আমি এবং হোমায়রা...
স্বরলিপি
গুমোট হাওয়ায় অস্থির
চারপাশ। তাপমাত্রা
মাপার যন্ত্র
থাকলে বুঝা
যেত, কতটা
উত্তপ্ত প্রকৃতি
আজ। দিনশেষে
কিছুটা ঝিরঝিরে
হাওয়া বইতে
শুরু করেছে
মাত্র। বাতাসের
এই সামান্য
গতিবেগেই, নারিকেলের চিরুল পাতাগুলো উড়ে
উড়ে একটা
আরেকটাকে চুম্বন
করছে। আজ
ক’দিনই
হলো এ
রকম হচ্ছে।
শহিদ উঠোনে
দাঁড়িয়ে আকাশের
দিকে একবার
তাকালো। দেখলো
আকাশে মেঘ
জমতে শুরু
করেছে। বৃষ্টির প্রবল
সম্ভাবনা। অথচ একটা ফোঁটা বৃষ্টি
পড়লো না।
উঠোন থেকে
বাড়ান্দায় রাখা চেয়ারে এসে বসলো
শহিদ। অতিরিক্ত
গরমে চিন্তার
বিন্যাসগুলো ফের এলোমেলো হয়ে গেল।
এই নিঃসঙ্গ
জীবনে আরো
বেশি নিঃসঙ্গতা
এনে দিয়েছে
শহিদের একমাত্র
ছেলেটা। কত
করে বললো,
তোর বিদেশ
যাওয়ার দরককার
নাই। আমার
যা আছে
বাপ-বেটা
দু’জনার
গরীবানা হালে
বেশ চলে
যাবে। কে
শোনে কার
কথা। সোনার
মত ত্রি-ফসলী দুই
বিঘা জমি
বিক্রি করে
বিদেশ গেল
ছেলে। প্রথম
কয়েক মাস
ফোনে কথা
হতো। এখন
নাকি ব্যস্ত
সে। কথা
বলার সময়
হয় না।
আরেকজন তো পালিয়ে
বেঁচেছে। কাজেই
শহিদ এখন
একলা মানুষ।
একাকী পড়ে
থাকে, দেখার
কেউ নাই।
বয়স বাড়ছে।
এই সাতান্ন
বছর বয়সে
নিজেই রান্না
করে। নাজুর
মা অবশ্য
কাপড়গুলো ধুয়ে
দেয়। কখনো
হাঁড়ি-পাতিলগুলো
মেজে দিয়ে
যায়। মাস
গেলে শ’পাঁচেক টাকা
দেয় শহিদ
তার হাতে।
এত অল্পতেই
খুশি হয়
মাজুর মায়েরা।
মাজুর বাপ
ঘরে পড়ে
আছে গত
তিন বছর।
দুই-পা
শুকিয়ে চামড়াগুলো
শুধু হাড়ের
সাথে লেপটে
আছে। যদিও
মাজা থেকে
উপরের অংশ
এখনো তরতরে।
মাজুর মা
তিনবেলা যতœ
নেয়। অথচ
কোনদিন ঘরে
ফিরতে একটু
দেরি হলেই
খিস্তি করতে
থাকে মাজুর
বাপ।
-শালির মাগি। শহিদ
মাস্টারের সাথে পিরিত করো। মনে
হয় লাত্তি
মাইরি মাজাডা
ভাঙ্গি দিই।
মনে করো
আমি কিচুই
বুজিনি। আরে
আমার দুই’পা অচল
হইচে তো
কি হইচে!
চোক কান
তো এখনও
ঠিকই আচে!
শহিদকে এখনো সবাই
শহিদ মাস্টার
বলেই ডাকে।
হাই স্কুলের
গণিতের শিক্ষক
ছিলো শহিদ
মাস্টার। কিন্তু
শিক্ষকতা তার
ভালো লাগতো
না। তারপরও
নিজের প্রয়োজনে
সকাল-বিকাল
দুই ব্যাচ
প্রাইভেট পড়াতো
আর মাঠের
বিঘা পাঁচেক
জমিতে আবাদ
করতো। তখন
সংসারে মাত্র
তিনজন সদস্য।
শহিদ, শহিদের
মা আর
স্বরলিপি। সবাই স্বরলিপিকে লিপি ডাকলেও
শহিদ লিপি
বলে ডাকতো।
শহিদের মা
অবশ্য এনিয়ে
বেশ কথা
বলতো। তোর
বউয়ের কি
আর কোন
নাম নাই।
আমি বাবা
এই নামে
ডাকতে পারবো
লা। শহিদের
মা মুখ
ভ্যাংচি কাটতো।
ঘরের বাড়ান্দায় পাটি
বিছিয়ে কুলার
উপর মরা
চাউল আলাদা
করতো লিপি।
দুপুরের রান্না
উঠাতে হবে।
এ সময়
অন্য ঘর
থেকে ডাকতে
থাকে শহিদের
মা। _ও
বউ কোনে
গেলে। এদিক
একটু আসো
তো দেকি।
মাথায় লম্বা
ঘোমটা দিয়ে
সামনে এসে
দাঁড়াতো স্বরলিপি।
তখন কতইবা
বয়স স্বরলিপির।
সতের পেরইনি।
শরীর থেকে
বালিকার গন্ধ
যায়নি তখনো।
স্বরলিপির বাবা ছিলো গরীব। তেমন
একটা জায়গা-জমি না
থাকলেও ছোটখাটো
ব্যবসা ছিলো
তার। বাবা
তার হাটে
হাটে চুড়ি,মালা বিক্রি
করতো। এখনও
চোখের সামনে
সব ভেসে
বেড়ায় স্বরলিপির।
ছোটবেলায় একেবারে
পুতুলের মত
চেহারা ছিলো
তার।
-আমায় ডেকেছেন মা?
-তুমি বুঝি
বধির। কানে
শুনতে পাও
না কিচু।
মাথা নিচু
করে দাঁড়িয়ে
থাকতো স্বরলিপি।
ততক্ষণে নিজের
কাজে ব্যস্ত
হয়ে পড়তো
বুড়ি। কোন
কিছুই বলতো
না।
এখনো শহিদের কাছে
স্বপ্ন বলে
মনে হয়
সবকিছু। চোখ
বন্ধ করলেই
সবকিছুই চোখের
সামনে ভেসে
ওঠে। চারদিকে
অবারিত সবুজ।
পুরো গ্রামে
তেমন একটা
বাড়িঘর ছিলো
না। স্বরলিপি
সারাদিন কাজ
করতো সংসারে।
মেয়েমানুষেরা নিজের সংসারের জন্য কি-না করে।
একমাত্র শুক্রবারে
সারাদিনের জন্য স্বরলিপিকে কাছে পেতো
শহিদ। অন্যদিন
তো স্কুল
আর প্রাইভেট
নিয়ে ব্যাস্ত
থাকতো। রাত
হলে মোটা
মোটা বই
নিয়ে বসতো।
চোখের সামনে
হারিকেনের মিটিমিটি আলো জ্বলতো। বিছানায়
চোখ বন্ধ
করে থাকতে
থাকতেই এক
সময় ঘুমিয়ে
পড়তো লিপি।
বিয়ের তিন বছরের
মাথায় একটা
ভ্রণ লিপির
গর্ভে বড়
হতে থাকলো।
প্রতিমাসে লিপিকে নিয়ে উপজেলা হাসপাতালে
যেত শহিদ।
রিক্সায় বারো
কিলো রাস্তা
যেত হতো।
বাড়ি ফিরে
আসার পর
থেকে শুরু
হতো শ্বাশুড়ির
গঞ্জনা।
- মনে হয় একমাত্র
উনিই সন্তান
পেটে ধরেছে।
বাপ জনমে
দেখিনি যে
মাসে-মাসে
পোয়াতি বউয়েক
লিয়ে ডাক্তারের
কাছে যাওয়া
লাগে।
ঠিক কতক্ষণ বারান্দায়
বসে আছে
শহিদ মনে
করতে পারে
না। গণিত
মাস্টার শহিদ
এখন আর
গণিত পড়াতে
পারে না।
স্কুলের চাকুরিটা
ছেড়েছে সেও
কত বছর
আগে। শহিদের
মাটির ঘর
এখন সেমিপাকা।
হঠাৎ
চেয়ার খেকে
উঠে দাঁড়ায়
শহিদ। মাজুর
মা আজ
তিনদিন কাজে
আসে না।
মাজুর বাপের
অসুখটা আবার
বেড়েছে। রোগি-টানা মানুষ
মাজুর মা।
শান্তি বলে
কিছু নেই
তার জীবনে।
এখন ঠিক
ক’টা
বাজে মনে
করতে পারে
না শহিদ।
ইদানিং আর
কিছইু মনে
থাকে না।
কেবলি ভুল
হয়ে যায়।
ঘরে আলো জ্বালায়
শহিদ। মনে
হলো ঠিক
দরোজায় স্বরলিপি
দাঁড়িয়ে আছে।
এদিক-ওদিক
কয়েকবার তাকিয়ে
স্বরলিপির নাম ধরে ডাকতে থাকে
শহিদ। -স্বরলিপি
...এই স্বরলিপি।
এখনো অভিমান
করে আছো।
হঠাৎ
করেই শহিদের
শরীর কেঁপে
উঠে। বুকের
ভিতর সেতারের
কান্না। তার
এই অদ্ভুত
জীবনের সাথে
বড়ই বেমানান
ছিলো স্বরলিপি।
কী দিয়েছিল
সে তাকে।
ভাত-কাপড়
দিলেই তো
আর সব
দেওয়া হয়
না। সেই
ভালো এই
সংসার থেকে
পালিয়ে বেঁচেছে
সে। এতদিন
এখানে থাকলে
ঠিক দম
বন্ধ করে
মরে যেত।
আলমিরার দিকে
এগিয়ে যায়
শহিদ। একটা
পুরনো পাঞ্জাবী
বের করে।
জায়গায় জায়গায়
পাঞ্জবীর নীল
রঙটা সাদা
হয়ে গেছে।
রাত হলেও
একবার মাজুর
মার বাড়িতে
যেতে হবে।
যে মানুষটা
এই সংসারের
জন্য, তার
সন্তানের জন্য
এতটা করেছে।
এখনো করেই
যাচ্ছে। তার
খোঁজটা নেওয়া
উচিত। এ
গ্রামের প্রায়
বাড়ির পরিবর্তন
হলেও মাজুর
মা’র
বাড়িটা আগের
মতই আছে।
সিমেন্টের খুঁটি আর দুই বান্ডিল
টিন কিনে
দিয়েছিলো শহিদ
বছর দুই
আগে। দীর্ঘদিনে
পরিবর্তন বলতে
এ টুকুই।
চিন্তার মধ্যে আবার
কবরের নিস্তব্ধতা
টের পায়
শহিদ। না
সে ছাড়া
তো এ
বাড়িতে আর
কেউ নেই।
আর কেউ
থাকে না
এখানে। একমাত্র
স্বরলিপির স্মৃতি ছাড়া। আজ একুশ
বছর এভাবেই
চলছে। স্বরলিপি
চলে যাওয়ার
পর মাত্র
তিন বছর
বেঁচে ছিলো
শহিদের মা।
তারপর একমাত্র
সন্তান সেও
বেশির ভাগ
সময় থাকতো
মাজুর মা’র কাছে।
কোলে-পিঠে
করে মানুষ
করেছে মাজুর
মা। শহিদ
জানে না
স্বরলিপি এখন
কোথায় থাকে।
হয়তো কোনোদিন
দেখা হবে
না আর।
চোখ ভিজে
ওঠে শহিদের।
একটু কথা
বলতে পারলে
ভালো লাগতো।
কোন মানুষ
কী এভাবে
বেঁচে থাকতে
পারে? পাঞ্জাবীটা
পরতে পরতে
শহিদ সিন্ধান্ত
নেয় সেও
আর এখানে
থাকবে না।
যে সংসারে
স্বরলিপি নেই
সেখানে থেকে
লাভটা কি!
