‘সাহিত্যে সাম্যবাদ : মানবিক ও বিপ্লবীচেতনা’ -আলী রেজা

"Communism in literature: humanitarian and revolutionary consciousness" - Ali Reza



 সাহিত্য যখন রূপকথার রাজ্য থেকে বের হলো; যখন রাজবন্দনা, বীরবন্দনা, রাজভক্তি ও বীরভক্তির রোমাঞ্চকর উপাখ্যান থেকে বের হলো; যখন শাস্ত্রশাসন ও পারলৌকিক বা অতীন্দ্রিয় বিষয় থেকে বের হলো তখন সাহিত্য গণমানুষের হলো। গণমানুষ সাহিত্যকে নিজের করে পেল। গণমানুষের হয়ে ওঠার জন্য সাহিত্যকে প্রাচীন ও মধ্যযুগ পেরিয়ে আসতে হয়েছে। ভাঙতে হয়েছে রাজা ও রাজার চেয়েও শক্তিশালী শাস্ত্রশাসনের দেয়াল। ফরাসি বিপ্লবের দার্শনিকরা যখন ‘সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা’র কথা বলেছিল, তখন রাজশক্তি মানুষের এই সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার দাবি সহজে মেনে নিতে পারেনি। ধর্মশাস্ত্রীয় কর্তৃপক্ষও মেনে নিতে পারেনি। কারণ তখনও তাদের মাথায় ছিল মধ্যযুগীয় রাজতান্ত্রিক ও শাস্ত্রীয় শাসনের ভুত। এই ভুত অনেকটাই দূর হয়েছিল ফরাসি বিপ্লবে গণমানুষের বিজয়ের ফলে। তবে তাঁর জন্য জীবন দিয়ে হয়েছিল অনেক মুক্তচিন্তার দার্শনিক ও লেখককে যাঁরা সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার বাণী প্রচারের মাধ্যমে গণমানুষকে উজ্জীবিত করেছিল। ঐক্যবদ্ধ করেছিল রাজতন্ত্র ও শাস্ত্রীয় শাসনের বিরুদ্ধে।

রাজশক্তির বিরুদ্ধে সাম্যবাদের কথা বলতে গিয়ে, সাধারণ মানুষের অধিকারের কথা বলতে গিয়ে রাজরোষের শিকার হয়েছেন যুগে যুগে অনেক মুক্তচিন্তার মানুষ। যাজক, পুরোহিত ও মোল্লাতন্ত্রের গোঁড়ামি বা ধর্মান্ধতা কিংবা ধর্মব্যবসার বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে শাস্ত্রীয় পণ্ডিতদের বর্বর প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন অনেক মানবকল্যাণকামী মানবতাবাদী চিন্তাবিদ। মুক্তচিন্তার এই মানুষগুলো সাধারণ মানুষের কথা বলতেন যে সব গ্রন্থে রাজশক্তি বা ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ বেশিরভাগক্ষেত্রেই নিষিদ্ধ করতেন সে সব গ্রন্থ। স্বাধীন মত প্রকাশের দায়ে ঐ সব গ্রন্থের লেখকগণ রাজদ্রোহী বলে চিহ্নিত হতেন এবং কারাদণ্ড, মৃত্যুদণ্ড, নির্বাসনদণ্ড ইত্যাদি শাস্তির মুখোমুখি হতেন। অনেকে প্রদত্ত মত প্রত্যাহার করে শাস্তি থেকে রেহাই পেতেন। রাজতন্ত্র ও পুরোহিততন্ত্র এভাবেই ব্যক্তিমানুষের মুক্তচিন্তাকে রোধ করতো। কিন্ত তারপরও প্রাচীনকাল থেকেই একদল মানুষ মানুষের কথা বলেছে। মানুষের কল্যাণের কথা বলেছে। মানুষে মানুষে সমতার কথাও বলেছে। এই সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য অনেকে বিপ্লবের পথে গিয়েছেন। অনেকে তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের পথে হেঁটেছেন। তাত্ত্বিকগণ মতাদর্শ প্রচারের মাধ্যমে সমাজে সাম্যনীতির বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। তবে রাজতন্ত্র ও শাস্ত্রশাসন মিলে মানবসমাজের এই সাম্যচেতনা নস্যাৎ করে দিয়েছে।

সাহিত্যে সাম্যবাদের বাণী প্রচারিত হয়েছে প্রাচীন যুগ থেকেই। ধর্মও সাম্যবাদ প্রচার করেছে যুগ যুগ ধরে। ধর্মীয় সাহিত্যের একটি ধারাই তৈরি হয়েছিল সাম্যবাদী চেতনা থেকে। মধ্যযুগীয় প্রণয়োপাখ্যানগুলো সাম্যবাদী চেতনার ধারক। এ সব প্রণয়োপাখ্যানে মানুষ হিসেবেই মানুষের মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে। অর্থনৈতিক কিংবা বংশীয় পরিচয়ের দ্বারা মানুষকে ছোট কিংবা বড় বিবেচনা করা হয়নি। মানবপ্রেমের ক্ষেত্রে এই সাম্যবাদী চেতনার সন্ধান পাওয়া যায় ময়মনসিংহ গীতিকা ও পূর্ববঙ্গ গীতিকা’র পালা বা লোককাহিনিতে। প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় সাহিত্য, ধর্ম ও প্রণয়োপাখ্যানে যে সাম্যবাদ প্রচারিত হয়েছে তা মানবিক চেতনাপ্রসূত। বৌদ্ধ ধর্মের সাম্যের বাণী ব্যক্তিকে মানবিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে। তেমনি কনফুসিয়াস, শ্রীচৈতন্য, শ্রীকৃষ্ণ, কবির, নানক, যীশুসহ সকল যুগাবতার মানবিক চেতনায় সাম্যবাদের কথা বলেছেন। ইসলাম ধর্মের সাম্যবাদী চেতনাও মানবিক। সাহিত্যে সাম্যবাদী চেতনার ব্যবহারিক বা বিপ্লবী ধারার সূত্রপাত ঘটে মূলত ফরাসি বিপ্লবের মাধ্যমে [৫ মে ১৭৮৯ খ্রি. থেকে ৯ নভেম্বর ১৭৯৯ খ্রি. পর্যন্ত ১০ বছর ৬ মাস ৪ দিন ছিল ফরাসি বিপ্লবের স্থিতিকাল]। রুশ বিপ্লবের (১৯১৭) মাধ্যমে ঘটে বিকাশ ও পরিণতি। তাই ফরাসি বিপ্লব পূর্ববর্তী সাহিত্যে প্রতিফলিত সাম্যবাদকে বলা যায় মানবিক সাম্যবাদ। ফরাসি বিপ্লব ও রুশ বিপ্লবের মধ্যবর্তী কালপর্বের সাহিত্যে প্রতিফলিত সাম্যবাদকে বলা যায় আধা-মানবিক ও আধা-বিপ্লবী সাম্যবাদ। আর রুশ বিপ্লব পরবর্তী সাহিত্যে প্রতিফলিত সাম্যবাদকে বলা যায় বিপ্লবী সাম্যবাদ। বিপ্লবী সাম্যবাদী সাহিত্য শ্রেণিসংগ্রামের মাধ্যমে সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলে এবং শোষক ও শোষিতের মধ্যে শ্রেণিসংগ্রাম সংঘটনের ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা জোগায়।

