চৈতালি গোস্বামী’র কবিতা


সেই আদিম লড়াই আজও থামে নি!


গন্ধ

চার যোগফল খাঁচার ভিতরে বসে
আমি গন্ধ পাই
বেশিরভাগ গন্ধই আমার খুব চেনা
দীর্ঘদিন কেটে গেলে
সম্পর্কের যেমন গন্ধ হয়
দর্জির হাতে যেমন লেগে থাকে সূচের গন্ধ
রিক্সাওয়ালার গায়ে ভেজা জামার গন্ধ
তেমন করেই পাই
রাত্রে কুকুরের একঘেয়ে কান্নায় রুটির গন্ধ
গন্ধ পাই সেই আদিম লড়াই আজও থামে নি
পথে বেরিয়ে করব কি
শীর্ণ মিছিল নীরব হয়েছে আরো
পায়ের শব্দে শুধু জমায়েতের গন্ধ পাই
সিলিংএ লেগে আছে ফাঁসির গন্ধ
ডিগ্রি টেবিলে লাল ফাঁসে গাঁটছড়া
ছেলেটা ধুলো ঝেরে গিয়েছিল কাল।
আজ কেন এল না
কিছু গন্ধ তারচেয়েও পরিচিত
ঝুড়ি নামে কালঘাম সাতটার লোকাল প্যাসেঞ্জার
একবার চোখ তুলতেই বুঝি
স্থানীয় দোকানদার দাম বাড়িয়েছে আবার
উথলে ওঠা ভাতের গন্ধে ছুটে আসছে কালাহাণ্ডির কিশোর
প্রিডেটরকে রুখে দিতে দাঁড়িয়ে গেছে সার সার কৃষ্ণসার হরিণ
ভেলাভেদার জঙ্গলে শুরু হয়েছে নতুন লড়াই
বাঁচবার, ঘুরে দাঁড়াবার
এমন কোন স্পর্ধার গন্ধ
একবার পেতে ইচ্ছে করে




কবিতা আমার


ওরা আমার রক্তের উচ্চারণ 
ফেনিল সমুদ্রের বুকে
মান্দাসে ভেসে যেতে যেতে
বুকে মেখে নিই সমৃদ্ধ উত্তাপ
ক্ষয়ের বিন্দুগুলি সংগ্রহ করে মালা গাঁথি
অন্ধকারে ওরা মশালের মত জ্বলে
পাহাড়ের মূক ভাঁজে
ওরা শান্ত নদীর তিরতির
স্তব গুম্ফায় ঘন্টার
মন্দ্র আন্দোলন
এক নির্জন ভালবাসা।
নির্জনে নিজেকে ভালবাসা।
জোয়ার-ঝঞ্ঝা-ঘূর্ণিবাতে অবিরত কেন্দ্রের দিকে চলা...




মাঠগান


( ভবা পাগলার গান "খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধো মন" শুনতে শুনতে )

ঘুমের ভূমিকা লিখে পার হল
রাত
বালির বারান্দার পারে
সংসার
ঠোঁট পোড়ে তিতকুটে সিগারেট
সেল্ফিতে ফ্রেমবন্দি খিল খিল হাসির অভ্যাস
পাতা ঝরে ঝরে পথ পেরুচ্ছে রোদ্দুর
অন্ধ চলমান শহর ছাড়ে একরাশ কালো দীর্ঘশ্বাস
গরমভাতের সাথে দু: মেখে খাবে
গড়াপেটার পুতুলখেলা পাবে
জোড়ি নম্বর ওয়ানের খেতাব
বুকের ভেতর ভরাট বৃষ্টি খুঁজে
বাইপাস ছেড়ে উঠে আসছে মেঠোপথ
ছিটকিনি খুলে ভিজবে বলে
বেরিয়ে পড়ছে ক্ষত
পথ ঘুরে ঘুরে গুনগুন মাঠগান
আবাল্য হেঁটে চলার ধকল..
ভিজিয়ে যাচ্ছে দলছুট একলা বাউল

Post a Comment

0 Comments