প্রাণজি বসাক-এর কবিতা



হেমা কীভাবে আকাশ হয়...







দৃষ্টি

 
উষ্ণতা বুকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় যে বাতাস
তার কোনো পাসপোর্ট সিলছাপ্পর জরুরী নয়
বেবাক হাওয়াবাতাস ভেসে যেতে চায়
গ্রামগঞ্জ বর্ডার ফেলে শহরের চোদ্দতলার মহলে
কেমন বনবাস যেখানে বন নেই 
চাদ্দিকে খা খা রোদ্দুর সুনসান কারবার
ক্রেতাবিক্রেতা নেই আছে শুধু বাতাসের হুহু কান্না 
 
অতঃপর চোখ মেলে দেখলে পৃথিবী প্রান্তহীন
ভেবেছিলে তুমি এসে দাঁড়াবে প্রান্তসীমায়
যতদূর নজরবদ্ধ   রঙহীন শূন্যতা
শর্তহীন চেনামুখ প্রান্তিক শহরে
নাচঘর থেকে বেড়িয়ে একটা দল তোমার দিকে আসছে
তোমার ভেতর ঠেলে ঠেলে উঠছে কুয়াশা 
আর আশপাশ থেকে সরে যাচ্ছে নীরব রোদ্দুর



হেমা

চেয়ার টেনে বসতেই একটি নদী উঠে আসে
স্রোতহীন নদীটির কোনো পাড় নেই
তবু কলকল ধ্বনি শোনা যায়

নদীটির কোনো নামও নেই
তাকে হেমা বলে ডেকে নিই
তার শরীর থেকে হু হু করে নেমে যায় সব জল

সকাল-সন্ধ্যা চেয়ার টেনে বসি
নদীটি উঠে আসে স্বভাবে
সব জল নেমে গেলে দেখি 
হেমা কীভাবে আকাশ হয়



অকাজ

সাজিয়ে রাখা আছে বিকল ঘড়িটি
ঠিকঠাক জুতসই দেয়ালে

অবৈধ ইউটার্ন নিয়েছি বলে ফাইন দিয়েছি
এখন থমকে দাঁড়ানো ঘড়ি যেন 
ট্রাফিকপুলিশের কোনো বন্ধুপ্রেমিক থাকে না
শুধু চনচনে রোদ এসে মেখে দেয় রোদগন্ধ 

এসব দেখে দেখে বেশ শিখে গেছ ধর্ম অধর্ম
বিকল ঘড়িটির একদা কাজ ছিল সময়ে সময় রাখা 




আলো বসে থাকে

পুরনো বাড়ির দরজা খুললে
হঠাৎ ঢুকে পড়ে নতুন আলো
পুরনো আলো বলে কিছু হয়না
এমন আপ্তবাক্য তোমার ঠোঁটে
তবুও আমি অন্তমিলের খোঁজে
দিনরাত কবির পাশেপাশে হাঁটি
কখনও নতুন আলো বসে থাকে
পুরনো বাড়ির মর্মর-চৌকাঠে




ভালো নেই

পোস্টঅফিস থেকে ব্যাংক 
ব্যাংক থেকে হাসপাতাল
এমন রুটে হাঁটে সময়

পোস্টঅফিস থেকে ব্যাংক 
ব্যাংক থেকে হাসপাতাল
আঙুল ধুয়ে নামে নুন

নুনে গলে রোদের মস্করা
কেউ কোথাও ভালো নেই
ভালো নেই কেউ এসময়



একটি নদী

যেভাবেই হোক ডুবে থাকা যায়
রহস্যময় ঘন কুয়াশায়
আলাপচারিতায় উঠে আসা প্রত্নরেখা 
সেই কবে ছুঁয়ে গেছে বাতাস
অডিটোরিয়ামে নিভৃত গর্ভে 
উল্লাসপ্রিয় ছায়ারা তোমাকে ভাবে নদী
তোমার নদীতে অজস্র ঢেউ
ঢেউয়ের মাথায় মাথায় দ্যূতিকণা
মহড়ায় উন্মত্ত সন্ধ্যা ভুল করে সংলাপ 
কার ইশারায় ছুটে যায় বাতাস ওই দিকে
সমস্বরে চেঁচিয়ে ওঠে দর্শক 
তুমি - তোমার উপর ফেলা তীব্র আলোয়
              একটি নদী বয়ে যায়  



স্বপ্ন নয়

স্বপ্ন নয় - তুমি ছিলে
অফিস ছুটি করে আমিও ছিলাম
তোমার গভীর আলাপন
সময়ের সময়ে ছুঁয়ে থাকা বিশ্বাস
সারাক্ষণ শেখালে নিষিদ্ধ ব্যাকরণ 
আদিম প্রহর এতটা দীর্ঘ - আজও স্বপ্ন 
কপাট ছুঁয়ে দাঁড়াল যে বাতাস
সে সিঁড়ি ভেঙে নেমে গেছে
রেখে গেছে যাপনের উপসংহার 
তুমি ছিলে - স্বপ্ন নয়
আমিও ছিলাম পাহাড়ের ঢালে তীব্র যন্ত্রণার দংশনে




Post a Comment

2 Comments

  1. স্বাগতম। বড় ভালো লাগল। প্রাণিত হলাম প্রাণ জি দাদার লেখা পিড়ে। উনি আমার ভালোলাগা আর শ্রদ্ধার কবি। আমার পথ
    প্রদশ্রক। দারুন লেখা। জিও দাদা।

    ReplyDelete
  2. আরও ভালো কবিতা পড়ার জন্য আমাদের সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ।

    ReplyDelete