ফরাসি বিপ্লব শুধু ইউরোপীয় সমাজকেই নাড়িয়ে দেয়নি, বিশ^সমাজকেও জাগিয়ে তুলেছিল। তাই ফরাসি বিপ্লবের হাওয়া লেগেছিল বিশ^জুড়ে। তাই বিপ্লব পূর্ববর্তী বিশ^ব্যবস্থা অনেকটাই ভেঙে গিয়েছিল বিপ্লবপরবর্তী সময়ে। ফরাসি বিপ্লবের আগে ফ্রান্সের সমাজব্যবস্থায় যে অসাম্য বিরাজমান ছিল সে অসাম্য সাধারণ মানুষকে মানবেতর জীবনের অধিকারী করে তুলেছিল। বিপ্লব পূর্ববর্তী ফ্রান্সের সামাজিক শ্রেণিবিন্যাসে প্রথম শ্রেণিতে ছিল যাজক শ্রেণি। দ্বিতীয় শ্রেণিতে ছিল রাজা ও রাজতন্ত্রের সুবিধাভোগী শ্রেণি। আর তৃতীয় শ্রেণিতে ছিল কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ জনগণ। এই তৃতীয় শ্রেণির সংখ্যাই ছিল ৯৫%। অথচ রাজা ও যাজকরা মিলে ভোগ করতো রাষ্ট্রীয় সুবিধার ৯৫%। এই ব্যবস্থা চলে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। যাজকরা ধর্মশাস্ত্রের দোহাই দিয়ে টিকিয়ে রেখেছিল নিজেদের ক্ষমতা ও সুবিধা। আর রাজা নিজেকে মনে করতেন ঐশীশক্তির অধিকারী। রাজা আর যাজকশ্রেণি মিলে গড়ে তুলেছিল এই বিশাল বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থা। এই বৈষম্যের দেয়াল ভেঙে সাম্যবাদী সমাজ বিনির্মাণের অঙ্গীকার নিয়ে কলম ধরলেন একদল দার্শনিক। এঁরা রাষ্ট্রনীতি, সমাজনীতি, শিক্ষানীতি, অর্থনীতি, সাহিত্য ও ধর্মতত্ত্বের নতুন ব্যাখ্যা উপস্থাপন করলেন। ব্যক্তিস্বাধীনতা, সমতানীতি ও সৌভ্রাতৃত্বের কথা প্রচার করলেন। ব্রিটিশ দার্শনিক টমাস হবস (১৫৮৮-১৬৭৯ খ্রি.) ও জন লক (১৬৩২-১৭০৪ খ্রি.) রাজনৈতিক মতবাদকে ফ্রান্সের জনগণের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরলেন মন্টেস্কু (১৬৮৯-১৭৫৫ খ্রি.) ও ভলটেয়ার (১৬৯৪-১৭৮৮ খ্রি.)। রাজা ও চার্চকেন্দ্রিক নিরঙ্কুশ ক্ষমতাতত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ করে নতুন চিন্তা প্রচার করলেন দিদেরা, হেলভেটিয়াস (১৭১৫-৭১), হলব্যাক (১৭২০-৮৯) প্রমুখ দার্শনিক। ব্যক্তিস্বাধীনতার মহান বাণী নিয়ে আসলেন জ্যাঁ জ্যাঁক রুশো (১৭১২-৭৮)। শুরু হলো পুরোনো চিন্তার সাথে নতুন চিন্তার দ্বন্দ্ব। নতুন চিন্তায় মানবসাম্য ও মানবমুক্তির কথা থাকায় নতুন চিন্তাই জয়ী হলো। ফরাসি বিপ্লবের মাধ্যমে শেষ হলো রাজা ও চার্চের একচ্ছত্র ক্ষমতা। রাজা ষোড়শ লুইকে ক্ষমতাচ্যুত করে নেপোলিয়ান বোনাপার্ট ফ্রান্সে কায়েম করলেন নতুন সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা ।  এই বিপ্লবের আগে ৯৫% সম্পত্তির মালিক ছিল ৫% অভিজাত শ্রেণি। বিপ্লবের পরে এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। সর্বনিম্ন শ্রেণিতে থাকা কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির মানবিক মর্যাদা যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি আর্থিক অবস্থারও উন্নয়ন ঘটে। 

শত শত বছর ধরে রাজতন্ত্র ও চার্চের কর্তৃত্ব সাধারণ মানুষকে নিপীড়িত করছিল। তখনকার দার্শনিকদের অনেকেই রাজতন্ত্র ও চার্চের এই নিপীড়নমূলক কর্তৃত্ব মেনে নিয়েই মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার কথা বলতেন। ফলে তাঁদের বক্তব্যে মানবিক চেতনা থাকলেও বিপ্লবী চেতনা ছিল না। ফরাসি বিপ্লবের দার্শনিকরা রাজা ও যাজকদের কল্পিত ক্ষমতা ও কর্তৃত্বকে অস্বীকার করে মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার কথা বলেন। তখন থেকে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠায় মানবিক চেতনার বদলে বিপ্লবী চেতনার উদ্ভব ঘটে। এই চেতনা বিস্তৃত হতে হতে প্রায় সোয়া শতাব্দী পরে রুশ বিপ্লবকে (১৯১৭) সংঘটিত করে। ফরাসি বিপ্লব ও রুশ বিপ্লবের মধ্যবর্তী কালপর্বে রচিত সাহিত্যে সাম্যবাদী চেতনা বিপ্লবী রূপ পরিগ্রহ করে ক্রমান্বয়ে। যে কোন বিপ্লবের মতো ফরাসি বিপ্লবের চেতনায়ও রচিত হয় অসংখ্য সমৃদ্ধ সাহিত্য।  এসব সাহিত্যে সাম্যবাদ শুধু মানবিক চেতনার বিষয় নয় ; বিপ্লবী চেতনাও কাজ করে এসব সাহিত্যে। 

ধর্ম ও নীতিশাস্ত্রের বাণীসমূহ যুগে যুগে মানুষের বিবেকবোধ জাগ্রত করার মাধ্যমে সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সমাজে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কারণ বৈষম্যহীন ও শোষণহীন সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মানবিক নীতি-আদর্শের প্রচার খুব কমই কাজে লাগে। কায়েমি-স্বার্থবাদী গোষ্ঠী বিদ্যমান স্বার্থ বিঘ্নকারী নীতি-আদর্শকে কৌশলে দূরে রাখে। আবার স্বার্থরক্ষাকারী নীতি-আদর্শের বাণীকে সযত্নে লালন করে। তাই নীতি-আদর্শের তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা প্রচারের মাধ্যমে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় না। সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন বিপ্লব। উনিশ শতকের প্রথমার্ধে ফ্রান্সের চার্লস ফুরিয়ার (১৭৭২-১৮৩৭), সেন্ট সাইমন (১৭৬০-১৮২৫); ইংল্যান্ডের রবার্ট ওয়েন (১৭৭১-১৮৫৮) প্রমুখ দার্শনিকগণ সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখলেও সুনির্দিষ্ট সমাজ-দর্শনভিত্তিক, বৈজ্ঞানিকভাবে যুক্তিশীল কোন বিপ্লবী চেতনা না থাকায় তাঁদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। তবে বিশ^জুড়ে সাম্যবাদী সমাজ নির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে সর্বপ্রথম বিপ্লবী চেতনার দাবানল জ¦ালিয়ে দেন মহামতি কার্ল মার্কস (১৮১৮-১৮৮৩) ও তাঁর আজীবন সঙ্গী ও সহকর্মী ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস (১৮২০-১৮৯৪)। এতোদিন সাম্যবাদী চেতনা ছিল মানবমনের স্বপ্নবিলাসী তত্ত্বকথা। এবার তত্ত্বের সাথে কর্মের সমন্বয় করলেন মার্র্কস। তত্ত্বের সাথে কর্মের সমন্বয় করতে গিয়ে জগতের শোষিত-বঞ্চিত-নিপীড়িত শ্রমজীবী মানুষকে জেগে ওঠার আহ্বান জানালেন তিনি। দিকে দিকে এই আহ্বান ধ্বনিত হতে হতে কমিউনিস্ট মেনিফেস্টো (১৮৪৮) প্রকাশের সত্তর বছরের মাথায় লেনিনের নেতৃত্বে রাশিয়ায় সংঘটিত হয় শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম ‘রুশ বিপ্লব’ (১৯১৭)। রুশ বিপ্লবের মাধ্যমে রাশিয়ায় জার রাজতন্ত্রের পতন ঘটে। জার সম্রাট দ্বিতীয় নিকোলাস ক্ষমতাচ্যুত হয় এবং প্রতিষ্ঠিত হয় বিশে^র প্রথম সাম্যবাদী রাষ্ট্র ‘সোভিয়েত ইউনিয়ন’।

