জরিনা আখতারের কবিতা সত্যের ভিতরে হাজার দুঃখ, তবু আনন্দ ~ বঙ্গ রাখাল

Zarina Akhtar's poem Sadness inside the truth, yet joy


জরিনা আখতার। কে তিনি। কোথায় থাকেন। জীবিত আছেন না মারা গেছেন। এমন অনেক প্রশ্নের জবাব খুঁজতে খুঁজতে মিলে যাই প্রশ্নগুলোর জবাব। জরিনা আখতার সত্তর দশকের একজন উল্লেখযোগ্য কবি। যার কবিতায় সন্ধান মেলে প্রকৃতি, ভালোবাসা, একাকিত্ব, নিরাশা, নিঃসঙ্গতা, আধ্যাত্মবাদ, দেশপ্রেম কিংবা নিজেকে দুমড়ে-মুচড়ে মেরুদণ্ড টানটান করে দাঁড়ানোর সাহস। তিনি জীবিত আছেন এবং অবসরহীন কবিতা লিখে চলেছেন। একদিন কবির মিরপুরের বাসায় হাজির হয়ে জমিয়ে তুলেছি কবির আড্ডাখানা। অনেকে আজ কবির নামও জানেন না। যারা সত্তরের কবিতা পড়ালেখা করেন বা করেছেন তাদের সবার কাছেই পরিচিত নাম এই জরিনা আখতার। আসুন পড়ে আসি কবির একটা কবিতা-


...যখন পালাতে পালাতে

পথ যায় বেঁকে

তখন লজ্জার আগল খোলে

নারী

রাত্রির সীমান্তে পাখিরও জাগার আগে

তাজা ফল কেটে একাকার করে

পুরুষের তরবারি।...

(দুর্লভ জয়,কালো ময়ূরের ডাক)


কবি জরিনা আখতারের কবিতা আমাদের চারিপাশের্^র ঘটে যাওয়া জীবনের প্রতিচ্ছবি মাত্র। তিনি আমাদের এই পরিচিত মুখকেই তার সহজাত ভাষায় আমাদের সামনে তুলে ধরেন। যে জীবনকে কবি আঁকড়ে ধরতে চেয়েছেন বারংবার-নিজেকে চেনাতে কিংবা জানাতে চান-তিনি নিজের অস্তিত্বকে পরিচিত করে তুলতে চান-নিজেকে কিংবা নিজের কবিতা বয়ানে তা পরিচিত করে তুলেছেন। কবির কবিতা ন্যারেটিভ কবিতা-শুধু তার কবিতায় নয়। এ যেন সত্তর দশকের কবিতারই একটা নিজস্ব বৈশিষ্ট্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করে নিয়েছে। সত্তর দশকের কবিদের কবিতা সম্পর্কে গবেষক অনু হোসেন তার বাংলাদেশের কবিতা প্রসঙ্গে গ্রন্থে বলেছেন-‘সত্তরের কবিতায় যা ব্যক্তিক তাই সামাজিক, যা সামাজিক তাই রাষ্ট্রিক-অর্থাৎ কবিরা যা বলেছেন তাই কবিতা হয়ে উঠেছে। সত্তরের অধিকাংশ কবিতায় যেহেতু শিল্পের অনুমোদন দুর্লক্ষ্য-সবাই একই কণ্ঠস্বরে কথা বলেছেন, তাই এঁদের সবার কবিতায় প্রায় একই ধরণের প্রবণতা লক্ষ করা যায়।’ তবে অনু হোসেনের কথার সত্যতা মেনে নিলেও অন্যভাবে আরেকটা কথা বলার অবকাশ থেকে যায় যে-কেউ কেউ যে ভিন্নতা রাখতে সক্ষম হয়নি সেটা বলা যাবে না। যে কয়েকজন নিজেদেরকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন তাদের মধ্যে জরিনা আখতার অন্যতম। তিনি তার কবিতায় ভাববাদকে সবার সম্মুখে উন্মোচন করার চেষ্টা করেছেন। কবিতায় একদিকে যেমন তিনি তার সম্ভাবনাকে প্রকাশ করেছেন অন্যদিকে তেমনি তার শঙ্কাকেও তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন।

১.

আছে এক খণ্ড শব্দ-শস্যভূমি-

সে ভূমি বর্গা দেইনা আমি

ভাগচাষিদের সাথে ভাগাভাগিও করিনা

নিজেই কর্ষণ করি- মই দেই, লাঙল টানি,

শব্দ, শস্য বীজ বুনি, শব্দ-চারা তৈরি করে

কর্ষিত মাটির বুকে রোপণ করি-

যত্নে ও মমতায় জল সেচন করি, নিড়ানি দেই

ক্রমে ক্রমে বেড়ে ওঠে আমার শব্দ-শস্যরা

ফলবতী শরীরের ভারে নুয়ে পড়ে-রৌদ্র-স্নাত মাটির বুকে...

