কায়েস সৈয়দ এর কবিতা

জীবন্ত পাথরের ভেতর বেড়ে ওঠা গহ্বর



নাফ

নাফ
তুমি জল হয়ে কেঁদেছে
দিয়েছো আশ্রয়
তোমার যোনীপথ ধরে ভেসে
এসেছে যে মৃত মায়াবী মুখ
পৃথিবীর প্রতি তার তীব্র ৎসনা
বুঝতে কষ্ট হয় না।

নাফ তুমি স্বাক্ষী
আমি পাইনি স্থায়ী আশ্রয় এই
পৃভূখণ্ডে

নাফ
আমার সৌভাগ্য যে মানুষের
আশ্রয়স্থল হয়নি জল
হলে হয়তো পৃথিবীর তিন ভাগের
জলগৌরব নিয়ে তুমিও হয়ে যেতে
মরণকারণ।


বিষণ্ন  দিনের মৃত্যু


আজ বিষণ্ন দিনের মৃত্যু হবে
আকাশে চাঁদের পূর্ণতা
আমার উদ্ভিদ শরীরের মৃত
হাত জেগে উঠবে লকলকে চারার
মতো_ যার ভেতর সৃষ্টির প্রাকৃতিক রহস্য।

আজ কালো রাজহাঁস হয়ে
চরে বেড়াবো চরের আশপাশ
বুঝতে দেবো না কাউকে
                     আমি মৃত

আমার মনে অঙ্কুরিত হওয়াবো
হাজারো খুশির পুর্কি
ঘুণাক্ষরেও কেউ টের পাবে না
                      আমি মৃত


বৈশ্বিক প্রজাপতি


সিঁথির দুপাশে মৃত অরণ্যের হাতছানি
অজুহাতে দুহাতে স্পর্শ করতেই
বয়ে গেল বিশ্বায়নের বৈশ্বিক বাতাস

বিষাক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড তোমার
ঠোঁটের আঙ্গিনায়
প্রশ্বাসের ছোঁয়া পেতেই
গলতে লাগলো গুরুগম্ভীর বৈশ্বিক বরফ

ঘোর অমানিশা চোখের বারান্দায়
অশ্রু পেয়ালায় চুমু দিতেই
উড়তে লাগলো বহুব্রীহি বৈশ্বিক প্রজাপ্রতি

থৈ থৈ জল
কাঠফাঁটা রোদ
আবার বিরাণ ভূমি


কালো পাসওয়ার্ড


পানকৌড়ি বা কাক পাখি নয় কোনটাই
                  মস্তিষ্কে সাদার প্রলেপ
                     সাদা মানে প্রগতি!
                      মুক্ত চিন্তার প্রহরী
সত্য_
কালো হয়েও রাত, রাত নয়
দিন বা সাদার সূত্রপাত
  

জীবন্ত পাথরের ভেতর বেড়ে ওঠা গহ্বর ০১


ড্রেজারে মুখগহ্বর ভরাট দৃশ্য
চলমান বাস্তব দৃশ্যটি দেখে কিছু দর্শক হাততালি দেয় উচ্ছ্বাসে
কেউবা চুপচাপ সুনসান নিরব

জানি শহরের ডিকশনারী থেকে
অচিরেই বিলুপ্ত হবে পাকস্থলী শব্দটি
খাদ্যনালির গল্প স্থান পাবে
                            পুরাতন মিউজিয়ামে


জীবন্ত পাথরের ভেতর বেড়ে ওঠা গহ্বর ০২


ছোটবেলায় তেলাপোকা উড়তেই মা দুচোখ ছলছল করতো। অভাবের কাঠপোড়া রোদ্দুরদুপুরে বাবা মাইনের সব টাকাগুলো মা হাতে তুলে দিলে মা হাসতে হাসতে বলতেন_ জানতাম বেতন হইবো, ওইদিন খুউব তেলাপোকা উড়তাছিল। অবাক হয়ে শুনতাম।
দাদু মারা গেছেন অনেক আগেই। কয়েকটা স্মৃতি তবু জীবিত। শরতের অসহায় আনমনা সন্ধ্যায় আপার সাথে পড়তে বসতেই কুপির চারপাশে উলির উপদ্রব। মারতে গেলেই দাদুর কড়া নিষেধ_ ওডি মাড়িছ না, টেয়া আইবো।
রাতে যখন শুতে যেতাম খুব ভয় হতো। মাচার নিচে মাটিগড়া উলির শিল্পাশ্রম। ঝাঁঝড়া কাঠের ফাঁকে ট্রাঙ্ক আর মাটির মটকাগুলো উঁকি দিয়ে ভেঙচি কাটতো,মনে হতো-এই বুঝি আকাশ ভেঙ্গে পড়লো!
ধীরে ধীরে উলিবাহিনী সমস্ত ঘরগুলো জয় করলো। অতিষ্ঠ হয়ে আপা একদিন ধঞ্চে দিয়ে মাটির বাসাগুলো ভাঙতে লাগলো। দাদু দৌড়ে গিয়ে কয়েকটা থাপ্পড় মেরে বলেছিল_ করছ কি! জানছ এডি কিয়ের লক্ষণ? নতুন বাড়ির। সে দৃশ্য মাঝেমধ্যেই চোখের নদীতে ভাসে। নদীর পাড়ের হঠা জলোচ্ছ্বাসে নিজেকেই বিভূতির অপু মনে হয়।
দাদু-মা-আপা সবাই স্মৃতির মিনার। প্রজন্ম প্রায়ই ওনাদের গল্প হা করে শোনে।
ওদিন এক শিক্ষক বন্ধুর সাথে চা খেতে খেতে গল্প করছিলাম। হঠা ডান হাতের তালু চুলকাতেই চুমু দিয়ে মাথায় ঘষতে বলল। টাকা আসার লক্ষণ। কখনো বাম হাতের তালু চুলকালে পায়ের ধূলো লাগিয়ে দিতে বলল। টাকা যাবার লক্ষণ।

গত এক সপ্তাহ যাব প্রায়ই বাম হাতের তালু চুলকাচ্ছে। অথচ বিগত এক মাস যাব আমার ডান হাতের তালু একবারের জন্যেও চুলকায়নি।

Post a Comment

0 Comments