হবস, লক, রুশো, মন্টেস্কু, ভলটেয়ার, দিদেরা, হেলভেটিয়াস প্রমুখ সমাজ-দার্শনিকদের মতবাদ যেমন ফরাসি বিপ্লবকে অবশ্যম্ভাবী করে তুলেছিল তেমনি ফরাসি বিপ্লবপরবর্তী সাম্যবাদী সাহিত্য রুশ বিপ্লবের জ¦ালানি সরবরাহ করেছিল দীর্ঘদিন। রুশ বিপ্লবে লেনিন, ট্রটস্কি, স্টেলিন যেমন রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রদান করেছেন তেমনি আলেকজান্ডার পুশকিন, ফিউদর দস্তয়ইভস্কি, মায়াকোভস্কি, ম্যাক্সিম গোর্কি, নিকোলাই অস্ত্রোভস্কি, জন রিড প্রমুখ কবি-সাহিত্যিক সাম্যবাদী চেতনা বহমান রেখেছেন শ্রমজীবী মানুষের অন্তরে। সাহিত্যে প্রতিফলিত বিপ্লবী চেতনার প্রভাব মানবমনে দীর্ঘস্থায়ী হয়। তাই দেখা যায়, রাজনৈতিকভাবে রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদী সমাজব্যবস্থার পতন ঘটলেও সাহিত্যে সাম্যবাদী চেতনার প্রতিফলন দেখা যায় আজো। তাই মায়াকোভস্কির কবিতা, ম্যাক্সিম গোর্কির মা, নিকোলাই অস্ত্রোভস্কির ইস্পাত, জন রিডের দুনিয়া কাঁপানো দশ দিন (বাংলায় অনূদিত নাম) শুধু সাহিত্যকর্ম নয়; এ সব গ্রন্থ বহমান চেতনার ধারক।

রুশ বিপ্লবের সফলতার মাধ্যমে সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠিত হলেও সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদকে কেন্দ্র করে রুশ সাহিত্য দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একদল সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদের পক্ষে অবস্থান করেন। বিপ্লবপূর্ববর্তী সময়েও এঁদের সাহিত্য সাম্যবাদী চেতনায় সমৃদ্ধ ছিল। আলেকজান্ডার পুশকিন, ফিউদর দস্তয়ইভস্কি (১৮২১-১৮৮১), লিও টলস্টয় (১৮২৮-১৯১০), মায়াকোভস্কি, ম্যাক্সিম গোর্কি, নিকোলাই অস্ত্রোভস্কি, জন রিড প্রমুখ এই দলে। অপর দল সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। এঁরা অনেকে বিপ্লব পরবর্তী সময়ে দেশত্যাগ করে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেয়। সমাজতন্ত্রবিরোধী আমেরিকা তথা পশ্চিমা পুঁজিবাদী বিশে^র সমর্থনে এঁরা অনেকে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। কমিউনিস্টবিরোধী এ সব লেখকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ইভান বুনিন (১৮৭০-১৯৫৩), বরিস পাস্তারনাক (১৮৯০-১৯৬০), মিখাইল শলোখভ (১৯০৫-১৯৮৪), আলেকজান্ডার সোলঝেনিৎসিন (১৯১৮-২০০৮), জোসেফ ব্রোদস্কি (১৯৪০-১৯৯৬) প্রমুখ। রুশ বিপ্লবপ্রসূত সমাজতন্ত্রের বিপক্ষে অবস্থানকারী লেখকগণের চেয়ে সমাজতান্ত্রিক লেখকগণ সাহিত্যক্ষেত্রে বেশি উজ্জ্বল, প্রভাবশালী ও প্রেরণাদায়ী হিসেবে নমস্য।

সাম্যবাদী সাহিত্যের তাত্ত্বিক বা মানবিক ধারাটি সব যুগেই কমবেশি ছিল। কিন্তু ব্যবহারিক বা বিপ্লবী ধারাটি সমৃদ্ধ হতে শুরু করে মার্কস-এঙ্গেলসের কমিউনিস্ট মেনিফেস্টো (১৮৪৮) প্রকাশের পর থেকে। তবে বিপ্লবী ধারাটির ব্যাপক প্রসার ঘটে রুশ বিপ্লবের (১৯১৭) পর থেকে। বাংলাসাহিত্যে বিপ্লবী ধারাটির চর্চা শুরু হয় রুশ বিপ্লবের পরেই। তার আগে বাংলাসাহিত্যে সাম্যবাদী চেতনার স্ফূরণ ঘটে মানবিক বিবেচনায় তাত্ত্বিকভাবে। রামমোহন রায় (১৭৭২-১৮৩৩) ধর্ম সমন্বয়ের কথা বলে ভারতবর্ষে সামাজিক সাম্যবাদের সূচনা করেছিলেন। তাঁর ‘আত্মীয় সভা’ (১৮১৫) ধর্ম সমন্বয়ের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হলেও তা সামাজিক সাম্যের পথ দেখিয়েছিল। পরবর্তীতে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব (১৮৩৬-১৮৮৬), স্বামী বিবেকানন্দ (১৮৬৩-১৯০২) প্রমুখ মনীষীগণ ধর্মসমন্বয়ের মাধ্যমে সাম্যবাদী চেতনার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। প্যাঁরীচাদ মিত্র (১৮১৪-১৮৮৩), মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-১৮৭৩), দীনবন্ধু মিত্রসহ (১৮৩০-১৮৭৩) অনেকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য তুলে ধরে সাম্যের ধারণা দেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮-১৮৯৪) এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে  ‘বঙ্গদেশীয় কৃষক’ (১৮৭২) ও ‘সাম্য’ (১৮৭৩-৭৪) নামে দীর্ঘ প্রবন্ধ লিখে সাম্যবাদ প্রচারে ব্রতী হন। কিন্তু পরবর্তীতে নিজেই সাম্যবাদী চিন্তা থেকে সরে এসে সাম্প্রদায়িক হয়ে ওঠেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) মধ্যপন্থা অবলম্বন করলেও রাশিয়া ভ্রমনের অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখিত রাশিয়ার চিঠিতে (১৯৩১) সমাজতন্ত্রের প্রশংসা করেন। প্রথম বিশ^যুদ্ধ ও রুশ বিপ্লবের পরে রবীন্দ্রনাথ সাম্রাজ্যবাদ-ফ্যাসিবাদবিরোধী হয়ে ওঠেন। বরীন্দ্রচিন্তায় যে সাম্যবাদ ইউটোপিয়ান বা কল্পনাবিলাসী ছিল না তার প্রমাণ পাওয়া যায় ‘এবার ফিরাও মোরে’, ‘পুরাতন ভৃত্য’, ‘দুই বিঘা জমি’, ‘বাঁশি’, ‘ঐকতান’, ‘ওরা কাজ করে’ ইত্যাদি কবিতায়। প্রথম বিশ^যুদ্ধের পর রবীন্দ্রচিন্তায় পরিবর্তন ঘটে। আবার প্রথম বিশ^যুদ্ধের পরই সাহিত্যাকাশে কবি কাজী নজরুলের ইসলামেরও (১৮৯৯-১৯৭৬) আবির্ভাব ঘটে। রবীন্দ্রনাথের সাম্রাজ্যবাদ ও ফ্যাসিবাদবিরোধী চিন্তার ভিত্তিমূলে দাঁড়িয়ে নজরুল সাম্যবাদের মশাল  জ¦ালিয়ে দেন।

