এ আমার ফুলের গল্প
ভাবতে গেলেই ফড়িংয়ের মতো উড়ে যায় হিংস্রতা। যার আছে বিশাল পটভূমি, যেন সবুজ রক্তে লেখা সীলগালা কোনো নোটবুক। পাতায় পাতায় তার শুধুই শব্দ, শেকলমুক্তির...
ফুলের কথা উঠলেই মনে পড়ে দুর্বাঘাসের কথা, তার বুকেই শুয়ে আছে অসংখ্য ফুল। সূর্যের মতো সটান দাঁড়িয়ে থাকা মিনারে স্তবকসমূহ সেই ফুলের কাঁটা দিয়েই কাঁটা তোলে বাংলা।
প্রাণ দিয়ে বিনিময় হলো প্রাপ্তি, আর তোমাকে করে স্মরণ উন্মাতাল হই লাল। আজ তার ফিরে এলো প্রাণ--কী করে কাঁদব বলো অতীত নিয়ে!
মায়ের মতোই তুমি যখন আমার মুগ্ধতা হও, গল্প করি ভিনদেশে তোমার মূর্ছনায়।
নিরিবিলি শয়ন কক্ষ
এক আঁধারে নেমে আসুক ধ্বনি
কুকুরের কান্নার--
উৎকণ্ঠার ঘেউঘেউ মিলিয়ে যাবে
মাটির শিকড়ে।
অনেকগুলি জুতায় করে শব্দ আসবে
ধুলো আসবে বালি আসবে
খালি পায়ে আসবে কিছু রক্ত-আত্মীয়
কোনো এক আজানের পর
চিরসুখ কভারেজ করে
পাখিদের সঙ্গে ডানা ঝাপটাবে রূহ
তার অনেক অভিযোগ থাকবে
হয়তো ফিরে আসবে আবার
অভিযোগ সঙ্গে করেই
শুয়ে পড়ি তোমাদের দিকে চেয়ে
অথচ তোমরা আমাকে রেখে চলে যাবে!
এক নজরুলের আরেক নজরুল
নজরুলকে ভাবতে গেলে আমি নজরুল হয়ে ওঠার চেষ্টা করি
ব্যর্থ হই-- তারপর দাবানল ছড়াই অগ্নিবীণার ফুঁৎকারে।
ভাবতে থাকি চাঁদপুর টু চুরুলিয়ার দৈর্ঘ্য পরিক্রমা
কীভাবে যেতে পারি সুরময় মৃত্যক্ষুধা ভুলাতে;
যেতে যেতে পাঠ করি ধুলিমাখা তাঁর দর্শন
কাব্য আমপারা দিয়ে শেষ করি রমজান
গজল গেয়ে সমৃদ্ধ করি কণ্ঠ আর রূহ!
নজরুলকে দোকানি হতে দেখে আমিও দোকানি
তাঁকে কবি হতে দেখে আমি হই কবিতাপ্রেমী
তাঁর গীতসন্ধ্যায় সুর তুলে আমি হই তারার ফুল--
এসব করতে করতে শেষে নজরুল হয়ে উঠতে পারি না
হই শুধু ব্যর্থ প্রেমিক!
নজরুল চির অমর এক পাখি
ঠোঁটে তাঁর তৃণ, মগজে উর্বর রাইফেল
লেটো গান আর খাকি পোশাক
প্রকাশ করি তাঁর ঝাঁকড়া চুলের নার্গিসী প্রণয়
এবং সেইসব শব্দ-- যার আছে অগাধ কোমলতা।
তুমি এক বিশ্বকবি...
কাঠের ত্রিশূল
সকালে ফুটে ওঠে ফুল
কাননে সবুজ জারুল
বেদনার দেবদারু বন
কোলাহল মাছিদের মন
পেরিয়ে যায় বুনো শ্বাস
ভোগ ও ত্যাগের বাতাস
গন্ধ বিলায় বকুল
পর ও অপরের মূল
শোভিত পরাণের দ্বার
খুলে যায় এপার ওপার
গৃহপাখি পরে মালা দুল
গোল গোল কাঠের ত্রিশূল
বাবা যায় চা খেতে রোজ
দোকানের নিয়মিত খোঁজ
ভুলে যাই আমি তার প্ল্যান
বৃক্ষের ছায়া আজ ম্লান
গড়িয়ে দুপুরের তেজ
সূর্য নাড়ায় তার লেজ
এ-বেলা খাইনিকো পান
সূর্যোদয়ের সে জাপান।
কাপের হাতলে রঙিন রজনীগন্ধা
সবুজ চাপাতার বিস্কুট ঘ্রাণে ঘুমন্ত শ্লোগান
জেগে ওঠে কাপ পিরিচের উড়াল স্রোতে,
কাপের ভিতর ভাসে ফেণিল গন্ধরাজ
কর্পোরেট টেবিলের রঙে।
চা পাতা তোলা পাহাড়ি রমনীর মুখে শাদা হাসি,
বিরাম নেই বিস্তৃত প্রকাণ্ডে-
কাপের হাতলে ঝুলে রঙিন রজনীগন্ধা।
লাটিম হাতে জয় করতে হবে নাইলন বেড়া,
ছোটবেলার মোরগ ধরার স্মৃতি আঁকড়ে আছে জালের গর্তে- যেখানে নাইলোটিকা দলবেঁধে শিকার করে ঘাসফড়িং।
ওসব ঘাসফড়িং মুখ লুকায় মাছরাঙা পাখির পালকে ওম্ ধারণে!
কচি পাতার ঘ্রাণে আবারও ঘুম টুটে যায়,
চোখ কচলে বেরিয়ে পরে আঙুরদানা- টকটকে লাল বর্ণচ্ছটা।
সবুজ পাতার চা সবুজ বনেই বাড়ে বনজ পাখিদের পরিশ্রমে তাদেরই প্রচ্ছদে।
দন্ত্যন ইসলাম
মূলত নিভৃতচারী একজন কবি। ১৯৮৫ সালে তার জন্ম। পেশায় একজন সাহিত্যকর্মী হলেও কবিতা লিখে তা প্রচারে বেশ অনীহা তার। তবে অন্য লেখকদের লেখা প্রকাশ করতে তিনি যথেষ্ট সচেতন এবং বেশ উৎসাহী। তাই তো প্রতিষ্ঠা করেন 'জেব্রাক্রসিং প্রকাশন' নামের একটি পাবলিশিং হাউজ। দন্ত্যন ইসলামের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায়।
বাংলা সাহিত্যে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে তিনি বিজনেসে মনোনিবেশ করেছেন। এ পর্যন্ত তার ১টি একক কবিতাগ্রন্থ 'রঙমাখা নীল দরজা' ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয়। তিনি 'জেব্রাক্রসিং' নামে একটি লিটলম্যাগ সম্পাদনা করেন।
সাহিত্যের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কে থাকতে চান সারাজীবন।
দন্ত্যন ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ: dontyono85@gmail.com // 01731-651345
0 Comments