(শব্দ-শস্যের রাত, মৎস্যকুমারী)


২.

নারীর দু’হাত ছুঁয়ে শস্যের বীজ যাবে মাটির নরম বুকে

পুরুষ তুলবে ঘরে ফসলের সম্ভার

আর সম্মিলিত কণ্ঠস্বরে বেজে উঠবে জীবনের জয়গান।

(আহত যোদ্ধার রোজনামচা, সেগুন মেহগনি ও অন্যান্য কবিতা)


৩.

ভেতরে মর্মরিত হচ্ছে প্রাণ বেদনা ও ব্যর্থতার

মন্দ্রস্বরে উচ্চারিত হচ্ছে অসংক্য ভুলের ইতিহাস-...

আহত শিলালিপির সবটুকু আর্তনাদ।

(অজস্র ভ্রান্তি নিয়ে, এই ছুরিই আরশি)


জরিনা আখতার জন্ম ১৫ মে ১৯৫১, ঢাকায়। বাবা মরহুম মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ, মা মরহুমা খুরশীদা লতিফ। ষাট দশকের মাঝামাঝি কামরুন্নেসা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে পড়ার সময় লেখালেখির সূচনা। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় নবাবগঞ্জ সাময়িকী নামে একটি পত্রিকায়। কবিতাটির নাম আগামী দিনের নাগরিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ ১৯৭৪-এ। ঢাকার লালমাটিয়া সরকারি মহিলা কলেজে ১৯৭৭-এ শিক্ষকতা জীবন শুরু। ২০১১- এ বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে অবসর গ্রহণ। কবিতা গ্রন্থ : কালো ময়ূরের ডাক-১৯৮৬, এই ছুরিই আরশি-১৯৮৯, সেগুন মেহগনি ও অন্যান্য কবিতা-১৯৯৩, এই আমি নিজস্ব আমি-২০০২, জলের আরশিতে নির্নিমেষ চেয়ে থাকা একটি হিজল গাছ-২০১৭, মৎস্যকুমারী-২০২১, কনীনিকা-২০২১।  প্রবন্ধ- প্রসঙ্গ: সাহিত্য ও জীবন-২০০৪। কবি জরিনা আখতার দশক বিবেচনায় সত্তর দশকের একজন উল্লেখযোগ্য নাম। এই কবির কবিতায় একাকিত্ব বা নিঃসঙ্গতা বা হারিয়ে যাওয়া দিন, দৃশ্য বা সময়ের জন্য বিশেষ এক হাহাকার কবি হৃদয় খোঁড়লে লালন করে থাকেন। সেজন্যই বুঝি কবি বলতে পারেন-

১.আজ বৈরি সময় এসে এক এক কেড়ে নিচ্ছে মুগ্ধতাগুলো

২.ধূসরতাই এখন শিল্পকর্মের রং।

৩. আমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হলাম...


এই কবির কবিতায় কোথাও কোথাও সুখের সুবাতাসও প্রবাহিত হয়-ছড়াতে থাকে আনন্দের খুশবু। নিঃসঙ্গতা ও একাকিতত্বের সাথে কবির বাস হলেও সে হতাশাবাদী নয়। দেখতে থাকেন স্বপ্ন , বুনতে থাকেন ভবিষ্যত। এই স্বপ্ন বা ভবিষ্যৎ চেতনাও তার কবিতায় প্রবলভাবে বিদ্যমান। তিনি সোনালী সকালের প্রত্যাশি-


১.আমাদের শরীরে লেগে থাকা পাকা ধানের মতো রোদের রঙ...

২. ভোরের সূর্যোদয়ে দেখেছি ইলিশের আঁশের মতো তার চকচকে জলে...


কবি জরিনা আখতার স্বভাবে ও মননে একজন নিভৃতচারী হলেও উপলব্ধিতে এবং চিন্তার প্রগাঢ়তা তার কবিতায় ভিন্নমাত্রা সংযোজিত করেছে। এসব তিনি তার যাপিত-জীবনে চারিপাশ থেকে উপাত্ত অনুসন্ধান করে কবিতার অবয়ব তৈরি করেন। এই কবির সম্পর্কে তার একটি গ্রন্থের ফ্ল্যাপে বলা হয়েছে-‘ বিশ^ ইতিহাসের বিবর্তনের কারণ সমাজে মানুষের নানামুখী অর্থনৈতিক অবস্থান। মানুষই মানুষের ভাগ্যনিয়ন্তা। সেখানে ঈশ^র বা পরম চৈতন্যের অস্তিত্ব গুরুত্ব বহন করে না। জরিনা আখতারের কাব্যভাবনা লালন করে সেই দর্শনকে।’ তিনি মানুষকেই প্রাধান্য দিয়ে বলেছেন এই অসহায়-নিরান্ন্য মানুষের কথা। তিনি যখন উচ্চারণ করেন-এই মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আরো বেশি বেঁচে থাকা... তখন সত্যিই আমরা বেঁচে থাকার প্রেরণা পেয়ে থাকি। আমরা আমাদের দুঃখকে ভুলে যাই-নিজেকে তখন আর কোন নিঃস্ব মানুষ মনে হয় না। তবু বেঁচে থাকা-


১.