বঙ্কিমের পক্ষে সাম্যবাদী হওয়া সহজ ছিল না। কারণ বঙ্কিম ছিলেন ইংরেজের অধীনস্ত কর্মচারী। ইংরেজকে জেতানোর একটি প্রচ্ছন্ন দায়ও তাঁর মধ্যে থাকা অস্বাভাবিক নয়। তাই আনন্দমঠ (১৮৮২) এ যতই স্বদেশচেতনা থাকুক না কেন, আনন্দমঠের সন্তানরা শেষমেশ শাসক ইংরেজের বিরোধী হতে পারেনি। ইংরেজ শাসন মেনে নিয়ে কেউ আধ্যাত্মিক ভক্তিবাদী, কেউ সংসারী আবার কেউ নির্বাসিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ বংশ পরম্পরায় ইংরেজের সুবিধাভোগী হলেও ইংরেজের অধীনস্ত ছিলেন না। তাই ইংরেজতোষণে বাধ্য ছিলেন না রবীন্দ্রনাথ। শরৎচন্দ্র ইংরেজ সরকারের সুধিবাভোগীও ছিলেন না। ছিলেন না সামাজিক সুবিধারও অংশীদার। তাই শরৎচন্দ্র কায়েমী সমাজব্যবস্থার বিপক্ষে দাঁড়াতে পেরেছিলেন। ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিপ্লবীদের উজ্জীবিত করতে পথের দাবী (১৯২৬) লিখতে পেরেছিলেন। পথের দাবী নিষিদ্ধ হয়েছিল। শরৎচন্দ্র নিজেও ইংরেজের রোষানলে পড়েছিলেন। শুধু ইংরেজ সরকারের নয়, নিজ সমাজের রক্ষণশীলদেরও বিরাগভাজন হয়েছিলেন। তারপরও শরৎচন্দ্র মূলত সামাজিক সাম্যবাদীই ছিলেন। বিপ্লবী হতে পারেননি। নজরুল রাষ্ট্র ও সমাজ- দুটোকেই বিপক্ষ করতে পেরেছিলেন। নজরুলের পূর্বে ব্রিটিশভারতের কোন কবি এতোটা প্রকাশ্যে ব্রিটিশবিরোধী হয়ে উঠতে পারেননি। কোন রাজনৈতিক নেতাও পারেননি। প্রথম বিশ^যুদ্ধের পূর্বে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ ইংরেজ সরকারের নিকট থেকে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ে ব্যস্ত ছিল। বঙ্গভঙ্গপ্রসূত স্বদেশী আন্দোলনও মূলত ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ছিল না। বঙ্গভঙ্গের ফলে কলকাতাকেন্দ্রিক কায়েমী স্বার্থবাদী, অভিজাত, উচ্চ পেশাজীবী হিন্দু সম্প্রদায়ের বৈষয়িক সুবিধা কমে যাওয়া ও ঢাকাকেন্দ্রিক মুসলিম সম্প্রদায়ের সুবিধা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল। বঙ্গভঙ্গ রদের মাধ্যমে আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটে। তাই বঙ্গভঙ্গ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ছিল না। এটা ছিল বঙ্গভঙ্গ রদ করতে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টিকারী আন্দোলন।

প্রকৃতপক্ষে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সূচনা হয় প্রথম বিশ^যুদ্ধের পরে। খিলাফত আন্দোলন (১৯১৯-১৯২৪) ও অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০-১৯২২) প্রথম বারের মতো হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়কে ব্রিটিশবিরোধী করে তোলে। কিন্তু তখনও রাজনৈতিক নেতাদের মূল দাবি ছিল স্বায়ত্বশাসন। স্বায়ত্বশাসন বা স্বরাজ লাভের দাবিকে ডিঙিয়ে তখন একজন কবি পূর্ণ স্বাধীনতার কথা বললেন। তিনি কবি কাজী নজরুল ইসলাম। অর্ধসাপ্তাহিক ধূমকেতু’র ১৩ তম সংখ্যায় পূর্ণ স্বাধীনতার ঘোষণাটি ছিল এরূপ :

সর্ব প্রথম ধূমকেতু ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা চায়। স্বরাজ-টরাজ বুঝি না, কেননা ওকথাটার মানে এক এক মহারথী এক এক রকম করে থাকেন। ভারতবর্ষের এক পরমাণু অংশও বিদেশীর অধীনে থাকবে না। ভারতবর্ষের সম্পূর্ণ দায়িত্ব, সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রক্ষা, শাসনভার- সমস্ত থাকবে ভারতীয়দের হাতে। তাতে কোন বিদেশীদের মোড়লীর অধিকারটুকু পর্যন্ত থাকবে না। ... আমাদের এই প্রার্থনা করার, ভিক্ষা করার কুবুদ্ধিটুকু ছাড়তে হবে ...।

নজরুল যখন এই কথাগুলো বললেন, তখনও রাজনৈতিক নেতারা আবেদন নিবেদনের মাধ্যমে স্বায়ত্বশাসনের অধিকারটুকু আদায় করাই যথেষ্ট মনে করেছেন। তখনও সর্বভারতীয় কোন নেতা পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি করতে পারেননি। সেই বিবেচনায় কবি নজরুলকেই অবিভক্ত ভারতের স্বাধীনতার প্রথম স্বপ্নদ্রষ্টা বলা যায়।

যাহোক নজরুল মূলত সাম্যবাদের কবি। চারদিকে অসাম্য দেখেই নজরুল বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর নিজের ক্ষুব্ধ উক্তি ছিল ‘দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি’ (আমার কৈফিয়ৎ, সর্বহারা)। কী দেখেছিলেন কবি সে সময়! দেখেছিলেন পরাধীনতা, রাষ্ট্রীয় শাসন-শোষণ; দেখেছিলেন সামাজিক অসাম্য আর মানুষের দ্বারা মানুষের নির্যাতন-নিপীড়ন-বঞ্চনা। তাই নজরুলসাহিত্যের প্রধান সুর সাম্যের সুর। সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য বিদ্রোহের বাণী ছড়িয়ে দিয়েছিলেন নজরুল। নজরুল নিজে ছিলেন বঞ্চিত শ্রেণির প্রতিনিধি। তবে ছিলেন স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত। পরাধীনতার শৃঙ্খল মোচনের জন্য সংগ্রাম করেছেন। ব্রিটিশরাজ চলে যাওয়ার আগেই বাকশক্তি হারিয়েছিলেন নজরুল (১৯৪২)। তবে কণ্ঠ থেমে যাওয়ার আগেই জাগিয়েছিলেন সাধারণ মানুষকে। মাত্র দুই দশকের কলমযুদ্ধে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তি নাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ব্রিটিশ সরকারও বার বার নিষিদ্ধ করেছে তাঁর গ্রন্থ। কারারুদ্ধ করেছে। কিন্তু থামাতে পারেনি। শাসকরূপী শোষক ব্রিটিশকে না তাড়িয়ে যেন ঘরে ফেরা নয়। তাই সোজা কথা বলেছেন নজরুল ‘ এদেশ ছাড়বি কিনা বল/ তা নইলে কিলের চোটে হাড় করিব জল।’ নজরুলের রাজনৈতিক দর্শন ঘিরে ছিল ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব। ব্রিটিশরাজ দেশ ছাড়লেই শোষণের অবসান হবে। ভেদাভেদ ঘুচে গিয়ে সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠা হবে- এই ছিল নজরুলের মনোভাব। নজরুলের এই মনোভাব পরবর্তী সময়ে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের আইন অমান্য আন্দোলন (১৯৩০-৩৪ খ্রি.) ও ভারত ছাড়ো আন্দোলনকে (১৯৪২ খ্রি.) প্রভাবিত করেছিল বলে মনে হয়।

নজরুলসাহিত্যের একটি বড় অংশ বিপ্লবী সাম্যবাদের চেতনায় ঋদ্ধ। জাত, ধর্ম, বর্ণ ও বিত্তের নিরিখে মানুষে মানুষে কোন বৈষম্য মানেননি নজরুল। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে গণমানুষকে জাগিয়ে তুলেছেন তিনি। নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা যুবসমাজকে এতোটাই উদ্দীপিত করেছিল যে, তখন যুবকদের মুখে মুখে শোনা যেতো ‘আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কুর্ণিশ।’ সাম্যবাদী নজরুল হিন্দু-মুসলমানের সাম্প্রদায়িক উগ্রমূর্তি দেখে সমাজপতি কাণ্ডারীদের হুশিয়ার করে বলেছেন-‘ হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?/ কাণ্ডারি! বল, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার’ (কাণ্ডারি হুশিয়ার, সর্বহারা)। ‘মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই’- এমনকি ধর্মও মানুষের উপরে নয়। এটাই ছিল নজরুলের মানবতাবাদী চেতনার মূলকথা।  শুধু কবিতায় নয়, কথাসাহিত্যেও নজরুল সাম্যবাদী চেতনার প্রতিফলন দেখিয়েছেন। মৃত্যুক্ষুধা (১৯৩০) ও কুহেলিকা (১৯৩১) উপন্যাসের বিপ্লবী চেতনা মূলত সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠারই সংগ্রাম। নজরুল এভাবেই মানবতার জয়গান গেয়েছেন। অসাম্য ও শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মানুষকে জাগিয়ে তুলেছেন। জাতিভেদ ও ধর্মভেদকে অস্বীকার করে সাম্যের গান গেয়েছেন।

