জলভূমের পরী
বিস্তীর্ণ জলভূমে এক রঙের পরী নেমে এসে
তার কপালের লাল টিপ
নাবিকের সার্স লাইটের মতো আলো ফেললে
অন্ধ পরিযায়ী পথ খুঁজে নিলো।
সমস্ত পথ আলোর উপাখ্যান মন্দিরায় নেচে উঠলো;
অদৃশ্য ডানার পরী যেদিকে তাকায়
সেদিকেই এখন মনোময় সঙ্গীতের মূর্চ্ছনা !
পরিযায়ী পাখি সেই সঙ্গীতের দীক্ষা নিতে
হাজারো মাইল উড়ে আসছে জলভূমে।
জল, ভূমি, অন্ধ পরিযায়ী
এমন কি অদৃশ্য ডানার পরী
এখন জলমন্থনে একাকার হয়ে গেলো!
বসন্ত
আমি তোমায় সব রোদ দিয়ে দিতে পারি
শুধু বসন্তের ফুল ফোটাতে যতটুকু জল লাগে
ততটুকু তোমার জন্য রেখে
বাকি সব জল আমি ফিরিয়ে নিব।
জানি ফুল ফোটাতে ভালোবাসার জল সিঞ্চন লাগে,
আমিও সব রোদ থেকে
একটুখানি রোদ রাখবো নিজের জন্য।
রোদ আর জলের প্রাবল্যে
তাপিত হতে হতে আবার সিক্ত হবো।
রোদ আর জলে ভিজতে ভিজতে
আবারও তাপিত হবো__
তখন সব বসন্ত, সব ফুল শুধু আমাদের জন্য।
এবার আমরা ঝড় হবো ভীষণ উন্মাদনায়__
তারপর অপেক্ষার বর্ষা এলে
শান্ত হবো আরেক বসন্তের অপেক্ষায়।
টেলিপ্যাথি
আমার মৃত্যুর খবর যদি সাগর জানতেই না পারে
তবে শ্রাবণধারায় আমাকে মৃত্যু দিও।
পাহাড়ের উচ্চচূড়াতেও আমার মৃত্যু খবর পৌছানো দরকার।
আমাদের প্রেমকে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল এই পাহাড়।
শ্রাবণের মেঘ আমাকে ভিজিয়ে দিলে
আমার মৃত দেহ কেঁপে উঠবে শিহরণে
সেই শিহরণে সাগর যেনে যাবে আমার মৃত্যুর খবর।
শ্রাবণের মেঘ উড়ে গিয়ে
পাহাড়কে কানে কানে জানাবে সে খবর।
আমার মৃত্যু শিহরণে সাগরে ভূমিকম্প হয়েছিল একদিন।
যুদ্ধ আর তরবারির বিপরীতে
তোমার এক হাতে ছিল গোলাপ
অন্য হাতে ছিল তরবারি
আমি সংগোপনে
ভয়ের হাতকে আড়াল করে
গোলাপের হাতকে ধরেছিলাম
আমারও এক হাতে ছিল প্রেম
অন্য হাতে ছিল যুদ্ধাস্ত্র
তুমিও সংগোপনে
যুদ্ধকে ঘৃণা করে
প্রেমকেই তুলে নিলে কত না যতনে!
দেখো, যুদ্ধ আর তরবারি চিরকালই পড়ে থাকে
কেমন ভয় আর ঘৃণার অন্ধকার নদীতে।
মিথ্যার আড়ালে
আমার একটা মিথ্যা কথা বলতে
প্রায়শঃ ভীষণ ভালো লাগে।
প্রতিদিন দেখা হলে তোমার ড্রেস দেখে বলি,
“নতুন? কবে নিলে?”
তুমিও বকা দাও রোজ।
বলো,“হাজারবার দেখলেও
তোমার কাছে নতুনই লাগে, ভুলো যাও শুধু!”
আমার কী দোষ বলো, তুমি কি
নিজের সব নতুনত্বের কথা বলবার বা দেখবার
সাহস দিয়েছো কখনো?
আজ কিন্তু তোমার চোখের ভিতরে
এক ক্ষুদ্র ‘আমি’র প্রতিবিম্ব দেখলাম।
বিশ্বাস করো, এটা কিন্তু মিথ্যা বলিনি।
সামনের বসন্তে
কোনো এক গোলাপকে সাক্ষী রেখে
তোমার ঠোঁটের নতুন গল্প বলবো ঠিক।
সেদিন মিথ্যা কথাগুলো অবাক বিস্ময়ে
সত্যের কাছে নত হবে।
রেশমে জড়িয়ে যে অঙ্গখানি
তুতের বাগানে অবিরাম নেশার মতো
দুলে দুলে চলা, আমি এক পলুপোকা
বদ্ধ মাতালের মতো, বুদ হয়ে পান করি তুতরস
যেনো হেমলক পান শেষে অচিন নেশাতে আমি
জীবনের বিনিময়ে দিয়ে যাই সুতার গুটি।
সুতা থেকে বুনেছে শ্রমিক- কোমল রেশম
আমারই জীবন দিয়ে, গড়া সেই রেশমে
জড়িয়ে নিয়েছে যে অঙ্গখানি; তাকে আমি জানি।
অপরূপা সাজে সে, গিয়েছে সুদূরে- রেশমে অঙ্গ ঢেকে
কার হাত ধরে? আমি যে জড়িয়ে আছি রেশমের রূপে!
জানে কি সে? জানে না সে... জানে বুঝি!
আমি তুতরস পান করি হেমলক জেনে- রাত্রি যাপনে
কোমল রেশমে যেনো তাহারই অঙ্গ ঢাকা- বাসরের পানে।
শরণার্থী
আমার কোনো নিজস্ব রাত নেই
তোমার রাতেই আমি এক শরণার্থী
যত্ন করে আশ্রয় দিয়েছো তুমি
আশ্রয়ের প্রশ্রয়ে রাতের শেয়াল ঘোরে এদিক সেদিক
শেয়ালও শরণার্থী জেনে লোভীচোখে তাকায়
তখন শরণার্থীভয়ে তোমার রাতে মুখ গুঁজে থাকি
তবু অন্ধকারে জ্বলতে থাকে অগণিত চোখ
তোমার রাত তখন সাপের হিম আঁচলে
আমাকে পেঁচিয়ে রাখে
আমার কোনো নিজস্ব আমি নেই
তোমার তুমিতেই আমি শরণার্থী এক
তুমি রাত ছিঁড়ে একটা সূর্যসকাল শরণার্থীকে উপহার দিলে
তুমিই আমার একটা পতাকা হবে,
আর তোমার বুকটা হবে মানচিত্র।
0 Comments