দ্বিতীয় দশকের কবি, কাজী শোয়েব শাবাব । জন্মগ্রহন করেন ২৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৫ সালে নজিপুর, নওগাঁয় । প্রকাশিত হয়েছে তাঁর দু’টি কাব্যগ্রন্থ___ ১. এলুমিনিয়াম চাঁদ (২০১৮), ২. আইডেন্টিটি ক্রাইসিস (২০২০)। সম্পাদনা করেন ‘উত্তরা এক্সপ্রেস’ নামের একটি ছোটকাগজ।
বামিহাল:
লেখালেখি শুরুর গল্প
জানতে চাই।
কাজী শোয়েব শাবাব:
১. লেখা প্রথম
ছাপা হওয়াটা একটা
স্বীকৃতির মতো। একটা
পত্রিকার বর্ষা সংখ্যায় প্রথম কবিতা ছাপা
হয় আমার। পত্রিকা হাতে পেয়ে লেখাটা ছুঁয়ে দেখছিলাম বারবার। এই অনুভূতি খুব আনন্দের।
২. তখন আমি ক্লাস টেনে। ২০০৯
সাল।
৩. স্কুল পালিয়ে প্রায়ই আমার লাল সাইকেলটা নিয়ে নদীর
পাড়ে গিয়ে বসে থাকতাম। সঙ্গে কেউ না, একদম একা। শুধু দেখতাম, ভাবতাম অনেক কিছু নিয়ে। ধীরে ধীরে মনে হলো অনেক কথা জমে আছে। কবিতা
মোটেও ভালো লাগতো
না আমার। জীবনানন্দ দাশের 'রূপসী বাংলা'
বইটা পড়ার পর কবিতার প্রতি আগ্রহ
জন্মায়। লেখার মাধ্যম হিসেবে কবিতা ভালো
লাগতে শুরু করে। আমার চাচাতো ভাই আলী হাসান ও ফুপাতো বোন লীনা
আপু লেখালেখি করতো। ওরাও আমার লেখার
ইচ্ছাকে উস্কে দেয়। লেখা শুরুর গল্পটা এমন।
বামিহাল:
আপনার প্রথম কাব্যগ্রন্থ "এলুমিনিয়াম চাঁদ"
পাঠক সমাজে কেমন
সাড়া ফেলেছিল?
কাজী শোয়েব শাবাব:
'এলুমিনিয়াম চাঁদ' ২০১৮
তে প্রথম প্রকাশিত হয়। বইটা শেষ হয়ে যাওয়ায় দ্বিতীয় মুদ্রণ হয় এ বছর ফেব্রুয়ারিতে। বইটা নিয়ে ইতিবাচক সাড়া
পেয়েছি অনেকের কাছে। নেতিবাচক কম। সবচেয়ে ভালো লাগে যখন অচেনা পাঠক আমার
কবিতা পড়ে তার ভালোলাগা আমাকে জানান। বেশ কয়েকবার এমন হয়েছে। এটা দারুণ
অনুভূতি। ভাবুন তো একজন পাঠক আপনাকে চেনেন না, জানেন
না; কেবল নাড়াচাড়া করতে করতে আপনার
বইটা তার হাতে
এসে পড়ায় পাতা
উল্টিয়ে দু'একটা
লেখা পড়তেই আপনার
প্রতি তার আগ্রহ
জন্মালো। প্রিয় হয়ে উঠলেন তার। কী রোমাঞ্চকর! একজন লেখকের এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে?
বামিহাল:
প্রায় লেখক সম্মানী / রয়্যালিটি বিষয়ে প্রকাশকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?
কাজী শোয়েব শাবাব:
অবশ্যই। অভিযোগ তো রয়েছেই। পত্রিকায় লেখা ছাপানো এবং বই ছাপানো দুই ক্ষেত্রেই সম্মানী লেখকের প্রাপ্য (তবে লিটলম্যাগের বিষয় আলাদা)। লেখা
কিন্তু শ্রম ও সময়সাপেক্ষ বিষয়। আপনি
একজন লেখককে পারিশ্রমিক দেবেন না কেনো?
