বিষ্ণু সরকার এর পাঁচটি কবিতা




মুখোমুখি

আমাকে বারবার মুখোমুখি হতে হয়

যখন জ্যোৎস্না আলোয় চরাচর ডুবে থাকে
দূরে কোথাও প্রিয়তমার মুখ
অস্পষ্ট হতে হতে দিনের আলো
আমাকে বারবার জাগিয়ে তোলে

যখন চারদিকে সবকিছু স্পষ্ট হয়
দেখতে পাই সন্ধ্যা নদীর জল
গড়াতে গড়াতে এইমাত্র ভেসে গেল
ভুবন ছাপিয়ে আরও দূরে, আলোকবর্ষ

পৃথিবীর আলো-বাতাস ফুরিয়ে এলে
শূন্য-নীল, তারপর স্বপ্নের বাতায়ন
আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়, পুড়িয়ে দিয়ে যায়,
বারবার মুখোমুখি দাঁড় করায়

আমি কতটুকু আমার জন্য
আমি কতটুকু আমার জন্য ছিলাম
আমি কতটুকু আমার জন্য হতে পেরেছি
আমি কতটুকু ভুবনের জন্য হতে পেরেছি




ধুম লেগেছে মনে

তারাখসা রাতগুলি ক্রমশ গুটিয়ে আসছে
অথচ শেষ হচ্ছে না, যেভাবে ঠিক শেষ
হওয়ার কথা ছিল

অনন্ত গভীর পথগুলি যেখানে শেষ
সেখানেই একঝাঁক বৃষ্টি দেখে এলাম
মেঘগুলি হেলেদুলে উড়ছিল জোৎস্না মেখে
সারিসারি রামধনু পুড়িয়ে দিচ্ছিল চোখ

কি একটা অসুখ বারবার ঘুরে ফিরে আসছিল
এতসত এন্টিবায়টিক, বুক ভর্তি প্রেসক্রিপশন
তবু কতদিন বৃষ্টি হয় না এবাড়ির ছাদে
ছাদ ভেজে না, গ্রিল, দরজার পাশে ওবাড়ির শরীর

খরা কেটে গেলে আকাশগুলি নদী হয়ে যাবে
সারিসারি বাতাস ঢেউ তুলবে আর
বুকের ভেতর একটু একটু করে মেঘ জমবে
ঘন-কালো মেঘ, দুহাতে মুষলধারে বৃষ্টি নিয়ে





সময় যেমন

আমাদের হাতেও সমুদ্র ছিল 
ছিল নোনা জল, ঢেউ
গুচ্ছ গুচ্ছ ফেনা 
আর
অফুরন্ত শূন্যতা

যার শেষ ছিল না
যার শুরু ছিল না
শুধু একটা প্রবাহ

বইতে থাকা সময় যেমন...




রাত্রি যাপন

এক কালো রাত্রি পার করে
আমরা এগিয়ে চললাম

আমাদের সঙ্গে চলল নৌকা, নদী 
আর
একটা মস্ত বড় অরণ্য;
যার গভীরতা
অজানা
শুধু দেখলাম
অরণ্যর মাথা ভেদ করে
উড়ে গেল একটা হাজার বছর
অজস্র দশক আর রাত

  

আমাদের হাঁটা

আমি যেদিকে হাঁটছি
সেদিকে একটা পাহাড় আছে
আমি যেদিকে হাঁটছি
সেদিকে একটা নদী আছে
আমি যেদিকে হাঁটছি
সেদিকে একটা অরণ্য আছে

আমরা হাঁটছি পাহাড়ের জন্য
একটা নদীর জন্য
একটা অরণ্যের জন্য


প্রতিযোগিতা

একটা ভয়াল ট্রেন স্টেশন পেরিয়ে গেল
দুরন্ত শক্তি তুলে পালিয়ে গেল
নাকি ছিটকে গেল মৃত্যু বরাবর
ভুবনের বুক চিরে দিল, নাকি ফাটল

এভাবে একটা সময় গভীর হলে
হাজার হাজার শব অন্ধকার ঠেলে
আলোর দিকে ছুটে যেতে চায়
যারা পারে না, তাদের জন্য প্রতিযোগিতাটা
বারবার বারবার জংশন অতিক্রম করে
ছুটে যায়, নাকি পালিয়ে যায়



খরা

ফাটল জুড়ে মোমের প্রলেপ
একটা দুটো চারটে হাত
ফাটল বাড়লে বড় গুহামুখ
ভেসে যায় জলজীবনের খরা দিন
অখণ্ড হাতগুলি জবুথবু, মোমের প্রলেপ
গলে গেলে সেই তো খরা ভুবন
খরা শরীর, অসমাপ্ত যাপন



Post a Comment

0 Comments