ঘর থেকে
বাড়ান্দায় নামে শহিদ। কাঠের চেয়ারটায়
বসতে গিয়ে
টের পায়
আকাশে আবার
মেঘ জমেছে।
ঝড় হতে
পারে। এক
ফোঁটা দুই
ফোঁটা করে
বৃষ্টি পড়তে
থাকে। আকাশে
বিদ্যুৎ
চমকাচ্ছে। বজ্রপাতের আলোয় মনে হলো,
এই বৃষ্টির
ভিতর কে
যেন উঠোনে
দাঁড়িয়ে আছে।
আকাশে মেঘ
জমলেই বিদ্যুৎ থাকে
না। চারদিকে
ঘুটঘুটে অন্ধকার।
-কে ওখানে? -আমি।
-আমি কে?
-আমি মাজুর
মা গো।
-কি ব্যাপার
তুমি, কি
হয়েছে তোমার?
মাজুর মা’র ভেজা
গলার সুর।
-এই ঝড়-বৃষ্টির ভিতর
তুমি হঠাৎ কি
মনে করে!
আমি তো
তোমার বাড়ির
দিকেই যাচ্ছিলাম।
হঠাৎ
বৃষ্টি এসে
সব এলোমেলো
করে দিলো।
বাড়িতে কাকে
রেখে এসেছো?
বুকটা কেঁপে
ওঠে শহিদের।
না জানি
আবার কী
হলো মাজুর
মা’র।
তুমি কি!
মানুষটাকে বাড়িতে একলা রেখে এসেছো?
- না! মাজু
ওর জামাইকে
নিয়ে এসেছে
আজ। ওরাই
ওর বাবার
পাশে আছে
এখন। এই
ঝড় বৃষ্টির
ভিতর তার
আসার কারণ
মাজুর মা
কীভাবে শহিদ
মাস্টারকে বলবে, ঠিক বুঝতে পারে
না। হয়তো
তার কান্নার
শব্দ বৃষ্টির
শব্দের সাথে
মিশে একাকার
হয়ে যাচ্ছে।
অথচ এই
ব্যথার চিহ্ন
কাউকেই দেখাতে
পারছে না।
কিন্তু তারপরও
চুপ থাকতে
পারে না
মাজুর মা।
মাজুর বাপের
মৃত্যু সংবাদটা
বলতেই ঠোঁট
দুটো কেঁপে
ওঠে। মনে
হয় সমস্ত
পৃথিবীটা ঘুরছে।
মানুষটা এতদিন
কোন কিছুই
দিতে না
পারুক। ঘরের
খুঁটির মত
আগলে রেখেছিলো
তাকে। হঠাৎই উচ্চস্বরে
কেঁদে উঠে
মাজুর মা।
-ও আল্লাহ...
একি করলে
তুমি। এভাবে আমার অবলম্বনটাক লিয়ে
গেলে তুমি,
আমি একুন
কাক লিয়ে
বাঁচপো। আমি
একুন কাক
লিয়ে থাকপো।
সান্ত¦নার
ভাষা খুঁজে
পায় না
শহিদ মাস্টার।
অজান্তেই দু-চোখের পাতা
ভিজে ওঠে
তার ।
সন্দেহ
বিকেলটা ছিলো অন্যরকম।
অনেকটা ঘোরলাগা
মাতাল মাতাল,
তালের ঘোলারস
খেলে যেমন
লাগে। সূর্যের
অর্ধেক ছিলো
দৃশ্যমান আর
অর্ধেক ছিলো
মেঘের পেটের
ভিতরে। কিছুক্ষণ
পর কিছু
রশ্মি বের
হয়ে চারিদিকে
ছড়িয়ে গেল
,এক মনমুগ্ধকর
দৃশ্যের অবতারণা
করে ঈশ্বরের
হাসি দেখলো
কিছু মানুষ।
পুরনো একটা
হাতলওলা চেয়ারে
বসে পশ্চিম
জানালায় চোখ
রেখে বসে
আছে মাখন।
মাখন দেওয়ান
বললে এ
এলাকার সবাই
চেনে তাকে।
কিছু সময়
পর চেয়ার
থেকে উঠে
দাঁড়িয়ে মেঝেতে
পায়চারি করতে
থাকে মাখন।
হঠাৎ
করেই বাতাসের
ধাক্কায় ভিড়ানো
দরোজাটা খুলে
যায়। দরোজা
স্পর্শ না
করেই উঠোনে
পা রাখে
সে। প্রকৃতির
এই পরিবেশের
সাথে একেবারেই
বেমানান মনে
হয় নিজেকে
। কোন
ভালোলাগা নেই
,কোন মুগ্ধতা
নেই। কেবলি
মাথার মধ্যে
কিছু অসংলগ্ন
চিন্তা। কিছু
হারানোর যন্ত্রণা
কেবলি খাবলে
খাচ্ছে তাকে।
আমরা দেখতে পেলাম
কিছু সময়
পর মাখন
উঠোন থেকে
সেই হাতলওলা
চেয়ারটায় গিয়ে
আবার বসেছে
। কিছু
সময় পূর্বে
প্রকৃতি যে
দৃশ্যের অবতারণা
করে ছিলো
এখন আর
তা নেই।
পুরো সূর্য
মেঘের পেটে
চলে গেছে
। চারিদিকটা
অদ্ভুত অন্ধকার
হয়ে আসছে।
হয়তো বৃষ্টি
হবে। এই
আঘাঢ়ে এমনি
হয়। দেখতে
দেখতে মেঘ।
দেখতে দেখতে
বৃষ্টি। কখনো
থেমে থেমে
আবার কখনো
মুষলধারে। বৃষ্টি আসবে এমন ধারণা
থেকে জানালা
দিয়ে হাত
বাড়িয়ে দেয়
মাখন। কেন
যে এমন
হচ্ছে তার
বুঝতে পারে
না। হয়তো
সবকিছু আগে
চলছে! নয়তো
পিছে। এবার
হাত ফিরিয়ে
নেয়। এখন
অবশ্য আমরা
বৃষ্টির বড়
বড় ফোঁটা
দেখতে পাচ্ছি।
বৃষ্টির ফোঁটায়
মাটি ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে।
এবার ঘর
থেকে বারান্দায়
এসে খুঁটির
সাথে হাত
রাখে মাখন।
উঠোনে বৃষ্টির
স্রোত গড়িয়ে
যাচ্ছে। জলের
স্বরগুলো ভেসে
ভেসে মিলিয়ে
যাচ্ছে আবার।
এত সময় পাশের
ঘরে ঘুমিয়েছিলো
দিশা। মাখনের
স্ত্রী। এগার
বছরের সংসার
তাদের। সংসারে
নতুন কোন
অতিথি আসেনি
আজো তাদের।
নতুন অতিথি
আসেনি, না
তারা নিয়ে
আসেনি! তা
আমরা জানতে
পারিনি। কারণ
এ বিষয়
নিয়ে যেমন
চুপচাপ থাকে
মাখন, তেমনি
থাকে দিশা।
এনিয়ে তাদের
কোন দুঃখ
বোধ নেই।
তাদের এ
বিষয় নিয়ে
কখনো কোনদিন
ঝগড়াঝাটি হয়নি।
দিশার
ঘুম ভেঙেছে মেঘের গর্জনে শুনে।
কী যে
ভয়ংকর সে
গর্জন হঠাৎ করেই
দিশার বুকের
ভিতরটা কেঁপে
ওঠে। ধরফর
করে বিছানার
উপর উঠে
বসে সে।
জলের ছিটা
এসে বিছানা
ভিজে যেতে
থাকে ।
দিশা হাত
বাড়ায়, জানালা
ধরতে পারে
না। এবার
একটু উচু
হয়ে এগিয়ে
যায়। জানালার
পাল্লা বন্ধ
করতেই কিছু
জল এসে
তার হাত
ভিজিয়ে দিয়ে
যায়। আজ
সারাটা দিন
খুব গরম
পড়েছিলো। ফ্যানের
বাতাস সহ্য
হচ্ছিল না
কিছুতেই। এই
বৃষ্টির জলে
গরম পালিয়ে
যায়। বিছানা
ছেড়ে মেঝেতে
পা রাখে
দিশা। কিন্তু
তার মনে
হয় সে
যেন কিছুতেই
বাম পায়ের
গোড়ালিটা মেঝেতে
রাখতে পারছে
না। অনেকটা
রক্ত চলাচল
না করতে
পারায় যে
অবস্থা হয়।
জোড় করে
মেঝেতে পা
রাখতেই এবার
তীব্র ব্যথা
অনুভবে আসে।
অজান্তে চিৎকার করে
ওঠে দিশা।
অন্যদিন হলে এ
সময় দৌড়ে
আসতো মাখন।
আজ বারান্দার
খুঁটি থেকে
কিছুতেই হাত
সরাতে পারে
না। সে
বুঝতে পারে,
এবার তার
দিশার কাছে
যাওয়া প্রয়োজন।
অথচ তার
অনুভূতিগুলো ভোতা হয়ে আসে। মাথার
কোষগুলো স্থির
হয়ে আসে।
একটা টিকটিকি
এত সময়
একটা পোকার
পিছু পিছু
দৌঁড়াতে ছিলো।
এবার সে
খুঁটির উপর
থেকে লাফিয়ে
নামতে গিয়ে
মাখনের হাতের
উপর পড়ে
যায়। এ
সময় মাখনের
চমকে ওঠার
কথা ছিলো।
টিকটিকির দিকে
তাকানোর কথা
ছিলো। অথচ
মাখন উঠোনে
পা রাখে।
তার পা
জলে ডুবে
যায়। কাঁদায়
আটকায়। এক
পা তুলতে
আরেক পা
আটকিয়ে যায়।
খুব একটা
বেশি দূরে
যেতে পারে
না। বাড়ির
লোহার গেটের
উপর মাধবীলতা
বাতাসে মাটিতে
পরে গড়াগড়ি
খাচ্ছে। এমন
দৃশ্য দেখে
মাখনের মন
ব্যথায় বিদীর্ন
হয়। জলকলের
কাছে যায়
সে। পা
ধূয়ে আবার
ঘরে আসে।
দিশা তখন
ঘরের মেঝেতে
পায়চারী করছে।
ব্যথার তীব্রতা
এখন কমতে
শুরু করেছে
মাত্র। আজো
মাখনকে চিনতে
পারে না
দিশা। মানুষটা
দিনে দিনে
আরো অন্যরকম
হয়ে যাচ্ছে।
অদ্ভুত সব
ব্যাপার স্যাপার
তার ।
নিজের যে
অস্থির সময়
সে সময়
কী দিশার
সময় নয়?
