ধর্ম ও অহংকার
গান করছিল এক বাউল। আশপাশে অনেক শ্রোতা এসে জুটেছে। এর মধ্যে রাগ ঝাড়ল
একজন। বলল, ‘বন্ধ
করো গান।’ আর অন্য সবার দিকে
তাকিয়ে বলল, ‘আর তোমরা একটা অধার্মিক লোকের গান শুনছো!
লজ্জা করছে না তোমাদের?’ তখন বাউল বলল, ‘আপনি ওদের বকছেন কেন? ওরা তো গান শুনছিল। যদি কিছু বলতে
হয় আমাকে বলুন।’ লোকটা তখন রাগে
ফেটে পড়ল। বলল,
‘তোমার তো কোনো
ধর্মই নাই, তোমার
কথা আবার কি শুনব!’ বাউল সামান্য হেসে
বলল, ‘মহাশয়, কে বলল আমার ধর্ম
নাই। মানুষই আমার
ধর্ম।’ তখন লোকটা
চোখ লাল করে বলল, ‘এসব ফালতু কথা রাখো! মানুষ!
মানুষ আবার ধর্ম
হয় নাকি! তুমি
কখনোই ধার্মিক ছিলে
না, হতেও পারবে
না। আমাকে দেখো,
আমি ধার্মিক।’
বাউল বলল, ‘এই যে তুমি ধার্মিক বলে অহংকার করছো! অহংকারী কীভাবে ধার্মিক হয়? যদি সত্যই কেউ ধার্মিক হয়, তবে তো সে হবে অনেক অনেক বেশি
বিনয়ী। ধর্ম এবং শিক্ষা তো মানুষকে অনেক অনেক বিনয়ী
করে।’
ডাক্তার নির্বাচন
তপুর মা চিৎকার করে কাঁদছে আর বলছে,
‘কী ওষুধ খাওয়াইলি, মধ্যারে। পেডের ভিত্তে সাইকেল চালায়, মধ্যারে।’ পেটের ব্যথা সহ্য
করতে না পেরে
মধুসূদন ডাক্তারকে বলছে মধ্যা। তপুর বাবা
যারপরনাই কী করবে
বুঝতে পারছে না। মধুসূদন এলাকার নামকরা ডাক্তার। আপদে-বিপদে
তারেই সবাই কাছে
পায়। তার কাছেই
যায়। কিন্তু তার দেয়া ওষুধ খেয়েও
তপুর মায়ের পেটের
ব্যামো কমছে না। চিৎকার-চেঁচামেচি সহ্য করতে না পেরে
তপুর বাবা ফোন দিল তার শহুরে
বন্ধুকে। বলল, ‘শোন,
তোর ভাবী তো ভীষণ কান্নাকাটি করছে। কিছুতেই তার পেটের
ব্যথা যাচ্ছে না।’ বন্ধু বলল, ‘ডাক্তার দেখাইছিস?’ তপুর বাবা বলল, ‘পাস করা ডাক্তারই তো দেখালাম।’ তখন বন্ধু বলল,
‘শোন, তোদের গ্রামের চেয়ারম্যানও পাস করা নেতা, আবার প্রধানমন্ত্রীও পাস করা নেতা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যে কাজ করতে পারবেন তা কি ওই চেয়ারম্যানের পক্ষে
সম্ভব? তুই চেয়ারম্যান টাইপ ডাক্তার বাদ দিয়ে আপাদত প্রধানমন্ত্রী টাইপ
ডাক্তারের কাছে নিয়ে
যা ভাবীরে। বুঝলি?’
চাইনিজ রান্না
সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারের এক ছেলে দেশ-বিদেশ
নিয়ে পড়াশোনা করত। পড়তে গিয়েই জানতে
পারল চাইনিজরা ব্যাঙ খায়। একবার পাড়ার
কজন ছেলে নিয়ে
চাইনিজ খাবার রান্নার চেষ্টা করল। প্রথম
ব্যাঙ শিকার। এরপর
কাটাকুটি। তারপর চাইনিজ রান্না। খেতে গিয়েও
দেখল দারুণ। পরিবারের সবাই জানতে পারল
এই ঘটনা। ছেলেটি যখন বাড়ি ফিরতে
গেল তখন তার বড় ভাই গেট আটকে দিল। ছেলেটি বলল, ‘গেট খোলো।’ বড় ভাই বলল,
‘গেট খোলা হবে না। তোর জন্য
গেট বন্ধ।’ ছেলেটি জানতে চাইল, ‘কিন্তু কেন?’ বড় ভাইটি বলল, ‘আবার কেন জিজ্ঞেস করছিস! আচ্ছা,
তুই-ই বল, তোকে বাড়ি আসতেই
হবে কেন! ত্ইু
ব্যাঙ ধরছি আর খাবি।’
ফুটবল-রেখা
হস্তরেখাবিদকে হাত দেখালেন এক বোকা কিসিমের তরুণ। হস্তরেখাবিদ বললেন, ‘বাহ্বা, তোর ভাগ্যে দেখি
ফুটবল-রেখা রে! তুই তো ফুটবলার হয়ে যাবি!’ শুনে
খুব খুশি হয়ে গেল তরুণ। ঢ্যাং
ঢ্যাং করে নাচতে
নাচতে বাড়ির পথ ধরল। পথে দেখা
হল এক দুষ্টু বুড়োর সঙ্গে। বুড়ো
হেসে বলল, ‘বাহ্!
