মৃত্যুফুল
এ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন বাজলে
তুমি সিঁড়ি ভেঙে ছাদে গিয়ে দাঁড়াবে
আমি যেন দূর থেকে ছায়া দেখতে পাই।
চিলেকোঠার ফুলের বাগান থেকে
যে রক্তগোলাপ তুমি উপহার দিয়েছিলে
আজও সে ফুল জমা রয়েছে পৃষ্ঠার ভাজে।
যদি মৃত্যু আসে; আমি নীরব হয়ে যাই
খুকি আমাকে নিয়ে যাবে গ্রামের বাড়িতে
তুমি শুধু সিঁড়ি ভেঙে ছাদে গিয়ে দাঁড়াবে।
এ্যাম্বুলেন্স ছুটে চলছে; আমি স্পষ্ট দেখছি
বাবার কবরের কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আমাকে; আর
তোমার টবের ফুলগুলো শব যাত্রার জন্য তৈরি হচ্ছে।
করমজল
তীব্র ঝড়ে ঢেউগুলো উল্টে আসছে আমরা কোন দিকে যাচ্ছি
করমজলের বাতাসে ভেসে বেড়ায় ফেয়ার এন্ড লাভলির ঘ্রাণ
মূলের খেলায় ভুলে যাই সকল ব্যবধান।
আমরা কোন পথে ভেসে যাচ্ছি
হারিয়ে যাচ্ছি না তলিয়ে যাচ্ছি?
সুন্দরীর ভাতের অভাব নেই সে এখন ডায়েট করে-
রূপচর্চা তাঁর নেশা; সুজন পেলেই আলতা স্নোর বায়না।
বর্ষা নামলে সব জল এক হয়ে যায়। সুযোগ পেলেই-
পালা মাছগুলো করমজলের দিকে দৌড়াতে থাকে।
ধরাপড়লেই সব সাধু চোর হয়ে যায়;
সারাদিন ঘের মালিক টাকি মাছের গীবত করে।
কালা পানিতে মাছেরা লাফায় তাঁরা গীবতের অর্থ বোঝে না।
অসুখ
তোমাকে হারানোর পর খুঁজে পেয়েছি
অসুখের শিরোনাম।
ইজিবাইকের মতো অতি সহজ সে অসুখ।
চাকায়-চাকায় উদাস বাউলের পথচলা-
বারবার ফিরে যায় কর্ণফূলীর তীরে
তুমিই প্রথম বলেছিলে ঢেউয়ের তালে বিদ্যুৎ নাচে।
অসুখেবিসুখে ভরে গেছে সাধের শরীর
সোলার লাইটের মতো অন্ধকার পেলেই জ্বলে
ওঠে মরণ ব্যাধি!
দিনের আলো গিলে খায় উদাসের হুতাস-
যে সুখ দিয়ে গেলে অভাগারে বিরাগ তার নাম।
কসম কেটে বলছি শোনো-
বানডাকা জোয়ারে এবার ডুবদেব সাঁই!
যদি বিথি না ভেজায় শাড়ির আঁচল
মানজোৎস্নায় আর ভাসবো না
ডুব সাঁতারে জানিয়ে দেব বন্ধু বিদায়।
জলকীর্তন
মূর্ধন্য সূর্যের তেজ আমাকে বার বার
জলের কাছে নিয়ে যায়
পিপাসার শরীরে লোনা ধরে।
জোয়ারের আশায় মন
মাতায়, ঝাপায় দুনিয়ার এ প্রান্ত
থেকে অন্য প্রান্তে।
নদী নারী মৃত্তিকা জলকীর্তন করে
পিপাসা কাতর শঙ্খচিল
মেঘেদের বর্ষার গান শোনায়।
আদিম পৃথিবী থেকে জলের স্তর
নেমে গেছে সীমা থেকে শীলায়
প্রকৃতির বৈরিতায়
বিপ্রলব্ধে মধুমতি
পদ্মা-বিহনে কুমার
কালের মৃত্যু ঘটে
ঘন হয়ে আসে মহাকাল।
জলমঙ্গলের আশায়
উদাসী বেহুলা আসন পাতে
অর্বাক বৃক্ষের তলায়।
বৃদ্ধ সবই দেখে, মৃদু হাসে
আবার নদী হয়ে যায়।
আঁধার জলে ডুবে
ভীষণ উষ্ণ বুকে বাউলের পথ চলা।
কালি ও কলমের মিলন হলো না কস্মিন কালেও;
সৃষ্টি হলো মহাকাব্য, সনেট, গীতাঞ্জলি।
ওপারে যাবার সুর বার-বার বেজে ওঠে,
অবশিষ্ট পঁচানব্বই স্মৃতির ডানা মেলে!
খেয়াপারের তরী হারিয়ে ফেরে ঘাট-
অনিশ্চিত গন্তব্য কোথায় ভবের হাট।
সব আলো নিভে যায়।
শব্দ নৈঃশব্দের রং ছড়ায়।
পৃথিবী তখন গভীর তন্দ্রায়;
আঁধার জলে ডুবে জেগে থাকি সাঁই আর আমি।
0 Comments