মীর আবদুর রাজজাক এর কবিতাগুচ্ছ



বাঙালির শুদ্ধতম নাম শেখ মুজিবুর রহমান

 

বাঙালির শুদ্ধতম নাম শেখ মুজিবুর রহমান।

তুমি জাতির পিতা

তোমাকে সালাম শতকোটি বার।

তুমি এসেছিলে উল্কার মতো

আকাশে তখন দুর্যোগের ঘনঘটা

বাতাসে তখন বারুদের গন্ধ,

রক্তাক্ত জনপদ!


বিপ্লবের বাণীতে তুমি মুগ্ধ করেছিলে

সেদিনের সাতকোটি বাঙালিকে

কী যাদুমন্ত্র ছিল তোমার মোহন বাঁশিতে

যার সুরে পাগল হয়েছিল

টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া

নওগাঁ থেকে জাফলং

পাটগ্রাম থেকে পাথুরিয়া 

বংশীবাদকের মতো ছুটে চলেছিল

তোমার বাঁশির মায়াবী সুরে

জাগ্রত বাঙালি। 


বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউ

তোমার হৃদয়ে লেগেছিল তার ছোঁয়া

উথালপাতাল করেছিল বাংলার মাঠ ঘাঠ প্রান্তর

ফুঁসে উঠেছিল বিপ্লবী জনতা

কণ্ঠে তোমার অবিনাশী 'জয় বাংলা'র শ্লোগান 

কে রোধে তোমার বজ্রকণ্ঠ। 

মোনায়েম, আইয়ুব, টিক্কা, ইয়াহিয়া খান,

কাহারেও করোনিকো তুমি কুর্ণিশ

তাদের বুকে মেরেছো লাথি 

বাঙালিকে করেছো তুমি মহান জাতি।


স্বাধীনতার লাল টকটকে গোলাপ

তুমি বাঙালির হাতে দিয়েছিলে, 

যেদিন তোমার বজ্রকণ্ঠে কণ্ঠ মিলালো বাঙালি

সেদিনই ঝাপিয়ে পড়েছিল যুদ্ধের রণাঙ্গনে

লক্ষ লক্ষ বাংলা মায়ের অকুতোভয় সন্তানেরা।

তুমি ধ্বংসস্তুপের উপর দাঁড়িয়ে

গোলাপের চারা রোপন করেছিলে,

দুর্বার গতিতে এগিয়ে গিয়েছিল তোমার স্বপ্নের সোনার বাংলা।

এক নারকীয় হত্যা কান্ডে সব তছনছ হয়ে গেলে

ক্রান্তিকালের কষাঘাতে জর্জরিত হলো 

তোমার সাজানো বাগান।


পারিনি পিতা তোমাকে রক্ষা করতে

তাই চোখের জলে স্মরি তোমাকে 

শ্রদ্ধায় ভালোবাসায়

বাঙালির নয়নমনি অবিসংবাদিত নেতা 

মুকুটহীন সম্রাট রাখাল রাজা

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু 

বাঙালির শুদ্ধতম নাম শেখ মুজিবুর রহমান।



মুজিবের রক্ত পলাশ বাংলায় 


বাংলাদেশ, আমার প্রিয় বাংলাদেশ, 

সহস্র মানুষের রক্তে ভেজা

রক্তে রক্তে তোমার নাম লিখেছি

সে নাম আমি ভুলে যাব কি 

যখন জনক দিয়েছে প্রাণ।

জনকের রক্তে মিশে আছে সোনালি ফসলের মাঠ

বাংলার আল পথ, সরিষা ফুলের

রঙিন চোখ ধাঁধানো ক্ষেত,

তেরোশত নদী পাড়ে কোলাহল পাখি

মনে হয় সারা বাংলা এক সাজানো বাগান।


পূর্ণিমা রাতে গাঙের পাড়ে উদাম গায়ে

মাথার উপরে নক্ষত্রপুঞ্জ চাঁদ হাসে

গাঙের জল খল খলিয়ে প্রবহমান

দক্ষিণা বাতাসে এমন আরাম

আর কোথাও নেই 

আছে শুধু মুজিবের রক্ত পলাশ বাংলায়

কিন্তু মুজিব নেই

তবুও তাঁর নামে জানে সবাই।



বাঙালির প্রিয় নাম

 

স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে গেছে

একটি নাম মানুষের হৃদয়ে হৃদয়ে 

ছাপান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে 

সে নাম ইতিহাস থেকে উঠে এসেছে

লাল রক্তে লেখা একটি শব্দ 'মুজিব '।


বাঙালির প্রিয় নাম

শেখ মুজিবুর রহমান, 

মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্যে, 

জেল, জুলুম, অত্যাচারকে উপেক্ষা করে

ছুটে গিয়েছিলেন জনতার কাতারে। 


মুজিব মাাদনেই একটি বিপ্লব, 

মুজিব মানেই একটি সংগ্রাম,

মুজিব মানেই একটি ইতিহাসের পরিসমাপ্তি, 

মুজিব মানেই একটি দেশ - বাংলাদেশ। 




তুমি মৃত্যুঞ্জয়ী

 

সুকান্ত মরেছিলেন যক্ষায় একুশে

লিখেছিলেন তিনি 'ছাড়পত্র', 

রানার ছুটেছে পৃথিবী ব্যাপী নতুন খবর নিয়ে,

ক্লান্ত হয়নি সে একটুকুও ;

কে বলেছে সুকান্ত মরেছেন?

