কবিতাগুলো কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে ২০১২ সালে প্রকাশিত পোয়েট্রি অফ দ্যা তালেবান বই থেকে নেয়া। ভাষান্তর করেছেন মীরওয়াইস রহমানি ও হামিদ স্তানিকজাই। সম্পাদনা করেছেন অ্যালেক্স স্ট্রিক ভান লিনশোটেন ও ফেলিক্স কিউন। দুজনেই কিঙস কলেজ লন্ডনে ওয়ার স্টাডিতে পিএইচডি করা।
ভাষান্তর : কায়েস সৈয়দ
নিজের তৈরি জেলখানা
চোখের অশ্রু গলা বেয়ে নিচে নেমে যায়, হে ঈশ্বর!
আফগান ইতিহাসকে দেয়া হচ্ছে অপবাদ
আমাদের পাগড়ী বিশ্বে যেমন ছিলো সমুন্নত
আজ তা হচ্ছে অবনমিত, হে ঈশ্বর
পাপিয়া কঁাদে আর মনে মনে ভাবে তাদের বনভূমির কথা
বিদেশীরা তাতে নিয়ে এসেছে শরৎ
তারা ডলার দিয়ে কিনছে তাদের সম্মান আর শ্রদ্ধা
সকল প্রতিদ্বন্দ্বী একত্রিত হয়েছে এদের বিরুদ্ধে, হে ঈশ্বর!
এই পাগল তাদের লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়ে মারছে
তারা আমার ইচ্ছেগুলো ধূলিসাৎ করে দিয়েছে
দুঃখজনক, আমরা যাযাবর হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি
আর এসব আমরা নিজেরাই করেছি
একটি কান্নার স্রোত নিচে বয়ে যায়
যখন আমি স্মরণ করি আফগানিস্থানের কথা
অসহায় আফগানরা সব জায়গায় ভুগছে
তাদের নিয়ে কথা বরার মতো কেউ নেই, হে ঈশ্বর
আমরা কোথায় যাবো, কার কাছে কঁাদবো, হে ঈশ্বর?
হে আমার ঈশ্বর, ধ্বঙস করো নিষ্ঠুরতা
গজল
কতো সুখের ভালো সময় আমারা পার করেছি
কোনো দুঃখ ছিলো না কোনো কষ্ট ছিলো না
কিন্তু সেসব সময় চলে গেছে
সেখানে গেলে আমার সেসব সময়ের কথা মনে পড়ে যায়
ছিলো কতো আচার অনুষ্ঠান
দুখি ফুলগুলো আবার কি করে হাসলো
বনভূমিতে লেগেছিলো যে শরতের হাওয়া তা কেটে গেছে
সমাবেশে নেই কোনো আনন্দের বক্তৃতা
সময়ের ছিলো নিজস্ব আনন্দ, যা চলে গেছে
আমার মন, ভবিষ্যতে কারো আবির্ভাব দেখে প্রতারিত হয়ো না
এগুলো ছিলো মিথ্যে রঙ যা পার হয়ে গেছে
ইসলাম গনি ওরাকজাই
.....................................................................................................................................................
ও ঈশ্বর! এই মানুষগুলো
ও ঈশ্বর! এই মানুষগুলোকে পরিবর্তন করে দাও
যাতে কারো হাতে কেউ নিহত না হয়
শেষ করো নিষ্ঠুরতা
যাতে একটি পিঁপড়াও কারো হাতে মারা না যায়
ও ঈশ্বর, সবকিছুর জন্য তুমি একটি আত্মা দিয়েছো
এই জিনিসগুলো যেনো কারো হাতেই মারা না যায়
প্রত্যেকের নিষ্ঠুরতা জমিয়ে রাখো তাদের চোখে
তাতে কোনো জীবন্ত প্রাণী কারো হাতেই নিহত হবে না
কোনো পথিক দঙশিত হবে না কারো কুকুর দ্বারা
আর কারো কুকুর নিহত হবে না অন্য কারো হাত দ্বারা
২২ জুন ২০০৮
মোহাম্মদ হানিফ হাইরান
.............................................................................................................................................................
