সুলতান
সে দেখে যায় ক্যামনে সময়ের সেই গৃহী ঝাটা মায়ের হাতে ছোট হতে হতে মুড়া হয়। খুলে যায় ক্যামনে চিরকালের হোচার বাঁধন আর বেড়ে যায় কাটারে কাটারে রিজেক্ট খড়ের স্তুপ। কমে গাভীর দুধেল ওলান আর তড়তড়িয়ে বেড়ে ওঠে ক্যামনে সেদিনের সেই দোয়াল বাছুর। সে দেখে যায় যত বন্যের যত আদিমের বিষয়বাসনার ব্রেইন মেকানিজম।
তার বুকে আছে পোষমানা তন্ত্রের ধনুজাতক পাতার গোপন বান, চোখে বেগেন্ডারির স্কেচ, মাথায় চৈত্যবৃক্ষের মাতুল আর মইয়ের পেছনে ঘুরে ঘুরে আলুকুড়ানোর সেই সব শৈশব দৃশ্যঘট। তার স্মৃতিতে আছে স্বর্ণের সুতো দিয়ে বোনা রক্তবর্ণের এক দোরাখা চাদর!
তার শুধু নেই এরকম কোন পায়রা যাকে ময়দানহাটায় বিনিময় দিয়ে বাড়ি ফেরার আগেই যে ফিরে আসবে বাড়ি। নেই কোন জীবনালেখ্যের পাউশেপালা, অভাবের দিনে যেখানে পরে পাবে মায়ের নাকের নাকফুল! তার স্মৃতিতে শুধু জোয়াল ফসকে ছুটে যাওয়া আলাদা গরুর ভেজা ভেজা চোখের দ্বিতীয় দুঃখ, আয়ু কামনা করে দেয়া মায়ের হাতের মানতের সিন্নি আর বহুসংখ্যক পালিশ করা বিছানার তক্তা!
যখন ডাকিনীর পোড়াধাপ, অভিমানি পথের ইঙ্গিত আর গোলাম নকরা টিক্কা থাকতেও খেলা হয়ে ওঠেনা তখন শেষ বোশেখের মাতাল পুরনগরে ওঠা পাতার ধোয়ার মাঝে তাকে দেখে ফিক করে হেঁসে দেয় আত্মহুতির শীলাদেবী। সে উদ্বেল হয়, গঞ্জনা আর বিরোধিতা করে- ফোন সাইলেন্ট তবু রিং করে এমনি এমনি...
তার মুখের ক্লান্তি আর বিষাদছাপ, চোখে পড়ার মতো!
তখনো দাঁড়িয়ে দেখা যায় তার বুকে খোলা আছে বিশ্ববিহারের বিদ্যাপীঠ, রুকু পারা নোক্তা আর প্রেমিকার মতো আদরিয়া ত্রিস্রোতার করতোয়া!
তার বুকে চিরকাল দাঁড়িয়ে আছে দেখো, গোপনীয় জায়নামাজ আর পাণ্ডুলিপি হাতে একজন মহান শাহ সুলতান!
কবি
তুমি সমবেত একক, বিজয়াতীত অনাত্মীয়। অমোঘে, অগোচরে, অমরতা বিদারী এক বারবেলার জুয়াড়ি। তুমি ছিলে, তুমি থাকবে, তুমি আছো শূন্যতা বিষয়ক এক পূর্ণতার গৃহপথ রেখায়। তোমার আছে অসংখ্য ভিজ্যুয়াল ইমেজের দরিয়া, গহিন রৈখিকের ধূসরতা আর ব্যক্তিগত সত্যের হু-হু হাওয়া।
আমার কিছুই নেই, বুকচোরা আমি বসে আছি সেই একাত্মবাদের উত্তরঙ্গ জলোচ্ছ্বাসে। পাশে দাহিকা কাঠবিড়ালি,দোলাচালের সংবিধান আর তীর্থপথের কৈতব্যবাদী কানামাছি। উজান আমি উন্নাসিক আমি শেষ সমস্যার সমাধান হাতে নিয়ে কেয়ারলেসের কালি মেখে হাটুগেড়ে বসে আছি।
কোথা থেকে আসলে তুমি আইকোনিক আদি মানব কোথা তোমার জয়ের ভেলা? কুহকলতার বিধুর ফাঁসে আর কত উজার আকাল তোমার?
নাগরিক ওই মদের পেয়ালা ছুড়ে ফেলো। বড়বাড়ির বাতার বাঁশিটাকে জিড়িয়ে নাও। নিভিয়ে দিয়ে জীবনের সবগুলো বিভাজন বাকের বাতি বরং কালের কানে শুনিয়ে শব্দগান ফিসফিসিয়ে চলো যাই নক্ষত্রের চাদরের নিচে। যেখানে রঙ্গিলা বেদনায় শাশ্বত আনন্দের চাদের মতো দশা আছে, একাদশের পাশবালিশ আর বেরিয়ে চলে যাওয়ার অন্তদৃষ্টির আজগার আছে।
সেখানে যাবে তুমি অমোঘি রচয়িতা?
ফিবোনাক্কির মকরচূড়া
অন্তরালের গোলাপ, এই নাটাবন ছেড়ে চলো সান্ত্বনার আতুর শ্মশানে বসি, দু দন্ড জিরিয়ে, শূন্য এক দুই তিন এভাবে চলো গল্প করি ফিবোনাক্কি নিয়ে। বস্তুত, ওই সোনালী সিরিজের মধ্যে একদা দেখেছি আমি মোহর ভরা কলসী আর আমার থেকে আমার নিঝুম ব্যবধানের রন্ধ্রপথ!
মূলত, সেই থেকে শুরু আমার জখম জগৎ আর ধুলোখেলা, সেই থেকে আমি এক অর্ডিনারি প্রাইভেট টিউটর, যতটা নত ততটা নারাজ।
অন্তরালের গোলাপ, ওহে আশির্বাদী ফুল, দেখাও এই কুঞ্জবনে ঝিনুকের ব্রেসলেট হাতে নেশাখোর তুমি কেমন করে বাজাও লীলা মদিরা- আমার তো মনে হয় কূট কূট করে কাটা অন্ত্রনাড়ি আয়ুপোকার মতো ক্ষমতা তোমার নেই- কেননা, তুমি নিজেই নিচ্ছ অফুরন্ত গর্ভাশয়ের ওম- তুমি কী চোরপায়ে হেটে যাওয়া নিগূঢ়তম লীলাবীজ- তুমি কী পুরনো ইটে চোট খেয়ে হেসে ওঠা আমাদের হাজার বছরের হৃত ইতিহাস, নাকি ফুৎকারে উড়ে যাওয়া অনেকগুলি হাড় ফসিলের তুষ ?
অন্তরালের অগম গোলাপ, তুমি যেই হও- যতই তোমার থাক হীরকের মতো কঠিন ব্যথা-
তোমার কাছ থেকে দেখে নিবো আজ, বিস্ময় ফিবোনাক্কির বিস্ময়কর মকরচূড়া !
0 Comments