রুশ বিপ্লবপ্রসূত সাম্যবাদী রাজনীতির ঢেউ লেগে নজরুল পরবর্তী সাহিত্যের একটি ধারা বিপ্লবী চেতনায় সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ অক্টোবর দার্শনিক মানবেন্দ্রনাথ রায়ের (১৮৮৭-১৯৫৪ খ্রি.)  প্রচেষ্টায় রাশিয়ার মাটিতেই ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হয়। এই কমিউনিস্ট রাজনীতির প্রভাবে ভারতবর্ষে বিশ, তিরিশ ও চল্লিশ দশকে একদল কবি মার্কসীয় শ্রেণিচেতনা থেকে সাম্যবাদী কবিতা লিখতে শুরু করেন।  এঁরা শোষণের বিরুদ্ধে কবিতাকে হাতিয়ার করে তোলেন। শোষিত শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে বিপ্লবী চেতনা এঁদের কবিতার মূল বিষয় হয়ে ওঠে। বিশের দশকে এই সাম্যবাদী সাহিত্যের বলিষ্ঠ কণ্ঠ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। নজরুলের বিপ্লবী সাম্যবাদী চেতনার ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে এঁদের যাত্রা শুরু হয়। কবিতার নির্মাণশৈলী ও ভাষাভঙ্গিতেও এঁরা নতুনত্ব নিয়ে আসেন।

এ ধারায় প্রথমেই আসেন কবি বিষ্ণু দে (১৯০৯-১৯৮২ খ্রি.)। বিষ্ণু দে মার্কসীয় দর্শনের অনুসারী মননশীল, বুদ্ধিদীপ্ত ও শিল্পনৈপুন্যের কবি । তাঁর কবিতায় সাম্যবাদের যে তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ পাওয়া যায় তা থেকেই শ্রেণিচেতনা ও শ্রেণিসংগ্রামের তাড়না খুঁজে পাওয়া যায়। তাই বিষ্ণু দে জনপ্রিয় কবি না হলেও শিল্পমানের নিরিখে উচ্চমার্গীয় কবি। মার্কসীয় দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদকে মন্থন করে তিনি শ্রেণিচেতনা ও শ্রেণিহীন সমাজ নির্মাণের প্রেরণা জুগিয়েছেন তাঁর  কবিতায়। বিষ্ণু দে পরবর্তী সাম্যবাদের দুই পদাতিক হলেন সমর সেন (১৯১৬-১৯৮৭ খ্রি.) ও সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১৯১৯-)। তিরিশ ও চল্লিশের দশকে সর্বহারা শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের কথা নানাভাবে উঠে এসেছে এই দুই কবির কবিতায়। সমর সেন নিজেই নিজের পরিচয় দিয়েছেন মার্কসবাদী কবি বলে। আদর্শিক, মননশীল ও স্থিতধী সমর সেন নজরুলের মতো প্রত্যক্ষ বিদ্রোহী ছিলেন না। বিষ্ণু দে’র মতো প্রচ্ছন্নতা ও তাত্ত্বিকতাকেও পরিহার করে চলেছেন। তাই সাম্যবাদী কবিতায় সমর সেন একটি ভিন্নমাত্রা দিতে পেরেছেন। বিপ্লবী চেতনায় সমৃদ্ধ হলেও তাঁর কবিতা শ্লোগানধর্মী নয়। কবিতার নান্দনিকতাকে অক্ষুণ্ন রেখেই সমর সেন বুর্জোয়া পুঁজিবাদী শোষণের প্রতিবাদ করেছেন। তাঁর কবিতায় বণিকতন্ত্র, মহাজনী বা মজুতদারী ও জমিদারী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আছে। আছে দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা ও মধ্যবিত্তের হতাশার চিত্র। আছে বৈষম্যমূলক সমাজ পরিবর্তনের অঙ্গীকার। সুভাষ মুখোপাধ্যায় কবি ও কর্মী। পার্টি রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষভাবেই যুক্ত ছিলেন সুভাষ। তাই কবিতায় প্রতিবাদী বক্তব্যও এসেছে সরাসরি। শ্রেণিবৈষম্য ও শ্রেণিশোষণের স্বরূপ তুলে ধরার পাশাপাশি সুভাষকাব্যে সমাজ পরিবর্তনের বাণীও উচ্চারিত হয়েছে। সাম্যবাদী চেতনা ব্যক্তি সুভাষকেও বিপ্লবী করে তুলেছিল। তাই সাম্যবাদী আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য সুভাষ শুধু কবি নন, কর্মী হিসেবেও নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। সাম্যবাদের আর এক বলিষ্ঠ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (১৯২৬-১৯৪৭ খ্রি.)। সুকান্তও কবি ও কর্মী। সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়েছিলেন প্রত্যক্ষভাবে। সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে কবিতা লেখা শুরু করেন। সাম্যবাদী সাহিত্যে যেমন সমর সেনের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়। তেমনি সুভাষ মুখোপাধ্যায় অনুপ্রাণিত করেছিলেন সুকান্তকে। তাই সমর-সুভাষ-সুকান্ত একই চেতনাবাহী কবিশক্তি। চল্লিশের দশকের আগে থেকেই যে ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন ও সাম্রাজ্যবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল, পুঁজিবাদী শোষণ শ্রমজীবী মানুষকে নিপীড়িত করছিল তা দেখেই উদীয়মান সূর্য সুকান্ত জ¦লে উঠেছিল। আমরা সুকান্তের কবিতায় সেই জ¦লে ওঠার প্রতিফলন দেখতে পাই। বঞ্চিত মানুষকে উজ্জীবিত করার শক্তি ও গণমানুষের জীবনবোধের গভীরতা উপলব্ধির তত্ত্বদর্শন সুকান্তের কবিতায় প্রতিফলিত হয়েছে । সাম্যবাদী চেতনায় উজ্জীবিত আরও কয়েকজন উল্লেখযোগ্য কবি হলেন বিজয়লাল চট্টোপাধ্যায় (১৮৯৯-১৯৭৪ খ্রি.), আশরাফ আলী খান (১৯০১-১৯৩৯ খ্রি.), বে-নজীর আহমেদ (১৯০৩-১৯৮৩ খ্রি.), মহীউদ্দিন (১৯০৬-১৯৭৫ খ্রি.), প্রেমেন্দ্র মিত্র (১৯০৪-১৯৮৮ খ্রি.), অরূণ মিত্র (১৯০৯-), বিমলচন্দ্র ঘোষ (১৯১০-১৯৮২ খ্রি.), জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র (১৯১১-১৯৭৭ খ্রি.), দিনেশ দাস (১৯১৩-১৯৮৫ খ্রি.), মণীন্দ্র রায় (১৯১৯-) ও বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯২০-১৯৮৫ খ্রি.)। ব্রিটিশভারতে কমিউনিস্ট কর্মীরা যেমন শাসকের রোষানলে ছিল তেমনি সাম্যবাদী সাহিত্যিকরাও সরকারের তীক্ষè নজরে থাকতো। রুশ বিপ্লবপ্রসূত সাম্যবাদী চেতনা প্রতিহত করা ছিল পুঁজিবাদী ব্রিটিশ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তাই সাম্যবাদী অনেক সাহিত্যকর্ম তখন নিষিদ্ধ হতো। সোমনাথ লাহিড়ীর সাম্যবাদ (১৯৩১) সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়েছিল। ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিও নিষিদ্ধ ছিল প্রায় এক দশক (১৯৩৪-১৯৪২)। এ সময়ও সাম্যবাদী সাহিত্যিকরা বসে থাকেননি। দিনেশ দাস ‘কাস্তে’ (১৯৩৭) কবিতা লিখে তখন ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন।  


