সেই নক্ষত্র খচিত রাত
মনে কি পড়ে
তোমার আমার প্রথম দেখার ক্ষণ?
মনে পড়ে?
আকাশটা কেমন ময়ূরকণ্ঠী আঁচল বিছিয়ে
মিষ্টি করে হেসেছিল সেদিন!
নক্ষত্র খচিত রাত
উবু হয়ে চুমু খেয়েছিল সবুজ ঘাসে!
চাঁদটা নেমে এসে স্নান সেরেছিল
পদ্মার স্বচ্ছ টলটলে জলে!
মনে পড়ে প্রথম দেখার ক্ষণ?
ঘুর্ণিহাওয়ায় কেমন দুলে উঠেছিল
আমাদের তনু মন!
নীরব নিশিথে হৃদয়ের সান্নিধ্যে এসেছিল হৃদয়
নিঃশব্দ রাতের আঁধারে বেজেছিল
দুটি হৃদয়ের সিম্ফনি!
মনে পড়ে বুকপকেট থেকে বের করে দেয়া
সেই প্রথম গোলাপ?
যাদুকরী সুঘ্রাণ মাখা টুকটুকে লাল গোলাপ!
যার প্রতিটি পাপড়িতে আঁকা ছিল স্বপ্ন;
লেখাছিল প্রেমের কাব্য!
মনে কি পড়ে
সেই নক্ষত্র খচিত রাতে
ময়ূরকণ্ঠী আঁচল বিছানো আকাশের দিকে তাকিয়ে
দুজনে একসাথে চিৎকার করে বলেছিলাম
এ হৃদয় আজ থেকে তোমার নামে লিখে দিলাম।
জল পতনের শব্দ
জল পতনের শব্দ শুনবো বলে
খুলে রাখি মেঘের কাব্য
বেহায়া বাতাসে লুট হয়ে যায়
বুকের আশা;
লুট হয়ে যায় বৃষ্টিভেজা স্বপ্ন সাধ
আমার অলকানন্দা শহরের আকাশ বৃষ্টিহীন রেখে
উড়ে যায় মেঘ অচেনা শহরে ---
জল পতনের শব্দ শুনবো বলে
ঘোরগ্রস্ত মাটির সোঁদা গন্ধের ব্যকুলতায়
প্রার্থনা করি মেঘের জন্য;
উড়ে এসো মেঘ
সাদা সাদা মেঘ
কালো কালো মেঘ
উড়ে এসো জটাধারী বুনো মেঘ
গুরু গুরু ডাকে উড়ে এসো,
উড়ে এসো আকাশের গায়ে জলরং ছবি
এঁকে।
মেঘের ভাঁজ খুলে
ময়ূর আবার ছমছম নেচে উঠুক আনন্দে
মর্মর ধ্বনিতে পুচ্ছ মেলে
ময়ূরীর মনোহরণের আড়ম্বরে সেজে উঠুক
জল পতনের শব্দে।
বিলাসী দুঃখ আমার
অতলান্তিক নৈঃশব্দ্যে যখন ঘুমিয়ে পড়ে শহর
সুখের পেয়ালায় থৈ থৈ আনন্দে চুমুক দিয়ে
তুমিও হয়তো এলিয়ে পড়ো বিলাসী বিছানায়;
জেগে থাকি আমি
আমার সঙ্গে জেগে থাকে রাতের নীরবতা
জেগে থাকে পঞ্চমীর চাঁদ
খুঁজতে থাকি আমার ফেলে আসা সোনালি দিন
হিরন্ময় সুখে স্বপ্নের চেয়েও সত্য হয়ে ওঠো তুমি;
কী অতলান্তিক গভীরতায়!
কী দুঃসাহসী ঘোরের মধ্যে খুঁজে ফিরি তোমাকে!
যেন চিরবাধ্য চিরঅনুগত মেয়ে আমি!
আসলে কি তাই?
কিছুটা একগুঁয়ে
কিছুটা জেদি, শক্ত, কঠিনও বটে!
সকল বিলাসিতা তুড়ি মেরে দূরে ঠেলে দিতে পারি অনায়াসে ;
থৈথৈ দুঃখের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে
মাথা উঁচু করে শিরদাঁড়া শক্ত রেখে
ঢক ঢক পান করতে পারি হেমলক।
অতলান্তিক নৈঃশব্দ্যে ঘুমিয়ে পড়ে আমার শহর
জেগে থাকি আমি
জেগে থাকে বিলাসী দুঃখ আমার!
আমার জেদ আমাকে রাতভর জাগিয়ে রাখে
স্বপ্ন দেখায় সোনালি সূর্যোদয়ের।
আগুন্তক
নীল আকাশে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ
রাস্তার দু'ধারে সারি সারি বৃক্ষ
কী পরম আত্মীয়তায় এক গাছের পত্রপল্লব
ছুঁয়ে আছে আরেকগাছের সবুজ পত্রপল্লব!
ছায়ায় ঘেরা সুশীতল তোমাদের ব্যাঙ্গালোর;
তোমাদের সবুজ শহরে আমি আগুন্তক
এসেছি দূরের এক বদ্বীপ থেকে
বাংলাদেশ তার নাম;
যেখানে কোজাগরী রাতে যুবতী চাঁদের আলো
ঠিকরে পড়ে পদ্মা,মেঘনা,যমুনা,কর্নফুলির বুকে;
যেমন করে কাবেরীর বুক আলো করে রাখে
আষাঢ়ী পূর্ণিমা!
তোমাদের সবুজ শহরে আমি আগুন্তক
কাবেরীর স্বচ্ছ শীতল জলে
ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘে
মন পাগল করা ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে
দক্ষিণের মিষ্টি হাওয়ায়
সারি সারি ছায়া বৃক্ষে
মায়ায় জড়ালাম আমি;
আমি তোমাদের শহরে এক আগুন্তক।
0 Comments