আমিনুল ইসলাম এর কবিতা






একাকী, অবরণ্যে

দোহাই তোমার ভুলিনিকো নীলুফর
তেমনি থাকার প্রয়াস বিরামহীন
বাতায়ন খুলে দৌড় দিতে চায় ঘর
চেপে ধরি চোখ যেই জাগে নিদহীন।

হেকিমী দাওয়াই---অন্যথা তার নেই
লখার বাসর রচেছি শপথে এঁটে
বায়ু ছাড়া আর অনুমতি কারো নেই
দুঃখের প্রহরী দাঁড়িয়ে বাহির গেটে।

সাঁঝের আকাশে এখনো কি ফোটে তারা?
রাতের নদীতে এখনো কি জাগে ঢেউ?
খোলা বাতায়ন এখনো কি চায় সাড়া?
আমাকে পোড়াতে এখনো কি পোড়ে কেউ?

কতদিন হলো-- নই মিছিলের মুখ!
কতদিন হলো-- নই কোনো শিরোনাম!
কতদিন হলো-- হই নাকো উসুক!
কতদিন হলো-- ডাকহীন এই নাম!

টেবিলে দেরিদা ফুকো উপরের তাকে
চোখ মেলে চায়- হারালো কি কবি খেই!
প্রভাত চৌধুরী রয়েছে হাতের কাছে
অঞ্জন সেনও- কোনো কথা উঠলেই!

তথাপি আমার কানে পাকে তালগোল
বুকে এসে ভিড়ে ভিটেমাটিহারা শোক
জল কাঁটাতার ভেঙে চলে আসে রোল
কিসের বেগানা? সবাই আপন লোক।

সুদূরে বোমায় মরছে শিশু ও নারী
একই ঘটনা মাঝখানে এশিয়ার
গণতন্ত্র আজ জঙ্গলের অনুসারী
যত বড় সে যে তত বড় থাবা তার।

ভেঙে যায় ঘুম- উঠে বসি ফের খাটে
জগ আসিয়া রচে বেদনার হাট
শপথের কথা বেবাক উঠায়ে লাটে
লাল কালি দিয়ে লিখে দিই প্রতিবাদ।



দি মিসড্ ট্রেন

আমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে রেডি করে দিতে
দেরী করে ফেলেছিলেন মা
তো মিস হয়ে গিয়েছিল ট্রেন
তাই তোমার সাথে দেখা হয়নি
তোমার আশায় আমি আজও ঘুরে বেড়াই স্টেশনে
আগমনী হুইসেল শুনতেই দৌড় দিয়ে যাই
প্লাটফর্ফমের দিকে
ট্রেন থেকে নেমে আসা
রঙ করা মুখের দিকে চেয়ে দেখি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে
চোখে ফিরে আসে চোখভরা হতাশা।
তবু অপেক্ষায় থাকি দিনের পর দিন যেভাবে
আউশধানের বীজ বুনে--
খরার আকাশে চেয়ে থাকে শস্যপ্রেমী কৃষক।



জামিনের দিনগুলি

যে অপরাধ একেবারেই অনিচ্ছাকৃত, 
যে-ঘটনা আমার নিয়ন্ত্রণের
বাইরে ছিল তখন,
সেই অপরাধে দোষী আমি
সাজা হয়ে গেছে- তড়িঘড়ি
এবং সেটাও আবার--
জেল নয়, জরিমানা নয়, মৃত্যুদন্ড!

বিজ্ঞ আইনজীবী বলেই দিয়েছেন,
কোনও আপীল নাই!
সান্ত্বনা এই যে মরণের আদালতে
অন্তর্বতী জামিন পেয়েছি
জামিনের দিনগুলো আমার জীবন।
তবু এই দন্ডপ্রাপ্ত জীবনকে ভালোবাসি আমি।

মহামান্য আদালত, আজম খান কিংবা
বিপ্লবের মতো
সাজা মওকুফ চাইনি,
দয়া করে শুধু আমার জামিনের মেয়াদটা
বাড়িয়ে দিন!
আমার যে এখনও অনেক ভালোবাসা বাকি!



ট্রেন

ট্রেন যায়--ট্রেন যায়--পু ঝিক্ ঝিক্ ট্রেন যায়...
এ ট্রেন আন্তঃনগর
এ ট্রেন আন্তঃরাষ্ট্রীয়
যাত্রীগণ মাল্টি-ন্যাশনাল
যাত্রীগণ মাল্টি-রিলিজাস

ট্রেন যায়--ট্রেন যায়--পু ঝিক্ ঝিক্ ট্রেন যায়...
ট্রেন থেকে ভেসে আসে কান্না
ট্রেন থেকে ভেসে আসে হাসি
ট্রেন থেকে ভেসে আসে গন্ধ
ট্রেন থেকে নিচে পড়ে লোহুলালা লাশ

ট্রেন যায়--ট্রেন যায়--পু ঝিক্ ঝিক্ ট্রেন যায়...
যাত্রীদের টিকেটে নাম নেই স্টেশনের
যাত্রীদের টিকেটে টাইম নেই অ্যারাইভালের
যাত্রীগণ মদ ছাড়াই মাতোয়ারা
এবং ড্রাইভার নিয়ে রহস্য অনিঃশেষ,--বিতর্ক বিস্তর

ট্রেন যায়--ট্রেন যায়--পু  ঝিক্ ঝিক্ ট্রেন যায়...

ও ট্রেন, তুমি চলেছো কোথায়? কোথায়!



অসম্পূর্ণ হালখাতা

এখনো চৌদিকে ছড়ানো ছিটানো প্রেম
এখনো ইশারা চোখে পড়া কোনো চোখ
এখনো রয়েছে ইনজিনে অকটেন
এখনো নদীতে জাগেনি চরের শোক।

এখনো বিকেল অর্ধ-রোমান্টিক
এখনো সন্ধ্যা মিলনাত্বক মোড়
এখনো রাত্রি দুকাঁটাতে টিকটিক
এখনো আসক্তি নতুন দিনের ভোর।

এখনো কবিতা রাতজাগা অজুহাত
এখনো আকাশ হাজারো চিত্রকল্প
এখনো হঠা হাত ছুঁয়ে কোনো হাত
এখনো জীবন সহসায় কোনো গল্প।

এখনও পারি রাঙাতে নারাজ মন
এখনও পারি টানিতে দোদুল ভোট
একচুমুতেই ফ্লাশব্যাক যৌবন
যে চায়নি কাল, সেও পেতে দেয় ঠোঁট।

এখনো তুলনা ছুঁয়ে যায় ফলাফল
এখনো ঈর্ষা ছুঁয়ে যায় এই নাম
এখনো ভূমিকা ফুটে ওঠা শতদল
এখনো স্বপন জানায় ওয়েলকাম।

এখনো স্বভাব খেয়ালের ঘোড়দৌড়
এখনো মনটা লোভের বাতাসে দোল
এখনো মধুর খুঁজিছে মধুর ওড়
এখনো তোমাকে ভালোবেসে উতরোল।
------------০০------------





Post a Comment

0 Comments