চোখ তুলে
মাখনের দিকে
তাকায় দিশা।
এই ক’দিনেই কেমন
যেন রোগাটে
হয়ে গেছে
লোকটা। চোখের
নিচে পড়েছে
কালি। যে
কোনদিন ঘরমুখি
ছিলো না।
সেই এখন
রাতদিন ঘরে
বসে থাকে।
দিশা মাখনের
হাতলওয়া চেয়ারে
গিয়ে বসে
কিছু সময়ের
জন্য। এ
সময় তার
সবকিছু অন্যরকম
হয়। মনে
হয় সে
জেগে উঠতে
শুরু করেছে।
সে প্রতিবাদী
হতে শুরু
করেছে। একবার
মাখনকে সে
তার সামনে
বসতে বলেনি।
যেমনটি মাখন
করে তার
সাথে প্রতিনিয়ত।
তেমনটি করতে
ইচ্ছে করে
তার। কোন
বিধিনিষেধ আর মানবেনা দিশা। আর
কোন সংবিধিবদ্ধ
সতর্কিকরণ মানবে না সে।
চেয়ার থেকে উঠার
পর আবার
সব ভুলতে
বসে দিশা।
আবার মাখনের
সামনে যায়,
তাকে তোয়াজ
করতে থাকে।
তার মনে
হয় নারী
মানে এমন
একটা বৃত্ত।
যে বৃত্ত
থেকে কোনদিন
বের হওয়া
যাবে না।
তার কেন
এমন হয়
সে জানে
দিশা। যখন
শুধুমাত্র বন্ধুর সাথে কথা বলার
কারণে ফোন
কেড়ে নিলো
মাখন। প্রতিদিন
স্টার জলসায়
সিরিয়াল দেখার
কারণে ডিসলাইন
কেটে দিলো
মাখন। তখন
প্রতিবাদী হয়ে না ঘুমিয়ে রাত
চলে গেল
দিশার। পরের
দিন ব্যাগ
বোচকা নিয়ে
বাবার বাড়ি
। কিন্তু
সেখানেও ঠায়
হলো না।
কারণ তার
বাবাও তো
একজন পুরুষ
মানুষ। সে
বুঝালো নারীজন্ম
মানে পুরষের
জন্য জীবন
উৎসর্গ
করা। সেদিন
কোন কথা
বলতে পারলো
না দিশা।
রাস্তায় এসে
বাবাকে মাত্র
এটুকুই বলেছিলো
-তোমাকে আর যেতে হবে না
বাবা। আমি
একাই যেতে
পারবো। ‘সবাইকে
তো একা
একাই পথ
চলতে হয়’
এ কথা
তো তুমিই
আমাকে শিখিয়েছিলে
বাবা?
সেই যে ফিরে
আসা। তারপর দু-একবার নিজেদের
মধ্যে মান-অভিমান হলেও
আর বাবার
বাড়ি যেতে
ইচ্ছে করেনি
তার। বার
বার মনে
হয়েছে ,নারী
জীবন মানে
পুরুষের দাসত্ব
করা। সে
সবচেয়ে বেশি
অবাক হয়েছে
তার মায়ের
ব্যবহারে। একজন নারী হয়ে যদি
আরেক জন
নারীর দুঃখ
কষ্ট বুঝতে
না পারা
যায়, তবে
তারচেয়ে মনে
হয় আর
কোন কষ্টের
বিষয় থাকে
না। দিশার
মা নিজেও
বাবার সাথে
তাল মেলালো,
সে বললো
-মারে, এমন
করিস কেন,
বলতো? মেয়ে
মানুষের জীবন
তো এমনই।
সংসার মানে
তো এমনই,
মান-অভিমান,
কষ্টবোধ, অপমানবোধ
সব জলাঞ্জলি
দিয়েই না
বিয়ের পিড়িতে
বসতে হয়।
স্বামীকে সব
সময় দেবতা
মনে করতে
হয়। তার
মুখের উপর
কোন কথা
বলতে নেই মা। সেই সাথে
তার বিরুদ্ধেও
কিছু বলতে
নেই। সেই
দেবতা মানুষটা
যেভাবে চালায়
সেভাবেই চলতে
হয় নারীকে।
এসব কথা শুনে
একভাবে কিছু
সময় মায়ের
মুখের দিকে
পিটপিট করে
চেয়েছিলো দিশা।
সে ভেবেই
নিয়েছিলো, এখানে প্রতিবাদে কোন
কাজ হবে
না। পুরুষের
কী দোষ
যেখানে নারীই
নারীকে বুঝে
না। নারী
নারীর সর্বনাশ
করে। তার
মনে হয়
একজন নারী
পূর্বে থেকে
যে ব্যবহার
পেয়ে এসেছে
সংসারে। সেটাই
সত্য ব্রত
মনে করে
অন্য নারীর
উপর তা
চাপিয়ে দেয়
সে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা
করে দিশা।
এক সময়
স্কুলের চাকুরিটা
ছাড়তে ইচ্ছে
করলো তার।
কিন্তু দীর্ঘ
ভাবনার পর
সেই সিদ্ধান্তটা
আর ধরে
রাখতে পারলো
না। কারণ
মেয়েদের একেবারে
পরনির্ভরশীল হওয়া মোটেও উচিত নয়।
এখন গরমের
কারণে মর্নিং
স্কুল চলছে।
সকাল বেলায়
ঘুম থেকে
জেগেই চুলায়
রান্না চড়াতে
হয় তাকে।
তখনো ঘুমে
থাকে মাখন।
খাবার তৈরি
হয়ে গেলে
তার জন্য
খাবার টেবিলে
রেখে দিশাকে
খেয়ে নিতে
হয়। স্কুল
থেকে ফিরতে
ফিরতে দুপুর
প্রায়। কখনো
দিশার বাবা
তাকে দেখতে
ছুটে আসে
স্কুলে। মাখনের
কারণে দিশার
বাড়িতে কখনো
আসে না
সে। আসলেই
নানা কথা
শুনাবে নয়তো
অন্য রকমভাবে
তাকাবে। এ
ব্যবহারে অপমান
বোধ করে
দিশার বাবা।
মাখন অফিসে যায়
সকাল সারে
নয়টার দিকে।
বেসরকারী ব্যাংকে
চাকুরি তার।
কোন কোনদিন
বাড়ি ফিরতে
রাত্রী আটটা
নয়টা বেজে
যায়। নিয়মিত
অফিস করে।
কোনদিন ছুটি
নিতেই দেখেনি
দিশা। সেই
মানুষ কিনা
আজ দু-সপ্তাহর বেশি
বাড়িতে বসে
আছে। একটা
কিছু যে
হয়েছে তা
বেশ ভালো
করে বুঝতে
পারে। তবে
মাখন জানাতে
না চাইলে
না জানাবে।
বউকে যে
কোন কথা
বলতে পারে
না তার
কাছে কিছু
শুনতে চাওয়া
অনর্থক। ভিতরে
ভিতরে দিশা
টেনশন পোহালেও
কোন কিছু
বুঝতে দেয়
না কাউকে।
যা কিছু
করে মাখন
তা স্বাভাবিক
মনে করে।
তবে মাখনের
সবকিছু অন্যরকম
মনে হয়
এখন।
ইদানিং ইচ্ছে করে তেমন একটা
কথা বলে
না কারো
সাথে সে।
সবকিছুতেই কেমন যেন দূরে দূরে
থাকে। আর
এই দীর্ঘ
সময় মাখনের
বাড়িতে থাকারও
কারণ বুঝতে
চায় না
দিশা। কিছু
বলতে গেলেও
পারে না।
উদাস হয়ে
দাঁড়িয়ে থাকে।
যে মানুষটা
সব সময়
ভুল ধরে
বেড়াতো সবার।
এটা হলো
না ওটা
হলো না
বলে চিল্লা-পাল্লা করতো।
সেই মানুষটার
বাড়িতে নিরব
ভাবে চলাচলের
কারণ হয়তো কিছুই
জানে না
দিশা। আর
জেনেই বা
কী লাভ!