অনাহার মহামারী-যা কিছু পরাজয় ব্যর্থতা

দুঃখ দিনের গাঁথা-সব আমাদের...


২.

বাতাস ভারী হয়ে উঠবে অনাহারী মানুষের আর্তনাদে

আকাশের সব তারা ক্রমাগত লাঞ্ছিত হতে থাকবে

পৃথিবীর আগ্রাসী মানুষের হাতে...

(অপেক্ষা করো আমি আসছি, সেগুন মেহগনি ও অন্যান্য কবিতা)


একদিন যে মানুষেরা পরাধীন জীবনের জালে বন্ধী তা আজ আর কোন মানুষকে বন্ধী করে রাখতে পারে না। কারণ দিন বদলেছে। বদলে গেছে মানুষের জানা-বোঝার দুনিয়া। যে আইনের বেড়া-জালে একদিন মানুষ অমানবিক আচরণ করত। দিনকে দিন পরাধীনতার শৃঙ্খলে নারীকে আটকে রাখলেও আজ তাদের আটকে রাখা বড় দায়। নারী আজ দুনিয়া-দারী সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেছে-বুঝতে শিখেছে এই মাটি তার। কিসে তার মুক্তি। যে জালই আজ ছুঁড়ে দাও না কেনো; সে আজ এই জালে আটকা পড়বে না। কারণ সেই পিচ্ছিলতার কৌশল আয়ত্ত করে নিয়েছে। বুঝে গেছে কিসে তার ভালো কিসে তার মন্দ।

১.

আমি আর কোনো জেলের জালেই পড়বনা ধরা-

ওদের যতই সুদৃঢ় জাল

আমার ততই পিছল শরীর।...


তীরের জেলে লোভী হাত ছোঁড়ে জাল,

কিন্তু আমিতো আর নই রুগ্ন ভগ্ন মৃতপ্রায়

যে ঝোলের বাটিতে টুকরো টুকরো পরাধীনতা মেনে নেবে!


আমার শক্তির কাছে পরাভূত ঐ জাল-

এই জল আমার।

  (সত্তা, কালো ময়ূরের ডাক)


২.

...এই চোখের উপমা হতে পারে রক্ত গোলাপ

শিমুল কিংশুক-পৃথিবীর সমস্ত লাল।

এ চোখের উপমা হতে পারে যাযাবর

পৃথিবীর সমূহ পথ- গলি উপগলি পরিভ্রমণ করতে পারে

নদী ও সমুদ্রে- জলের ক্ষত যাবতীয় অনাচারে

বিচূর্ণ স্ফটিক ছড়াতে পারে।...

 (চোখ, কালো ময়ূরের ডাক)


৩.

...কাটা ছেড়ায় নেই সহজ শান্তির পথ

সত্যের দিগন্ত পাড়ি কে কবে দিয়েছে

সুন্দরের সমভূমিতে কে কবে গড়েছে বসত বাড়ি!...

 (লাশ, কালো ময়ূরের ডাক)


জাহাজের বাঁশি তার একটি অন্যরকম ভাববাদী কবিতা। কবির কবিতায় প্রকৃতির কথাও বারংবার উচ্চারিত হয়েছে- যে কারণে আমরা তাকে প্রকৃতিবাদী কবিও বলতে পারি-এতে অত্যুক্তি হবে না।


যুগের ঊরুর স্বাদ; দোলনাতে কাঁথার অন্তরালে

জবুথবু দেহে চাই বাতাসের প্রগাঢ় চুম্বন।

(গলগণ্ড, কালো ময়ূরের ডাক)


কবি বারবার হতাশায় পর্যুভষিতজীবন-যাপন করলেও নিজেকে নিঃশেষিত করে দেন না জ¦লে ওঠেন ফিনিক্সের মতো। তাইতো বলতে পারেন-অন্ধের ভিতরেও দেখা দেয় সকাল। কিংবা অকুণ্ঠে বলে দিতে পারেন-বনভূমি পুড়িয়ে দিলেই নিঃশেষ হ’য়ে যায় না প্রাণ।

১.