কবিতার পাশাপাশি কথাসাহিত্যেও বিপ্লবী সাম্যবাদী চেতনার সন্ধান মেলে। বিশ শতকের দ্বিতীয় দশক থেকেই  একদল কথাসাহিত্যিক নিয়মিত গল্প-উপন্যাস লিখতে শুরু করেন। পরে তাঁদের অনেকেই বাংলাসাহিত্যের প্রথম সারির কথাসাহিত্যিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। এঁদের মধ্যে নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত (১৮৮২-১৯৬৪ খ্রি.), তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৮-১৯৭১ খ্রি.), অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত (১৯০৩-১৯৭৬ খ্রি.), মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯০৬-১৯৫৬ খ্রি.), সত্যেন সেন (১৯০৭-১৯৮১ খ্রি.), অদ্বৈত মল্লবর্মণ (১৯১৪-১৯৫১ খ্রি.) ও আবু ইসহাক (১৯২৬-) প্রমুখ কথাসাহিত্যিকগণ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এঁদের কথাসাহিত্যে বিশেষ বিশেষ কায়দায় শ্রেণিচেতনা, শ্রেণিসংগ্রাম ও সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনের আকাক্সক্ষা ব্যক্ত হয়েছে। শ্রেণিচেতনা ও শ্রেণিশোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম বিপ্লবী সাম্যবাদী সাহিত্যের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। উল্লিখিত সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্মে এই বৈশিষ্ট্য নানামাত্রায় উপস্থিত। নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করেছেন দর্শন ও আইনশাস্ত্রে। পিতা ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। পারিবারিক আভিজাত্যের বলয়ে থেকেও সাহিত্যচর্চা করেছেন সাধারণ মানুষের যাপিত জীবনকে উপজীব্য করে। সাধারণ মানুষের মনোজাগতিক বিষয়গুলো তাঁর কথাসাহিত্যে নির্মোহভাবে রূপায়িত হয়েছে। মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির সাথে জীববৃত্তি বা যৌনাকাক্সক্ষার একটি বৈরীভাব আছে। কিন্তু এই বৈরীভাব মানুষের মনোভাবের মধ্যে কোন প্রাচীর নির্মাণ করে না। মানুষ তার যৌনাকাক্সক্ষাকে পরিতৃপ্ত করার জন্য অনেক কিছুর সাথেই আপোষ করে। মানুষের এই আপোষকামিতাপ্রসূত যৌনবিকারগ্রস্ত ও তমসাবৃত জীবনকে রূপায়িত করেছেন নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত তাঁর গল্প-উপন্যাসে। সাধারণভাবে মানুষের অন্তর্গত প্রবণতার স্বরূপ এক ও অভিন্ন। জৈববৃত্তির নিরিখে মানুষে মানুষে যেমন প্রভেদ নেই তেমনি সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ভেদাভেদ না থাকলেই সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠা হয়। মানবপ্রকৃতির অন্তস্থ প্রবণতাগুলো সামগ্রিকভাবে বিচার করলে মানুষে মানুষে কোন প্রভেদ খুঁজে পাওয়া যাবে না। নরেশচন্দ্র এভাবেই মানুষকে একই সমান্তরালে নিয়ে আসেন। বাহ্যিক বিপ্লব এখানে না থাকলেও অন্তর্গত বিপ্লব এখানে মানুষকে তাড়িত করে। 

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মেছিলেন জমিদার পরিবারে। স্বচ্ছলতার মাঝে বেড়ে উঠেছেন। লিখেছেন দীর্ঘসময় ধরে এবং লিখেছেন তাঁর সময়ের অন্যান্যদের চেয়ে অনেক বেশি। সাহিত্যচর্চা করেছেন ক্ষয়িষ্ণু জমিদারী আমলে। তারাশঙ্করের সাহিত্যখ্যাতি যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে তখন জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হয় (১৯৫০)। জমিদারী প্রথা বিলোপের সংকেত তিনি হয়তো পেয়েছিলেন আগেই। তাই ব্রিটিশবিরোধী রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। আর ব্রিটিশবিরোধী রাজনীতি মানেই জাতীয়তাবাদী চেতনা। আর এই জাতীয়তাবাদী চেতনা ধারণ করতে হলে জাতিসত্ত্বার প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা নিবেদন করার বিকল্প নেই। তাই রাজনীতি থেকে ক্রমশ দূরে এবং সাহিত্যের দিকে ক্রমশ অগ্রসর হতে হতে তারাশঙ্কর সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেলেন। সাধারণ মানুষকেন্দ্রিক সাহিত্য রচনা করতে গিয়ে তিনি পিতৃভূমি রাঢ়বঙ্গের জনজীবনকে বেছে নিলেন। সামন্ত সমাজব্যবস্থার সঙ্গে পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার মনস্তাত্ত্বিক বিরোধ ছিল বিশ শতকের প্রথমার্ধের আর্থ-সামাজিক চিত্র। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত (১৭৯৩) পরবর্তী উঠতি ধনিক শ্রেণি ছিল সামন্তবাদের প্রধান প্রতিপক্ষ এবং এই উঠতি ধনিক শ্রেণির উত্থানের ফলেই সামন্তবাদ দুর্বল হয়ে পড়ে। ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লবপ্রসূত যন্ত্রসভ্যতার প্রভাব পড়ে ভারতীয় সমাজেও। তাই কৃষিসভ্যতার উর্বরভূমি ভারতীয় সমাজে ক্রমশ যন্ত্রসভ্যতার উত্থান ঘটে এবং স্বভাবতই কৃষির সাথে শিল্পের বিরোধ দেখা দেয়। এই বিরোধে কৃষিনির্ভর অর্থনীতির ভাঙ্গন এবং শিল্পনির্ভর শহুরে অর্থনীতির উত্থান ঘটে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন ব্যক্তির মূল্যবোধেও পরিবর্তন বয়ে আনে। সমাজব্যবস্থা ও সামাজিক মূল্যবোধের পরিবর্তনে দেখা দেয় ব্যক্তিসংকট। এই ব্যক্তিসংকট ব্যক্তিমনে দ্রোহচেতনার উন্মেষ ঘটায়। ফলে জমিদার ও ধনিক শ্রেণির বিরুদ্ধে বিত্তহীন মানুষের বিদ্রোহ দেখা দেয়। এই বিদ্রোহে স্বাভাবিকভাবেই বিত্তহীনদের পরাজয় ঘটে। এই সামাজিক ও রাজনৈতিক পরম্পরা তারাশঙ্করের কথাসাহিত্যে প্রতিফলিত হয়েছে তীক্ষè ও তীর্যকভাবে। এছাড়া পরাধীন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, দুর্ভিক্ষ, মন্বন্তর, দেশভাগজনিত উদ্বাস্তু সমস্যা, ভাবাবেগ, বিপর্যয় ও শ্রেণিবৈষম্যের চিত্র খুঁজে পাওয়া যায় তারাশঙ্করসাহিত্যে। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিপর্যয়ের মাঝেও অন্ত্যজ ও প্রান্তিক মানুষের জেগে ওঠার সংগ্রাম তারাশঙ্করের সাহিত্যকে সাম্যবাদী চেতনায় সমৃদ্ধ করেছে। কৃষিসমাজে বিদ্যমান শোষণব্যবস্থার সাথে নব্য শিল্পসমাজের শোষণব্যবস্থা যুক্ত হয়ে যখন মালিক ও শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে বড় ধরনের শ্রেণিব্যবধান সৃষ্টি হয় তখন মালিক ও শ্রমিক পরস্পর প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে। অসম প্রতিপক্ষ মানেই শ্রেণিচেতনা। এই শ্রেণিচেতনা থেকেই সাম্যের সুর বেজে ওঠেছে তারাশঙ্করের সাহিত্যে।

