অরবিন্দ চক্রবর্তী'র কবিতা



নিত্যবৃত্ত চ্যবনপ্রাশ


একগাদা পূর্ব-পশ্চিম নিয়ে হাজির।            ল্যান্ডস্কেপ কাগজ যা সয় না।
চাচ্ছিলাম ডট বসিয়ে সটকে পড়ি।           সেদিন কী যে চিরহরিৎ-গর্জন।

বলো তো পুত্র, নিরক্ষ তুমি চাও কিনা?
দক্ষিণে শার্দুলদল মৃগশিশুর ওলান কেড়ে নিল। কেন?
আমি তো তোমার অংশ ধরে ডাকলাম।
লেজঝোলা আত্মা লুপ্ত নামে যুদ্ধ আহ্বান জানালো যে।
এবার বলো, ডায়নোসর কোনো দিন রক্তবান ডেকেছে?
যেদিন, সূর্য উঠল না, বিষাদ খেয়ে কৃষিতে গেল মানুষ।
রঙধনুর কোনো আলামত এসেছে কি রে গুলজার?
ফিরে এল মাংস হয়ে, দূরে হাসির কঙ্কাল পাওয়া গেছে স্যার!

পিথাগোরাস এল হাওয়াঘটিত আদেশে : চাইল দরজা।
খুলে দিলাম সকাল। হুহু করে ৯০০ এঙ্গেলে আমার মুখে তুমি।
সোনালি বৈঠক হলো : একদল চাইল শান্তি। বিবাদীদলও চাইল একচ্ছত্র শান্তি।
ফিতা আনা হলো বাদামি। দাগ কাটা হলো সুরেখা।

বিছানায় ফিরে দেখি, আমার জ্বরে কোনো সেলসিয়াস নেই।
কেবল একটাই দিগ্, একটাই উত্তরদেখো তো ভাই,
আমিই সেই ইবনে বতুতা কিনা? ভাস্কোডা বলেননিশ্চয়ই। নিশ্চয়ই।



ডুয়ার্স চিয়ার্স


সত্যি বলতে কী, সত্য বলে কিছু নেই। যা আছে, সব অশ্বডিম্ব আর মাসেল আর 
পেরেক আর পেঁপেফুল আর খনিজ আর গার্বেজ।

চলো তো ইয়ার, গ্রাফচিত্র সমান ইহজীবনী লেখা যাক

. সকালে, একখানা থান ইট ছেড়ে এসেছ শিয়রে।
. দেখে এলে যে, তোমার সূর্য ময়েশ্চারাইজ করছে মেঘবাটা দিয়ে।
. বকমবকম করছে আরেকদল ভাষা ফেরত স্বপ্ন্যার্থী।

ভাঁজ খোলা দস্তাবেজের সামনে হাত-পা বিক্রি বাবদ বসেছ ডায়নিংয়ে।
যেখানে বিল পেইড কানুন, ছুড়ে এলে অসামান্য কয়েন।

বাবার অসুখ, বিদ্যুৎ চমকালো রাষ্ট্রে। শিরোনাম : ।। রাবিশ।। ০।। রাবিশ।।
এই খবিশটা আসলে কে, জানতে চাইলে না।
কারণ : সারা শহরের বিলবোর্ড ভর্তি বিবিধ মাত্রার বুড়ো আঙুল।
ঘটনা যখন সংবাদ হলো, তোমার গোপন নাম ফুর্তি, ডাকনাম আনন্দ হয়ে গেল।

(জেনে রাখুন জনাব, কারও অগ্রজের জনপ্রিয় নাম ফুর্তি, কারও ইমিডিয়েট ইডিয়ট ছোট্টর নামও আনন্দ। বিপ্লব তোমারই পাড়াতো বখাটে বড়দা। যার সঙ্গে তোমার গ্র্যান্ডমাস্টার রিলেশন, কয়েক ম্যাচ ছম্কছলো খেলে ক্রস করেছ।)

টাট্টু হে, বেবুন হে, ভুলে গেলে চলবে না যে, মেয়েবন্ধুর সঙ্গে সিডিউল কোনো এক মেরুন দিনে।
শর্তসাপেক্ষ : উদ্যান-পার্কের নিভৃত বেঞ্চিতে চলবে য়ুঁহূ-চর্যা, সেই বিকালের ত্বক হবে জাফরুল।

যাগ গে ভাই, খুলে দিই পাগল, পথ আমাদের ঘুড্ডি।
সভ্যতা অথবা রাত্রি

রাত্রির রং বিবাহ। শাড়ি তার কাছে অর্থহীন। তবু মানুষের পাহারা আছে বলে গায়ে মাখে জবরজং। পরিসীমা পেরিয়ে যখন দরজা নাড়ে, হৃদয়ের প্রত্যন্ত জাপটে দৈত্বে ধানশ্রী গায়, দেদার চুমু খায়। তখনই মহিমাখ- নামে তামাটে সোহাগা। যে সাম্রাজ্যের দিকেই যান না কেন সন্ধ্যা তার কক্ষ-বান্ধবী। মিনতি নামে বুটিক বাতিক সত্ত্বেও মালবেরি বন অতি ঘুমপ্রিয়। সহসা শরীরে যার ক্ষুদেবার্তা বহমান। অতসব কা-স্বর শেষে আপনিই বলুন জতুগৃহ, পাঁজর থেকে কেন উচ্ছেদ হলো না সতীদাহ?