আমার সত্যের ভিতরে হাজার দুঃখ, তবু আনন্দ পাই

কেননা সত্যের মর্ম বুঝি, স্বপ্নের বুঝিনা।

 (আমিতো চাষাই আছি,কালো ময়ূরের ডাক)

২.

তুমি ফুটে আছো মনোয়ারা-পদ্মের আর এক নাম

বিপন্ন মানবতার ঘোলাজলে

পঙ্কজ, কালো ময়ূরের ডাক)

৩.

ঐ চোখে ঝুলে আছে কামার্ত বিশে^র প্রতিচ্ছবি

আদিগন্ত চুম্বন-তৃষ্ণায় ওষ্ঠে জমেছে ক্রোধ

যেন মাংস ছাড়া আর কোনো বস্তুতে রুচি নেই

যুদ্ধ ছাড়া আর কোনো খেলায় আগ্রহ নেই।

  (নদীটি,কালো ময়ূরের ডাক)


কবি তার কনীনিকা কাব্যগ্রন্থের ভূমিকাতে বলেছেন-আমার অনু কবিতা বা ছড়া কবিতাগুলোর নাম দিয়েছি কনীনিকা। কনীনিকা শব্দের আবিধানিক অর্থ কনিষ্ঠ বোন, কনিষ্ঠ আঙ্গুল, চোখের মণি। আমি কনিষ্ঠ শব্দের ইমেজকে ধারণ করে আমার অণু কবিতা/ছড়াগুলোর কনীনিকা নামকরণ করেছি। এই লেখাগুলোর বিষয়বস্তু নানা বিষয় বৈচিত্র্য রয়েছে। কিছু কবিতা/ছড়ায় লোকজ আবহ বিদ্যমান। এই লেখাগুলোকে কখনো ধাঁধাঁ উপদেশ নীতিকথা বা প্রবাদ-প্রবচনও মনে হতে পারে। এই লেখাগুলো চার পঙ্িক্ত এবং অন্তমিল সম্পন্ন। তেমনি একটি ছড়া কবিতা তুলে দিচ্ছি-

বকুল বেলী জুই চামেলী কোথায় গেলি সই

সারাটা ক্ষণ আমি কেবল তোদের কথা কই

কোথায় গেলি তোরা যে সব কোথায় গেলে পাবো

তোদের খোঁজে আমি তবে আরশিনগর যাব।

(১৭, কনীনিকা)


কবির জীবন একার জীবন-এই জীবনে কবিকে একাই বাঁচতে হয়। চলতে হয় বিরহের পথ-সুষ্ঠ কোন কারণ নির্ণয় করে এর হেতুর অনুসন্ধান করা সম্ভব না। এক ধরণের উৎকণ্ঠিত মানসিকতা নিয়েই কবি মনের পদচারণা। প্রকৃতির কাছে, জীবনের কাছে প্রেমাস্পদের কাছে ভালোবাসার দ্বীপ ও যন্ত্রণার লবণাক্ত সমুদ্রের দিকে ছুটে যাওয়ার আর্তি কবির আত্মার ভিতর নিহিত থাকে। এই তাড়নাতেই কবি নিরবে দাঁড়িয়ে পড়েন আবার হনহন করে হাঁটতে থাকেন। কবিতো মুক্ত জীবনানন্দ-

১. 

একমাত্র সঙ্গী এই নির্জন ঘরে-

পায়চারিতে দ্বাররক্ষীর মতো মনে হয় টিকটিকিকে...

২.

তবে কি ঘুচে যাবে নিঃসঙ্গ দুপুরের বিরহ-বেদনা!


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়েও তিনি ‘শোকার্ত বাড়ি’ নামে কবিতা লিখে সেই ভয়াবহ করুণ কাহিনি বর্ণনা করেছেন। কবির হৃদয় তীক্ষ্ম ফলায় ক্ষত-বিক্ষত হয়। তিনি ঘুমাতে পারেন না শিশু রাসেলের ব্যথায়-ব্যথিত হয়ে। বাড়ির বিড়ালটা কি জানতে পেরেছিল যে এই বাড়িতে কি ঘটেছিল? সময়ের এক ক্রান্তিকালে এই বাড়িতে ঘটে গেছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ট্র্যাজেডি। ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর রোডের বাড়িটিতে এখন আলো-আঁধারির খেলা চলছে-/মেঝেতে রক্তের দাগ এখনও মুছে যায়নি।



কবিতা কী? কবিতা মানুষের অনুভূতি নির্ভর বিষয়, যা আমাদের হৃদয় থেকে নিঃসারিত হয়। কবিতা সম্পর্কে ‘কবিতা ও একটি হিজল গাছ’ কবিতায় বলছেন-


কবিতা কি তবে অদৃশ্য বাঁশির শব্দে উদ্বেলিত নৈঃশব্দ্যের দুপুর!