মাখন দিশার সামনে
দিয়ে বার
বার পায়চারী
করতে থাকে।
কিছু একটা
বলার থাকলেও
বলতে না
পারার কষ্ট
দিশা বুঝতে
পারে। সব
অভিমান ভুলে
মাখনের কাছে
যায় দিশা।
দু-হাত
ধরে হাতলওলা
চেয়ারে টেনে
বসায়।
-একটা কথা বলবো
তোমায়? কোন
ভনিতা না
করে সরাসরি
উত্তর দিলে
খুশি হবো
আমি।
তখনো চুপচাপ মাখন।
কেবল দিশার
মুখের দিকে
একভাবে তাকিয়ে
আছে। এই
নিরবতার কোন
কারণ জানে
না দিশা।
এখন আর
বৃষ্টি নেই।
বাতাস নেই।
সূর্য ডুবে
গেছে। ঘরে
আলো জ্বালিয়েছে
দিশা। আবার
হাত ধরে
ঝাঁকি দেয়
সে।
-কি ব্যাপার আমি
কি করেছি
যে, তুমি
আমার সাথে
কোন কথা
বলছো না।
আর কি
করতে হবে
আমায়। তুমি
যেভাবে বলছো
সে ভাবেই
চলছি আমি।
যা করতে
বলেছ, তাই
করছি আমি।
তারপরও...
সারাদিন শেষে মাখনের
কথা ইথারে
ভাসে। কিছু
একটা বলার
জন্য চঞ্চল
হয়ে ওঠে।
যে কথা
কখনো ভাবেনি
দিশা। যে
কথা শুনার
জন্য কোনভাবে
প্রস্তুত ছিলো
না দিশা।
তেমন কিছু
কথা বলতে
থাকে মাখন।
-আমার চাকরিটা চলে
গেছে! জানো
দিশা?
কিছু সময়ের জন্য
স্তব্ধ হয়
দিশা। কিছু
সময়ের জন্য
মনে হয়
তার শরীরের
রক্ত চলাচল
বন্ধ হয়ে
গেছে। পথহারা
পথিকের মত
মনে হয়
তাকে। তারপরও
সে বলতে
থাকে।
-তুমি যদি না
জানাও! জানবো
কি করে
আমি , তুমিই
বলো?
-তবে একটা কথা জানো না তুমি।
আমার এই
চাকুরি চলে
যাওয়াতে যে
কষ্ট পেয়েছি
আমি। তারচেয়ে
বেশি কষ্ট
পেয়েছি তোমার
কিছু কারণে।
-কি বলছো তুমি?
তুমি কষ্ট
পেয়েছো আমার
কারণে! কি
সে কারণ
আমি জানতে
পারি?
-হ্যাঁ! তোমার কারণে!
- ভনিতা রেখে বিষয়টা
খুলে বললে
খুশি হবো
আমি।
-যে মোবাইল ফোনের
কারণে তোমার
সাথে আমার
দূরত্ব তৈরি
হয়েছিলো, যে
মোবাইল ফোনে
কথা বলা
নিয়ে আমরা
কত কত
রাত আলাদা
থেকেছি। অবশেষে
তুমি যে
কারণেই হোক,
একদিন ফোনটি
আমাকে দিয়ে
দিয়েছিলে। শুধুমাত্র সংসারের শান্তির কথা
ভেবে। সেই
তুমি আবার
মোবাইল নিয়েছো,
নিয়েছো সে
ভাল কথা,
তবে আমাকে
একবার বলার
প্রয়োজনটুকু মনে করোনি?
একটা দীর্ঘ নিশ্বাস
ছাড়ে দিশা।
তার সমস্ত
অবয়ব লাল
হয়ে যায়।
অভিমানে ফুলতে
থাকে।
-ও এই কথা।
আমি ভাবলাম
কিনা কী?
যে মানুষ
চাকুরি চলে
যাওয়ার চেয়ে
বউয়ের মোবাইল
ফোন ব্যবহার
করা নিয়ে
রাত দিন
ভাবে। তাকে
আর যাই
হোক,
আমি মানুষ ভাবতে পারি না।
এমন সময় দিশার
ড্রয়ারে রাখা
ফোনটিতে কল
আসে। কিন্তু
সেদিকে পা
উঠে না
দিশার। একবার
নয় আরো
কয়েক বার
কয়েকটি কল
আসে সেই
ফোনে ।
মাখন আর
ঠিক থাকতে
পারে না।
এবার সে
কলটি ধরার
জন্য ছুটে
যায়। আর
মনে মনে
ভাবতে থাকে।
আবার সেই
মানুষটার সাথে
কথা। আবার
অশান্তি! মানুষটার
কী কোন
পরিবর্তন হবে
না। ছি
দিশা ছি! কত নিচে নেমে
গেছো তুমি।
আমার চেয়ে
অন্যমানুষ তোমার কাছে এতটা বড়
হয়ে গেল
যে, তাদের
সাথে যোগাযোগের
জন্য আবার
ফোন কিনেছ
তুমি!
উত্তেজনায় মাখনের
হাত কাঁপতে
থাকে। ড্রয়ার
খুলে ফোনটা
হাতে নেয়।
এক সময় কল রিসিপ করে
মাখন। অপরপ্রান্তে
দিশার বাবা।
তবুও অপেক্ষা! অভীকের জন্য
পরাগ চেয়ে দেখলো
আকাশ তার
অবস্থান থেকে
অনেকটা নেমে
এসেছে। নক্ষত্র
গুলো মেঘের
আড়ালে ঢেকে
গেছে তখন।
হয়তো কিছু
সময়ের মধ্যে
ধেইয়ে আসবে
বৃষ্টি। কালো
মেঘের কান্নার
শব্দ অস্থির
করছে চারপাশ।
ঠিক কত
সময় এই
এখানে ছাঁদের
উপর দাঁড়িয়ে
আছে আন্দাজ
করতে পারে
না। অথচ
অপেক্ষার সময়
চলে গেলো।
এক ফোঁটা
বৃষ্টি এসে
ছাদ ভেজালো
না। ঘামে
ভেজা শরীর
শীতল হলো
না। ইউক্যালিপটাস
গাছ থেকে
মৃত পাতার
কোলাহল শুনতে
পেল। বাতাসে
ভর দিয়ে
ছুটে এলো
বেশকিছু মরা
পাতা। চুল
ছুঁয়ে গেল,
কোনটা শরীর
স্পর্শ করলো।
ইচ্ছে হলো
একটা একটা
করে সমস্ত
পাতাগুলো কুড়িয়ে
পকেট ভর্তি
করে ঘরে
ফিরে যাই।
কোন কিছুই
হলো না।
বিদ্যুৎ
চলে যেতেই
পুরো শহর
অন্ধকার হলো।
স্তব্ধ হলো
চারিপাশ। তারপরও
বড় রাস্তার
উপর দিয়ে
ছুটে গেলো
দ্রুতগামী গাড়ির বহর। সব নিস্তব্ধতা
মাড়িয়ে একটা
লাশটানা পিকআপ
সবাইকে জানিয়ে
গেল নক্ষত্র
হারিয়ে যাবার
গল্প। দলবেঁধে
দীর্ঘশ্বাস যেমন ব্যথার বাতি জ্বালিয়ে
বুকের অধর
শূন্য করে।
পরাগের ঠিক
তেমন হলো।
আবার ছাদ
থেকে চিলেকোঠা
অতঃপর পলেস্তরা
খয়ে যাওয়া
সিঁড়ি ভেঙে
শোবার ঘরে
এলো পরাগ।
আবার খোলা জানালার
পর্দা গুলো
দুলে উঠলো।
পরাগ দেখলো
পর্দাগুলো উড়ে গিয়ে কিভাবে দেওয়ালে
চুমু খায়।
মোমবাতি নিভে
গেল। টর্চলাইট
খুঁজতে গিয়ে
টি টেবিল
থেকে চায়ের
কাপগুলোর একটা
মেঝেতে আছড়ে
পড়ে যন্ত্রণায়
ছটফট করতে
লাগলো। পায়ের
নিচে এক
টুকরা কাঁচ
মনে হলো
বিষ পিঁপড়ার
মতো কামড়
দিয়ে বিঁধে
আছে। দু’হাত দিয়ে
কাচ সরাতে
গিয়ে পকেটের
দিয়াশলাই জানান
দিয়ে গেল
দিব্যি বেঁচে
থাকার ইতিহাস।
তিন চারটি দিয়াশলাইয়ের
কাঠি খরচ
করেও মোমবাতি
জ্বললো না।
অভিমানি মেয়ের
মতো দাঁতে
কামড় দিয়ে
চুপ করে
দাঁড়িয়ে রইলো।
আরো একটু
হাতড়িয়ে বিছানার
কোনায় খুঁজে
পেল টর্চলাইট।
আলো জ্বালাতেই
বুঝতে পারলো,
পা থেকে
একটু একটু
করে ঝরে
পড়ছে লোনারক্ত।
টেবিলের ড্রয়ার
থেকে তুলো
বের করে,ডানহাত দিয়ে
ধীরে ধীরে
বেশ যতœ
সহকারে ক্ষত
স্থানের রক্ত
পরিষ্কার করতেই
সামনে এসে
দাঁড়ালো মিনু।
এই এত
সময় ডয়িং
রুমে অন্ধ
বধির হয়ে
বসে ছিলো
সে। এখন
প্রায় প্রতিরাতেই
এমন হয়।
এক ছাদের
নিচে বসবাস
করেও মনে
হয় তাদের
দুরত্ব হাজার
মাইল। দুরত্ব
কমাতে প্রায়ই
সন্ধি হয়
দু’জনার।
বড় জোর
একরাত দু’রাত, আবার
বেদনার ক্ষত
জ্বলে ওঠে।
নিভে যায়
সব মনের
আলো।
-এই রাত দুপুরে
আবার কী
হলো? ছাদে
থেকে গেলেই
পারতে।
কোন কথা বের
হলো না
পরাগের মুখ
থেকে। চুপচাপ
আগের মতই
পায়ের ক্ষত
স্থানের রক্ত
মুছতে থাকলো।
মিনু দেখে
না দেখার
ভান করলো।
কোন অনুভূতি
তাকে জাগালো
না। জানালার
পাল্লাগুলো লাগিয়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে
দিলো। পরাগ
আরেক ড্রয়ার
থেকে বেন্ডিস
বের করে
কাটা জায়গায়
লাগিয়ে ঘর
থেকে বারান্দায়
এলো। গ্রীল
ধরে দাঁড়িয়ে
রইলো বেশ
অনেক সময়।
এই নিস্তব্ধতার
ভেতর মিনুর
নাকডাকার শব্দ
আরো বেশি
অস্থির করলো
তাকে। অথচ
আকাশের মত
না ঘুমানোর
বেদনা তাকে
স্পর্শ করলো
না। একাগ্রচিত্তে
এদিক ওদিক
তাকাতে থাকলো।
মনে হলো
রাস্তায় একটা
কুকুর তাড়া
করছে কোন
পথচারীকে। তার ঘেউ ঘেউ শব্দে
কিছু মানুষ
জেগে উঠলো।
এরই মধ্যে
আকাশ অনেকটা
মেঘমুক্ত হয়েছে।
বাতাসের গান
থেমে গেছে।
ছন্দপতন হয়েছে
কবিতার। নক্ষত্র
গুলো আবার
জেগে উঠেছে।
একভাবে আকাশের
দিকে তাকাতেই
মনে হলো
আরো একটি
নক্ষত্রের পতন হলো। আকাশ থেকে
খসে পড়লো
জ্বল জ্বলে
একটি নক্ষত্র।
একটা শীতল হাতের
স্পর্শ পেয়ে
পিছন ফিরে
তাকালো পরাগ।
এ সময়
আবার বিদ্যুৎ এলো,
চারধার আলোকৃত
হলো। বারান্দার
টবগুলো জেগে
উঠলো। জলের
ছিটা পেলে
আরো একটু
সতেজ লাগতো
ওদের। বিষণœতায় মরা
পাতার মত
সবকিছু। মিনুকেও
কোনকিছু থেকে
আলাদা করা
যাচ্ছে না।
জেগে আছে
অথচ কোন
আলো নেই
তার চোখে
মুখে। আলোর
রশ্মি তাকে
চঞ্চলমতি করেনি।
ব্যথাতুর একটা
ছায়ামূর্তি মনে হলো যেন তাকে।
-কি ব্যাপার! ঘুমুবে
না। এভাবে
আমাকে আর
কত যন্ত্রণা
দেবে বলো।
কি অপরাধ
আমার?
