ফরিদ ছিফাতুল্লাহ’র কবিতা


কান্না


কান্নার মানে বুঝি। কান্নার মায়ের নাম দুঃখ।
শিশুদের দেহের ভেতর আর অন্যদের মগজের ভেতর
দুঃখ নামের জননী কান্না নামের কন্যার জন্ম দেয়।
কত রকমের দুঃখ আছে দুঃখের দুনিয়ায়
লাল দুঃখ ক্রোধের মাসতুতো ভাই
নীল দুঃখ বেশ নীরব কিন্তু ভীষণ গভীর।
আমার আছে হলুদ রঙের এক প্রকার দুঃখ
হলুদ যেন কোথায় বসন্তের সাথে মিশেছে!
হলুদ দুঃখ খুব বেশি গভীর নয়
তবু তা কখনো কখনো করোনা ভাইরাসের মতো
নিরীহ চেহারা ছেড়ে বিনাশী হয়ে উঠতে চায়।
আমার এক নীল প্রজাপতির সাথে প্রেম ছিলো।
নীল প্রজাপতির নাম ছিলো রাত্রি।
রাত্রির গভীর বুকে ছিলো হলুদ দুঃখ
রাত্রির চারপাশের অন্ধকার প্রাকার ভেঙে
সেই হলুদ দুঃখ আমার দেহে মগজে
এসে বসতি গেড়েছে।
এখন আমি বুঝতে পারি কান্নার মানে
বুঝতে পারি জাপানি মেয়েদের মতো
সঙ্গমকালে তারও কেন কান্না পেতো।


---

মাকোন্ডোর বৃষ্টিতে আগুন


একবার ভীষণ তৃষ্ণা পেয়েছিলো।
সিগারেটের। সিগারেট ছিল অনেক।
আগুন ছিলো না কোথাও।
তারপর আমি আগুন রাখি যেখানে সেখানে
পকেটে আস্তিনে ব্যাগে ড্রয়ারে। লাইটার ম্যাচ
গ্যাসের চুলা। বইয়ের ভেতর। বউয়ের ভ্যানিটি ব্যাগে
খাতায় নোটবুকে মানিব্যাগে।
শত শত। এখন হাত বাড়ালেই আগুন পাই।
আগুনের অভাব নাই আর।

শুধু রাষ্ট্রের পুটকিতে আগুন ধরাবার আগুন
পাচ্ছি না খুঁজে কোথাও।
সব আগুন নিভে গেছে মাকোন্ডোর বৃষ্টিতে।

--


চন্দ্রদ্বয়



গোল গোল দুটো চাঁদ জেগে থাকে বুকে।
ঝুলে থাকে স্পর্শ পাওয়ার অনন্ত সুখে।
শিহরণ জাগে শিহরিত হয় ইথারের মতো
তরঙ্গ তোলে তোরঙ্গ চারপাশে আছে যতো।
পৃথিবীর মত আকার তার সৃজনে শোভিত।
পৃথিবীর মতো ঝুলে থেকে চক্রাকারে চালিতো।
দর্শনে প্রীতি দান করে স্পর্শে তার স্বর্গসুখ।
আরেক অঙ্গ তার দিকে চেয়ে থাকে উন্মুখ।
নিষ্কাম চোখে সে এক সরোবর জীবনদায়ী
নবপ্রাণ জাগে তারই কৃপায় অমৃতপায়ী।
----