কবিতা কি তবেদুর দিগন্তে আকাশ ও মাটির সুচারু মিলন!

কবিতা কি তবে মাথা উচু করা রাশি রাশি শুভ্র কাশফুল!

কবিতা কি তবে অসম্ভব আন্তরিকতা নিয়ে

জলের দিকে অপলক চেয়ে থাকা একটি হিজল গাছ।


কবিতা আপনা আপনি সৃষ্টি হয় না কবিতার জন্য পোড়াতে হয় অনেক কাঠ-কয়লা। জীবনকে বিপন্ন করে দিতে হয়-নিজের মধ্যে লালন করতে হয় একজন উদাসিন সন্ন্যাস। কবির জীবনে নির্জনতায় যেন বেশি প্রিয়। অনেকেই আজ আমরা কবিতা-ঘর-সংসার এক সাথে করতে চাই। আসলে সংসার আর কবিতা কি একসাথে হয় কিংবা চাকুরী। আমরা একসাথে সব পেতে চাই বা করতে চাই। এত সহজ হলে আমরা সবাই সাধক হয়ে যেতাম। আমাদের যে সত্যিকার অর্থেই কবি সেতো মস্তসাধক। কোনদিন স্কুল পালায়নি, বাড়ির বড়কর্তার বকুনি খায়নি, বাড়ির বা পাড়ার নষ্ট, বেয়াড়া ছেলে হিসেবে যার পরিচয় গড়ে ওঠেনি সে কি করে কবি হবে-


১.

শব্দ-শিশুর জন্য কবিতা-মাতার আকুতি বুঝি এভাবেই

এক বেদনার্ত শিল্পোর ভার বহন করে এগিয়ে চলেছে...


২. 

বাড়ির কর্তার ভর্ৎসনার ভয় হয়তো আছে...

শব্দের টুঁটি চেপে ঘাড় ধরে এনে বসিয়ে দিতেন কবিতায়

আর শারদ-প্রভাতের সূর্যের মতো ঝলমল করে হেসে উঠতো কবিতা রানি।...

বুকভরা বেদনা আর মনভরা ক্রোধ নিয়ে যাপিত সময়ে....

৩. 

আমার কবিতা জড়ো হাওয়া, দুর্যোগ, খরতাপ, জীবনের যত ভুল।

কাল মৃত্যু এসে দাঁড়িয়েছিল জীবনের বিপরীতে-

আজ জীবনের বিপরীত জীবন।


৪.

তোমার লুণ্ঠিত আঁচলের একাংশ বিঁধে আছ কাঁটাতারে

যেন আমারই হৃৎপিণ্ড বিদ্ধ হয়েছে কোনো লৌহ-শলাকায়!


কবি চমৎকার দৃশ্যচিত্রের বর্ণনা দিতে পারেন। এই কবি অতি-সহজ সরল দার্শনিকতায় বুনে গেছেন কবিতার শরীর। সুন্দর ছন্দ অলংকারে ভরিয়ে দিয়েছেন কবিতার অঙ্গ। কবিতা চর্চায় তিনি স্বকালকে ধারণ করেছেন। প্রথাবদ্ধ বলয়ের মধ্যে তিনি জীবনকে দেখেননি। তিনি শিল্পের নান্দনিকতার দিকেও সুস্পষ্ট নজর দিয়েছেন-

১.

সেই থেকে শুরু

শস্যক্ষেত অধীর অপেক্ষায় একটি নিঃসঙ্গ বক

জলের আরশিতে একটি হিজল গাছের অকৃত্রিম

আত্মসমর্পণ দেখে...

(অধরা)

২. 

নিশীথের অন্ধকারে আরও বেশি আঁধার হয়ে

ভোরের প্রতীক্ষা...


কবির মনে যে ভালোবাসা নেই এমনটা ভাববেন না পাঠক। কেননা কবি প্রেমের সাগরে নিজেকে ভাসালেও এই জীবনে তিনি পেয়েছেন দুঃখ। খুব চড়া দামে কবি কষ্ট কিনেছেন। তিনি টগবগে আগুনে পুঁড়িয়ে যাচ্ছেন তার স্বপ্নের সমস্ত শরীর। পরাজিত হতে হতে কবি আজ ক্লান্ত-ব্যর্থ সৈনিক। এই সবই যেন কবির কবিতা। মত্তপ্রেমের চঞ্চলতাও আজ কবির ভাঙামনের কবিতা-


১. 

যুগে যুগে ব্যর্থতা সঞ্চয় করি

অজর্ন করি বঞ্চনার নিরন্তর অভিঘাত


২. 