আহত
আমি তাকে পাথর ছুড়ে মেরেছি মৃদু অশ্রুবিন্দু দিয়ে
তারপর আমি আমার দুঃখগুলো ফঁাসির কাষ্টে ঝুলিয়ে দিয়েছি
মনসুরের মতো
তাদের মতো যারা কাফেরদের হাতে নিহত হয়েছে
আমার হৃদয়কে আমি গণ্য করেছি শহীদদের একজন হিসেবে
হতে পারে তা তোমার স্মৃতির শারাব
যা আমার হৃদয়কে মাতাল করছে পঁাচবার
আমি আমার প্রেমকে যতোই গুপ্ত রাখি
এই সহজিয়া গজল তার চেয়ে আরো প্রকাশ করে বেশি
একজন যে দিয়েছিলো তোমাকে তার বিশ্বাস
সে-ই তোমাকে করেছিলো অবহেলা
আমি আহত হয়েছিলাম, আমার ভাই হয়েছিলো শহীদ
আমার সৎ মা আমাকে রেখেছিলো নজরে
খয়েরখওয়া এর হে কবিতা!
আমি তোমার পূর্ণতা গ্রহণ করবো
যদি তুমি পথভ্রষ্ঠদের একজনকে পথ দেখাও
২২ জুন ২০০৮
খয়েরখওয়া
......................................................................................................................
যুবতি বধূকে হত্যা করা হলো এখানে
আজ এমন একটি খারাপ সঙবাদ শুনলাম
যে আমার হৃদয় কেঁপে ওঠলো
কিছু গ্রামবাসীর জন্য আজ
লাল আগুন জ্বলছে নীল আকাশে
বিয়ের সেই কাব্যিক পরিবেশ থেকে
আমার ঈশ্বর, কান্নার রোল ভেসে আসে
তাদের মনোরম গানগুলো ছিলো রক্তে লাল
প্রতিটি জানালায় নেমে এলো ঝঁাপ
সময়ের ফেরাউন নাক ডাকছিলো সেখানে
রক্তের বন্যা ভেসে আসে সেখানে
আকাশে বিচরণ করলো কালো বিপর্যয়
পৃথিবীতে নেমে এলো দুঃখের আচার
একজন মা তার সন্তানের শোকে কঁাদছেন
সকালে নেমে এলো কালো সন্ধ্যা
আজ এমন একটি খারাপ সঙবাদ শুনলাম
যে আমার হৃদয় কেঁপে ওঠলো
যুবতি বধূকে হত্যা করা হলো এখানে
বর আর তার আকাঙ্ক্ষাগুলো শহীদ করা হলো এখানে
আশায় ভরা হৃদয় লুট করা হলো এখানে
শধু ওই দুজন নয়, গোটা দলই শহীদ হয়
শিশুরা শহীদ হলো
ভালোবাসায় ভরা গল্প শহীদ হলো
আঘাত করা হয় তাদের সকলের মানবাধিকার
প্রেমিক শহীদ হলো, প্রিয়তমা শহীদ হলো
সহযাত্রী বন্ধুরা শহীদ হলো
হায়! কতো সুন্দর যৌবন শহীদ হলো
কনে ভিজে গেছে লাল রক্তে
ভেঙে গেছে তার গয়না, শহীদ হলো
হাতগুলো তার রক্তে লাল
নেমে এলো ঝড় তার সুন্দর জীবনের উপর
আজ এমন একটি খারাপ সঙবাদ শুনলাম
যে আমার হৃদয় কেঁপে ওঠলো
অথচ বাগ্রাম থেকে খবরটিকে প্রেস নিয়ে আসে
এই বলে ‘‘আমরা সন্ত্রাসীদের হত্যা করেছি”
আমরা কিভাবে জানবো একটি বিয়ের আনন্দ?
“আমরা আজ অনেক আফগানকে হত্যা করেছি
আমাদের ধর্মযুদ্ধের জন্য এটা হুমকি
এজন্যই আমরা ওই শিশুদের হত্যা করেছি”
তারা কনের কাছে যোদ্ধাদের নাম দেয়
তারা বলে যে, আমরা কেবল আমাদের শত্রুদের হত্যা করেছি
প্রেসিডেন্ট আবার একটি কমিটি গঠন করে
“যাও গিয়ে দেখে আসো কাদেরকে তারা হত্যা করলো”
একটি কথাও না বলার জন্য তাদের পকেট ভরে গেছে
কারণ তারা আমাদের স্বজনদের হত্যা করেছে
যেনো লাল বাহিনী এসেছিলো তাদের নিজের বাড়ি
আজ এমন একটি খারাপ সঙবাদ শুনলাম
যে আমার হৃদয় কেঁপে ওঠলো
কিছু গ্রামবাসীর জন্য আজ
লাল আগুন জ্বলছে নীল আকাশে
১৮ আগস্ট ২০০৮
এলহাম
.................................................................................................................................
কায়েস সৈয়দ
সম্পাদনা : হস্তাক্ষর
সহযোগী সম্পাদক: বিরাঙ
নবীগঞ্জ, বন্দর, নারায়ণগঞ্জ
0 Comments