আবদুর রাজ্জাক এর কবিতা



পাখিদের অশ্রুবিন্দু 


কুয়াশাভর্তি জাহাজ ডুবে যায় নির্ঘুম রাতেমুহুর্মুহু 
জেগে ওঠে জলনীলাভ নীল জেগে থাকে 
সমতলেবৃক্ষসমূহে
কিছু স্তব্ধতা আমাকে প্লাবিত কোরে——-
ধীরে নিমজ্জিত হয়ে যায় পূর্ণিমা প্রহরএকটি দুটি 
করে সারারাত ঝরে পড়ে পাতা
পূর্বাপর
অশোক বৃক্ষের।
 
কী করুণ সেই পাতাঝরা হাহাকারনিমজ্জিত বেদনার 
পাশে আসবুজ এক এ্যারাবীয়ান কুলগাছ
মধু আহরণে ভ্রমরদের ভেতর কোনো সংঘাত হয় না,  
কুলগাছ সহসাই মেলে ধরে প্রলোভিত ফুল
গন্ধবহ বাতাস সুগন্ধ ছড়িয়ে যায় শঙ্কামুক্ত অন্ধকারে।
পাখিদের এতোগুলো ভালোবাসা তোমার জন্য জমা করে রেখেছি
তুমি কি কখনই ধারণ করবে না পাখিদের অশ্রুবিন্দু?


নীরার ছায়া


সে বছর খুব বন্যা হয়েছিলো,  সর্বত্র খাবারের অভাব,
অাকালই বলা চলেতবু আমি আর তরু——
দু’জনাই কোলকাতা যাইউদ্দেশ্য নীরাকে দেখা। 
আমাদের ঢাকার নীরা নীল শাড়ি পড়েসুনীলের নীড়া পড়ে মুর্শিদাবাদী।
আমরা নীরার জন্য রাজশাহীসিল্ক নিয়ে গিয়েছিলেম। 
কোথায় চা খাওয়া যায় বলতেই নীরা প্রতিবাদ করে
চা নয়কফি।কচুরিও খাবো।
তহসিন মোল্যার ছেলের দোকানের কচুরীকলিজা কচুরী।সেইসাথে কফি আর সুনীলের কবিতা। 
বল্লামমানে?
সুনীল লেখে,  কিন্তু একটি কবিতাও শোনায় না আমাকে, কোথায় কোথায় ছাপা হয় তাও জানি না।
তহসীন মোল্যার ছেলে পুরো টেবিলটাই ছেড়ে দেয় আমাদের, আমি অবাকবলে কিওরা তো বনেদী ব্যবসায়ীকবিতাও বোঝে?
নীরা জামদানী পড়ে নাবেশ ভারী মনে হয় তার।
আমাদের নীরা পছন্দ করে আসমানী সিল্ক।
আমি নীরাকে বললাম: সুনীলের সঙ্গে তোমার কেমন কাটছেঅর্থাৎ নীরাবিহীন ——কোলকাতা উদাসআলিপুর উদাসরানাঘাট উদাসএমন কি 
পার্কস্ট্রীটও উদাস।   
আমি না-থাকলে আমিহীন কোলকাতা 
বাঁচবে কি কোরেনীরাকে ছাড়া সুনীল একলাইনও লিখতে পারে না।
না না আমিময় এই কোলকাতা ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না।
তোমাদের বিউটি বোর্ডিংনেইশাহবাগ নেই!
কবিতা ক্যাফে নেইপাঠকসমাবেশ নেনীলক্ষেত নেই! তোমাদের সুবোধ বালকেরা এসব নিয়েই তো বেঁচে ছে,  তাই না!

অনন্ত পর্বে

আমি তোমাকে অনুভব করেছি আর হৃদয় ছুঁয়েছি
নক্ষত্র ছোঁয়ার আগে কী অদ্ভুত ছিলো 
তোমার সত্তা——
এভাবে কেউ কেউ নক্ষত্র ছুঁয়ে যাআগুন ছুঁয়ে যায়, 
তোমাকে পাঠের পর কেনো তোমার পূর্বের আগুন 
পাঠের কথা মনে হলো না !
মুদ্রালোভের কথা উহ্য থাকবরং তুমি পবিত্র হয়ে যাও 
আমার অপূর্ব ছোঁয়ায়।
অন্ধকার চেয়েছি নাআলোভর্তি অন্ধকার,  
ট্রাক ভর্তি আলু, গাঁজরআড়তের অন্ধকারে ইঁদুরের উৎপাত থেকে
আমার দাঁত তোমাকে রক্ষা করেছে।
আমি যেন কবে থেকে শুরু হয়েছি.....!
কবে থেকে আমার প্রিয়জন অলস যাপনে 
আনন্দ যাপনে ছিলো?
আমি কেনো এইরূপ দুঃখ যাপনে কাল নিপাত করেছি
আমার আকাশ ভরা পাতা আর প্রজাপতিদুধেল গাভী
আর নালিঘাস, দুপুরের বাতাসে লকলক করে।


Post a Comment

0 Comments