তুমি একটু একটু করে চেয়ে চেয়ে দেখবে

কীভাবে ভালোবাসা রূপান্তরিত হয় ঘৃণায়!

৩. 

নেকড়ে রাতের আগ্রাসী চোখের তপ্ত আলোয়

পুড়ে পুড়ে যাচ্ছে বর্তমান।


৪.

বিশ^াসের টুকরো টুকরো শরীর ভেঙে

এভাবেই জন্ম নেয় অবিশ^াসের।

(অবিশ^াসের জন্মকথা, মৎস্যকুমারী)


৫. 

আমার বিশ^াসের ভিত ছিল ধ্রুব নক্ষত্রের মতো স্থির-

তাতে কোনো কম্পন ছিল না, ছিল না দিক-ভ্রান্তি...

(নক্ষত্রের পতন, মৎস্যকুমারী)


‘আমার বাড়ি’ কবিতাটা একটা অসাধারণ এবং চমকপ্রদ কবিতা। শিল্পের কি অমায়িক উপস্থাপন। সবার মতো কবিরও একটা বাড়ি আছে কিন্তু অন্য সব বাড়ির ভিড়ে তার বাড়িটি খুঁজে বের করাটা সত্যিই কঠিন। কিন্তু আলাদা করে চিনতে গেলে বলতে হয় কবির বাড়িতে একটি চারা রোপিত আছে আর সেই চারাটার নাম শিল্পতরু। এই না হলে কবি। কবিতো সাধক। তিনি নির্মাণ করেন নতুন পথ। ‘না’ কবিতাটি আমাকে মুগ্ধ করেছে। সেখানে কবি মহাজনদের কাছে মাথা নত করে বাঁচতে চান না। তিনি এই সমাজে মাথা উচু করে বাঁচতে চান। সাহস সঞ্চয় করে মেরুদণ্ড টানটান করে এই সমাজে টিকে থাকাটাই জীবনের সবচেয়ে জটিল কাজ বলে কবি মনে করেন। কবিও সেই কথাটাই এই না কবিতায় বলার চেষ্টা করেছেন বারংবার। আমরা যারা নিজেদের সুবিধার জন্য অন্যের পদযুগলে নিজেদের মস্তক রাখি কবি তাদের না বলেছেন। ভালোবাসার নামে আজ সর্বত্র প্রতারণার মহা ফাঁদ পাতা রয়েছে-প্রতারণার বড় হাতিয়াই তো ভালোবাসা নামক অস্ত্রকে ব্যবহার করা। তবে আজ এই না কথাটা উচ্চারণ করা মানুষের সংখ্যাটা সত্যিই নগন্য। আর আমরা আজ ভান করে পড়ে থাকাটা বড়ই আয়ত্ত করেছি। এই পথই বোধহয় আমাদের নিজেদের পিঠবাঁচিয়ে চলার শিক্ষা দেয়-হায়রে মানুষ। কতটা স্বার্থপর হলে নিজের স্বার্থটা মানুষ সন্ধান করে। অবশ্য আজ এই দলের আধিক্য বিদ্যমান।

১.

ভেতরে ঠিকই ছোবল মারার ইচ্ছে, কিন্তু বাইরে নিস্তেজ হয়ে আছে ফণা

এভাবে দক্ষ সাপুড়ের হাতে খেলার পুতুল হয়ে থাকো...

এই ভণিতাপ্রিয় রাজ্যে এমন কোনো প্রজা নেই

যে তোমার উচ্চারণে কোনো ভান খুঁজবেনা।

(ভান করো, সেগুন মেহগনি ও অন্যান্য কবিতা)


জরিনা আখতারের জীবনেও রয়েছে কষ্ট। তিনি এই কষ্টের মাঝেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে এগিয়ে চলেছেন সামনের দিকে। সব সময় যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছেন সেটাও সঠিক না। নিজেকে বিকিয়ে দিয়েছেন- তবু মানুষ কতোরকম লজ্জা নিয়ে যে বেঁচে থাকে এ জীবনে তা বলার ইয়ত্তা রাখে না। জলের অপর নাম শব্দ হলেও শব্দের অপর নাম জীবন। এই শব্দ লেখতে এসেই কবি বলতে পেরেছেন জীবনের কথা। বুনতে পেরেছেন জীবনের মালা। ব্যর্থতার জীবন আজ কবির অর্জিত জীবন-এই জীবনতো অভিজ্ঞতার জীবন। এই অভিজ্ঞতায় রচিত হয়েছে কবিতা। কবিতা তো বেদনারই এক নাম।


১.

বিদায়ের আয়োজনে সঞ্চিত থাকে অতীত ইতিহাস

...একজন পরম মমতায় পুনরায় রোপণ করছে

উপড়ে ফেলে সেগুন মেহগনি।

২. 

