এস এম তিতুমীর এর কবিতাগুচ্ছ

 




যেখানে দেখা হতো


‘বিশ্বাস’ শব্দটাকে আজ বড় অচেনা মনে হয়

বন্ধুত্বের পাখনায় মেঘ এসে ভিজিয়ে গেলে পুরো শরীর

কিংবা ভ্রমরের ডাকে সাড়া দিলে নেকটার-

পারফিউম মলিকিউল। অথবা কোকিল গলা সাধলে

কদম-কেয়ার বনে। ‘বিশ্বাস’ উড়ে যায় তোমার কাছে


জেগে ওঠে সন্দেহের কাঁটা। বেজে ওঠে মর্মর

ঝরা পাতার তরঙ্গ। তুমি বলেছিলে, শীত এসেছে তাই...


এখন, বসন্ত এসে গ্যাছে। এসে গ্যাছো তুমি

তবুও, বিশ্বাস আসেনি। কারণ সে না থাকলে বন্ধুত্ব-

টিকলেও টিকতে পারে বৈকি কিন্তু ভালোবাসা ?

সে তো আর টিকে না !


যেখানে দেখা হতো প্রতিদিন, সেখানে এখন

ওই সংবেদি শব্দের আশকারা, যাকে তুমি বলো ‘ভালোবাসা’




সারেন্ডার 


হার না মানা ওমুখের কাছে 

আমি বীর। অথচ নতজানু তার তরে

যার হৃদয় জুড়ে কেবলি আমি

নিছক ভালোবাসা ভালোবাসা খেলা 

যদি হয় বরষার জলে। তবে ধুয়ে যাবে

মালতির যৌবন, পলাশের সবটুকু রঙ

আমাকে বরষা হতে বোলো না

তোমার পরম পরশে নিজেকে ঘষে ঘষে

তাহলে আগুন হবো মেঘে মেঘে


তাই তো দিলাম তুলে এ হাত তোমার হাতে।





জাগো


মেঘ উড়ে যায়। ডানায় জলরাশি

ছায়ার  তলে চলে বৃক্ষের আনাগোনা

উদ্যত কচি পাতার চোখে জেগে ওঠে

শত জনমের সবুজ।

ভিজে যায় অনাদিকালের আহ্বানে

ভালোবেসে ঘর ছাড়া জোনাকি যুগল

আঁধার সরাবে বলে

বন থেকে বনে, বনান্তরে

প্রান্তরে প্রান্তরে সে কি চঞ্চলতা।

বহতা বিস্তর ঘনিষ্টতার অন্তরে 

অপরূপ 

     রূপময়তা

         আঁধারে 

             আলোর

                   সরলতা

ঠিক বহতা নদীর বাণিজ্য যাত্রা

এই তো শৃংখল ভাঙা প্রতিবাদী ওই চোখ

মোহময়তার জাল ছিন্ন করে পাশে এসে দাঁড়ালে

এখনই সময় 

আলো গিলে নেয়া মননের সামনে

চোখ তুলে তাকাবার

               নিজেকে হাঁকাবার

ভালোবাসার দিকে।

ভূমি পল্লবের একটি কণাও যেন

না হয় ফিকে।



তুমি শুধু তুমি


সবই রঙিন। সার্থক মনে হয়

তোমাকে পাওয়ার স্বাধীনতা

আজন্ম স্বপ্নের সাথে মিশে থাকা

ঘাস ফুল

রজনী সীমার চাঁদ, চমকে দেয়া

কদম পাতার আড়ালে ভুবনমোহন হাসি

কামানার কিরণে ফুটে ওঠা

কোন এক রূপোর গোলাপ।

বাতাস আসে যায়

বসন্ত তাও তো ফুরাই

তুমি কল্পনার সুতো হয়ে

আমাকেই বুনে যাও

আদরের বুননে বুননে

পক্ষি পাড়ার উড়ুত ভিটেই

খুলে রাখে ডানা

আমার নয়ন সীমানা- তোমাকেই দেখে দেখে 

ও বনলতা ।




ড্যাফোডিল


কতোদিন দেখিনি, ও ড্যাফোডিল

এ আমার ব্যর্থতা

নিঃসঙ্কোচে বলে দিই, বিদায়

এই নাও তোমার লেখা চিঠি

তোমার দেয় কথা।


পরশের নির্যাসটুকু মিশে গেছে শিরাতে

স্মরণের সম্মোহনে

তারাতো নির্ঘুম, নিশি অঞ্চলে ঠিকানা

তারা জানে না। জানে না বিচ্ছেদের

বিদীর্ণ ব্যথা।


ভালো থাকার ছলে অথবা ভালো রাখার ছলে

অভিনয়ে অভিনয়ে

বিলিয়ে দেয়া সময়ের চারুলতা

কারুকাজ তোলা সূচের ফোঁড়ন, আয়ত্ত তোমার

ফিরিয়ে দেবার প্রতিজ্ঞাতে প্রতিজ্ঞাতে


পদ্ম পাতায় স্থির জল।

এই নাও ড্যাফোডিল

আমার রক্ত জলে ফোটা বিরহের অন্ত্যমিল

Post a Comment

0 Comments