লেখকের ব্যক্তিজীবন আছে। টাকা তারও দরকার। কাগজ, কলম, বই, সিগ্রেট কিনতেও তো টাকা লাগে। আমাদের সেদিকটাও দেখা দরকার। কিছু পত্রিকা/প্রকাশক লেখকদের সম্মানী দেন। অনেকেই দেন না। এটা খুবই দুঃখজনক। না দেয়ার বাজে
অভ্যাস থেকে আমাদের বের হওয়া দরকার। আমার অভিজ্ঞতা হলো, বই বিক্রির কিছু
টাকা পেয়েছি তবে আলাদাভাবে লেখা প্রকাশের সম্মানী পাইনি কখনো।
বামিহাল:
কী লিখতে এসেছিলেন? কবিতায় আপনার স্বপ্ন এবং সত্তাকে কতটা
ধরতে পেরেছেন
কাজী শোয়েব শাবাব:
আমার ভিত্তিটা সঙ্গীতের। ক্লাস
ফাইভে ওস্তাদজীর কাছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শেখা
শুরু। ইন্টারমিডিয়েটে এসে বন্ধ
হয়ে যায়। গান গাইবার সময় প্রতিটা কথা খুব ভাবাতো। গানের কথা অনুভব
করতাম। আমার ভাবতে
ভালো লাগে যে, সঙ্গীত থেকেই পেয়েছি অনুভূতির সূক্ষ্মতা। এই শাস্ত্রের প্রতি আমার
অনেক ঋণ। কথা,
অনুভূতি, চিন্তা-ভাবনাকে নিজের মতো করে আকৃতি বা শরীর
দিতে চেয়েছি। লেখাটা ছাঁচ। সেজন্যই লিখতে
আসা।
কবিতা লিখতে এসেছি। কবিতাই লিখছি। অন্য
কিছু আমি পারি
না।
ভালো কবিতা লেখা
ও সুন্দর দৃশ্য
দেখার জন্য অনেক
বছর বাঁচতে ইচ্ছা
করে। কবিতায় আমার
এখন অবধি স্বপ্ন ও সত্তা পুরোটাই তুলে ধরতে পেরেছি বলে মনে হয়। কবিতা আমাকে ভালো
রেখেছে। তবে কেবল
তো শুরু। অনেক
ভ্রমণ বাকি। বেঁচে
থাকলে অনেক ভালো
কবিতা লেখার ইচ্ছা
আছে।
বামিহাল:
লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনে তথাকথিত প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার আপনার বিশ্লেষণ কী?
কাজী শোয়েব শাবাব:
প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা একটা আন্দোলন। আন্দোলনের উদ্দেশ্য ভালো। এই আন্দোলন প্রাতিষ্ঠানিক ভণ্ডামীকে চপেটাঘাত করে। এর দরকার আছে। তবে সবাই যে এই মুভমেন্টে যুক্ত হবেন
এমন নয়। বিট জেনারেশন, হাংরি জেনারেশন এসবই কিন্তু মুভমেন্ট। কথায় আছে, নানা
মত নানা পথ। তবে যাই বলুন
না কেনো, মৌলিক
কাজ কিন্তু লেখা
যাকে শিল্প হয়ে উঠতে হয়। তা না হলে আন্দোলন দিয়ে কী করবেন?
মূল লড়াইটা কিন্তু নিজের সাথে। ক্রমাগত নিজেকে আপডেট করতে
হয়।
বামিহাল:
আপনার সম্পাদিত লিটল ম্যাগাজিন উত্তরা এক্সপ্রেস মূলত কোন কনসেপ্ট ধারণ করে। কেন?
কাজী শোয়েব শাবাব
উত্তরা এক্সপ্রেস সম্পাদনা করি দু'জন। দেবাচার্য দেবশর্মা ও আমি। বলে রাখি, প্রথম
জন কিন্তু সমতোষ
রায়। সমতোষ দা সম্পাদক হিসেবে এই ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন। তো উত্তরা এক্সপ্রেস এ পর্যন্ত ৪টি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে
এগোচ্ছে।
১. ‘উত্তরের কবিতার স্বর’
অর্থাৎ উত্তরবঙ্গের কবিতার স্বর। আমরা লক্ষ্য করেছি, সমগ্র উত্তরবঙ্গের কবিতার একটি আলাদা
স্বর, একটি বিশেষ
স্বকীয়তা আছে। এই বিশিষ্টতা তুলে ধরতেই
উত্তরা এক্সপ্রেস উত্তরবঙ্গের কবিতা,
কেবল উত্তরবঙ্গের কবিতাকেই ধারণ
করে এগিয়ে যেতে
চায়।
২. প্রতিষ্ঠান বা মিডিয়ার হাত পৌঁছায় না বা পৌঁছাতে চায় না অথবা
যেসব মহৎ কবি প্রতিষ্ঠান বা মিডিয়াকে সযত্নে এড়িয়ে চলেন
তাদের পাঠকসম্মুখে উপস্থাপন করা। উদাহরণ : সিরাজুদ্দৌলাহ বাহার।
৩. সম্পূর্ণ নতুন স্বর তুলে ধরতে
উত্তরবঙ্গের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা
নতুন কিন্তু প্রতিভাবান কবিদের তুলে নিয়ে
আসা। উদাহরণ : আল আমিন মোহাম্মদ।
৪. সাক্ষাৎকার ও পুনর্পাঠের মাধ্যমে তুলনামূলক কম পঠিত মহত্তর কবি ও কবিতার সঙ্গে তরুণ কবি ও পাঠকের পরিচয়
করিয়ে দেয়া। এক্ষেত্রে শুধু উত্তরবঙ্গ নয় বরং সমগ্র বাংলা
কবিতা জগতের সেসব
মহৎ কবি ও তাদের কবিতা অগ্রগণ্য, যাদের কবিতার ওপর প্রচার মাধ্যমের একচোখা আলো না পড়ায়
তারা কম পঠিত। অথচ তাদের কবিতা
বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে পাঠ হওয়া প্রয়োজন বলে উত্তরা এক্সপ্রেস বিশ্বাস করে। উদাহরণ : ফালগুনী রায়।
বামিহাল:
উত্তরা এক্সপ্রেস এ যে ফন্টস সাইজ
৮/১০ মনে হয়। অনেকের পড়তে
সমস্যা হওয়ার কথা।
এর পেছনে আপনাদের যুক্তি কী?