কিছু একটা বলতে
গিয়ে থেমে
গেল পরাগ।
এই রাত
দুপুরে কোন
বির্তক এখন
আর ভাল
লাগছে না।
চুপচাপ মিনুর
পিছু নিয়ে
এগুতে থাকলো।
বিছানায় শরীর
এলিয়ে দিলেও
ঘুম এলো
না চোখে।
কিছু সময়ের
মধ্যে আবার
ঘুমিয়ে পড়লো
মিনু।
খুব একটা বেশি
সময় মনে
হলো না।
কতটা সময়
ঘুমের সাথে
ছিলো ওরা
কেউ জানে
না। চিৎকার চেঁচামেচিতে
ঘুম ভেঙে
গেল মিনুর।
উঠতে চাইলেও
উঠতে ইচ্ছে
করছে না
পরাগের। দু-চোখে রাজ্যের
ঘুম।
কী হলো আবার, বাড়ির বাইরে
এত মানুষ
কেন? চেঁচামিচিই
বা কিসের!
সুইচে হাত
দিয়ে থমকে
দাঁড়ালো মিনু।
-তুমি মানুষ না
অন্যকিছু? কোন অনুভূতিই আর কাজ
করে না
তোমার। সব
ভোঁতা সব
অসার হয়ে
গেছে মনে
হয়।
এবার উঠে দাঁড়ালো
পরাগ। দোতলা
থেকে সিঁড়ি
বেয়ে ধীর
পায়ে নামতে
থাকলো? সকালের
উজ্জ্বল সূর্যের
আলো চারিদিকে।
রাতের কোন
চিহ্ন নেই
এখন আর।
আকাশে কোন
মেঘ নেই,
নেই কোন
বৃষ্টির চিহ্ন।
চারদিকে কেবলি
মরা পাতার
স্তূপ। কত
বেলা হয়েছে
ঠিক আন্দাজ
করতে পারে
না সে। হাতঘড়িটা
এখন আর
ব্যবহার হয়
না। দেওয়ালে
একটা ডিজিটাল
ঘড়ি স্থাপন
হলেও সেখানে
দৃষ্টি বিনিময়
হয়নি আজ।
মিনু পিছু
নেয়। বাড়ির
গেটে পাড়ার
কুকুরটা মরে
পড়ে আছে।
যার ভয়ে
রাতের বেলায়
এই গলিমুখি
হতে পারতো
না কেউ।
বুকের তারগুলো
ব্যথায় বিদীর্ন
হলো। কুকুরটার
পাশে একটা
পারুটির অর্ধেকটা
পরে আছে।
হয়তো কেউ
বিষ মিশিয়ে
রাতের বেলায়
কুকুরটাকে খেতে দিয়েছিলো। সবার দৃষ্টি
পরাগের দিকে।
সে কারণে
এখানে এত
শোরগোল। কিন্তু
অল্প সময়েই
পরাগ সবাইকে
বোঝাতে সক্ষম
হলো, সে
কেন এই
কুকুরকে মারতে
যাবে। কি
অপরাধ তার।
সেখানে খুব
বেশি সময়
আর থাকতে
হইনি তাকে। সিটিকর্পোরেশনের
গাড়ি এসে
কিছু সময়
পর কুকুরটাকে
উঠিয়ে নিয়ে
গেল। একভাবে
গাড়ির দিকে
তাকিয়ে রইলো
পরাগ। যত
সময় দেখা
যায়।
ঘরে ফিরে মুখোমুখি
পরাগ আর
মিনু। সংসার
তাদের সামনে
সঙ হয়ে
দাঁড়িয়ে আছে।
আজো হয়তো
এ বাড়িতে
কোন রান্নার
আয়োজন হবে
না। সবকিছু
যেন দিনে
দিনে অন্যরকম
হয়ে যাচ্ছে।
কিছুতেই এক
মহনায় আসতে
পারছে না
কেউ।
-কি হলো তুমি
কি আমার
সাথে এমন
করেই যাবে?
কোন কথা
বলতে পারে
না মিনু
? তার মনের
ভেতর তো
একই প্রশ্ন।
কেন প্রতিদিন
তাকে আবার
ফিরে যেতে
হবে নষ্ট
স্মৃতির কাছে।
কেন পুরনো
কাসুন্দি ঘেটে
ঘেটে ক্ষত
বিক্ষত করবে
পরাগ। আমি
কি আর
কোনদিন ফিরে
যেতে পারবো
তার কাছে।
সে পথ
মারিয়ে এসেছি
সেখানে বিষ
কাঁটার প্রলেপ।
কোন এক দ্বীপ
রাষ্টের মত
মনে হয়
নিজেকে কখনো
কখনো। সবাই
যেন বাণিজ্য
করে ফিরে
চলে যায়।
উপভোগের সবকিছু
যেন এক
সময় তেতো
লাগে। গান
বেসুরো হয়ে
যায়। কিছু
সময় আবার
বিছানায় শরীর
এলিয়ে দিয়ে
ভাবতে থাকে
মিনু। জীবন
কেন যে
এমন হয়।
সাত বছর
পিছনে ফিরে
যেতে হয়
তাকে। তখন
সবেমাত্র নবম
শ্রেণিতে পড়ে।
ওরনা পড়ার
বয়স শুরু
হয়েছে মাত্র
কিছুদিন। তখনই
সেই অঘটনটা
ঘটে গেল।
যার বোঝা
এখনো বয়ে
বেড়াতে হচ্ছে
তাকে। খালাতো
ভাই অভীক,
কিভাবে কখন
চোখ বাড়িয়ে
ছিলো মিনুর
দিকে কেউ
জানে না।
ঘর জানে
না, সংসার
জানে না।
জানে না
পাড়া প্রতিবেশিরা।
আর মিনুর
জানার তো
প্রশ্নই ওঠে
না। মাঝে
মাঝে এ
বাড়িতে কিছু
সময়ের জন্যে
এসে আবার
ফিরে যেত
অভীক। তখন
মিনুদের গ্রামের
বাড়িতে মাটির
ঘর। শোবার
ঘরেই মিনু
রাত জেগে
লেখাপড়া করে।
ও বাড়িতে
তখন বর্ষা
এলে স্যাঁত
স্যাঁতে হয় উঠোন।
চারিদিকে আবর্জনার
স্তূপ। হাস
মুরগি ছাগল
বোরকির গু।
রান্নাঘরে ছনের ছাউনি দিয়ে জলের
ঝর্ণাধারা। কখনো চুলোর মধ্যে জল
জমে থাকে।
রান্না করতে
হাফিয়ে উঠে
মিনুর মা।
বাবা তার
তাবলিক জামাত
নিয়ে ব্যস্ত।
দিনের পর
দিন ঘরে
ফিরে না।
দু’ভাইয়ের
একজন কলেজে
যাওয়া আসা
করলেও আরেক
জন নিজের
জমিতে ফসলের
চারা লাগায়,
নিড়ানি দেয়,
ফসল কাটে।
মিুন ভাবতে পারে
না। যে
মানুষ ভালো
করে কোনদিন
কথা পর্যন্ত
বলতো না।
যে মানুষ
মুখের দিকে
কোনদিন তাকাতো
না। শরীরের
কোন সৌন্দর্য
চেটে পুটে
খেত না।
হাতের মধ্যে
কোনদিন কোন
প্রেমপত্র ধরিয়ে দিয়ে বলতো না।
আমি তোমাকে
ভালোবাসি মিনু,
খুব ভালোবসি।
অথচ যা
হবার তাই
হলো। স্কুল
থেকে বাড়ি
ফেরার পথে
কয়েক বন্ধু
সহ জোড়
করে উঠিয়ে
নিয়ে গেল
অভীক। চারিদিকে
জানাজানি হলো
মিনু অভীকের
হাত ধরে
পালিয়েছি। পাড়ায় ছি ছি, বাবার
অপমান, মায়ের
করুণ আর্তি।
মনে হলো
সংসার ভিজে
গেল। সবার
মুখ দেখানো
দাই হয়ে
গেল। কিন্তু
মিনু ভেবে
পায় না
! তার কী
অপরাধ! এখন
অভীক তাকে
বাড়িতে পৌঁছে
দিলেও সবাই
কলঙ্কিনি ভাববে।
সমাজে ঠাই
হবে না।
সংসারে জায়গা
হবে না।
অভীক যেখানে নিয়ে
গিয়ে মিনুকে
রাখলো, সেখানে
সব অচেনা
মিনুর। ছোট্র
একটা ঘর।
এক চিলতে
মেঝে। শোবার
জন্য একটা
চৌকি আর
এক ভাঙা
আলনা। একটা
সুটকেসও কিনে
দিয়েছিলো অভীক।
শাড়ি ছায়া
ব্লাউজ সব।
লাল ফিতে
কানের দুল
মালা পর্যন্ত।
কিন্তু তখনো
অভীকের বউ
হয়নি মিনু।
শরীরে হাত
দেয়নি অভীক।
দিব্যি দিন
চলে যাচ্ছে।
আজকাল করে
বিয়ে শব্দটা
তেতো রঙহীন
করে তুলেছিলো।
তখন কিছুই
ভালো লাগতো
না মিনুর।
রাতদিন কান্নার
সাথে বসবাস।
কেন অভীক
তাকে নিয়ে
এলো আর
কেন বা
বিয়ে করছে
না। কিছুই
বুঝতে পারছিলো
না। একদিন
বিকেল বেলায়
অভীকের এক
বন্ধুসহ বের
হলো ওরা।
মার্কেট থেকে
কিছু কেনাকাটি
করার উদ্দেশ্যে।
কিন্তু রিকসা
যেখানে থামলো
সেটা একটা
কাজী অফিস।
মিনু বেশ
বুঝতে পারছিলো
আজ তাদের
বিয়ে। সব
আয়োজন শেষ।
পেয়ারা পাতার
মত এক
বিকেল। কিছু
সাদা মেঘ
আকাশ দিয়ে
উড়ে যাচ্ছে।
একটা কাঠের
টেবিল তার
পিছনের জানালা
দিয়ে আকাশ
দেখছিলো মিনু।
কাঠের চেয়ারগুলো
