বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা

“যদি রাত পোহালেই শোনা যেতো, বঙ্গবন্ধু মরে নাই... ”




জ্যোতি

হিরণ্য হারুন


একদিন, একটি ঘোষণা─একটি কবিতা, স্বাধীন ডাক

লক্ষ-কোটি জনতার মধ্যে ফুটে গেলো

অভূতপূর্ব মানুষফুল।

স্বরধ্বনির পাতায়, শিশুর স্বরে

ত্রিভুজ শীর্ষবিন্দুর রণ হুংকার, বঙ্গবন্ধু বাঙলার তাজ।


সঙ্গীতের আয়োজনে জনতার স্লোগানে মুক্তির সনদে

বাংলাদেশের প্রকৃতি

বঙ্গবন্ধু স্বাধীন ফুলের ঘ্রাণ

গণিতের প্রজ্ঞাসূত্রে কোটি মানুষের স্বপ্নে নক্ষত্র আলো

বাংলাদেশে হীরা জ্বলে, জ্বলে থাকে বঙ্গবন্ধুর মানচিত্র।




হে পিতা

রাশেদ রেহমান


শ্রাবণের সেই রক্তস্রোতে ভেসে গেছে মানবতা-
বিবেকের কাছে অপরাধী আমি অপরাধী জনতা।

বাঙ্গালীর জারজ রক্তেজন্মা -
ঘৃণিত মোস্তাক বিকার বেজন্মা ;
পিতার রক্তে হাত রাঙিয়ে কাঁদিয়েছে সারা বিশ্ব।

আজও শ্রাবণে হৃদয় ক্ষরণে-
বিদগ্ধ জাতি স্বজন স্মরণে,
পিতৃহত্যার দায়মুক্তিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আমির নিঃস্ব।

যেনে রেখো হে পিতা --
দেহের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে রক্ষা করবো-
তোমার স্মৃতিচিহ্ন তোমার স্বাধীনতা।



বঙ্গবন্ধু মহাকাব্য

অনু ইসলাম 


মধুমতির জল গড়িয়ে গেছে সমগ্র বাংলায়; দ্বিধাহীন 
তেরোশত নদী বিধৌত জনপদ তুলে নিয়েছে বুকের গভীরে—
তুলে নিয়েছে বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গমালা
একটি স্নেহের ধন; খোকা থেকে মিয়া ভাই
কিংবা শেখ মুজিব; অতঃপর বঙ্গবন্ধু।

৭ই মার্চ তোমার বজ্রকণ্ঠ জেগে উঠেছিলো
ইতিহাসের পরম্পরায়; তোমার তর্জনি'র একটি নির্দেশ
জাগ্রত রেখেছিলো সাতকোটি বাঙালির প্রাণস্পন্দন৷
তুমিই একমাত্র কণ্ঠস্বর; বলে উঠতে পেরেছিলে—
'দাবায় রাখতে পারবা না৷' 
কিংবা, 
'এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম৷'

পরাধীন জাতি; পরাধীন এই জনপদে—
২৫ মার্চের কালোরাত পেরিয়ে; মাথায় নিয়ে হেঁটেছি পিতৃছায়া
ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিসর্জন কিংবা লক্ষ নারীর সম্ভ্রম
হারানোর ব্যথা—জ্বল জ্বল করে উঠেছিলো আগুনের মতো;
বিজয়ের চূড়ান্ত পূর্ব মুহূর্তেও ১৪ ডিসেম্বর লালরঙা সন্ধ্যায় 
রক্তাক্ত এক নকশিকাঁথা এঁকে গেছে পিশাচের দল!

অতঃপর; রক্তাক্ত জনপদে নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম শেষে—
১৬ ডিসেম্বর লাল সবুজের উচ্ছ্বসিত এক অপরাহ্ণে
একটি স্বাক্ষর, একটি দলিল, একটি মানচিত্র, একটি পতাকা
একটি ভূখণ্ডে রচিত হলো একটি দেশ—'বাংলাদেশ৷'
সাক্ষী আছে সোহরাওয়ার্দি উদ্যান...

আহা— চারিদিকে ধ্বনিত হচ্ছে জয় বাংলা! জয় বাংলা!!

প্রকৃতি ফিরে পেল সজিব-প্রাণ; পাখিরা গেয়ে উঠলো নিজস্ব কোরাস৷ নদীতে মাছেরা নেচে উঠলো ছলাৎ ছলাৎ ঢংয়ে
গাভীর ওলানে নেমে এলো মাতৃদুগ্ধ; গোলাপ ফুটছে অজস্র!

১০ জানুয়ারি ১৯৭২ ফিরে এলেন মানচিত্রের মহানায়ক 
চোখে নতুন স্বপ্ন, হৃদয়ে নতুন আকাঙ্ক্ষা ডানা মেলছে
গড়তে হবে সবুজ-শ্যামল শোভিত স্বপ্নের বাংলাদেশ৷

অথচ ১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এর প্রত্যুষে স্তব্ধ হয়ে গেলো
অমলিন সেই কণ্ঠস্বর! দেহে তার ১৮ টি বুলেট!
গুচ্ছ গুচ্ছ রক্তের দাগ লেগে আছে সফেদপাঞ্জাবি আর
ধানমণ্ডি ৩২ নাম্বার বাড়ির সিঁড়ি গড়িয়ে নেমে এলো
পিতা'র অর্জিত অহংকারের রক্তস্রোত সমগ্র বাংলায়!


জেনেছি, ট্র্যাজেডি ছাড়া মহাকাব্য রচিত হয় না; 
'বাংলাদেশ' তুমি নিজেই তবে মহাকাব্য: মহাকাব্যের শেষ শহিদ তোমার পিতা—শেখ মুজিবুর রহমান৷




শেখ মুজিব

অনন্ত পৃথ্বীরাজ 


পথের ধুলোয় গড়াগড়ি খাও, তবুও ভালো 
পড়ে পড়ে কেবল কাঁদো আর কাঁদো, কিন্তু ফিরবে না আর ।
কালের কলস ফুটো হয়ে গেছে-
আজ বহিঃঅঙ্গে রাজ পোশাক নেই , 
চাটুকরের মুখে ছাই পড়ুক ।

একটি হত্যা, একটি নবীন দেশের নব্য স্বাধীনতাকে ম্লান করে দেয় । না , ভুল বলা হলো । কয়েকটি খুন, ওরা একটি পরিবারকে নিঃচিহ্ন করতে চেয়েছিল, একটি দেশেকে এতিম করে দিতে ।

সেই এতিম দেশে একটি নাম 'শেখ মুজিব' চির ভাস্বর হয়ে জ্বলে ওঠে, সেই অভাগা দেশে একটি নাম 'শেখ মুজিব' চির উজ্জ্বল হয়ে ভাসে।

Post a Comment

0 Comments