মরনেও মৃত্যু নেই, সে তো অমর।

রোমান্টিক জগতের নাম করা কবি কিটস্ 

চব্বিশ বছরে চলে গেলেন কিন্তু

তাঁর নাইটিঙ্গেল ঘুরে বেড়ায় সদা সতেজ।

কবি লর্ড বায়রন মরে গেলেন ছত্রিশে

কিন্তু 'সি ওয়াকস্ ইন বিউটি',

তিনি তাঁর কবিতার পঙক্তি মালায় 

রয়ে গেলেন চির ভাস্বর। 


কাব্যময়ী ভাষণের মহাকবি-

তোমাকে হত্যা করেছে পঞ্চান্ন বছরে 

কিন্তু তোমার মৃত্যু ঘটেনি, 

তোমার দেহ ক্ষত বিক্ষত করেছে,

তোমার রক্তাক্ত লাশ অনাদরে অবহেলায় নিয়ে গিয়েছে শহর থেকে গ্রামে, 

তবুও তোমার সুমহান কীর্তিকে কেউ ধ্বংস করতে পারেনি, 

কেননা, তুমি জন্মেছ একুশের রক্ত পলাশের মধ্য দিয়ে, তোমার ঘাম, তোমার সাহস, তোমার চেতনার অগ্নিস্ফুলিঙ্গে জন্ম নিয়েছিল গণঅভ্যুত্থান, উত্তাল মার্চ, আর একাত্তরের গর্ভে উদিত হয়েছিল আমাদের রক্তাক্ত স্বদেশ, 

এ তো তোমারই কীর্তি জ্বল জ্বল করে নক্ষত্রের মতো।

যারা তোমাকে হত্যা করেছিল তাদের ফাঁসি হয়েছে,

কেউ কেউ পলাতক আসামী, মদদ দাতাদের মুখোশ উন্মোচিত এবং অভিশপ্ত, তাদের অপমৃত্যু হবে নিশ্চিত। 

কিন্তু তোমার বাংলাদেশ, তোমার দেয়া জাতীয় সঙ্গীত, তোমার জাতীয় পতাকা পত পত করে 

ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের বদ্বীপে সুশোভিত, যতকাল বাংলা আর বাঙালির পদচারণায় 

মুখরিত হবে এই জনপদ,

ততকাল স্বমহিমায় উচ্চারিত হবে তোমার অমর কবিতা -

"এবারের সংগ্রাম আমাদের মু্ক্তির সংগ্রাম,

এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।"

তুমি অবারিত সোনালি ফসলের মাঠ,

তুমি আছো, তুমি থাকবে চিরদিন, তুমি মৃত্যুঞ্জয়ী।


তুমি আছো বলেই 

জোসনা রাতে চাঁদ হাসে বাঁশ বাগানে,

তুমি আছো বলেই বিজয়ের হাসি হাসে 

মধ্য পাড়ার ছেলেমেয়েরা নরম তুলতুলে গালে,

তুমি আছো বলেই যৌবন যৌবন খেলা করে

আমাদের মরা নদী বারে বারে। 


শ্রাবণ ট্র্যাজেডি যখন দেখেছি 

 

মৃত্যু দেখে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।

শ্রাবণ ট্র্যাজেডি যখন দেখেছি আমরা

তখনই মৃত্যুকে জয় করেছি,

মৃত্যু সে তো স্বাভাবিক, সে তো হবেই।


আমাদের কষ্টগুলোকে ভাগাভাগি করে নিই,

শোককে আমরা শক্তিতে পরিণত করি।

পিতার রক্তাক্ত লাশ দেখেছি

সেই রক্তাক্ত লাশ থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে

যা এখনো আমাদের হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে।

এখন, জাতির পিতার রক্তে শপথ নেয়ার পালা

যেন সত্যিকার সোনার বাংলা গড়তে পারি।

এখন, পিছে তাকানোর সময় নেই

আমাদের প্রজন্মকে বলতে হবে

সামনে চল

মেরুদণ্ড সোজা কর

দেশটাকে ভালোবাস

লোভলালসার উর্দ্ধে থাকো

সাহসী হও

তাহলেই জাতির পিতার সোনার বাংলা গড়তে পারবে, কারণ

বাংলাদেশ তাকিয়ে আছে তোমাদের প্রতি।


এখনো বিভাজন হয় আমাদের মাঝে,

মগজ বিভাজন হচ্ছে প্রতিমুহূর্তে

কলম বিভাজন হচ্ছে কলমের দ্বারা

শস্যের ক্ষেতে বিভাজন হয় বর্গাচাষিদের ঘাম,

নদী নালা বিভাজিত হচ্ছে প্রতিমুহূর্তে,

আর নয় বিভাজন

এবার ওঠে দাঁড়াক বাংলাদেশ।


সবাই এসো, এবার দাঁড়াই একই প্লাটফরমে

আবার সবার মুখে মুখে উচ্চারিত হোক 

জয় বাংলা, জয় বাংলা, জয় বাংলা;

জাতির পিতার নির্দেশিত পথে

যত ঝড়-বাঁধা আসুক থাকি সবাই একসাথে

সবার কন্ঠে বেজে উঠুক

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু

Post a Comment

0 Comments