নরবরে। কেমন
যেন উঠকো
গন্ধ চারিদিকে।
কার অপেক্ষা
কিষের অপেক্ষা
কিছুই বুঝতে
পারছিলো কেউ।
কিছু সময়
পর এক
সুন্দর যুবক
রিকসা নিয়ে
কাজী অফিসের
সামনে দাঁড়ালো।
ধীর পায়ে
কাজী অফিসে
ঢুকলো। কিছুই
বঝুতে পারলো
না মিনু
,সব যেন
ধুয়াশার মত।
সেই যুবকের
সামনে তাদের
বিয়ে রেজিষ্টি
হলো। সাক্ষী
হিসেবে থাকলো
সেই সুন্দর
যুবক আর
অভীকের বন্ধু
বাঁধন।
নুতন সংসারে মিনু
কিছুতেই পেরে
উঠছিলো না।
আজকাল করে
কাজে যাওয়া
বন্ধ করলো
অভীক। রাতদিন
শুয়ে বসে
থাকে। এক
মাসের মাথায়
চাকুরিটা চলে
গেল। তখন
চারিদিকে অন্ধকার
আর অন্ধকার।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে
উঠে দাঁড়ালো
মিনু। পরাগ
একভাবে চেয়ে
আছে। কিছু
বলবে বলবে
করেও বলতে
পারছে না।
দেওয়ালে দু’টি টিকটিকি
একটা পতঙ্গ নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে।
মিনুর চোখ
আটকে আছে
সেখানে। একবার
সামনে এগুচ্ছে
আর একবার
পিছন পথে
যাচ্ছে তারা।
অথচ পতঙ্গটাকে
কেউ আঘাত
করছে না।
একটা মাকড়সা
এসে পতঙ্গটাকে
জালে বন্দী
করে ফেললো।
কবরের সব
নিস্তব্ধতা পেয়ে বসলো তাকে। আবার
ঘর থেকে
বারান্দা, বারান্দা থেকে সিঁড়ি ঘর
হয়ে ছাঁদে
এসে দাঁড়ালো
মিনু। বেশ
অনেক সময়
সেখানে। জীবনের
অঙ্কটা কিছুতেই
মেলাতে পারছিলো
না কিছুতেই।
ছাদের টবগুলোকে
বিবর্ণ মলিন
মনে হলো।
কতদিন কোন
জলের পরশ
পড়েনি তাদের
দেহে। কতদিন
হাসেনি তারা,
কতদিন কথা
বলেনি কারো
সাথে। মিনু
তাদের দিকে
হাত বাড়িয়ে
দিলো। বেশ
অনেক সময়
কথা বললো
চুপিচুপি। ঘর থেকে জল এনে
ছিটিয়ে দিলো।
এবার হেসে
উঠলো টবের
গাছগুলো। এক
অন্যরকম কিছু।
কিছুটা তন্ময়তা,
কিছুটা ঘোর।
অভীকের কথা
ভাবতে থাকলো
মিনু। কেন!
এমন করলো
সে তার
সাথে। কী
অপরাধ ছিলো
তার।
অভীকের সংসারে খুব
বেশিদিন স্থান
হয়নি মিনুর।
হাতের নগদ
টাকাগুলো ফুরিয়ে
আসতেই অন্যরূপে
আবির্ভূত হয়
সে। রাতদিন
শিকারী পাখির
মত পিছু
লেগে থাকে।
যৌতুক কী
জানা ছিলো
না মিনুর।
ব্যবসার জন্য
টাকা চাই
অভীকের, অনেক
টাকা। দিন
যেতেই মিনুর
শরীরে হাত
উঠলো,শরীর
মন সব
ক্ষত বিক্ষত
করলো। এভাবে
কী! কোন
মানুষ বাঁচতে
পারে? একদিন
আবার মিনু,
ফিরে এলো
বাবার সংসারে।
এখানে সবকিছু
অন্যরকম। কেউ
কথা বলে
না। কবরের
অন্ধকার সাথে
নিয়ে একাকী
বসে থাকে
মিনু। নাওয়া
খাওয়া সব
ভুলে যায়।
সব অচেনা
কিছু, সব
বিষাদময়। মা
তার একলা
একা কাঁদে
সব সময়।
গভীর রাত্রী তখন।
খোলা জানালায়
বসে তন্দ্রার
সাথে খেলা
করে মিনু।
ভাবনার তরী
এসে গ্রাস
করে। সবাই
যেন দিনে
দিনে, কী
ভাবে দূরে
সরে যাচ্ছে।
কেউ আর
আপন মনে
করে না
তাকে।
দু’একটি করে জোনাকী একবার
ঘরে আসছে
আবার ফিরে
যাচ্ছে। জোসনায়
ভরে আছে
চারদিক। একভাবে
দৃষ্টি বিনিময়
হচ্ছে প্রকৃতির
সাথে। হঠাৎ মনে
হলো একটা
ছায়া এগিয়ে
আসছে জানালার
দিকে। পুরো
মুখ কালো
কাপড়ে ঢাকা।
শুধুমাত্র চোখ দু’টি বের
হয়ে আছে।
জ্বল জ্বল
করে জ্বলছে
ছায়া মানুষটার
চোখ দু’টি, ঠিক
যেন শিয়ালের
মত। আতঙ্কে
সমস্ত শরীরে
জ্বর এসে
গেল মিনুর।
চোখ বন্ধ
করে চিৎকার করতে
যাবে,এমন
সময় আগন্তক
মুখের কালো
কাপড় খুলে
ফেললো। ইশারায়
চিৎকার
দিতে নিষেধ
করলো। সেই
যে আবার
যোগাযোগ শুরু
হলো অভীকে
সাথে। এক
সময় চুপিচুপি
ঘরের দরোজা
খুলে অভীকের
কাছে যায়
মিনু। শিশিরে
ভেজা আলপথ
ধরে এগুতে
থাকে দু’জন।
স্টেশনে আসতে আসতেই
ফযরের আজানের
ধ্বনি বাতাসের
কানে কথা
বলে। অভীক
মিনু দু’জনাই ঘামে
ভিজে একাকার
হয়। প্ল্যাটফর্মে
দাঁড়াতেই সাত
শত সাত
লোকাল ট্রেন
এসে সামনে
দাঁড়ায়। কোন
কথা না
বলেই ট্রেনে
উঠে বসে
তারা। বেশ
অনেক সময়
পর মিনুুর
ঠোঁট নড়ে
উঠে। মন
কথা বলার
জন্য ব্যাকুল
হয়। ভাবতে
থাকে, অভীক
হয়তো তার
ভুল বুঝতে
পেরেছে। এখন
আর কোন
কষ্টই দেবে
না তাকে।
যে সিটে
বসে আছে
মিনু তার
সামনে দু’জন অচেনা
যাত্রী। মাঝে
মাঝে দৃষ্টি
বিনিময় হচ্ছে
তাদের সাথে।
কখনো যেন
ঘাড় ঘুরিয়ে
জানালায় চোখ
রেখে পিছনে
হারিয়ে যাওয়া
গ্রাম দেখছে।
কখনো মাঠ,
কখনো বিল,
বিলের জল।
মাছ ধরা
নৌকা, সারি
সারি বৃক্ষ।
একে একে
সব হারিয়ে
যাচ্ছে। কখনো
কোন অচেনা
স্টেশনে দাঁড়িয়ে
দুঃখের প্যাঁচালী
বলে যাচ্ছে
ট্রেন। ঊল্লাপাড়ায়
এসে দীর্ঘ
সময় দাঁড়িয়ে
আছে,লোকাল
ট্রেন। দু’টি ট্রেনই
লোকাল ট্রেনকে
রেখে চলে
গেল। ট্রেনের
গতি যেন
এক মুহূর্তের
জন্য সব
মানুষকে আলাদা
করে দিলো।
সবার ভাবনায়
ছেদ পড়লো। এখন অভীক নেই,
একা একা
বসে আছে
মিনু। সামনের
যাত্রী দু’জন নেমে
পড়েছে হয়তো।
কিছু সময়
পর ট্রেনের
হুইসেল বেজে
উঠলো। এখনই
হয়তো ছেড়ে
যাবে ট্রেন।
দৌঁড়ে এসে
ট্রেন ঊঠলো
অচেনা যাত্রী
দু’জন।
অথচ অভীক
নেই। ট্রেন
চলতে শুরু
করলো। তারপরও
অভীক নেই।
আবার আতঙ্ক
গ্রাস করলো।
ট্রেনের গতি
বাড়ছে ধীরে
ধীরে। মিনু
সামনের স্টেশনে
নেমে পড়ার
জন্য উঠে
দাঁড়িয়েছে মাত্র। সামনের যাত্রী দু’জন কথা
বলে উঠলো।
-আপনার সাথের
জনকে যে
দেখছি না।
কোন কথা বলতে
পারে না
মিনু। চোখ
দিয়ে ফোঁটায়
ফোঁটায় অশ্র“
গড়িয়ে পড়ে।
যাত্রী দু’জন বুঝতে
পারে না।
এখন কি
করা উচিত।
এক-পা
দু-পা
করে এগুতে
থাকে মিনু।
পরের স্টেশনে
এসে দাঁড়ায়
লোকাল ট্রেন।
মিনু ট্রেন
থেকে নেমে
এদিক ওদিক
চায়তে থাকে। না! কোন খানে
অভীক নেই।
কোন বগি
থেকে নেমে
আসে না
অভীক। সামনে
এসে দাঁড়ায়
সেই অচেনা
যাত্রীর একজন।
-আমি পরাগ। আমাকে
বিশ্বাস করতে
পারেন।
মিনু তাকিয়ে থাকে
সেই যাত্রীর
দিকে। বিশ্বাস
নামক একরাশ
বৃষ্টি নামে
মনের বনে।
এ ছাড়া
আর কোন
উপায় খুঁজে
পায় না
মিনু। তবুও
অপেক্ষা! অভীকের
জন্য...
