গল্প করে,অযাচিত আড়ালে ঠোঁটে আঁকে
মৌণচুম্বন। 

বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো 
বাড়িটি মেশে না কারো সাথে 
ভেসে থাকে দিন রাত 
ইতিহাসের ঘোলাটে ডোবায়

আমাদের বাড়িটায় মানুষের পদচিহ্ন নেই
উঠোনজুড়ে ঈশ্বর হাঁটে। 






বেদনার হায়ারোগ্লিফিক্স


এই যে আমি তোমার অবাধ্য ঠোঁটে
লেপ্টে দিলাম একটা কষ্টার্জিত দুপুর
আস্ত একটা কবিতার বই
বেদনার হায়ারোগ্লিফিক্স 

এসবই আমার ক্ষুধার্ত প্রেমের নামতা। 

যদি খুলতে পারো সমীকরণ 
জীবনের ভগ্নাংশের ভাঁজ
দেখবে-

আকাশে ঝুলে আছে আইনস্টাইন 
পাতার ভেতর খসে পড়ছে রবীন্দ্রনাথ 
আর পৃষ্ঠাজুড়ে লালনের একতারা 
আর আমি-
ব্রহ্মান্ডের মতো তোমার খোলা পিঠে 
দুলে ওঠা বেণির শিল্পকলা দেখে দেখে 
প্রশ্নবোধক চিহ্নের ভেতর ঢুকিয়ে দিই বিস্ময় 

জীবন বস্তুত বিরাম চিহ্নের মাস্তানি! 




প্রত্যয়

সূর্যটাকে দখল করেছে মালটি-কালার সময় 
অন্ধকারের আচ্ছাদনে মরে গেছে রোদের প্রতিভা দ্বিধার দুপুরে
মায়ের উনুনে ভাত ফোটার গন্ধ 
এটুকুই কেবল শান্তি আমাদের।

কবিতার বীজ পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে
মাফিয়ারা
যেখানে পুঁতবে সেখানেই জন্ম নেবে কবিতাবৃক্ষ!
মাফিয়া এবং কবিতা 
দু'য়ে মিলে অদ্ভুত স্থাপত্যকলা 
এরিস্টটল প্লেটো বলে দিন;বলে দিন-
পোয়েট্রি এবং পলিটিক্স সমার্থক শব্দ কি না?

হোঁচট খেলে মানুষ সতর্ক হয় 
সৎ ও সতর্কতা বিপরীত শব্দ জেনে 
উপভোগ করি উঠে দাঁড়াবার আনন্দ। 


হোঁচট খেয়ে যে হাসতে জানে

পরাজয় তার  সিলেবাসে থাকে না কোনোদিন।





জীবনানন্দ 

যতবার মানুষ হতে চেয়েছি 
কীভাবে কীভাবে যেন ততবার 
হয়ে গেছি দুর্বোধ্য পান্ডুলিপি 
শরীর বিদীর্ণ করা কালো অক্ষর 
তাই আশ্রয় পায়নি 
প্রেমিকার ফর্সা আঙ্গুলে। 

সবিতা,সুরঞ্জনা, সুচেতনা
সচেতনভাবেই
উপেক্ষার চাদর বিছিয়ে
মিলিয়ে গেছে হাওয়ায়।
মলাটবন্দি হবার আকাঙ্ক্ষাগুলো 
দুঃখে অপমানে লজ্জায়
বন্দি হয়েছে মরচে পড়া লোহার বাক্সে
উঁকি দেবার ঝুঁকিটুকু নেয়নি।
শ্রীহীন জীবনে লাবণ্য থেকেছে অধরা
কাছে থেকেও দূরের আক্ষেপে
আমি কতবার মরে গেছি। 

নিঃসঙ্গ চিলের মতো 
কেঁদে কেঁদে উড়ে গেছি এ ঘাট থেকে ও ঘাটে
ফেরি করেছি  বিপন্ন বিস্ময় 
মন্দাক্রান্ত বিষণ্ণতা অথবা দুঃখ
এসবই আমার নাম হতে পারতো 
অথচ আমার নাম জীবনানন্দ! 

কয়েকটা কবিতার বিনিময়ে 
তোমরা কেউ নেবে এমন একটা জীবন? 

Post a Comment

0 Comments