পুষ্পক, ফলদ


গাছের পুত্র ফল। পোশাকের সন্তান দেহ।
হে গান্ধর্ব, কাকে তুমি বিবাহ করিবে?

সপুষ্পক বলে যার পেটে রেখেছিলে বীজ
শরীরে কাঁটা আর হাতে হাতে ফুল নিয়ে সে হয়ে আছে মান্দার।

জনৈক ধাত্রী একদিন সঘর তলপেট খুলে প্রত্যাশা করবে
আলো আর পৃথিবী; ঝড় এলে, ঘূর্ণি এলে ভিজিয়ে নেবে সম্ভবার খিল।

অনাগত হে, দ্বিধাকর্ণ বলো, এবার কাকে তুমি মানবে জনক?

শোনো তবে ফলিত, দরজা জেনে যেখানে আমরা পেতে চাই শ্রয়
তারই অদৃষ্ট দূরে, ঘাপটি থাকে কোনো এক জল্লাদ।

ফলে, চিত্রল বাঘ মায়াহরিণ জগতে সকলে আমরা যেন
খাদ্য-খাদকের ঘূর্ণ চাকতিতে লোলিত তদ্ভব, অপলা কারক।



প্রস্তাবনা

চাকা। শরীর। রক্ত। ভাবতে আমার ডোরাকাটা লাগে। জেব্রাক্রসিং খেলতে খেলতে শিল্পকলায় যাচ্ছিল এক মেয়ে। নাম প্রকাশ্য : নূপুর। ফণি করা চুল। মেঘ, বিদ্যুৎ আর রক্তজবা-হুইশলে ভরা অশনি। মুহূর্তে বেজে উঠল ঘণ্টি। ছিটকে গেল নূপুর। ঝরল রক্ত। শরীরজুড়ে বাজতে লাগল সজন; প্রথম স্তবকে ব্যবহার হলো অচিন ঝিরিঝিরি, অন্তরায় ছায়াসঙ্গীত। হৃদিমাধ্যম, এমন মুখোমুখি দুপুরের শিরোনাম আহাজারি হলে কেমন হয়?



সন্তান


থির হয়ে দেখা গেল একজনের পায়ে হেলান করে
দাঁড়িয়ে আছে কারও দীপের জনম।

চক্রদার তুমি, ভরসার প্রতি আস্থা রাখো
একদিন উপমিত হবে তোমার বীজের কর্মধারয়।

ভাবছ শুধু
পায়ের নিচে মাটি নেই অথবা মাথার পরে ছাতা।

বলি, খুঁজছ কেন? আকাশের গায়ে তো পোশাক থাকে না!
যা থাকে সবই অসমাপিকা, লুম্বিনি গতির টলটলে অর্বুদ।

অধিকার হে, জেনে রাখো আদিম, নিয়তি সবার বাটোয়ারা আছে
জলের সহনামে অভাগারা পেয়েছে তার তিনভাগ।

সুযোগে, আমিও চুক্তির সঙ্গে হয়েছি গোমস্তা
বিন্দুগণ কোনো দিন প্রবাহী হবে, মৈনাকধাম হবে নিশান-মোহানা।
কস্টিউম বনাম শরীর অথবা কাঠামো সমাচার

শরীর ধরে মারো টানশব্দ হবে মাড়াই মাড়াই।

এবার বলি, আমাদের মুগ্ধতা ধানবাচক হলে
কী এমন ক্ষতি হতো রে লখাই?

শোনরে বিধান, যার ঘরে মহিষ আছে, ইঁদুর নাই
সে কেমনে জানবে গোলাঘরের মাধুর্য কুটকুট?

তুইও শরীর, সাথী সয়ম্ভরের, দেহস্বরে জানতিস যদি,
ঘরে এনেছে যারা গান্ধারধ্বনিনাচ কেন মোহন পরিচয়?

মন, পাপড়ির কাঠামো তোর, জানে সর্বজনা
আরও চিত্রল ইতিহাস লিখেছিস আয়ুর বিবিধ খৎনায়

ফলে, তোর জিভে আরজ নিশ্চয়, আমিষ জাতের ট্যাটু আঁকা
যে কল্পনায়, একই ঘরে শুয়েবসে কীভাবে হয় পৃথক পর্বে হৃদয়চাষ?

জীবন, বেঁচে থাকা পেয়ারা আমার, ভাবতেই এক পরিখা রহমত
এই দুরাশয় নাট্টমে এলিয়েন বোধহয়
মানুষের, শরীরের, হৃদয়ের পোশাকধোয়া ব্যবহারিক লোগো-পরিচয়!


Post a Comment

0 Comments