ঐশ^র্যের লোভ নেই, প্রাসাদের মোহ নেই

তবে কেন হাটে হাটে ফেরি করি প্রিয় সম্পদ

কেন বিবেক বিক্রি করি, কেন প্রতিভা বিক্রি করি

কেন এই অন্ধ প্রভুভক্তি, বন্ধ দরোজায় বসে লেজ নাড়া।

(বিক্রির জন্য নও, সেগুন মেহগনি ও অন্যান্য কবিতা)

৩. 

সেই থেকে উদযাপিত হচ্ছে আমাদের এক একটি ব্যর্থ দিন

একটি স্বপ্নের কথাও আমরা উচ্চারণ করতে পারিনি


৪.

দুঃসহ বেদনায়

তোমাকে খুঁজেছি শব্দের পঙক্তিতে কবিতায়

আজ ভয়

যদি তোমাকে পাই আর কবিতা হারাই।

(কবিতা ও তুমি, সেগুন মেহগনি ও অন্যান্য কবিতা)


কবির বিশ^াস কবির কাছে-কবির আত্মপথ নিজের মতো করেই তিনি সৃজন করেন। জীবনে কিন্তু প্রত্যাবর্তনের অর্থ সর্বদাই ফেরা নয়-না, মানে সবসময় অস্বীকার কিংবা প্রত্যাখ্যান নয়। কখনও কখনও এক একটি না এর ভেতর-প্রবল একটি হ্যাঁ লুকিয়ে থাকে। এই না বা হ্যাঁ অনুধাবনের জন্যও আলাদা আলাদা মনের দরকার হয়। এসব ভাবনা নিশ্চয় কবিকে নানা সময় ভাবিত করে। আর এ কারণেই কবিকে নানা পরীক্ষিত জীবনকেই বেছে নিতে হয়। জীবনের মধ্যেও কবি রোপন করেন বোধের চারা। তিনি তার কবিতা নিয়েও শঙ্কায় থাকেন। তার মৃত্যুর পরেও কি তার কবিতা অপ্রকাশিত কবিতা হিসেবে ছাপা হবে কোন সাময়িকীতে। শব্দের উচ্চারণে কি সৃষ্টি হবে কোনো কবিতা? এই সব চেতনা কবির নিত্যসঙ্গী। এই হোঁচট খাওয়া জীবনই তাকে অনেক জ্ঞানের সন্ধান দিয়েছে যা আমরা কবির কবিতায় দেখতে পাই-


১. 

সতেজ সজীব সবুজ ভালোবাসা দুজন বৃদ্ধ-বৃদ্ধার চোখে

জাগাবে নাকি প্রগাঢ় জীবনতৃষ্ণ!

২.

এই যে আজ ছোট্র এক টুকরো টেবিল রাখা অসমাপ্ত কবিতার খাতা

সে খাতা থেকে অন্তত একটি কবিতা কেউ কি টুকে নিয়ে

পাঠিয়ে দেবে কোনো জনপ্রিয় দৈনিকের সাময়িকীর পাতায়

প্রয়াত কবির অপ্রকাশিত কবিতা শিরোনামে!


৩.

শুধু আমরা দুজন নদীর দুপাশে অক্লান্ত অবসর কাঁধে নিয়ে

অনন্ত কাল বসে থাকি একটি শব্দের উচ্চারণের প্রতীক্ষায়।

(একটি শব্দের নদী, মৎস্যকুমারী)


৪. 

গোধূলির আবছায়ায় যখন ঘরে ফিরতো তখনও হয়তো

বিষাদ ওদের মুখে এঁকে দিত নির্বেদ-কারুকাজ

তারপরও হয়তো স্বপ্ন দেখতে চাইতো ওরা,

নর্তকীর নাচের মুদ্রায় আনন্দ খুঁজতে খুঁজতে ঘুমকাতুরে

মানুষগুলো আবারও স্বপ্ন দেখতো;...

টুকরো টুকরো ভাঙা কাঁচের মতো ওদের ভগ্ন স্বপ্নের নিদর্শন।

(প্রত্নতাত্ত্বিক দীর্ঘশ^াস, মৎস্যকুমারী)


আজ মানুষ ঠিকানাহীন, খাদ্যহীন। যে মানুষের রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে পাঁচটি মোলিক অধিকার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সেখানে মানুষ অনাহারী জীবন-যাপন করে। তাদের থাকে না পেটে ভাত। যে কৃষক নিজের অভাব ঘোছাতে মাঠে নামেন। তারই আজ থাকতে হয়- এক থাল সাদা ভাতের প্রতীক্ষায়...তার ঘরেই থাকে না খাবার। কেউ খাবার নিয়ে বাড়ি আসে আবার কেউ খাবারের জন্য মাঠে নামেন। এই জীবনে বড়ই ধূর্তমি আছে-আছে মানুষকে নিঃস্ব করার নানা কৌশল। আজ রাস্তার কুকুরের সাথে মানুষের কোন পার্থক্য নেয়। বরং মানুষের জীবন কুকুরের জীবনের থেকেও নিকৃষ্ট।


১. 

