অনন্ত পৃথ্বীরাজ-এর গুচ্ছ কবিতা

 


কালের কুঠার


পাতাগুলো ক্রমশ ঝরে পড়ছে; বৃষ্টির জল ঝুপঝাপ তাল দেয়

ঝরাপাতাদের ক্ষণিক স্থান বদল স্রোতের টানে ভেসে যায় প্রিয়তমার মুখ।

অভিমান আর অনুরাগে বাস্তুভিটে ত্যাগ করে নিরুদ্দেশের হাওয়ায় হাওয়ায় 

শালিক পাখি তার প্রিয়জন খোঁজে। ভালোবাসা, আর বাদামী রং ধারণ করো না ।

দেয়ালের কফিনে সোনালি রোদের ঝিলিক; এবার সব বিশেষণ বাদ দাও;

আমি কাজে বিশ্বাসী; নীতিকথা পরে থাক ঘোলা জলে। কারণ শর্ত সাপেক্ষে-

আপেক্ষিক স্পন্দন চলে না। ভালোবাসা ভালো থাকো; আমাকে চুরমার হতে হবে!



আসমা আফরিন 


গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল একটি বাগানের শোভা বাড়িয়ে দেয়

মৌ মৌ গন্ধে মাতোয়ারা চারদিক; ভ্রমরার আনাগোনা বাড়ে।

হেমন্তের বিকেলে পাখিদের ঘরে ফেরার তাড়া নেই

শহরে নাগরিক ব্যস্ততা; ট্রাফিক জ্যাম, স্টপওয়াচের মতন 

গাড়িগুলো  দাঁড়িয়ে আছে দিগন্তের পানে মুখ তুলে; সারিবদ্ধ।


বিষণ্ন অবসাদে শরীরের তাপ- চোখ বয়ে নামে সারা দিনের ক্লান্তি।

চাকরিজীবী দম্পতি; চোখের পানে তাকানো যায় না। দিনের শেষে

ক্লান্ত দু’জন। সব কাজ শেষে করে ঘরে ফেরার পালা। কোলের শিশুটি

ফিডার খায় না। মায়ের টুপটাপ স্তনের পানে তাকিয়ে থাকে- অপলক।


আসমা আফরিন, তোমাদের সেই ব্যস্ত দিনগুলো আজ আর নেই;

তুমিও নেই! পৃথিবীর ওপাড়ে কী মেঘলা আকাশ আছে? যেখানে

কী ইলশেগুড়ি বৃষ্টির পর রংধনুতে হলুদ রোদ পড়ে; অথবা অন্ধকার! 





পুরানা পল্টনে এক সন্ধ্যা


জনাকীর্ণ শহর, বিচিত্র কোলাহলে সিটিবাস আর রিক্সার দুরন্ত ছোটাছুটি। 

ঘরে ফেরা লোকগুলো দারুণ উদ্বিগ্ন ‘আজাদ পোডাকস’এর শেষ প্রান্তে রাস্তায় স্টাইক; 

মিছিলে অনবরত শ্লোগান চলে : চশমা পড়া বুবুজান গদি ছাইড়া চইল্লা যান...

পল্টনের মণিসিংহ ভবনের নিচে একগুচ্ছ পুলিশ চা দিয়ে পাউরুটি খায়; সাথে সিগারেট

এপাড়ে কেএফসি’তে থোকা থোকা খাবারের ছড়াছড়ি গন্ধে মাদকতা আনে। অনেকে এঁটো রাখে

বুবুক্ষু কুকুরের মত দু’জন টোকাই আর একজন রিক্সাওয়ালা অপলক চেয়ে থাকে !


ক্রোধ ও একটি ভোরেরজন্ম


আমি স্বপ্নে দেখেছি ভোরে, সখির চুড়ির তালের মতন রূপোর বৃষ্টি ঝরে

বিন্দু বিন্দু শিশিরে স্নাত তোমার অবাধ্য চুল, সোনালী অধর; ডাঁসা নিতম্ব

ওগো প্রিয়া, আমাকে জাগিও না আর, প্রভাত সূর্যের শকট দুর্ঘটনায়

হৃদয় মন্দিরে উত্তাপ ছড়ায় আরও একবার তোমাকে দেখার লোভ।


ওগো আন্না আমার, গল্প অথবা কাব্যের জমিনে ফুল ফসলের ধ্যান

অপ্সরা প্রেমিকা তুমি; জ্বালিয়েছ যে আগুন বুকের কাঁটাতারে তা

দু’ফোঁটা অশ্রুতে নিভবে না; রূঢ়ক্রোধ! তারচেয়ে বরং সবুর করো

আমাকে জাগিও না আজ, পুড়তে দাও; সেই ভালো, খাক হোক দেহ

তুমি ভোরের স্নিগ্ধ সমীরণে ছড়িয়ে দিও এ দেহের, ছাই ভস্মাবশেষ ।


নিরুদ্দেশের হাওয়ায়


যে ঘরে কান্না বসত করে-তার পাশে একটি টইটুম্বুর ডোবা

সেখানে একটি কালো হাঁস ঘোরাফেরা করে।

প্রতিদিন ঘরহীন ঘরে কে ফিরিতে চায় হে; কে ফিরিতে চায়!

অতি দূর থেকে একটি চিলের আহাজারি কানে আসে-

মেঘের ওপর ঘর বেঁধেছি বলে আজও ভালোবাসা খুঁজি-

নিরুদ্দেশের হাওয়ায় হাওয়ায়।  

Post a Comment

0 Comments