হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এর কবিতা



সবুজ পাতায় দুঃখ - দিন


এক. 

হঠাৎ করেই মাঝরাতে তোমার ঘুম ভেঙে গেছে। আমাকে ডেকেছ। তখন আমি অপেক্ষা করতে করতে স্নান করতে গেছি। ফিরে এসে দেখি ফোনটা মারাত্মক গরম হয়ে গেছে। তোমার আর কোনো সাড়া নেই। সকাল থেকে একটা অঙ্কও মিলছে না। বুঝতে পারি গতরাতে তোমার ডাকের মধ্যে কোনো সূত্র ছিল।


দুই. 

দাড়িতে সাবান মাখি। সাবানের গন্ধে কালবৈশাখী ঝড় ওঠে। আমি আম কুড়োই। খিদের জ্বালায় গাছের গোড়াতেই হেলান দিয়ে আম খেতে বসে যাই। বাড়ির মেয়েটি আমার হাত ধরে থামায়। ততক্ষণে আমার সারা মুখ রক্তে ভেসে যাচ্ছে। কে জানে আমার হাতে ব্লেড আছে। আমাকে খুব বকে। আসলে কোনোটাই তো ঠিক ছিল না। গতরাতে আমার তো গরম করে নি কিন্তু তবুও জলে নেমেছিলাম। স্নানের জল আমাকে ডাকে নি। মনে হয়েছিল অনেক পিছনে পড়ে আছে জল।


তিন.

সাতসকালেই আমার জানলা দিয়ে অচেনা স্টেশনের গন্ধ আসে। একটা ট্রেন অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে। সামনে পাহাড়। ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছে। কার যেন আসার কথা আছে। তবুও দাঁড়িয়ে থাকার কারণ খুঁজে পাই না। কোনো একদিন নিশ্চয়ই সে তৈরি হয়ে থাকবে, তখন অন্য কোনো স্টেশনে সে উঠে পড়বে পথ চিনে। ট্রেনকে একথা বলতে বলতেই চারপাশ কুয়াশায় আবছা হয়ে যায়।


চার.

জানলা দিয়ে দেখি এক চশমা পরা বৃদ্ধ। আমার দাদুর সঙ্গে পরিচয় ছিল। বাবাকেও অল্প চিনত। কিন্তু আমাকে সে খুঁজে পায় না। অনেক খুঁজেছে কিন্তু ভাব জমানোর মতো কিছু পায় নি। হঠাৎ দেখি সেই বৃদ্ধের বাড়ির দিক থেকে একটা মেঘ আমাকে আস্তে আস্তে ঢেকে দিচ্ছে। একঘেয়ে একটা মেঘলা দিন। অনেক খুঁড়ে আমিও একটা রোদ্দুরের জানলা ছাড়া আমার মধ্যে আর কিছু খুঁজে পাই নি।


পাঁচ.

আজ পুরোনো পাড়া দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বিকাশের মায়ের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। বললাম, "কেমন আছেন?" ভদ্রমহিলার হাঁপানির রোগ। একটু থেমে দম নিয়ে বললেন, "মায়ের শরীরটা ভালো নয়। খুব রোগা হয়ে গেছে। একদিন এসো না বাবা।" নদীকে মা বলার জন্যে গোটা পাড়া হাসাহাসি করে।




***********************


Post a Comment

0 Comments