আমি এবং হোমায়রা
অষ্ট প্রহর অপেক্ষা
শেষে আমাদের
প্রথম দেখা
হবার ক্ষণ
ছিলো তখন।
বিষণœ কবিতার
দিকে চেয়ে
থাকা পাঠকের
মত চোখ
আমার ।
ঘুমহীন রাত্রির
ক্লান্তি পুরো
শরীর জুড়ে।
তাকে দেখেই
চমকে উঠলাম
আমি। হঠাৎ কেন
জানি না আমার মনে হলো,সাত কোটি
তেত্রিশ হাজার
বছর আগে
কোন এক
গ্রহে দেখা
হয়েছিলো আমাদের
। ধুসর
সে গ্রহে
আমাদের মত
আরো অনেকেই
ছিলো। বেঁচে
থাকার সংগ্রাম
ছিলো। সেখানে
মানুষ মরে
গেলে ছায়া
হয়ে যেত।
সেই মরে
যাওয়া মানুষটার
সাথে দেখা
হতো,কথা
হতো। একমাত্র
তাকে স্পর্শ
করা যেতো
না কেবল।
তখনো এমন
একটা ভাবনার
ভিতর হাবুডুবু
খাচ্ছি আমি।
এই নক্ষত্রে
আজই আমাদের
প্রথম দেখা।
তবে ফোনে
আলাপ হয়েছে
অনেক বার,
ফেসবুকে চ্যাটিং
হয়েছে তার
সাথে আমার।
দীর্ঘসময় ধরে
না ঘুমানো
রাত্রীর কোলে
মাথা রেখে
মধুর ভাবনার
ভিতর আলিঙ্গন
হয়েছে। সেই
মানুষটা এখন
আমার সামনে!
একেবারে দেবী
দেবী চেহারা
তার। মুগ্ধ
হবার মত
চাহুনি। আর
ভেজা ভোরের
মত সিগ্ধতায়
সে কোন
শিল্পীর পটে
আঁকা ছবি।
ভৌগলিক ভাবে তার
আমার দুরুত্ব
হয়তো তিন
শত কিলোমিটারের
মত। হয়তো
এর বেশিও
হতে পারে।
তবে মনের
দূরুত্ব মাপার
মত কোন
যন্ত্র আমাদের
হাতে ছিলো
না। দেখা
হবার পর
এক রিকসায়
করে ঘুরেফিরে,
আমরা এখন
একটা খাবার
হোটেলের সামনে
এসে দাঁড়িয়েছি।
কিছু সময়ের
জন্য আমার
শরীরের কিছু
অংশ তার
শরীরের সাথে
লেপটে ছিলো।
এই ছোঁয়াকে
অদেখা কোন
বাসযাত্রীর ছোঁয়ার মত মনে হচ্ছিল
আমার। আমরা
আবার এগুতে
থাকি। হোটেলটার
ভিতরে প্রবেশ
করি। চারিদিকে
চোখ রাখতেই
লক্ষ করি,
এই হোটেলে
এখন আর
তেমন কোন
ভিড় নেই।
ঠেলাঠেলি নেই।
অথচ রিকসায়
আসতে তার
মুখে এই
শহরের যেমন
শুনাম শুনেছি,
সেই সাথে
এই হোটেলের।
কোন কোন
দিন একসাথে
এক শহরের
মানুষ এখানে
ভিড় জমায়।
কিন্তু আজ
কোন ভিড়
নেই এখানে।
দু-একটা
টেবিলে দু-চারজন মাত্র
বসে বসে
গল্প করছে।
তাদের সামনে
মনে হলো
কোন খাবার
নেই। কয়েকটা
গ¬াস
আর একটা
বোতল নিয়ে
বসে আছে
তারা। আমি
তখনো বুঝতে
পারিনি আমরা
কোন হোটেলে
এসেছি! না
কোন বারে।
মেয়েটির ছদ্দনাম হোমায়রা।
এই নামেই
আমি তাকে
চিনি। তখনো
তার পিছু
পিছু আমি।
অবাক বিস্ময়ে
এদিক ওদিক
চাইছি। কিছু
সময়ের মধ্যে
এই হোটেলের
একজন বয়
একটা কাগজে
মোড়ানো বোতল
এনে দিলো
হোমায়রার হাতে। অতঃপর
আমরা সেই
হোটেল থেকে
বের হয়ে
এলাম। আবার
রিকসা নিলাম।
আমরা যেন
অজানার উদ্দেশ্যে
ছুটে চলেছি
আজ। আকাশের
দিকে চোখ
পড়লো আমার।
আলোহীন নক্ষত্রহীন
আকাশ। অথচ
আমার মনে
হলো, কিছু
সময় পূবেই আকাশটা
ছিলো নীল
শাড়ির মত।
এখন আমরা
আরো একটা
খাবার হোটেলের
পাশ দিয়ে
চলে যাচ্ছি।
খাবার হোটেল
দেখে আমার
পেটের মধ্যে
মোচর দিয়ে
উঠলো। এমনিতে
এই অষ্ঠ
প্রহরে সেভাবে
আমার কিছু
খাওয়া হয়নি।
বাসজার্নিতে ঘণখাবার আমার যেমন পছন্দ
নয়, সেই
সাথে যখন
হাইওয়ে হোটেলে
এসে বাস
দাঁড়িয়েছিলো তখন হয়তো আমি ছিলাম
গভীর ঘুমে।
রাত্রী কি
দিন আমার
জানা ছিলো
না। আমার
কেবলি মনে
হচ্ছিল আমি
কোন হাসপাতালের
বেডে শুয়ে
আছি। আমার
সামনে দিয়ে
সাদা এপ্র“ন পড়ে
সুন্দরী কিছু
মেয়েরা হেঁটে
বেড়াচ্ছে। সত্যি কি আমি ঘুমিয়ে
ছিলাম। সত্যিই
কি আমি
অষ্টপ্রহর ধরে হোমায়রাকে দেখার জন্য
অপেক্ষা করতে
করতে এই
শহরে এসেছি।
না! যা
দেখছি তা
হয়তো কোন
স্বপ্ন অথবা
সবই আমার
অবেচতন মনের
কল্পনা।
সাজানো গোছানো এই
শহরের সাথে
সুন্দরী নারীর
মিল খুঁজে
পাওয়া যায়
বেশ। মুগ্ধতা
এতবেশি ছিলো
যে মনে
হলো একমাত্র
তার জন্যেই
এমন সেজেছে
এ শহর।
ক্থোায়ও কোন
ময়লার স্তূপ
নেই। রোড
ডিভাইডারের মধ্যে সুন্দরী কিছু বৃক্ষ
আর ফুলের
গাছে গাছে
ফুল ফুটে
আছে। বেশ
অনেক সময়
পর পর
একটা দুটো
করে গাড়ি
চলছে এই
শহরের রাস্তায়।
পাখিরা উড়ে
বেড়াচ্ছে আকাশে।
এমন সুন্দর
শহর এর
আগে আর
কোনদিন দেখা
হয়নি আমার
।
এখানে প্যাডেল ঠেলে বুকের অধর
ক্ষয়ে যায়
না কোন
রিকসা চালকের।
মনে হচ্ছে
হাওয়ার বেগে
উড়ে যাচ্ছে
আমাদের রিকসা।
বেশ অনেক
সময় ধরে
আমরা চুপচাপ
হয়ে বসে
আছি। হোমায়রার
সাথে দেখা
হবার পর
দ্বিতীয়বার কথা হলো তখন আমাদের।
প্রথম সূচনা
তার হলেও
এখন আমিই
বলছি তাকে।
-আমরা কোথায় যাচ্ছি
বলতে পারেন?
-কেন?
-আমি মনে হয়
বড় ক্ষুধার্ত!
