শিবলী মোকতাদির এর কবিতা


অক্টোবর

 
অন্ধের নয়নে নিয়েছি ঠাঁই বধিরের কানে
কত দৃশ্য, শব্দ ভেসে যায়
রণক্ষেত্রে কাটালাশের মতো নিতান্ত নিরুপায়।
 
তামাকের ঘ্রাণ ধ’রে
জ্যামিতিক হেঁটে যাই গাণিতিক কোডে
উৎসহীন সমাপ্তির পথে তন্নতন্ন ক’রে খুঁজি
পুঁইয়ের মাচার নিচে পুঁতে রাখা বিপ্লবী বুলেট।
 
বায়ুমণ্ডল নিয়ে অনেক পড়েছ তুমি
 
ব্যাখ্যা ব্যাকুল হলে হয়তো বোঝাবে-
প্রকৃতির কোন পাপে
বছরের এগারোটি মাস ফিকে হয়ে আসে!
 
বেঁচে থাকা মানে বারুদকে বরণ ক’রে
অচেনা বন্দুক হয়ে ওঠে চেনা
ব্যতিক্রমী অক্টোবরে?
 
 
 
 
 
 

উড়ো কথা


অন্ধকারে পোশাক পরে খাকি
অন্ধ লোকটি বলে-
খড়কুটো নিয়ে মধ্যরাতে
কোথায় যাচ্ছ পাখি?
 

শিকার পালিয়ে গেলে
ফিরে যায় শিকারি
সূর্যের নিচে ছেলেকে কাঁধে নিয়ে
বাবা বলে-হায় ক্ষুধা! এখন কী করি?
 

সে এসে জাপটে ধরল পথের ঠিক বাঁকে
একি বিস্ময়! বলে আর হাসে-
চেনেন না আমাকে?
 

খাঁচায় বসে খাবার পরে পাখিটি
বনের দিকে তাক করিল আঁখিটি।
 

গাছটা আছে ঠিক গাছের মতো দাঁড়িয়ে
ওগো তুমি স্পষ্ট হও আলতো তাকে নাড়িয়ে।
 
 
 
 
 

সন্ধ্যা

 
যখন অচেনা হাঁসগুলো চেনা ঘরে একা আসে ফিরে
যারা পালাচ্ছিল
তারা ক্ষণিকের জন্য দাঁড়ায় হয়তো নিজেকে ঘিরে।
পাহাড়ের পাদদেশ থেকে হিম এসে ঢলে পড়ে গায়ে
রেলব্রিজটার দিকে
উদাস দৃষ্টিতে চলে যায় কেউ পায়ে পায়ে।
 
ভৌতিক কণ্ঠে শুধাল অন্ধ 
-বৌ’মা নদীর ওপারে শোনা যায় আজানের ঢেউ
রহিম তো বাড়িতে, তবে কি নায়ে আছে কেউ?
 
শীতকালে বিনাবৃষ্টিতে ধস নামার মতো সোনালি খামে
ঠিক তখনই সন্ধ্যা নামে।
 
এক অচেনা দয়াল একাই বকে যাচ্ছে-
দেখুন, কেমন অলৌকিক আর আলোছায়াময়
হায় রে বিস্ময়! এতদিন পর জানলাম
পরী দেখার এটাই আদর্শ সময়!
 
 
 

 

উল্টো হলেও সত্যি

(ইসলাম রফিক : তোমাকে স্মরণ করে)

 
একপশলা বৃষ্টি হোক,
গেরস্থ পাক মরণ-ঘুমের ক্রোধ
এই ফাঁকে দাও চোরকে তুমি
চুরির ফজিলত।
 
জ্যোৎস্না এসে করুক বাড়াবাড়ি,
তাতে চেতনহারা স্বামী
শানবাঁধানো ঘাটে ঢলে পড়ুক
ভাসুরকৃত পরকীয়ার ডামি।
 
যানজটে আজ আটকে পড়ুক
সকল ভ্রমর এবং প্রজাপতি
সহস্র এক গোলাপ তুলে রফিক
করুক ভবে কোহিনূরের গতি।
 
 
 
 
 

গ্যালারি

 
‘জলে তৃষ্ণা মেটে।’ এই বাক্যে কোনো ছলচাতুরী নেই।
কোকিল ও কৃষ্ণচূড়া-উচ্চারিত হলেই নিসর্গ ডুবে যায় নৈঃশব্দ্যে।
 
তোমার ভূতুরে স্থাপত্যকলায় সংযত চাঁদের আনাগোনা-
দেখি আর সন্দেহের সূত্রপাতে বাঁধা পড়ি
মনে হয়, দিন বলে কিছু নেই।
 
সূর্যকে শক্ত করে হৃদয়ে ধারণ করে যে নাবিক
তার নাবালক চোরাহাসি জিজ্ঞাসাচিহ্নের কাছে
পেণ্ডুলামের মতো ঝুলে আছে ক্যানভাসের এক কোণে।
 
ঘুরে-ঘুরে মন খারাপ করা ঘূর্ণির কাছে এসে থামি।
 
রাতবিরেতে বিগত ঋতুর আগত ফলের বায়না ধরে
কেঁদে চলে যে শিশু-তার সারল্যকে সাথী করে
আমরা বলে যাই-এই তো চলে আসবে বাবা!
 
ঠিক সেই তত্ত্বে শিল্পের বারান্দা টপকে
তারা টুপটাপ ঢুকে পড়ে আমার অনাবাদি মগজে।
 
বলে, সান্ত্বনা দেয়-আসলে হয় কী কাকু,
এ-খেলায় যে যেভাবে শান্তি পায়—
এই যেমন-কেউ রক্তে, কেউবা গরম ভাতে,
মরে কেউ ভদ্রাবতী নদীতে ডুবে,
কেউবা ভ্রমর হয়ে ছুটে আসে রঙহীন জবা ফুলে!
 

Post a Comment

0 Comments