ভিন্ন ভূগোল ও অন্যান্য কবিতা
শতাব্দী
ঘেঁষা ভোর
ভালোই তো ছিলাম নিঃসঙ্গ ভুবনে
কেন ভাঙালে এ নীরবতা ঘোর?
একাকী ছিলাম উত্তর থেকে পূবে
কেন দেখালে শতাব্দী ঘেঁষা ভোর?
নিশির আঁধারে না হয় কাটতো জীবন
নগণ্য আমার সেই ছিল ঢের ভালো
মহাশূন্যের মহাজাগতিক টানে
শূন্য চোখে কেন জ্বালালে আলো?
করতল ভরে দিলে পুষ্পের ছোঁয়া
অনাথের কাছে এ যেন পুণ্যজল
কোথা রাখি সে সুগন্ধি-ধূপ-ধোঁয়া
সিক্ত দু'চোখে বাড়ায় জলের ঢল।
ফিরিয়ে দাও সে আমার নির্জনতা
নয়তো ভরাও অপূর্ণ হৃদয়ভূমি
মরুচরাচর অরণ্যে দাও ঢেকে
নব উল্লাসে নিমগ্ন হও চুমি।
গুপ্ত
সুখের খোঁজে
দিনের শেষে সবাই ফেরে নীড়ে
কেউবা সাঁঝে, কেউবা অন্ধকারে
ভিন্ন হাওয়ার পিছুটান পিছে ফেলে
ভাসিয়ে নৌকো জাগতিক ঝংকারে।
কেউবা করে সুচতুর অভিনয়
ভালো থাকার প্রাণহীন ছলাকলা
স্বপ্নকে কেউ সিন্দুকে দেয় তালা
খুঁজেও দ্যাখে না নষ্ট চাবির ঝোলা।
এইভাবে যায় দিন, ক্ষণ, মাস, বছর
বয়স বাড়ে না, উল্টো বয়স কমে
বিপরীত স্রোতে যতই ভাসাক ভেলা
বিপরীত মন ঘড়ির পেন্ডুলামে।
নতুন সূর্যে আবার নতুন আলো
প্রাণহীন তনু ফিরে পায় রক্তকণা
সুপ্ত মনটা গুপ্ত আশার খোঁজে
দুর্বিনীত, অধীর উন্মনা।
দ্রোহের
জলোচ্ছ্বাস
এ আমার তীব্র অভিমান
এ আমার ঘোর প্রত্যাখ্যান
উদ্দেশ্যহীন পথ চলায়
এ আমার নীরব উপাখ্যান।
তবু পথ চলি
তবু কথা বলি
তবু প্রতিনিয়ত গড়ে চলি সাম্যের সাঁকো
গেয়ে যাই সাম্যবাদী গান।
নিয়তি এঁকেছে রেখা মনগড়া সুষমায়
আমি দিয়েছি তাতে অনাবিল উপমা।
নিয়তি আর মনের যুদ্ধে নিয়তিই হয় জয়ী।
অনিমেষ চোখে চেয়ে দেখি তার অপার জয়োল্লাস
অভিমান আর ক্লেদ মাখা মনে দ্রোহের জলোচ্ছ্বাস।
বেঁচে
থাকার দায়
অসম্ভবের সুতোয় বোনা অসংগত জীবন
বেদনার নোনাজলে অবসন্ন মন
স্রোতের বিপরীত পথে আছড়ে পড়ে ঢেউ
ক্ষত সারাবার এমন শুভার্থী নেই কেউ
প্রত্যাখানের অপঘাতে হৃদয় ছারখার
কুলের মাঝেই অকুল পাথার অসীম অন্ধকার
খড়কুটোকে আঁকড়ে ধরে কত বাঁচা যায়?
খড়কুটোই বোঝে স্রোতে বেঁচে থাকার দায়।
ভিন্ন
ভূগোল
যেখানে হয়েছে শেষ
সেখান থেকেই আবার শুরু করি জীবন
বিনাশের ধ্বংসস্তূপ থেকেই নির্মাণ করি
নবপ্রত্যয়ের নবজাগরণ।
নৈশব্দের নিস্তব্ধতা থেকে তুলে আনি
এক আকাশ শাব্দিক শুভ্রতা।
ভগ্ন হৃদয়ের ভগ্নাংশ জুড়ে যে শূন্যতা
সে শূন্যতা ভরিয়ে রাখি সৃষ্টির পূর্ণতা দিয়ে
মরিচা ধরা স্বপ্নগুলোকে আবার শানিত করি
জীবনাকাশে মেলে ধরবো বলে।
আধখানা জীবন গিয়েছে চলে
বাকি অর্ধেক না হয় কাটুক ভিন্ন ভূগোলে!
0 Comments