নূরে জান্নাত এর কবিতা





প্রেম বিদ্ধ ক্রুশ

মনের কাবায় মালিক থাকে
আরশজুড়ে ফুল
ফুলের গায়ে গতর গেঁথে
প্রেম বিদ্ধ ভুল।
যিশুর কষ্ট খুব ছিল না
ক্রুশ মাখ ঐ হাতে
বন্ধ দু চোখ খুললো আঁধার
পাপ ফুরাবার প্রাতে।
নদীর শরীর ফুলের কাফন
ঢেউয়ের হাসি ঢাকে
শিশুমনে আজান ধ্বনি
প্রেমের মতোই মাখে।




ব্যথা ভালোবাসি

বিচ্ছেদের ব্যথার মতো করে
ভালোবেসো না হয় আমায়।
জানাজার নামাজের মতো মনে রেখো।
কাফণের কাপড়  কবরের ঢাউড
আর শেষ গোসলের পানির মতো
কাছে ডেকো।
রাস্তায় ঘুমে থাকা অর্ধনগ্ন বোধ হীন
যৌনকর্মীর বোধ ফিরে যে এক ফোঁটা চোখ জল আসে..
ঐ জল টুকু পরিমাণই পাশে রেখো।
ব্যথা বড় সুন্দর, পবিত্র ;শুভ্র!
যতো ব্যথা দেবার দিও
তোমার মনের সর্বোচ্চ ঘৃণা মেখে।
আমি ব্যথা ভালোবাসি
তোমার মতো করেই ব্যথা ভালোবাসি।
এটা চরম সত্য যে  তোমার মতো করে ব্যথা ভালোবাসলেও
তোমাকে আর ভালোবাসিনা।
ব্যথার আত্মা আমার নির্জীব শরীরে তুলে নেবার পর থেকে
তোমাকে আর ভালোবাসিনা
আমি ব্যথা ভালোবাসি।





জীবন চক্র

প্রজাপতির খোলসে তুমি আমি
আমাদের চোখ জুরে স্বপ্ন
কিছু হতাশা আর ক্লান্ত জল
বলে যায় বকের মতো 
সাদা দাঁতে হেসে 
আমাদের মুক্তি দাও,
বেঁধে রেখোনা সমুদ্র লোচনে!
নবযৌবনে দেহ যুগল 
উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের মতোই দূরত্বে!
হাঁড়িতে ভাত নেই 
মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই অযুহাতে
আমরা নিত্যদিন না ছুয়েই 
উপোসে রাখছি জবা গোলাপ আর 
খালি চায়ের কাপটাকে।
মানি ব্যাগের গাঁ জুড়ে ঘামের গন্ধ
পতিতার চামড়ায় কিছু 
আক্ষরিক সংখ্যা কতো কি করে চলছে 
বস্তুগত চাহিদার দুনিয়ায়!
ম্যালথাসের জনসংখ্যা তত্বের 
কিছুই বুঝে উঠিনি আমরা,
অর্থনীতির দারিদ্রের দুষ্ট চক্রের মতোই তবু
ঘুরতে থাকে আমাদের প্রেম!
আমরা ভালবাসি, খুব ভালবাসি
লাক্সারি হোটেল বা বিলাস বহুল জীবনে নয়
এজীবন পার করে দেব নিরেট
সফেদ ভালোবাসায়!
কাচের এপাশ থেকে যখন 
ওপাশে কথা পৌঁছালো 
তোমার কাছে
তখন আমাদের চারপাশটা
ক্ষুধার্ত পেট হয়ে গেল 
আর গরুর গাড়ির চাকার ঘুরতে থাকা সেই
অভাবী ক্যাঁড় ক্যাঁড় শব্দটা আসতে থাকলো!
আমরা ভুলে গেলাম আমাদের।
দুটো  কালো মহিষের গল্পে
ঘন দুধ ওলানে না নেমে 
নেমে এলো চোখ জুড়ে!
চাঁদ তখন বসে বসে বুড়ি হয়
আর সূতো কাটে জীবনের চড়কায়
একজন পুরুষ!




তিন পৃথিবী দূরত্ব

প্রতীক্ষারা যখন প্রজাপতি হয়ে উড়ে যায়
তখন আমি ফুলকে ছুড়ে তীর্থে যাই।
পুঃনর্বার যদি এ পৃথিবী সৃষ্টি হয়
আমি আর উপাসনায় তোমাকে রাখব না
একথা দিয়ে বসি গঙ্গায় স্নান করে ওঠা 
একা সূর্যটাকে।
তুমি দূষিত সঙ্গমের মতোই 
মাঝে মাঝে আমার অপেক্ষার 
অবমাননা করো।
রাতের গা থেকে যখন প্রভাত 
খুলে নেয় বিষদ বস্ত্র
নগ্ন দিন শুরুতেই সব ভুলিয়ে দেয়। 
বুকের মধ্যে আস্ত তুমি, 
তোমার বুক,মাথা, মুখ
আর- আর আমাদের মান অভিমানে 
পার করে আসা বারো বছরের 
সংসারের দেওয়ালে চার হাত। 
তোমার শিশু সুলভ জড়িয়ে ধরে ভালোবাসি
বলাটা তীর্থের পথ সরিয়ে দেয়
তিন পৃথিবী দূরত্বে




এখনও শরতকাল

শেষ একমুঠো চাল মা যখন উনুনে বসালো 
তখনও ভাঙ্গেনি আমাদের ঘর।
আকাশ ভরা শরত মাখা মেঘ,
প্রেমিকের প্রথম চুম্বুনের মতো
কাশফুল যৌলুস বাড়িয়ে যায় প্রকৃতির।
কুমার পাড়া মূর্তি দিয়ে ঘর সাজাতে
 ব্যস্ত - পূজোর আভাসে।
কুমারী স্তনের চৌকশতা গিলে খেতে চায়
যেভাবে পুরুষের চোখ
সেভাবে দু-কূল গিলতে চায়ছে নদীর যৌবন।
রাতের সাথে চাঁদের সঙ্গমের আলো
যমুনার কালো জলে ঢেউ খেলে যায়।
নিরব পায়ে ঘর ছাড়ি অনিকেতের সাথে
জোঁনাকীর প্রেম বুঝতে।
ফিরে এসে দেখি কামুক যমুনা
কামের তাড়নায় গিলে খেয়েছে আমার 
প্রিয় মা মাটি ও বকুল গাছটা!
এখনও শরতকাল!
এখন আর আমার কিছুই নেই!
এখন আমি যমুনাকেও বধ করেছি
কাজল এ দুচোখে!.




কাজল চোখের কবর

নিয়তির দরজায় কে দাঁড়ানো?
পুরোনো পাপ, প্রেম, প্রাক্তন?
নাকি শ্মশানে পুড়িয়ে ফেলা ছাই
জমে জমে হয়ে ওঠা
কাজল চোখের কবর!!
মনের ঘর থেকে বিদেহী আত্মার
মাগফেরাত কামনা শেষে
শেষ রাতের শেষ রুকুতে
কলবেল বেজে ওঠায়
কৌতুহলি একজোড়া চোখ
হৃদয়ের পিকহোলে।




Post a Comment

0 Comments