একটা প্রেমের কবিতা লিখি


যদি একটা প্রেমের কবিতা লিখি,
এটা তাকেই লিখছি সে ঠিকই বুঝে নেবে।
কেমন উদাসী হবে সে প্রাক্তন প্রেম
মনে পড়ে গেলে আমিও নিচ্ছি ভেবে।
শোনো, তোমাকেই বলছি এই কবিতায়
আর কেউ না পড়ুক তুমি পড়ো সোনা
কতদিন কোন কবিতা লিখি না
কতদিন কোন গল্প হয়নি বোনা!
একটি বারও কি মনে পড়ে তোমার
ঘন নিশ্বাস। স্তন জুড়ে আমার হাত?
রতি স্মৃতি দমকে দমকে কান্নার আওয়াজ
শরীর ও মন এ কাত ও কাত?
কখনো কি জানতে মন চায় না তোমার
কেমন আছি তোমাকে ছেড়ে?
কত পূর্ণিমা ছাদে গেল কেটে নিরর্থক
কত জল নদীতে গেল বেড়ে?
কত বৈদ্য ওঝা দেখালাম হৃদয়
কত ঔষধ খেলাম তোমারে ভুলিতে
কিছুতেই কিছু হল না অসুখের
শুধু তোমারি ছবি আঁকি তুলিতে।


---

রাজনীতি


রাজনীতি প্রজাপতি কোটরে কোটরে
খেলা করে জঠরে খোপ খোপ
সাপ খেলা সার্কাস উড়ে যায় তুলোধুনো
নাগরিক কার্পাস। ভিঞ্চি বা মাদুরো
সবই খায় খাবি খায় রাতকানা অসুখে।
প্রেম ও বাণিজ্য শপথ ও স্বপন
বপনেও বিশাল বপু পৃথিবীর পেট।
কিলবিল করে ঘিলু করোটির বাইরে
আয় তোরা দেখে যা বোনরে! ভাইরে!
এ এক ম্যাজিক বড় ম্যাজিসিয়ান কেউ নয়
তবু ম্যাজিকেই আছে বুদ সব্বাই।
তড়পাই তর ভাই আরো বড় খানা খায়
কেউ কি বুকে হাত দিয়ে থাকে এই কথা বলতে
প্রজাপতি খোলসা ছাড়ে না রাজনীতির
জামা গায়ে না চড়াতে?
পয়োনালি সব গুলি মিলেছে ওই জায়গায়
হায়েনারাও মুখ লুকায় কী দারুণ লজ্জায়!
---


অনুশোধ



নতুন গজানো ডানায় উড়াল শুরু তাই
বাতাসের ঢেউ নাচে যমুনার যমজ ভাই
উঠে এসেছে ঋগবেদের ঘুমন্ত পাতা ফুঁড়ে
তাণ্ডবে মণ্ডপেও রক্ষা নাই পৃথিবী জুড়ে
প্রকৃতি জবাবদিহী করে না মানুষের কাছে
তবু সকল উত্তর তার কাছে গচ্ছিত আছে
প্রজাপতিটি তোমার কাছে হতে পারে ক্ষুদ্র
কিন্তু তার প্রতি সামান্য অন্যায়ে প্রকৃতি রুদ্র
হতে পারে একটি ফড়িং একেবারে মূল্যহীন।
তাই বলে তাকে তুমি বাস্তুচ্যুত করো যেদিন
কেঁদে বুক ভাসিয়ে তার মা বন্যা নিয়ে আসে
সে ক্রন্দনে পৃথিবী কেঁপে ওঠে ভয় তরাসে
ডেউয়া গাছের নীচে বুভুক্ষু মাছরাঙা ঠোঁট
অকারণে তোমার মন দিলে কেন জাগে চোট?
তুমি যে হিংসার আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছো বন
সেই আগুন পাখি হয়ে ওড়ায় ধ্বংসের কেতন।
তুমি শুধু মুখে বলো মরিতে চাহিনা সুন্দর ভুবনে
ভালোবাসো কই ভুবনের ভাই বেরাদর চুম্বনে?
তোমাকে তাই তাড়া করে ফেরে আগুনপাখি
ফড়িং এর মা বলে কীকরে তোকে বাঁচিয়ে রাখি?
ফড়িং আর প্রজাপতির মায়েরা যে তিন বোন
তোমার দুখিনী জননী ধরণী তাদেরই একজন।



Post a Comment

0 Comments