শোষিত, বঞ্চিত ও নিপীড়িত শ্রেণি সব সময়ই সাম্যবাদী চেতনা ধারণ করে। কারণ সমতা প্রতিষ্ঠিত হলেই তাদের আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে- এই বোধ তাদেরকে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে উজ্জীবিত করে। সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বিত্তবান বুর্জোয়া শ্রেণি প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এ বাধা ডিঙানোর জন্য ‘দুনিয়ার মজদুর এক হয়ে’ শ্রেণিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য বিপ্লবী হয়ে ওঠে। এই বিপ্লবী চেতনা  অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত’র (১৯০৩-১৯৭৬খ্রি.)। সাহিত্যে পাওয়া যায়। ইংরেজি সাহিত্যে এমএ ও বিএল ডিগ্রি নিয়ে বিচারবিভাগে দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন অচিন্ত্যকুমার। কল্লোল গোষ্ঠীর অন্যতম লেখক হিসেবে নতুন ধারা ও আধুনিকতা সৃষ্টির অন্যতম রূপকার ছিলেন তিনি। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নিয়ে লেখা তাঁর প্রথম উপন্যাস বেদে (১৯২৮) সাম্যবাদী চেতনায় ঋদ্ধ। পরবর্তী তিন দশকেরও বেশি সময় অচিন্ত্যকুমার গল্প-উপন্যাসের যে জগত নির্মাণ করেছেন তা যেমন বিষয়বৈচিত্র্যে নানামাত্রিক তেমনি ভাব ও ভাষায় সাধারণ মানবজীবনঘনিষ্ঠ। প্রান্তিক মানুষের যাপিত জীবন, তাদের সুখ-দুঃখ-সংকট, তাদের আশা-নৈরাশ্য ও ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তিপ্রসূত ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী চেতনার প্রকাশ ঘটেছে অচিন্ত্যকুমারের সাহিত্যে। ব্রাত্য মানুষের জীবনসংগ্রামকে অচিন্ত্য দেখেছেন তাদের চোখেই। শত অভাব, রোগ-শোক, প্রতিকূলতা ও জরাজীর্ণতার মাঝে মানুষ টিকে থাকে এবং এই টিকে থাকাই মানবজীবনের সার্থকতা নয়। তাই শোষিত-বঞ্চিত মানুষের বেঁচে থাকার, টিকে থাকার এই সংগ্রামই সমাজ পরিবর্তনের বার্তা বহন করে এবং সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার ভিত্তি নির্মাণ করে।


শোষিত মানুষের প্রতি সংবেদনশীল আর এক সাহিত্যিপ্রতিভা প্রেমেন্দ্র মিত্র (১৯০৪-১৯৮৮ খ্রি.)। প্রেমেন্দ্র আলোচনায় ছিলেন না খুব একটা। তবে সাধারণ মানুষের প্রতি অনুরাগই ছিল তাঁর সাহিত্যের মূল প্রতিপাদ্য। জীবনের দুঃখ ও হতাশাকে তিনি গভীর কুশলতার সাথে রূপদান করেছেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস পাঁক (১৯২৬) ব্রিটিশবিরোধী উত্তাল জাতীয়তাবাদী আন্দোলনপর্বে প্রকাশিত হয়। পরবর্তী তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি রচনা করেন বেশ উল্লেখযোগ্য কবিতা, গল্প ও উপন্যাস। প্রেমেন্দ্র’র সাহিত্যকর্মের মূলসুর হলো সাম্যবাদী চেতনা। শ্রেণিবৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠ প্রেমেন্দ্র সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার প্রতিও ছিলেন অঙ্গীকারাবদ্ধ। ব্রিটিশভারতে নিম্ন শ্রেণি-পেশার মানুষগুলো শুধু অর্থনৈতিক নয়; সামাজিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রেও ছিল নিপীড়িত। বঞ্চিত ও নিপীড়িত মানুষের মর্মযাতনা গভীর মমতায় উপলব্ধি করেছিলেন প্রেমেন্দ্র এবং তাদেরকেই সাহিত্যে রূপদান করেছেন তিনি। শোষণহীন সমাজ ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণই প্রেমেন্দ্রসাহিত্যের মূলসুর। প্রেমেন্দ্র’র সমকালে এই দুটি সমস্যা ছিল চরম। শোষণহীন সমাজচেতনা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা যেহেতু সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার বৌদ্ধিক হাতিয়ার তাই প্রেমেন্দ্রসাহিত্যও সাম্যবাদী চেতনার এক তীক্ষè হাতিয়ার হয়ে ওঠে। 

সাম্যবাদী সাহিত্যের আর এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হলেন সত্যেন সেন (১৯০৭-১৯৮১ খ্রি.)। মূলত বামপন্থি রাজনীতিক। শোষণের বিরুদ্ধে, গণমানুষের আর্থ-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির লক্ষ্যে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম করেছেন। সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আদর্শিক সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী (১৯৬৯)। আদর্শিক রাজনীতি করে বার বার কারাবরণ করেছেন। চরমপন্থি যুগান্তর দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে যুক্ত হয়েছেন সাংবাদিকতার সঙ্গে। রাজনীতিক হলেও তাঁর সহজাত সত্ত্বার ভেতর ছিল সংস্কৃতি। রবীন্দ্রসংগীত ও গণসংগীতের সুকণ্ঠ গায়ক ছিলেন। বয়স পঞ্চাশ পেরিয়ে সাহিত্যসাধনায় মনোনিবেশ করেন। তবু খুব কমও লিখেননি। তাঁর কথাসাহিত্যের প্রধান অংশ জুড়ে আছে শ্রেণিসংগ্রাম ও শোষণের চিত্র। গণমানুষের মুক্তির বাণীই তিনি প্রতিফলিত করেছেন তাঁর সাহিত্যে। তাঁর জীবনবোধ গঠিত হয়েছিল ব্রিটিশবিরোধী গণআন্দোলনপর্বে। বঙ্গভঙ্গবিরোধী উত্তাল আন্দোলনকালে (১৯০৭) জন্মেছিলেন এবং বেড়ে উঠেছেন খেলাফত আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন, আইন অমান্য আন্দোলন ও ভারত ছাড়ো আন্দোলনসহ নানা রাজনৈতিক সংকট দেখে দেখে এবং সেসব আন্দোলন-সংগ্রামে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করে করে। তাই তাঁর সাহিত্যে বিপ্লবী তৎপরতার সন্ধান মেলে। উদ্দেশ্যবাদী সাহিত্যিক হিসেবে সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই ছিল তাঁর সাহিত্যের মূল লক্ষ্য।


সরাসরি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯০৮-১৯৫৬ খ্রি.)।  নিজেকে ‘কলমপেষা মজুর’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। পার্টি রাজনীতির আদর্শ ধারণ করে কলম ধরেছিলেন সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে। কলম ধরেছিলেন অন্ত্যজ বা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পক্ষে। মানিক ছিলেন বাংলা কথাসাহিত্যের বরপুত্র। তিরিশোত্তর বাংলা কথাসাহিত্যকে তিনি শিল্পমানে যেমন সমৃদ্ধ করেছেন তেমনি সাহিত্যকে প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন। বাংলা কথাসাহিত্যে মনোবিশ্লেষণের যে ধারাটি রবীন্দ্রনাথ শুরু করেছিলেন মানিক সেই মনোবিশ্লেষণের ধারাটিকে সমৃদ্ধ করে মনোবৈজ্ঞানিক পর্যায়ে উন্নীত করেছেন। বামপন্থি (সমাজতান্ত্রিক ও সাম্যবাদী) রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত মানিক শ্রেণিশোষণ ও শ্রেণিসংগ্রামের চিত্র দেখিয়েছেন সাহিত্যে। নিম্নবর্গের মানুষের যাপিত জীবনের নানামাত্রিক সংকট মানিককে তাড়িত করেছিল গভীরভাবে। তাই নিম্নবর্গের মানুষেরাই হয়ে উঠেছে মানিকসাহিত্যের প্রধান চরিত্র। অন্ত্যজশ্রেণির প্রতি পক্ষপাতিত্ব এবং তথাকথিত ভদ্রশ্রেণির প্রতি ব্যক্তিমানিকের বিরাগ ছিল। চৌদ্দ ভাইবোনের সংসারে লব্ধপ্রতিষ্ঠ ভাইদের আত্মস্বার্থমগ্নতা, সংকটকালে পারিবারিক দায়িত্ব থেকে সরে পড়া- এসব পারিবারিক বিষয় মানিককে আহত করে দারুণভাবে। চরম আর্থিক সংকটের সময় পুরো পরিবারের দায়িত্ব কাধে তুলে নেন মানিক। এ নিয়ে সীমাহীন আর্থিক সংকটে পড়েন। এই আর্থিক সংকটের সাথে যোগ হয় রোগ-ব্যাধি। এই অভাব ও অসুখের যন্ত্রণা মানিককে বয়ে বেড়াতে হয়েছে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। তবে অভাব ও ভগ্নস্বাস্থ্য সত্ত্বেও মানিক সাহিত্যসাধনায় ছিলেন স্থিতধী অবিচল। ফ্রয়েডীয় মনোবিকলন তত্ত্ব ও মার্কসীয় সাম্যবাদী চেতনা মানিকসাহিত্যের মূল থিম। তাই ব্যক্তির যৌনাকাক্সক্ষার সাথে আর্থিক সংকটের দ্বন্দ্ব প্রকটিত হয়েছে তাঁর সাহিত্যে। এ দ্বন্দ্ব সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার বিপ্লবী চেতনাকে শানিত করেছে।