তোর মনে দেখি
রং লেগেছে রে! তো, বিষয়টা কী?’
তরুণ বলল, ‘হস্তরেখাবিদ বলেছে আমি নাকি
বড় ফুটবলার হব।’ বুড়ো বলল, ‘হাত দেখে উনি পায়ের
খবর জানলেন কি করে! ফুটবল-রেখা
তো তোর পায়ে
থাকার কথা!’ তরুণ
ভাবল, সত্যিই তো। ফুটবল তো খেলতে
হয় পা দিয়ে,
তাহলে হাতে কি করে সেই রেখা
থাকবে!’ হঠাৎ করেই তরুণের মুখের উজ্জ্বলতা ফিকে হয়ে গেল। বুড়ো বলল, ‘ওই সব হস্তরেখাবিদ ভূয়া, বুঝলি! নিজে যা করবি সেটাই তোর কর্ম।’
মনোরোগ ও শব্দ
সুমিত রুমিত দুই ভাই। সুমিত বড় রুমিত
ছোট। দুই ভাই সারাদিন খোঁচাখুচি করে, লেগে থাকে। তাদের
বাবা মনোবিজ্ঞানী, মা শিক্ষক। মায়ের কাছে
পড়তে আছে জনি। একদিন রুমিত জনির
কানে ফিসফিস করে বলল, ‘আমি যখন চোখ টিপ দেব তুমি তখন লাল-বুলু বলতে পারবে?’
জনি বলল, ‘এটা কোন ব্যাপার হলো!
অবশ্যই পারব।’
জনি পড়ছিল। কিছু সময় পর সেখানে সুমিত
এল। রুমিত জনির
দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিল। আর তখনই জনি বলল,
‘লাল-বুলু।’ শুনে
ক্ষেপে গেল সুমিত। জনির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তুই লাল-বুলু বললি কেন?’
জনি বলল, ‘ওরে বাবা! লাল-বুলু
বললে তোর সমস্যা কি?’ সুমিত বলল, ‘আমার সমস্যা আছে। এটা আর বলবি না।’ জনি বলল, ‘তুই এই শব্দ কিনে
নিয়েছিস নাকি?’ সুমিত
রেগে বলল, ‘কিনে
নিই বা না নিই আর বলবি
না।’ জনি বুঝতে
পারল সুমিতের মধ্যে
ঘাপলা আছে।
কিছু সময় পর আবার
চোখ টিপ দিল রুমিত। এবার জনির
মুখ থেকে এমনিতেই বের হয়ে গেল
‘লাল-বুলু’। আর যায় কই! সুমিত ক্ষেপে আগুন। প্রায় মারতে উদ্যত
হলো জনিকে। জনি এবার ‘আর কখনো
বলবো না’ বলে বেঁচে গেল।
বিছানায় শোয়ে-বসে একটা
বই পড়ছিলেন রমিত
সুমিতের বাবা। তিনি
পুরো ঘটনাটাই দেখলেন। মনে মনে বললেন,
‘শব্দটি শুনেই রেগে
যাচ্ছে সুমিত। তার মানে কখনো কখনো
মানুষের বিশেষ কোনো
শব্দের প্রতি এলার্জি বা বিরক্তি তৈরি
হয়। এর পেছনে
কোনো কারণ থাকতেও পারে, আবার নাও থাকতে পারে। এটা এক ধরণের মনোরোগ।’
আগাছা ও গাছ
রাগের মাথায় ফোনে প্রেমিকা বলল, ‘তোমার কাছে কোনো গুরুত্ব নেই আমার। আমার গুরুত্ব নেই, আমার কথার
গুরুত্ব নেই। আমাকে
তুমি আগাছা ভাবো। মুথা ঘাস কখনো
গাছের মর্যাদা পায় না। পরগাছা কখনো
গাছের মর্যাদা পায় না।’ এসব শুনে
প্রেমিকেরও রাগ হলো। বলল, ‘তুমি যখন বলছো তখন অবশ্যই মুথাঘাস পরগাছা... ওরা গাছের মর্যাদা পায় না।’ প্রেমিকা বলল, ‘সেটাই তো বলবে! তোমার
গাছ আছে না?’
প্রেমিকও বলল, ‘হুম। আমি গাছের কাছেই
যাচ্ছি।’ বলে ফোন রেখে দিল। এক সময় রাগ ভাঙল। প্রেমিক ফোনে প্রেমিকাকে বলল, ‘বুঝলে, সব আগাছাই গাছ।’ প্রেমিকা হেসে বলল, ‘রাগগুলোই আগাছা।’
0 Comments