প্রিয় শহর অন্তরীণ
( কবিবন্ধু ইসলাম রফিক কে উৎসর্গ)
সময় হয়েছে এবার ঘরে থাকো, ঘরে
কান্তজীর মন্দির দেখতে চাও বইয়ের পাতায় খোঁজো
মহাস্থান আপাতত বুক শেলফ থেকে বের করো
রবীন্দ্রনাথের 'প্রাণগঙ্গা' পাঠ করবে তাও ঘরে বসে
আকাশ দেখার খুব শখ তোমার, বারান্দায় যাও বন্ধু
সকালের ঘাস আর শিশিরের ছোঁয়া খুব পছন্দ তোমার
ধান ক্ষেতের আইল পথে না হাঁটলে
তোমার সূর্য পূবের আকাশে ওঠেনা
রেললাইন ধরে হাঁটাহাটি না করলে
রেলগাড়ি আসেনা বলে তুমি চিৎকার করে ফোনে বলো,
আমি জানি,সিদ্ধ চাউলের ভাত আর পত্যার স্বাদের বাহিরে
তুমি পেঁয়াজুতে আসক্ত এক নারুলির কালের কাপ্তান,
সাতমাথার দুধ চা তোমার উদরে না গেলে
তুমি দিনরাত শুধু পায়চারি করো চা বিরহে
ঝাঁঝ রোদের দুপুর আর কোমল সন্ধ্যায় তুমি উড়ে আসো
সাতমাথার কোলাহলে। তুমি হও শহরের পরিব্রাজক।
সরষে ফুলের বাগান দেখতে তুমি ছুটে যাও গ্রামে
কিন্তু সন্ধ্যায় সাতমাথার কাঠপট্টিতে চা তোমার চাইই চাই
হে বন্ধু, আজ হাওয়ায় ভাসে উদ্বেগ
বাতাসের শনশনে মৃত্যুর হুলিয়া
ঘরে থাকো ফুলের সুবাসে
প্রিয় নারীর সান্নিধ্যে পূর্ণিমার আলো শরীরে মাখো
ধুলোর লাজে নিজেকে মেলে দিও সাতমাথায়
আবার কোনো এক বসন্তের উষ্ণদিনে,
হে আমার বিষন্ন শহর, ক্ষমা করে দাও।
প্রকৃতি ও মানুষ
প্লেগের কাহিনি পড়ে জেনেছি সেদিন
মানুষ হারিয়ে গেছে আমাবস্যা রাতে
ভোরের আলোতে নাচে শকুনের চোখ
স্বপ্নগুলো থেমে যায় ইঁদুর লালায়।
কলেরার আগমন ডানা মেলে ছিলো
আকাশ দাপায় চিল দুপুরের রোদে
তবুও মানুষ গায় জীবনের গান
নিজেকে উজাড় করে দেহ মন প্রাণ।
আঙিনায় তাশরিফ এনেছে করোনা
পৃথিবী কাঁপানো সব যুদ্ধবাজ নেতা
একদা যাদের চোখ হায়েনার ক্ষুধা
তাঁরা আজ খিল এঁটে দরোজায়, চুপ।
পাসপোর্ট ভিসা নেই পৃথিবী ভ্রমণে
করোনা, তবুও গাছে গাছে ফোটে ফুল
আমিতো ভুলেই গেছি নারীর চুম্বন
বসন্ত বাতাসে ভাসে মৃত্যুর হুলিয়া।
শুধু জেনে রাখো তুমি, দুর্বিপাক শেষে
হেঁটে যাবো একসাথে ঝিকিমিকি স্রোতে।
দুপুর
দুপুর খুলে দেয় ধারাপাত
যৌবনের প্রতি ইঞ্চি জমি পাঠ করি
সবজি ক্ষেতে বপন করি বীজ
রোদের রশ্মি ট্রেনের হুইসেল বাজিয়ে
জানালার কার্ণিশে ঘুমিয়ে যায়
বিকেল আসে সারা শরীরে আতর মেখে
গোধূলির সুবাস ছড়িয়ে দেয় চারপাশ
আমাকে আহবান করে পর্বতশৃঙ্গ
আমি তুলার পাহাড়ে কিসমিস খুঁজি
ঝরনার আয়না জলে
ঠোঁট ডুবিয়ে পান করতে থাকি বিশুদ্ধ জল।
একদিন ঝরনায় নেমে মাছ হয়ে যাই।
আমার শব্দেরা
প্রতি অক্ষরকে বিনি সুতার মালায় গেঁথে তৈরি করি শব্দ
শব্দেরা জেগে ওঠে, জ্বলে ওঠে তারার মতো
উপমার ওড়নায় জড়িয়ে রূপকের চাদরে দিকবিদিক
ছুটে বেড়ায় আমার শব্দেরা, একটা দাগ রাখতে চায় ।
নিঃসঙ্গ পার্কের মতো রাত নেমে এলে, উঠোনে
শব্দেরা জমায়েত হয়, একটা যুতসই শ্লোগানের জন্য।
চুইংগাম চিবোতে চিবোতে শব্দেরা উড়ে যায়
একাল পেরিয়ে মহাকালে শুনি শব্দের ওঙ্কার।
শব্দের দাঁত নেই কিন্তু একবার কামড় দিলে
মানুষের পা টলোমলো হয়ে যায়
শব্দের চাবুক হিসহিস করে আছড়ে পরে
বুকের মাঝখানে, হৃদয়ে খুন জমে যায়।
আমার চারপাশে শব্দেরা ঘুরঘুর করে
শব্দের আয়ু নেই, কলম নামক সুঁইয়ের খোঁচায়
অক্ষরগুলো আত্মার জগতে অমরত্ব পায়।
গঙ্গা ও রবীন্দ্রনাথ
পদস্পর্শে মুখর প্রিন্সেপঘাট
পাশ দিয়ে বয়ে যায় গঙ্গা
যে নৌকাটি ঘাটে বাঁধা প্রতীকী
হয়ত এখানেই একদিন বজরায় চেপে
স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ, তাঁর উদাস কৌতুহলী চাহনি দিয়ে
চলে গেছেন কোনো নৌবিহারে।
হৃদয়ের দুয়ার খুলে উঁকি দেই
দূরের ওই ঢেউগুলোর দুরন্তপনায়,
হয়ত সেই বজরা এসে থামবে এইঘাটে, এখনি
নেমে আসবেন তিনি, আমি তাঁর অপেক্ষায়।
অজানা নয় এ নদীপথ
আমি চিনি তার জোয়ারের যৌবন
নদীর কাছে গেলেই আকাশ দেখার বাসনা জাগে
ইচ্ছে করে, মই বেয়ে আকাশে উঠি
তারার সাগর সাঁতরে রবীন্দ্রনাথ কে দেখে আসি।
তিনি কি কৌতুহলী চোখে তাকাবেন আমার দিকে,
দাও দেখি তোমার কবিতা, কি লিখেছো দেখি
আমিও সভয়ে এগিয়ে দেবো আমার শব্দের ঘরবাড়ি।
সেই থেকে গঙ্গায় গেলেই আমার মইবাসনা জেগে ওঠে
আমি এখন প্রতিরাতে তারার সাগরে সাঁতরাই
কবিতার খাতা হাতে, একা।
0 Comments