আত্মহত্যার আগে
আড্ডায় নেই,তর্কে নেই।
তোমাদের করুণায় দিব্যি বেঁচে আছি
বুকে নিয়ে অলীক পাহাড় ।
দূরেই তো আছি
আমার কণ্ঠস্বর চেপে ধরে বেঁচে আছে জলপাইরঙা দেশ
মতবাদ মাড়িয়ে চলে যাচ্ছে পতাকা শোভিত গাড়ি ।
আমি নিশ্চুপ...দেখে যাই অর্ধমৃত স্বদেশের ভাঙাচোরা মুখ ।
মৃত্যু,
চলো এইবার শুয়ে পড়ি
মুখোমুখি তুমি আমি
আমাদের কবরে পা রেখে জেগে উঠুক
আনাঘ্রাত উৎসবের পাললিক ভূমি
পুনশ্চ: প্রেমিকাগণ
ক্ষমা করবেন প্রেমিকাগণ,
আপনাদের গায়ে এখন সাদা কাফন, কর্পূরের ঘ্রান
আপনাদের ভাবতে ভাবতে রোজ রাতে স্বপ্নে দেখি সতেরটি
জোনাকি
আমি মধ্যজ্যোৎস্নায় পাহাড়ের নগ্নতা দেখে হো.. হো.. হেসে উঠি
গত পৌষে হারিয়েছি আপনাদের শয্যাসঙ্গী হবার যোগ্যতা
আমি পাপ ও দেহের উত্তাপে ভুলে ছিলাম মৃত্যু্ পরিচয়...
ক্ষমা করবেন প্রেমিকাগণ,
আপনাদের দেহজ উত্তাপ আমায় ভাসাতে পারেনি
দণ্ডিত সময়ের রেখাগুচ্ছ
নির্মানের নির্মিতি শিখে যাওয়া পা
ধাবমান রহস্যের পথপূরাণের গল্প লিখে রেখে যায়
রঙচঙা প্রাণস্পর্শ মেপে মগজের গলি জুড়ে ওঙ্কার
দৌড় কিংবা সদ্যজাত পুরুষের হাতে নিশর্ত রেখাগুচ্ছের দাপট
আঙুলের দুঃসাহস খোঁজে অমুদ্রিত বয়সের স্বাধীনতা
শূন্যতা নেই ।
শোন,তপোবনের পবিত্র বালিকা
সাংবিধানিক সময় ছেপে দিচ্ছে নপুংসক প্রেসযুগ
চিঠি
কিছু উৎসবের চিৎকার অবজ্ঞা করে যাই ।
পাহারায় বসে থাকে সাতাশটি শরৎকালের ভোর
আমার তেমন কেউ নেই
পাশাপাশি বসে থাকার
আমার কেউ ছিলো না কখনো
হঠাৎ কেটে যাওয়া ধমণী ছুঁয়ে দেখার ।
অথচ, আমিই একদিন তার আলোর বিপরীতে দাঁড়িয়েছিলাম
তার স্নায়ুর আহবানে বৃষ্টি নামিয়েছিলাম ।
এই তো সেদিন...
সে চলে যাচ্ছিলো দূরের ট্রেন ধরে
তার চোখে এতোটুকু ঘৃণা দেখিনি তখোন !
অথচ, এতোটা দিন সে আমায় ঘৃণা করে এসেছে
এতো বেশি নির্জীব কেন হয়ে যাচ্ছি আমি !
এতো বেশি অনাগ্রহ...সবকিছুতে আজকাল !
কোথায় লুকোবো আমি ?
আমার সব আলো নিভিয়ে
সে ফিরে গেছে ঢের আগে
আমার শূন্যতা গুলো শুয়ে থাকে নিরুত্তাপ সময়
বড্ডো বিদঘুটে দুঃসময় যাচ্ছে ইদানীং
আপনাদের কবিতাগ্রন্থে এরকম দুঃসময়ের একটি কবিতাও নেই ।
ষড়ৈশ্বর্য ডানায়
যাবতীয় বিস্ময়ের ঘোরে নেচে নেচে যায় পলাতক সুর
ভালো থাকা পায়রাগুলো আকাশ ডানায়
অনন্ত অসীম এক সূর্য ধরে আছে ।করতলের রোদ
যেন বিছিয়ে দেওয়া পবিত্র রূপ, রুপোর আঁচল
সামনে বিস্মৃত সবুজ,
অন্ধ আলোয় জুড়ে যাওয়া এক অতৃপ্ত বাড়ুক
আর কিছুটা সরলরেখার মতো উজ্জ্বল সুর... লেপ্টে আছে
যাবতীয় উপাচার নীলাভ, সুন্দর...অথচ ভোরের পথ কিংবা প্রকীর্ণপাণ্ডুলিপিতে কার যেন সুখ দেখেছি মৃত্যুহীন
এ শহরে বহুদিন বৃষ্টি পড়েনি, হাওয়ায় পুনর্নির্মিত হয়নি গম্ভীর সারসের বুক। আমাদের মৃত্যুগুলো বহুদিন আহাজারি করে করে যেন কোথায় ধূসর প্রজাপতির ডানা হয়ে মিশে গিয়েছিল। খোঁজ রাখে নি তার কেউ কখনো। সুন্দর সবুজের এই দিনে শেষবার ডুবে যেতে যেতে দেখেছি শ্যাওলাটে জলে তোমার ছবিটা তখনো হয়নি আঁকা!
কোথায় যাব ওই দারুন নক্ষত্রের ক্ষণে!
চারপাশে মানুষের অতলান্তিক শূন্যতা
আর হাওয়ায় হাওয়ায় ঝুলে থাকা পাহাড়ের মত মুমূর্ষু প্রশ্বাস
শকুনের ডানার ভেতর কে একা জাপটে ধরেছিল মায়াবী স্পর্শ
সেই থেকে ঢেউ জল কিংবা ফেনায়িত সৈকতে
প্রতীক্ষায় থেকে গেছে গানচিলের নিঃসঙ্গ ডানা
যাবতীয় নিষেধের কালে নেচে নেচে যায় মানবিক শোক
হাড়ের কাঁপন লেগে জ্যোৎস্নায় পোড়ে করুণ উদ্যান
এমরান হাসান
জন্ম-১৩ নভেম্বর ১৯৮৭, টাঙ্গাইলপেশা-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী
প্রকাশিতব্য কবিতাগ্রন্থ- হাওয়াঘরের মৃত্যমুদ্রা (২০২২)
0 Comments