আকালের মাঠ থেকে কেউ কেউ ঘরে ফেরে

কেউ কেউ পুনরায় মাঠে নামে!

২.

একটি কুকুর শুয়ে আছে তার হিমায়িত শরীর নিয়ে;

পাশে উলঙ্গ শিশুর সঙ্গে ঘুমাচ্ছে ভিখারিণী

এলোমেলো পোশাকে

ঠিকানার খোঁজে একাকার হয়েছে নিরাশ্রয় পশু ও মানুষ

শেিতর এই মধ্যরাতে।

(আমি তোমার বোন, এই ছুরিই আরশি)


আমরা আজ নিজেরা হাতে করে শিশুদের ভবিষ্যত নষ্ট করে চলেছি। শিশুদের মন না বুঝে আমরা তাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছি নিজের ইচ্ছেগুলো। তাদের ইচ্ছের কোন দাম নেয়। আজ সব জায়গাতে প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। নিজেদের সন্তানেরা বিবেক বুদ্ধিহীন এক একটি রোবটে পরিণত হয়েছে। এই ভাবনা কবির মনেও একজন সচেতন মানুষ হিসেবে। কবি তো আমাদের সমাজেরই একজন মানুষ। তাই সমাজের মানুষের ব্যথায় তিনিও তো ব্যথিত হন এবং দুঃখ ছড়িয়ে দেন সর্বত্র। বাচ্চাদের আমরা সঠিক ভাবে নির্মাণ করতে পারছি না। তাদের মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারছি না। তারা সমাজে আজ স্বার্থান্বেষী মানুষ হিসেবে গড়ে উঠছে। তবু কবি বাঁচতে চাই-মনের মধ্যে সঠিক পথ চলতে চেয়ে নিজেকে আন্দোলিত করে তোলেন আবার উবে যায় সব শক্তি। কারণ এই সমাজের গোড়াতেই রয়েছে যতসব গণ্ডগোল-

১. 

কোথাও কাদামাটি দেখিনা

কোনো শিশুকে দেখিনা মাটির পুতুল গড়বার জন্য বায়না করতে

খাতার পৃষ্ঠা ছিঁড়ে নৌকা বানাবার অবসরই নেই ওদের

শিশুরা আজ পাঠে খুব মনোযোগী, কার্টুন ছবির ভক্ত

রাজনীতিও কিছু কিছু বোঝে ওরা।

যে জীবন আমাদের অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে

নিবিড় আকুলতায়

শিশুদের কাছে আজ সে জীবন যাদুঘর...

(শুধুই নির্মাণ, এই ছুরিই আরশি)


২.

ইচ্ছে কি করে না নাগরদোলায় চড়ে ঘূর্ণায়মান পৃথিবীকে দেখি-

কিন্তু আমার ভেতরেই তো ঘুরছে জগৎ-জীবন

ঘুরতে ঘুরতে সংসারের যাতীয় বাস্তবতা

আমাকে নিয়ে গেছে এক ভারসাম্যহীন পৃথিবীতে।...

সভ্যতার সুদৃশ্য শরীরে কেন এই গলগণ্ড আমি নামের

ধোপদুরস্ত জনস্রোতে ভেসে আছে কেন এই কর্দমাক্ত কুসুম

কেন এই জীবন আমার।

(কেন এই জীবন, এই ছুরিই আরশি)


কবি জরিনা আখতারের কবিতায় যে কতপ্রকার বিচিত্রতা রয়েছে তা কবিতা পাঠের আগে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। এই কবির কবিতায় বাস্তবতা থাকলেও তা কবিসত্তা বা জীবনাভিজ্ঞতার মিথস্ক্রিয় রূপ। তার কবিতা যতবার পাঠ করি ততবারই সচকিত হয়ে উঠি-উপলব্ধি করি কবিতাতো জীবনেরই গভীর অভিজ্ঞতার সারাৎসার। গভীর মনোযোগে পড়ি কবির কবিতা সত্যের ভিতরে হাজার দুঃখ, তবু আনন্দ পাই-কেননা সত্যের মর্ম বুঝি, স্বপ্নের বুঝিনা তাই।


Zarina Akhtar's poem Sadness inside the truth, yet joy


Post a Comment

0 Comments