কাজী শোয়েব শাবাব:
১১. ফন্ট সাইজ
১০। অনেকের এটা নিয়ে অভিযোগ আছে। আমরা ফন্ট একটু
বড় করার কথা ভাবছি। এই ফন্ট
সাইজের কারণ হলো যাতে কিছুটা হলেও
বেশি লেখা ছাপা
যায়। এক ফর্মার কাগজ। বোঝেন তো বিষয়টা। লেখককে আরেকটু স্পেস দেয়া আর কি। তবে কি জানেন, আমরা যে দৈনিক খবরের কাগজ
পড়ি সেখানে ফন্ট
কিন্তু ৯/১০ এর বেশি না। নিউজপ্রিন্ট কাগজে পত্রিকা পড়তে পারলে ঝকঝকে
সাদা কাগজে উত্তরা এক্সপ্রেসের লেখা পড়তে
খুব একটা কষ্ট
হবার কথা নয়। এই ফন্ট সাইজ
পাঠের প্রতি আপনার
মনযোগও দাবি করে।
বামিহাল:
কবিতা নিয়ে আপনার
ভবিষ্যৎ কোন পরিকল্পনা ও তারুণ্যের দায় সমর্পকে জানতে চাই।
কাজী শোয়েব শাবাব
তেমন পরিকল্পনার মানুষ আমি না। তবে ভবিষ্যতে কবিতা নিয়ে
অনেক এক্সপেরিমেন্ট করার ইচ্ছা
আছে। স্বরণযোগ্য ভালো কবিতা লিখতে চাই। আমার নাম ভুলে
যাক, কিন্তু আমার
কবিতার কাহিনী বা পঙক্তি যেন মনে থাকে কারো না কারো। কবিতা দিয়ে
মানুষের হৃদয়ের আরো কাছাকাছি যেতে চাই।
কবিতা বিষয়ে তরুণদের দায় রয়েছে। কবিতাকে সময় দিতে হবে,
নিবেদন থাকতে হবে। নতুন কিছু করার
সাহস, ধৈর্য ও স্পর্ধা থাকতে হবে। অনুভূতি সূক্ষ্ম ও তীক্ষ্ণ না হলে কবিতা লেখা যায় না। এ কথা এর আগেও আপনার
বামিহালে একটা গদ্যে
লিখেছিলাম- মনে পড়ছে।
5 Comments
শোভন আমার অনেক প্রিয় একজন মানুষ।ওর সকল সৃষ্টি বেঁচে থাক শত সহস্র সময়।উত্তর উত্তর সমৃদ্ধি কামনা করি আমার এই ছোট্র ভাইটার জন্য।অনেক মনে পড়ে,বই,গল্প,বিশেষ করে কবিতা নিয়ে আলোচনা সমালোচন, রাত জেগে গল্প।দোয়া রইলো, ভালো থাক ভালোবাসা।
ReplyDeleteদারুণ জার্নির মতো সাক্ষাৎকা। পড়ে খুব আনন্দ পেয়েছ। ভালোলাগল।
ReplyDeleteএকটা দীর্ঘ যাত্রার মত পাঠ। মুগ্ধ হলাম ।
ReplyDeleteএকটা দীর্ঘ যাত্রার মত পাঠ। মুগ্ধ হলাম ।
ReplyDeleteভালোলেগেছে
ReplyDelete