কোন কারো
রূপ সৌন্দর্য
আমার ভালো
লাগছে না
আর। হতে
পারে আপনার
মত এই
শহরও বড়
সুন্দরী? কিন্তু
এখন এসব
আমার কিছুই
ভালো লাগছে
না।
-কিন্তু জানেন সাহেব,
আমরা তো
কোন অন্ন
গ্রহণ করবো
না আজ।
আগামী সকাল
হবে আমাদের
অন্ন গ্রহনের
সময়। এই
শহরের মানুষগুলো
মাত্র দু-বার অন্ন
গ্রহণ করে।
সেই সময়
আমরা পার
করে এসেছি।
এখন আর
কোন খাবার
পাওয়া যাবে
না কোথায়ও।
আপনি ইচ্ছে
করলে শুকনো
কোন খাবার
খেতে পারেন
আজকের জন্য।
আমি বুঝতে পারছিলাম
না। অতিথির
জন্যও নিয়ম
করা আছে
এই শহরে।
আর সেই
নিয়মের জন্য
আজ আমাকে
না খেয়ে
থাকতে হবে।
খালি পেটে
আমি কেবল
রঙিন জল
খাবো মাত্র।
তারপরও সবকিছু
আমার কাছে
মিথ্যে মনে
হচ্ছে। মনে
হচ্ছে হোমায়রা
আমাকে কোন
পরীক্ষায় ফেলেছে।
কোন কিছুই
বুঝতে পারছি
না আমি।
কেন জানি
না আমার
চোখ বন্ধ
হয়ে আসছে।
কিছুতেই ঠিক
থাকতে পারছি
না আমি।
এই অদ্ভুত শহরে
এই অদ্ভুত
মানুষটার সাথে
আর এক
মুহূর্ত থাকতে
ইচ্ছে হচ্ছে
না আমার।
মনে হচ্ছে
আমার কিছুটা
বিশ্রাম প্রয়োজন।
এত পরিমান
ক্লান্ত আমি
সামনের সবকিছু
আমার কাছে
অন্ধকার মনে
হচ্ছে। অনেক
কষ্ট করে
আমি একবার
চোখ মিলে
তাকানোর চেষ্টা
করলাম। আর
তখনই রানুর
চিৎকার
ডাকাডাকি। জেগে উঠলেও তখনো ঘুমের
ঘোর যাইনি
আমার। আমি
খুঁজে চলেছি
হোমায়রাকে। অথচ একটা জলের গ¬াস নিয়ে
আমার সামনে
দাঁড়িয়ে আছে
রানু। কিছু
সময়ের মধ্যে
উঠে বসার
চেষ্টা করছি
আমি। তত
সময়ে রানু
আমার সামনে
এসে বসেছে।
আমার কপাল
ঘামে ভিজে
উঠেছে বড়।
বুকের ভিতরে
অস্থিরতায় তোলপাড় হচ্ছে। মনে হচ্ছে
স্বাভাবিক হতে আরো কিছুটা সময়
লাগবে আমার।
কিছু সময়
পর উঠে
দাঁড়িয়েছি মাত্র আমি, তখনই মনে
হলো আমার
হয়তো চোখে
মুখে জলের
ছিটা দিলে
সব ঠিক
হয়ে যাবে।
কিন্তু খুব
একটা বেশি
সময় আমি
দাঁড়িয়ে থাকতে
পারলাম না।
জমদূতের মত
আমার সামনে
এসে দাঁড়িয়েছি
রানু। কিছু
একটা কঠিন
কথা বলবে
মনে হয়
আমায়! তা
আমার কাছে
বেশ পরিষ্কার।
আজ আর
এড়িয়ে যাবার
মত কোন
অবস্থাই নেই।
রানুকে নিয়ে
আজ একটু
বের হবার
কথা। আজ
আর বাসায়
কোন রান্না
হবে না।
আমরা সারাদিন
এখানে সেখানে
ঘুরে বেড়াবো।
হোটেলে খাবো।
সংসার চাকুরি
এসব নিয়ে
কোন চিন্তা
থাকবে না
আর।
-বলি আর কত
অপেক্ষা করতে
হবে আমায়।
প্রথম প্রহর
শেষ হয়েছে
সেই কখন।
না গেলে
বলে দিলেই
তো পারো।
-পি¬জ এইতো
আর একটু
সময় মাত্র।
ততক্ষণে তুমি
সাজুগুজুটা করে নাও।
আমি আর রানু
দীর্ঘদিন পরে
একসাথে বের
হয়েছি। সারাদিনে
আমাদের খুব
একটা দেখা
হয় না
বললেই চলে।
সকাল বেলায়
যখন রানু
নাস্তা তৈরিতে
ব্যস্ত থাকে
তখনো আমি
থাকি ঘুমে।
আমার চেয়ে
অন্তত তিন
ঘন্টা আগে
রানুকে বের
হতে হয়।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
চাকুরি তার।
আর আমি
সংবাদপত্রে আছি। দুপুর দু’টোর
মধ্যে আমাকে
অফিসে পৌঁছাতে
হয়। রাত্রী
বারোটার আগে
কোনদিনও ফেরা
হয় না
আমার। ততক্ষণে
টেবিলে খাবার
রেখে ঘুমিয়ে
পড়ে রানু।
সে কারণে
সপ্তাহে মাত্র
একদিন আমরা
একসাথে থাকি।
তারপরও এই
ছুটির দিনে
নানা রকম
ব্যস্ততা। নানা অনুষ্ঠান লেগেই
আছে। তার
উপর বাজার
ঘাট করার
জন্য একটা
মাত্রদিন। রানু ব্যাচারীও সংসার চাকুরি
করতে করতে
হাঁপিয়ে উঠেছে।
এখন একটা
বড় অবসর
প্রয়োজন আমাদের।
বাথরুমে থেকে ফিরে
এসে দেখি
রানু তৈরি
হয়ে সোফার
উপর বসে
আছে। তার
দিকে একবার
চোখ পড়তেই
সেখানে স্থির
হয়ে দাঁড়িয়ে
থাকে চোখের
আলো। একটু
সাজুগুজু করলে
এখনো বেশ
লাগে রানুকে।
তারপরও রানুতে
আমার মন
নেই। এ
বান্ধবী সে
বান্ধবীতে অস্থির আমি। ইতিমধ্যে আমার
আলাদা একটা
জগৎ
হয়েছে। সে
জগৎ-এ রানু
নেই।
সেখানে হোমায়রার মত আরো অনেকেই
আছে। হঠাৎ আমার
মনে হোমায়রার
কথা আসলো
কেন ঠিক
বুঝতে পারলাম।
এই নামে
তো আমার
কোন বান্ধবী
নেই। এই
নামে আমি
কাউকে চিনিও
না। কেন
এমনটা মনে
হলো আমার
মনে করার
চেষ্টা চালিয়ে
গেলাম কিছু
সময় ধরে।
না কিছুতেই
মনে করতে
পারলাম না
হোমায়রার গল্প।
বাসার সামনে থেকে
রিকসা নিলাম
আমরা। পাশাপাশি
আমি আর
রানু বসে
আছি। ইচ্ছে
করলে আমরা
সামনে মোড়ের
পরের হোটেলটা
থেকে নাস্তাটা
সেরে নিতে
পারতাম। কিন্তু
রানুর চাওয়াটা
ছিলো অন্যরকম।
এই শহরের
সবচেয়ে নামিদামী
হোটেলে বসে
খাবে সে।
আর তার
পাশে পুরো
সময় থাকবো
আমি। রিকসা
করে যেতে
যেতে বারবার
রানু আমার
মুখের দিকে
চাইতে ছিলো।
মাঝে মাঝে
রানুর সাথে
বেশি কথা
বলতেও ভয়
হয় আমার।
না জানি
মুখ ফসকে
কখন কী
বলে ফেলি
আমি। আমিও
অনেক সময়
ধরে তার
দিকে চেয়েছিলাম।
আজ রানুকে
অপরূপ সুন্দরী
মনে হচ্ছে
আমার। মনে
হচ্ছে হয়তো
কোন মানবী,
হয়তো কোন
দেবী আমার
পাশে বসে
আছে। হাজার
বছর ধরে
আমরা পাশাপাশি
আছি। এই
এতদিনেও আমাদের
চোখের পলক
পড়েনি। আরো
কিছুটা রাস্তা
এগিয়ে যেতেই
আমরা একটা
মিছিলের মুখোমুখি
হলাম। কিন্তু
ঠিক বুঝে
উঠতে পারছিলাম
না কেন
এই মিছিল!
মিছিল থেকে
কিছু শব্দ
উচ্চারিত হয়ে
আমাদের ধাওয়া
করছে তখন।
মনে হলো
এই রাস্তা
দিয়ে আমরা
আর কিছুতেই
এগুতে পারবো
না। হয়তো
আমাদের রিকসা
থেকে নেমে
যেতে হবে।
নইলে আবার
পিছন পথে
ফিরে যেতে
হবে আমাদের।
না! আমরা আর
কিছুতেই এগুতে
পারলাম না।
সামনে কয়েক
গাড়ি দাঙ্গা
পুলিশ এসে
মিছিলের গতিরোধ
করেছে ইতিমধ্যে।
কিন্তু মিছিলকারীরা
নাছোড়। কোন
কিছুতেই রাজপথ
ছাড়বে না
তারা। কিছু
সময়ের মধ্যে
পুলিশের লাঠিচার্জ
শুরু হয়ে
গেল মিছিলকারী
জনতার সাথে। কিন্তু
একটা মানুষকেও
রাস্তা থেকে
হটাতে পারলো
না পুলিশ।
একটা রণক্ষেত্র
হবার উপক্রম
হলো। কিছু
ভয় আর
কিছু আতংক
নিয়ে বাসায়
ফিরে এলাম
আমরা। অন্য
আরেক ছুটির
দিনের অপেক্ষায়।
টিভিতে দুপুরের সংবাদ
দেখছি তখন।
আমাদের এই
প্রিয় শহর
শিরোনাম হয়েছে
আজ। পুলিশ
আর মিছিলকারী
জনতার সংঘর্ষে
তিন পুলিশসহ
শতাধিক জনতা
আহত হয়েছে
আজ। বিস্তারিত
সংবাদে জানতে
পেলাম। হোমায়রা
নামে একটা
মেয়েকে ধর্ষণ
করে হত্যা
করা হয়েছে
গতকাল। বাসা
থেকে বের
হবার পর
আর ফিরে
আসেনি হোমায়রা।
নির্জন এক
স্থানে বীভৎস অবস্থায়
পাওয়া যায়
তাকে। তার
জন্যেই এই
শহরে আজ
বড় একটা
মিছিল হয়েছে।
হোমায়রার হত্যার
প্রতিবাদে জেগে উঠেছে পুরো শহর।
জেগে উঠেছে
সব শ্রেণি
পেশার মানুষ। কিন্তু
একটা বিষয়
কারো বোধগম্য
হচ্ছিল না!
যে জায়গাটায়
হোমায়রাকে হত্যা করা হয়েছে! জাগয়াটা
ছিলো সব
মানুষের জন্য
নিরাপদ।
0 Comments