মানিকের ব্যক্তিজীবন শুধু আর্থিক সংকটে নয়, মানসিক সংকটেও আকীর্ণ। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে পাশ করেও ডিগ্রি পর্যায়ে (বিএসসি) পর পর দুবার অকৃতকার্য হওয়া তাঁর মনোজগতে বড় ধরনের বাকপরিবর্তনই নির্দেশ করে। সাহিত্য ও রাজনীতি তাঁকে একাডেমিক পাঠের জগত থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল। মানুষের মনোজাগতিক প্রবণতাগুলো খুটিয়ে খুটিয়ে বিশ্লেষণ করে মানিক দেখালেন যে, মানুষের ক্ষুধা ও যৌনস্পৃহা তাকে প্রতিনিয়ত তাড়িত করে। ক্ষুধার রাজ্যে মানুষের জীবন দূর্বিষহ হয়ে উঠে। একজন ক্ষুধার্ত মানুষ যেমন সহজেই ন্যায়-নীতি বিসর্জন দিতে পারে; তেমনি মানুষ তার যৌনাকাক্সক্ষা নিবৃত্তির জন্য ন্যায়-নীতি, সততা, মহত্ত্ব সবকিছু বিসর্জন দিতে পারে। সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় বিধান মানুষকে সব সময় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। সুযোগ পেলেই মানুষ আদিম হয়ে ওঠে। তাই মানবজীবনের প্রধান দুটি জৈবিক প্রেষণা ক্ষুধা ও যৌনতা হয়ে ওঠে মানিক সাহিত্যের মুলসুর। টিকে থাকার সংগ্রামেও মানুষের নৈতিক  অবক্ষয় ঘটে কখনো কখনো। মানবচরিত্রের এ সব অনৈতিক ও অন্ধকার দিকগুলো মানিকসাহিত্যে প্রতিফলিত হয়েছে নানামাত্রায়। সমাজের সুবিধাভোগী মানুষের সাথে বঞ্চিত মানুষের সংগ্রাম দীর্ঘদিনের। এই সংগ্রামে শোষিত-বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষের বিজয় অর্জিত হতে পারে। হতে পারে শ্রেণিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা। সে প্রমাণ আছে ফরাসি বিপ্লবে। সে প্রমাণ আছে রুশ বিপ্লবে। এই শ্রেণিহীন সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রেরণা সঞ্চারিত হয়েছে মানিকসাহিত্যে।

অদ্বৈত মল্লবর্মণ ও আবু ইসহাক শ্রেণিচেতনা ও শ্রেণি সংগ্রামকে উপজীব্য করে সাহিত্য রচনা করেছেন। দেখিয়েছেন অর্থনৈতিক শোষণ। বঞ্চিত মানুষের হতাশা, হাহাকার ও তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি- এ সব বিষয় অত্যন্ত জীবন্তভাবে প্রতিফলিত হয়েছে দু’জনের সাহিত্যেই। সাম্রাজ্যবাদী শোষণের পাশাপাশি দেশীয় সামাজিক শোষণ, সমাজপতি-মোড়লদের অর্থনৈতিক শোষণে জর্জরিত মানুষের জীবনসংগ্রাম সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রেরণা যোগায়। সামাজিক সাম্যবাদী চেতনা বা আধা-মানবিক ও আধা-বিপ্লবী সাম্যবাদী চেতনা অদ্বৈত ও ইসহাক সাহিত্যে প্রতিফলিত হয়ে দক্ষতার সাথে।

উনিশ শতকের শেষার্ধে প্যারীচাঁদ, বঙ্কিমচন্দ্রের মাধ্যমে যে সামাজিক সাম্যচিন্তার সূচনা হয়, রবীন্দ্রনাথের মাধ্যমে সে সাম্যচিন্তার বিকাশ  হতে শুরু করে। অবশ্য সামন্তপ্রথা প্রভাবিত রাজবন্দনা ও ধর্মীয় অনুশাসনের নাগপাশ থেকে ক্রমাগতভাবে বের হয়ে আসতে সময় লাগে পুরো বিশ শতক। বিশ শতকে বাংলাসাহিত্য সামাজিক অসঙ্গতি, রাষ্ট্রীয় শোষণ-বঞ্চনা, ধর্মীয় প্রভাব ও ধর্মান্ধতা থেকে বের হয়ে আসে। এই বিশ শতকেই দুটি বিশ^যুদ্ধের বিরূপ প্রভাব, বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন (১৯০৫-১৯১১ খ্রি.) থেকে ভারতবিভক্তি (১৯৪৭) পর্যন্ত ব্রিটিশবিরোধী নানা নরমপন্থি ও চরমপন্থি আন্দোলন-সংগ্রাম ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, ভাষা আন্দোলন (১৯৫২) পাকিস্তান পর্বের (১৯৪৭-১৯৭১ খ্রি.) দুইযুগের নব্যঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণ শেষে বাঙালি জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতাকে (১৯৭১) প্রত্যক্ষ করেছে বাঙালি জাতি। বিশ শতকের সাহিত্যিকগণ তাই রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে হয়েছে অধিকতর অধিকার সচেতন। এই অধিকারসচেতনতাই সাহিত্যকে করে তুলেছে সাম্যবাদী। 

সাম্যবাদ একটি সমাজনীতি বিষয়ক মতবাদ। রাজনীতিই নির্ধারণ করে সাম্যবাদ নামক সমাজনীতির ভবিষ্যৎ। সাহিত্যে সাম্যবাদী চিন্তার যে তিনটি পর্যায় আলোচ্য প্রবন্ধে আলোচিত হয়েছে সে তিনটি পর্যায়েই রাজনীতি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। সাহিত্যে সাম্যবাদী চেতনা সব যুগেই ছিল। তবে সে চেতনার তীব্রতা সব যুগে একই মাত্রায়, একই বৈশিষ্ট্যে ছিল না। ফরাসি বিপ্লব পূর্ববর্তী সাহিত্যে সাম্যবাদী চেতনা ছিল মানবিক বিষয়। মানবসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য তখন সাহিত্যে সমাজ পরিবর্তনের ধারণা ছিল না। ফরাসি বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনের ধারণা জন্মে এবং সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রামের প্রয়োজনীয় উপলব্ধি করে শোষিত শ্রেণি। এই শোষিত শ্রেণি শতবর্ষ পরে রুশ বিপ্লবের মাধ্যমে শোষক শ্রেণিকে উৎখাত করে সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা করে। এই শোষিত-বঞ্চিত শ্রেণিকে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এগিয়ে নেওয়ার জন্য যে সাহিত্য সেটাই বিপ্লবী চেতনাবাহী সাহিত্য। বিপ্লবী সাম্যবাদ রাজনৈতিক দিক থেকে সাম্রাজ্যবাদ ও ফ্যাসিবাদবিরোধী এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে পুঁজিবাদবিরোধী। তাই সাম্রাজ্যবাদ, ফ্যাসিবাদ ও পুঁজিবাদের ধ্বংসস্তুপ থেকেই গড়ে ওঠে শ্রেণিহীন সাম্যবাদী সমাজ। এজন্য সাম্যবাদী সাহিত্যকেও মানবিক চেতনার পর্যায় থেকে বিপ্লবী চেতনার পর্যায়ে উন্নীত হতে হয়।


লেখক:

আলী রেজা

পিএইচডি গবেষক
ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
e mail : alirezaphilo @gmail.com


আলী রেজা’র আরও প্রবন্ধ 

প্রগতিশীলতার বিরুদ্ধশক্তি ও চিন্তাচর্চার গতিপথ ~ আলী রেজা

পড়তে এখানে ক্লিক করুন।


Post a Comment

0 Comments